প্রতীক মিত্র
কুকুরগুলো ওর দিকে দৌড়ে এলেও লেজ নাড়ছিল। ওর সবটা জানার কথা নয়। ওর গড়ন কতকটা ওর মতন পোষাক-পরিহিত একজন এই রাস্তা দিয়ে গেলেই ওই কুকুরগুলোকে বিস্কুট দেয় বা বলা ভাল বিস্কুট দিত। রাস্তাটায় বড় বড় গাড়ি বেশি বেশি করে চলে বলে কুকুরগুলোকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে রাস্তার ধারে নিয়ে গিয়ে লোকটা বিস্কুট খাওয়াতো। যে দোকান থেক ও বিস্কুট কিনলো সেই দোকানদারের অত জানার কথা নয়। কুকুরগুলো যার কথা ভেবে দৌড়ে উৎসাহ এবং সোহাগে লেজ নাড়ছিল তার কাছে সব সময় বিস্কুট থাকতো। স্বভাবে সেই লোকটার একদম ভিন্ন বিপরীত চরিত্রের ও। ওর এত সব জানার কথা নয়।সেই লোকটার আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটেছিল দ্রুত বাড়িতে পারিবারিক অশান্তির কারণে।তাছাড়া ওর নিজের শারীরিক অসুস্থতাতো তো ছিলই। পায়ের একটা ব্যথা ওকে ভোগাচ্ছিলো অনেকদিন থেকেই।সে কারণে ও একটু খুঁড়িয়ে হাঁটতো শেষ দিকে যেমন আজকে ও হাঁটছিল।ওর হাঁটাটা অবশ্য আলসেমিবশত ছিল।তারপর বাড়ির সমস্যা না মেটায় যে এলাকায় কাজে যেত সেই এলাকারই কোনো সস্তা শুঁড়িখানায় নেতাদের ষন্ডা-গুন্ডাদের হাতে ও স্বেচ্ছায় মার খায়। এই সবই কুকুরগুলোর জানা, দেখা। ওরা চিৎকার করেছিল।প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিল। ফায়দা হয়নি। লোকটা সরু অফিসপাড়ার নোংরা একটা গলিতে পড়েছিল অনেকক্ষণ। ওর ব্যাগ থেকে বিস্কুট ছড়ানো ছিটোনো ছিল চতুর্দিকে। কুকুরগুলো অপেক্ষায় ছিল ও উঠবে। মাতাল গুন্ডাগুলোর সামনেই ওরা ওকে জিভ দিয়ে চেটেছিল ঢিল-লাথি অগ্রাহ্য করে। কিন্তু লোকটার শরীর অসাড়ই ছিল। এতকিছু ওর জানার কথা নয়। সকাল বেলা ওকে ওভাবে হেলেদুলে হাঁটতে দেখে কুকুরগুলো ভুলই করেছিল। তাই ওর কিনে দেওয়া বিস্কুটেরও একটা দুটো মুখে দিয়ে শুঁকেই ওরা ওকে সন্দেহের চোখে দেখে দাঁড়িয়ে ছিল দুরে। লেজ নাড়াটাও থেমে গিয়েছিল ধীরে ধীরে। কুকুরগুলো ওর দিকে আর আসেনি বলে ও নিশ্চিন্ত হয়ে হাঁটা শুরু করেছিল। পটভূমির এতকিছু গল্প ওর জানার কথা নয়।
--------------------------
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235, পশ্চিমবঙ্গ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন