একজন টুম্পার গল্প
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
ঠিক দুপুর বেলা। যখন কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের কাশীপুর গ্রামে পৌছাই তখন আমার চোখ দু'টো থমকে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নামতেই চোখ পড়লো ৮/৯ বছরের এক শিশুর ওপরে। হাড় লিকলিকে ঐ শিশুটি জানি না ক' দিন তার পেটে ভাত পড়েনি। দেখলে মনে হয় সে যেন অসুস্থ। এই শরীরে তার ছোট ভাইকে কোলে করে দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছিল সে যেন গাড়ি দেখেনি। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে আমাদের দিকে। তাকে দেখে হৃদয়কে কষ্টে নাড়া দেয়। বললাম তোমার নাম কি? সে বললো টুম্পা। তোমাদের বাড়ি কোথায়? ঈশারা করে দেখায় ঐ তো।চলো যায় তোমাদের বাড়িটা দেখে আসি। তাজ্জব ব্যাপার।
ভাঙা ঝুপড়ি ঘর। মাথা নিচ করে ঘরে ঢুকতে হয়। আলোর দেখা নেই। ভুতুরে পরিবেশ। জিজ্ঞেস করলাম তোমার বাবা কি করে। বলতেই হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে টুম্পা। কি ব্যাপার বলোতো। আজ থেকে এক বছর আগের ঘটনা। বাবা মার সাথে আমিও ছিলাম। নানীর বাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তায় গাড়ির অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু বিধির বাম। কোথা থেকে এক ঘাতক ট্রাক এসে বাবাকে চাঁপা দেয়। বাবা ঘটনাস্থলে মারা যায়।
মা কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে। যেন পাগল হয়ে যায়। তখন ছোট ভাই পেটে। কি করবে মা।আস্তে আস্তে দিন মাস ও বছর চলে যায়। শেষ পর্যন্ত মাকে সংগ্রামে নামতে হয়। আমার লেখা বন্ধ হয়ে যায় । ছোট ভাই কে কোলে নিয়ে বাড়িতে থাকতে হয়। মা এখন কয়েকটি বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। তবু তিন বেলা ভাত জোটে না। কষ্টে চলে দিন।
টুম্পা আবেগ কন্ঠে বলে, জানেন স্যার আমার লেখাপড়া করতে ইচ্ছে হয়। গরীব তো, ইচ্ছে স্বপ্নই থেকে যায়। পুরন হবে কি করে। মানুষের সব ইচ্ছে তো পুরন হয় না।
সাংবাদিককতার জন্যই এখানে আসা। সংক্ষিপ্ত সফর শেষ হয়ে আসে। চলে আসতেই টুম্পা বললো, স্যার বহুদিন লজেন্স খায়নি। দেবেন স্যার? এই মুহুর্ত্তে আমার ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায়। আমিতো লজেন্সের জন্য বাবার কাছে বায়না ধরতাম। সব যেন ওলট পালট হয়ে যায়। বেশ কিছু লজেন্স আর কিছু টাকা টুম্পার হাতে দিয়েই দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বিদায় নিই । আর দেখা হবে কিনা কে জানে। জানি না টুম্পা এখন কেমন আছে।
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
বড় বাজার,চুয়াডাঙ্গা
মোবাইল ০১৮১৮-৩৪৩৯৩৬
লেখক: সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও ছড়াকার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন