ইনসাফ
অশোক দাশ
শিশির ভেজা হেমন্তের সকাল। উত্তরে হিমেল হাওয়ায় রোদ্দুরকে বড্ড মিষ্টি লাগছে। মাঠে- মাঠে সবুজের সমারোহ। সোনালি ধান গোলায় তোলার তোড়-জোর চলছে জোর কদমে। চাষীদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। অরিন্দমের মনটা আজ ভালো নেই। ধানের গোড়ায় কাস্তের টান দিতে-দিতে ভাবছে আজও যেতে পারলাম না সহযাত্রীদের সঙ্গে। যারা এই সমাজ বদলের অঙ্গীকার বুকে নিয়ে দীর্ঘ ক্লান্তিহীন পদযাত্রায় মানুষের মাঝে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
অরিন্দম একজন শিক্ষিত বেকার যুবক। পেটের টানে সে এখন দিনমজুরি করছে। হঠাৎ তার কানে ভেসে আসে গগন বিদারী অনেক মানুষের কণ্ঠস্বর। দেখতে পায়, কালো পিচ রাস্তার বুকে ধরে আগিয়ে আসছে যৌবনের জোয়ার। কন্ঠে তাদের যা কিছু অশুভ তার বিরুদ্ধে দীপ্ত স্লোগান। অনেক মানুষের ভিড়ে অরিন্দম দাঁড়িয়ে পড়ে পিচ রাস্তার ধারে। হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত আকাশ বাতাস। আগিয়ে চলে সামনের দিকে, হঠাৎই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ, রাস্তা অবরোধ করা চলবেনা হট যাও। অরিন্দম প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে মারতে- মারতে গাড়িতে তুলে নেয়।
বিনা দোষে অরিন্দমকে থানায় নির্যাতন করা হয় তারপর দিন কোর্টে চালান করা হয়। যথারীতি বিচারকের এজলাসে শুরু হয় অরিন্দমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের শুনানি। সরকারপক্ষের উকিল যথারীতি অরিন্দমের বিরুদ্ধে রাস্তা অবরোধ তার ফলে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসায় ব্যাঘাত সৃষ্টি, রাস্তা জ্যাম করে গাড়ি ঘোড়া বন্ধ করে মানুষের কাজের ক্ষতিসাধন, সর্বোপরি সরকারের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেওয়ার অপরাধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। আসামিপক্ষের কোন উকিল না থাকায় অরিন্দম নিজেই জজ সাহেবের কাছে আবেদন করেন , তার কথা শোনার জন্য। জজ সাহেব অনুমতি জ্ঞাপন করেন।
অরিন্দম বলেন ধর্মাবতার আমাকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে তা মোটেই সত্য নয়। আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যুবদের মিছিল অবলোকন করছিলাম মাত্র। সেখান থেকে বিনা দোষে পুলিশ আমাকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে আসে। এবং আজ কোটে। আমি মহামান্য ধর্মাবতারের কাছে ইনসাফ চাইছি সুবিচার চাইছি ন্যায় বিচার আশা করছি। প্রথমেই আমি পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইনসাফ চাইছি। আমি ইনসাফ চাইছি হাজার দিন যারা রাজপথে বসে থেকে কাজের দাবিতে কাজ পায়নি, আমি ইনসাফ চাইছি আমার সেই ধর্ষিতা বোনের যাকে ধর্ষণ করে অপরাধীরা প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি ইনসাফ চাইছি যারা দুর্নীতি করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে। আমি ইনসাফ চাইছি যাদের ভুল নীতিতে কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়, বেকার কাজ পায় না, শিল্প কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়, মানুষের বাক স্বাধীনতার গলা টিপে হত্যা করা হয়, ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে দাঙ্গা বাঁধানো হয়। আমি ইনসাফ চাই ধর্মাবতার। ইনসাফ ----। জজ সাহেব স্তম্ভিত হয়ে অর্ডার- অর্ডার -অর্ডার বলে চিৎকার করে ওঠেন। সারা কোর্টে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে ইনসাফ চাই ইনসাফ সুবিচার ন্যায়বিচার------।
-------------------------
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর ,হাওড়া ,পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন