Featured Post
পুরাণে-ইতিহাসে নারী ।। শেফালি সর
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
"পুরাণে-ইতিহাসে নারী"
শেফালি সর
"মেয়েদের পূজা করিয়াই সব জাতি ব ড় হ ইয়াছে। যে দেশে যে জাতিতে মেয়েদের পূজা নাই, সে দেশ সে জাতি কখনও বড় হইতে পারে নাই,কস্মিন কালেও পারিবেনা।" --স্বামী বিবেকানন্দের এই অমোঘ বাণী নারী জাতিকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিতা করেছে।তিনি জাতীয় জীবনে নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষাকেই পূজা আখ্যা দিয়েছেন। যে দেশে মেয়েদের সম্যক মর্যাদা বোধ নেই সেই দেশ যথার্থ বড় বলে গণ্য হতে পারে না।
"নারীকে আপন ভাগ্য জয়
করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার হে বিধাতা?"-
সামাজিক অভিশাপ থেকে নারী সমাজ কে মুক্ত করার জন্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিধাতার দরবারে এই জিজ্ঞাসাই রেখেছিলেন।
সেই বৈদিক যুগ থেকে মধ্যযুগের সূচনার পূর্ব পর্যন্ত ভারতবর্ষ ছিল নারী মহিমায় উজ্জ্বল।তাই তো বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন --"হে ভারত ভুলিও না তোমার নারী জাতির আদর্শ -সীতা,সাবিত্রী,দম য়ন্তী।ভুলিও না তোমার সমাজ বিরাট মহামায়ার ছায়া মাত্র।"
ভারতের অতীত ইতিহাসে দেখা যায় প্রাচীন সমাজে নারী ও পুরুষের মর্যাদা ছিল সমান সমান।শিক্ষার ভিত্তিতেই সমাজে নারীদের স্হান ও মর্যাদা নির্ধারিত হ'ত।মৈত্রেয়ী,গার্গী,লীলাবতী, লোপামুদ্রা,সীতা,সাবিত্রী,খনা প্রভৃতি নারীগণকে সমকালীন সমাজ যেমন শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল,--তেমনি এইসব মহীয়সী ললনাদেরসংস্পর্শে ভারত বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের স্বর্ণ -সিঙ্হাসনে অধিষ্ঠিত হ'তে সক্ষম হয়েছিল।
প্রাচীন ভারতীয় সমাজ নারী মহিমায় ভাস্বর হ'লেও এমন একটি সময় এসেছিল যখন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাদপীঠে নারী শিক্ষার উপর ঘনকৃষ্ণ মেঘের কালো ছায়া নেমে এসেছিল। সেটা হ'ল ইতিহাসে মধ্যযুগ।
মধ্যযুগের সূচনাতে নারী শিক্ষা ও স্বাধীনতার আলোক বর্ত্তিকাকে কৃষ্ণপক্ষের ক্রমপ্রসারিত অন্ধকার ধীরে ধীরে গ্রাস করতে আরম্ভ ক'রলো।সমগ্র নারী জাতির উপর চরম অভিশাপের মতো নেমে এসেছিল সেদিন।মধ্যযুগ হ'ল ভারতীয় নারী সমাজের নিকট একটি সর্বব্যাপী অন্ধকারম য় যুগ।শাসন ও শোষণের নিষ্ঠুর বর্বরতায় বৃহত্তর নারী সমাজ স্থান লাভ ক'রলো আলোর অন্তরালে।পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যখন নারী প্রগতির জোয়ার,ঠিক তখনই ভারতবর্ষে চলছে নারী সমাজের অন্ধকারম য় যুগ।তখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিচার করে একটি কথাই বলা যায়,তখন নারী হয়েছিল অসূর্যম্পশ্যা।আজ নারী প্রগতির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কোনো মানুষ ই উপলব্ধি করতে পারবে না,মধ্যযুগের নারী সমাজকে কি নিষ্ফল বেদনায় হা-হুতাশ করে মরতে হয়েছিল। অনিবার্যভাবেই নারী সমাজ কৌলিন্যপ্রথা,বাল্য বিবাহ,বহুবিবাহ ও সতীদাহ প্রথার শিকার হ'ল।কৌলিন্য প্রথার দৌলতে দশ বছরের নারী শিশুকে তুলে দেওয়া হ'ত মৃত্যু পথযাত্রী অশীতিপর বৃদ্ধের হাতে।বাসর ঘরেই অনেক নারীকে বৈধব্য যণ্ত্রণা সহ্য করতে হ'ত। আর সতীদাহ প্রথার অনিবার্য ফলস্বরূপ সেই সব কোমল নিষ্পাপ ফুলেদের তুলে দেওয়া হ'ত স্বামীর জ্বলন্ত চিতায়। এইভাবে কৌলিন্যপ্রথা ও সতীদাহ প্রথার হিঙ্স্র থাবার ছোবলে প্রাণ দিতে হয়েছে হাজার হাজার মধ্যযুগীয় ভারতীয় নারীকে। আবার বহুবিবাহ প্রথার ফলে নারী হ' য়ে গেল পুরুষের ভোগ্য পণ্য এবং পুরুষের পৈশাচিক লালসার শিকার। অনিবার্য ভাবে নারী সমাজে আর এক অভিশাপ নেমে এলো তাহ'ল যোগিনী বা দেবদাসী প্রথা।
সমাজের বর্ণশ্রেষ্ঠ পুরুষের দল হরিজন, অনুন্নত সম্প্রদায় এবং গরীব বাড়ির যৌবনবতী মহিলাদের বহুভোগ্যা ও বহুবল্লভা করার এক অভিনব চক্রান্ত সৃষ্টি করলো। ধর্মের নামে,সাধনার নামে হাজার হাজার মহিলা এভাবে সমাজচ্যুত হতে থাকলো। মধ্যযুগে কুসংস্কার সমাজের বুকে এমন ভাবে চেপে বসেছিল যে,সেদিন কোনো শাসক বা সমাজসেবী এই নির্যাতীত নারীসমাজকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে নি।তারপর অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় শিক্ষা সংস্কৃতির প্রসারের ফলে ভারতে অসূর্য্যম্পশ্যা নারী সমাজ পুনরায় আলোর স্পর্শে আসার সুযোগ পেল।নারীশিক্ষা ও স্বাধীনতার ইতিহাসে ইউরোপীয়দের অবদান অনস্বীকার্য।পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এসে নারী সমাজের মধ্যযুগীয় অভিশাপ -মুক্তি ঘটলো।অভিশাপমুক্তির জাগরণে এগিয়ে এলেন রাম মোহন রায়,বিদ্যাসাগর,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রভৃতি মহান ব্যক্তিগণ। সতীদাহ প্রথা রদ হ'ল।১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ প্রচলন হ'ল। এতসব সত্ত্বেও সমাজে পণপ্রথা এখনো রদ করা সম্ভব হয় নি।কালে কালে সেই প্রথা নানাভাবে নানা রূপে ধরা দেয় সমাজের বুকে আজও। আজও নারীদের উপরে দৈহিক ও মানসিক পীড়ন চলে যার অপর নাম ধর্ষণ। এ ব্যাপারে নারীরাই নারীদের প্রধান শত্রু। এজন্য নারী আন্দোলন প্র য়োজন।দৈহিক গুনে পুরুষেরা নারীদের দিক থেকে অনেক বেশি শক্ত সমর্থ,তাই উচ্চপদে অধিষ্ঠিত অনেক নারীকে চরম লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।নারী আন্দোলনে সার্থকতা আসতে পারে যদি পুরুষেরা নারীদের দিকে তাদের সহানুভূতির হাতটি বাড়িয়ে দেয়।
---------------------:-------------------
শেফালি সর--,জনাদাড়ি,গোপীনাথপুর,পূর্ব মেদিনীপুর,৭২১৬৩৩।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন