মানস চক্রবর্তীর দুটি অণুগল্প
প্রদীপের নীচে
----------------
বেলা প্রায় পৌনে বারোটা।বেহালা চৌরাস্তার মোড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল উত্থানপদ গোস্বামী কর্তব্যরত । এক যুবতী পড়িমড়ি করে তাঁর দিকে ছুটে আসছে।যুবতীটি যন্ত্রণায় ছটফট করছে। সম্ভবত বিষ খেয়েছে।উত্থানবাবুর কাছে এসে ঐ যুবতীটি জানায় 'আমার প্রেমিক দীর্ঘদিন ধরে বারংবার আমার সঙ্গে সহবাস করেছে। কিন্তু এখন সে তার গার্জেনদের পছন্দ করা পাত্রীর সঙ্গে বিয়ে করবে মনস্থির করেছে। আমি প্রেগনেন্ট । মরা ছাড়া আমার কোনও পথ নেই। কথাগুলো বলতে বলতে ক্রমশ সে ঝিমিয়ে পড়ল।এক মুহূর্ত দেরি না করে উত্থানপদবাবু তাকে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হওয়ার ফলে সে প্রাণে বেঁচে যায়। জ্ঞান ফিরলেই পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।ডিউটি শেষে উত্থানবাবু হাসপাতালে মেয়েটিকে দেখতে যান। তার বাড়ির লোকজনদেরকেও খবর দেওয়া হয়েছে। এই তৎপরতা, দায়িত্ববোধ ও মানবিকতার জন্য সহকর্মী থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের কাছে উত্থানবাবু খুবই প্রশংসিত হন । আগামী ১লা সেপ্টেম্বর পুলিশ দিবসে পুলিশমন্ত্রী তাঁকে পুরস্কৃত করবেন, ঘোষণা হয়েছে।এই আনন্দের খবরে সবাই খুশি হলেও উত্থানবাবুর একমাত্র পুত্র স্বপনের মুখে কোনও হাসি নেই।
পাতালরেল
----------------
জলদি হাতচালা ভাই, আর কিছুটা মাটি তুলতে পারলেই পাতালরেল দেখতে পাবি। দাদুর ঘুম ভাঙার আগেই কাজ শেষ করতে হবে। দাদার কথা মতো দাদুর কাস্তে দিয়ে আরও দ্রুত মাটি খোবলাতে লাগলাম। দাদাও সমান তালে একটা ছোট্ট হাতকোদাল নিয়ে মাটি খুঁড়ছে। দুজনের মনেই রোমাঞ্চ আর বিস্ময়। আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা , তারপরেই আমরা মাটির নীচে দিয়ে রেল যাচ্ছে দেখতে পাবো ! ভয় একটাই , এই ঝুরো মাটি যদি স্টেশনে থাকা মানুষদের গায়ে পড়ে, তখন তারা রেগে যাবে না তো ! বাড়িতে এসে বাবাকে নালিশ করে আমাদের দু'ভাইকে মার খাওয়াবে না তো ! দাদা ভরসা দিয়ে বলে, সে পরে যা হবে দেখা যাবে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবো আমরা করিনি। আবার কচি কচি দু'জোড়া হাত দিয়ে আমি আর দাদা মাটি খুঁড়ে যাচ্ছি। ভরদুপুরে চলছে আমদের এই কীর্তি। বাড়ির বড়রা সবাই ঘুমাচ্ছে।
গায়ে ঠেলা দিয়ে বন্ধু সুব্রত বললো মানস ওঠো, দক্ষিণেশ্বর এসে গেছে। চোখ খুলে দেখলাম হ্যাঁ দক্ষিণেশ্বরে মেট্রো ঢুকছে। আমার এই এক বদ অভ্যাস, খুব সকালে কোথাও যাওয়ার থাকলে আগের রাতে ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুম হয়। তাই কবিসুভাষ থেকে মেট্রোতে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম। পঁয়ত্রিশ মিনিটের ছোট্ট ন্যাপে পৌঁছে গিয়েছিলাম প্রায় তিরিশ বছর আগের একটি সরল- সাদাসিধে স্বর্ণালী অধ্যায়ে ।
***************************
মানস চক্রবর্তীউত্তর বাওয়ালী, নোদাখালী, বজবজ-২, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, পিন-৭০০১৩৭
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন