দেবাংশু কি তাহলে...?
আশিস ভট্টাচার্য্য
২০০২, জুন মাসের শেষের দিক, ঘরে ঢুকে এসিটা চালিয়েছিলেন অধ্যাপিকা ডঃ মনীষা নন্দী। প্রতিবারের মত এবারেও দেড় মাস গোয়া থেকে সামার ট্রিপ সেরে ফেললেন বছর চল্লিশের মনীষা। স্বামী দেবাংশু আর্মি অফিসার। ফুলশয্যার রাতে দুজনে ঠিক করেন আর্মির গুরুদায়িত্বে সারা বছর সংসার থেকে বাইরে থাকবেন দেবাংশু ।
মনীষা ব্যস্ত থাকবেন অধ্যাপনা, ছাত্রীদের গবেষণায় সাহায্য করা , বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়া, আর বই লেখায়। ভূত পেত্নীর ওপর আট-দশটা গল্পের বই লিখেছেন তিনি।
গরমের ছুটি সাথে দিনপনেরো উইদাউট পে ছুটি নিয়ে প্রতি বসর গোয়ায় যাবেন বেড়াতে। গত বছর পনের ধরে তাই চলছে। ওই দেড়মাস দেবাংশু আর মনীষা খুব উপভোগ করেন সমুদ্র , ব্লু ফিল্ম, বিদেশি দামি মদ, আর দেবাংশুর বাইকে চেপে গোয়ায় চড়ে বেড়ানো ।
সারাবছরের যাবতীয় তৃষ্ণা মিটিয়ে নেন মনীষা। বছরভর যত মান ,অভিমান, অভিযোগ, আবদার আদরের তৃষ্ণা সব পূরণ করেন দেবাংশু।
কাজের মেয়ে মুন্নিকে খবর দিতে হবে তিনি ফিরছেন। একটু চা করে খাচ্ছেন এমন সময় সদর দরজার কোনে একটা চিঠি লক্ষ্য করলেন। ফোর্ট উইলিয়ামে এক স্মরণ সভা আয়োজন করা হয়েছে। কার্গিল যুদ্ধে এই অঞ্চলের যেসব বীর সেনা নিহত হয়েছে তাদের মরণোত্তর সম্মানিত করা হবে। বিশেষ পদক দেয়া হবে তাদের পরিবার বর্গকে।
পাঁচজন শহীদের নাম আছে। তার একজন দেবাংশ নন্দী, চমকে উঠলেন মনীষা । হাত থেকে চায়ের কাপ প্লেট ছিটকে পড়ল । এতদিন খবর পাননি কি আশ্চর্য! কি ভৌতিক বিষয়ে গত দু'বছর কার সাথে গোয়ায় সামার ট্রিপ কাটিয়েছেন!
ফুলশয্যার রাতে কানে কানে দেবাংশু বলেছিলেন মনীষা,
গোয়ার সমুদ্র আমাদের হানিমুন রিসর্ট, আমরা বেঁচে থাকি বা না থাকি সামার ভ্যাকেশনে একসাথে থাকবো , থাকবোই। ভূতের গল্প লিখে হাত পাকানো অধ্যাপিকা মনীষা ঘামতে থাকেন। জীবনে কখনো কথার খেলাপ করেননি দেবাংশু। দেবাংশু কি তাহলে......................?
আশিস ভট্টাচার্য্য
রামকানাই গোস্বামী রোড,
শান্তিপুর,নদিয়া-৭৪১৪০৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন