Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

গল্প ।। অবনী ।। সুনীল কুমার হালদার

 

অবনী

সুনীল কুমার হালদার


বড়মাদের গোয়াল ঘরের দিকে থেকে মানুষের বিচালিখড় মাড়িয়ে যাওয়ার খড় খড় শব্দ হঠাৎই ভেসে এলো। বড়মা তখন রান্না ঘরের এক কোনায় বসে কয়লা ভাঙ্গছিলেন, শুনতে পেয়ে বললেন "অবনী! এলি নাকি?" 

তখন ভাদ্দর মাস চলছে, ধান চাষের মরসুম শেষ হয়ে যাবার মুখে। অবনীদা বড়মাদের চাষবাস দেখাশুনা করে, চাষের কাজ করে বর্ষাকালটা কোনক্রমে চলে তার যায়, কিন্তু তারপর স্থির আয়ের কোনো উৎস নেই, এর বাড়ি ওর বাড়িতে টুকটাক কিছু কাজ করে যা জোটে তাতেই সংসার চালাতে হয় আর কি! ঐ "লিন পিরিয়ডে" অবনীদার ভরসা হোলো বড়মার বাড়ীর এটা ওটা কাজ, যেমন গরুর খাবারের জন্যে খড় কুঁচি কুঁচি করে কাটা, গাছ গাছালি গুলো থেকে যে শুকনো ডালপালা সারা বছর জমে, এই সময় টুকরো টুকরো করে কেটে উনুনের জ্বালানি করা, কুড়ুল দিয়ে ঝুনো নারকেল দুফালা করে রোদে শুকিয়ে তার থেকে শাঁস বের করে টুকরো টুকরো করে রোদে শুকিয়ে ঘানিতে নিয়ে গিয়ে নারকেল তেল করা, ধান সেদ্ধশুকনো করার পরে ধানকলে নিয়ে গিয়ে ভাঙিয়ে আনা, এ রকম পাঁচমিশালি সব কাজ। অবনীদা আজ এসেছে গরুর খড় কাটতে, বড়মা সন্ধ্যে বেলায় অবনীদাকে চা জল খাবার খাইয়ে হাতে দু'টাকা গুঁজে দিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দেবেন।


মাসিমার গলা পেয়ে অবনী বলে, হ্যাঁ গো কাকী। সেই চারদিন আগে গরুর খড় কেটে দে গেচি, এত্তদিনে ফুইরে যাবার কতা, তাই ভাবলুম, যাই, দু'তড়পা খড় কেটে দিয়ে আসি গে, বর্ষা বলে গরুগুলো তো আর না খেয়ে থাকতে পারবে নে!

বড়মা: ঠিকই করিচিস। দেখছিলুম, জাবনার খড় বাড়ন্ত, ভালোই হলো, তুই মনে করে এলি। নে, খড়কোঁচা বঁটিখানা ধর দিকিনি, বলে পেল্লায় বঁটিখানা কয়লা রাখার কোনো থেকে তুলে বড়মা অবনীদার হাতে ধরিয়ে দিলেন। বঁটিখানা হতে নিয়ে ভালো করে দেখতে দেখতে অবনীদা ও বড়মার মধ্যে কিছু কথা বিনিময় হলো।

অবনী: বঁটিখেনার ধার কমে এযেচে গো কাকী! কাকাকে সামনের হাটে কামারশালে থেকে ধার করে নে আসতে বোলো। তা, কাকা কোথায়? দেকচিনি তো? চায়ের দোকানে ও তো দেখলুম নি!


বড়মা তখন ক্ষণিকের জন্যে কয়লা ভাঙ্গা থামিয়ে দিলেন। সন্ধ্যে সন্ধ্যে আঁচ দিতে হবে। দশটা পেটের রান্না। এই পচা ভাদ্দরে উঠোনের দু'পাকা উনুন যে জ্বালবে তার উপায় নেই। কাঠকুটোগুলো ও তো ভিজে স্যাঁতস্যাতে, কয়লার আঁচই ভরসা।


বড়মা: বঁটির ধারের জন্যে "গুঁড়ে"কে বলে দেবখন। এখন তো তোর কাকা প্রতি হাটবারে হাটে যায় নে। গুঁড়েই বাজার হাট করে। আর তোর কাকা? দেখ গে, তোদের পাড়ায় গেছে হ'তো। এই হপ্তায় ইস্কুল থেকে মাইনে পেয়েছে। দেখ! বাগদি পাড়ায় গেছে বোধ হয়!


অবনীদা পাঁচসেরী বঁটিটাকে মাটির উপর রেখে তার উপর উবুহয়ে বসে খস খস করে খড় কাটতে শুরু করে দিল। শহরের খাটালের গরুদের জন্যে মেসিনে যে রকম ছোট্ট ছোট্ট ইঞ্চি মাপের খড় কাটা হয়, সে রকম নয়। এগুলো হাতে কাটা, মাপে বেশ বড় বড়, দুইঞ্চিয়েক তো হবেই ,তার বেশিও হতে পারে, অবননীদার হাতখানা যে রকম মস্ত, অসুরের মতো!


মেশমশাই, অর্থাৎ পরেশবাবু, বেলসিং গ্রামের মানী লোক, গ্রামের ইস্কুলের জুনিয়র সেকশানের বাংলার মাস্টার। দু'কামরার কাঁচা বাড়ি, সামনে বড়ো উঠোন, সেখানে একটা সবেদা আর জামরুলের গাছ, সবেদা গাছের ছায়ায় একটা ধানের গোলা, গরু-গোয়াল, বিঘে পাঁচেক ধানজমি, স্কুলের মাইনে, তার সাথে টিউশিনি ও আছে। ভালোই চলে যায়, তবে সংসারে অনেক গুলো পেট ও আছে। তাঁর দুপক্ষ। প্রথম পক্ষ গত হয়েছে অনেক আগে। সে পক্ষের এক মেয়ে। যুথিকা। বিয়ে গেছে বহুদিন, গ্রাম নিত্যানন্দপুর। যূথিকাদির আবার দুই ছেলে দুই মেয়ে। যুথিকার স্বামী বাটা কোম্পানিতে কাজ করে। জমিজমা ও বিস্তর, তার অবস্থা ও বেশ ভালো। তবে তার ও জামাইয়ের একটাই অভিযোগ। তাদের বড়ো ছেলে "সুখেন" থাকতে বাবা (পরেশবাবু) কেন "গুঁড়ে"কে তার বাড়ীতে এনে মানুষ করছে!


গুঁড়ে হলো দ্বিতীয় পক্ষ অর্থাৎ বড়মা অর্থাৎ বসুমতির আপন বোন "রানু"র বড়ো ছেলে। ভগ্নিপতির অবস্থা নড়বড়ে, তাই বসুমতি বোনের ছেলেকে তার বাড়িতে রেখে মানুষ করছে। বসুমতির বড়ো ছেলে সুকুমার, যাদবপুর থেকে এঞ্জিনীযারিং পাশ দিয়ে গুজরাটের জামনগরে চাকরি করে, LRDE না কি একটা সরকারি সংস্থায়। সুকুমারের পরে শীলা, B.Sc. পড়ছে, শেষ হবার মুখে। তারপর সুবরণ, ডাক নাম ভুন্ডুলে, বাউন্ডুলে বলা চলে। আর্টসএ হায়ার সেকেন্ডারি দেবে। পড়াশুনা ছাড়া বাকি সবেতেই ওস্তাদ। খেলা-ধুলো, গান-বাজনা, যাত্রা-থিয়েটার, গাজন-ভোজন, এসব নিয়েই থাকে। ভুন্ডুলের পর বুড়ি বা সুজাতা, গার্লস স্কুলে পড়ছে। গুঁড়ে ভুন্ডুলের থেকে দু'বছরের ছোট আর বুড়ির থেকে থেকে এক বছরের বড়, সময়ের সরণিতে হাইফেনের মতো পরেশ হালদারের পরিবারে ঢুকে পড়েছে। গুঁড়েকে বুড়ি সেজদা বলে ডাকে। সুজতার পর আরো দু'জন, তবে তারা নাবালক। 


পরেশবাবুর সব ভালো, পণ্ডিত লোক, বাংলা ও সংস্কৃত তে অগাধ পাণ্ডিত্য, অঙ্ক ও চালিয়ে নিতে পারেন, কিন্তু একটাই দোষ। মাঝে মাঝে বিকেলে "বাংলা" তথা দিশি মদ খেয়ে থাকেন। "বাংলা"র ব্যবসা চলে সরারহাটের একটা শুঁড়িখানায় আর সরাহাটের নিকটস্থ "শ্রীচন্দা" গ্রামে, যাকে সবাই বাগদী পাড়া বলে চেনে। শ্রীচন্দা গ্রামেই অবনী আর দশ পনেরো বাগদি পরিবারের বাস। তাদের দুর্দশার শেষ নেই, কোনো রোজগারের স্থায়ী সংস্থান নেই। চাষের সময় জনমজুরি করে কোনো ক্রমে চলে। বাকি দিনগুলোতে দু'একটা পরিবার লুকিয়ে লুকিয়ে ঘরোয়া "চোলাই" তৈরি করে বিক্রি করে। অবশ্য, অবনী এসবে নেই। তার বাসস্থান বলতে দু'কামরার দাঁত বের করা ইটের বাড়ী, মাথায় খড়ের চাল, লাল সিমেন্টের ফোস্কা পড়া মেঝে। পরিবারে ফর্সা বউ, ছোট্ট সুশ্রী একটা ছেলে, তারাপদ। সম্পদ বলতে, দুটো হাড় ঝিরঝিরে বলদ আর এক খানা হালযন্ত্র। 


আবনীদা পরেশবাবুর ধানজমিতে কাজের জন্যে বাঁধাধরা কৃষি শ্রমিক, গুঁড়ে তার জ্ঞান থেকে দেখে আসছে, আবনীদা চাষের কাজ করে আসছে। চাষের অনেক কাজ, অনেক হ্যাপা! জমিতে হাল দেওয়া, বীজতলা তৈরি করা, "বেমন" ভাঙা, "রোযা" করা, "নিড়েন" দেওয়া, চাপান সার দেওয়া, তারপর ধান কাটা, সেগুলোকে গুছি করে বিচলি বাঁধা, সেগুলোকে জমি থেকে ঘরের খামারে বয়ে আনা, ধানের গাদা দেওয়া, ধান ঝাড়া, ধানের কুটি কুলোর হওয়ায় পরিষ্কার করা, শেষে গোলায় তোলা, এই এত্তো কাজ। এই কাজের জন্যে পরেশবাবুর লোক চাই, অবনীই সেই খাসলোক। সম্ভবত, শ্রীচন্দা গ্রামে যাতায়াতের ফলে পরেশবাবু অবনীকে আবিষ্কার করেন। পরেশবাবুর চাষাবাদ হয়ে গেলে তবেই অবনী অন্যের কাজ করে। নচেৎ নয়। 


এছাড়া ও অবনীর আর একটা মস্ত কাজ আছে। শ্রীচাঁদা গ্রামের শেষ প্রান্তে পরেশবাবুর বিঘে তিনেক জমি। সেটাকে "বারোবিঘে" নামে স্থানীয় সবাই চেনে। পরেশবাবুর বাবা এই একল্পত্তা বারো বিঘে জমির মালিক ছিলেন। পরেশবাবুরা চার ভাই। ভাগাভাগি হয়ে গিয়ে প্রতি ভাই তিন বিঘে করে ভাগে পেয়েছিল। তবুও নাম রয়ে গেছে সেই "বারোবিঘে।" জমিটা খুব জমাটি, ভালো সরু ধানের চাষ হয়। যখন ধানের শীষ বেরোয়, সারা মাঠে শুধুই শীষের ছড়াছড়ি। শীষগুলো রং পাল্টায়, সবুজ থেকে সোনালী, দেখতে বেশ লাগে। কিন্তু বেল পাকলে কাকের কি? ধান পাকলে শ্রীচাঁদা গ্রামের কি! এই ধান তো তাদের পেটের জন্যে নয়। কি ভাবে যেনো গুঁড়ে জেনেছে বা শুনেছে, ধান পুষ্ট হবার আগে দুধ এলে, সেগুলো কেটে শিলে বেটে দুধ বের করে, সেই দুধ আগুনে জাল দিয়ে এক ধরনের পায়েস বানিয়ে শ্রীচাঁদার লোকেরা মুখে পুরে পেটের আগুন নিভোয়। নিজের জমিতে যাতে এরকম অত্যাচার না হয়, সে জন্য মেশমশাই অবনীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন, অবনীকেই ধানজমি পাহারার দায়িত্ত্ব দিয়েছেন।


বড়মার গোয়ালে গরু বাছুর মিলে তিনটে। এক সপ্তার খোরাক অনেকটাই, গাদা গাদা খড় কাটতে হয়, তাই অবনীর কিছুটা দেরি হলো। শেষে বঁটিখানা আবার রান্নাঘরের কয়লাখানায় রাখতে এলো। বড়মা তখন আঁচ দিচ্ছেন।

বড়মা: অবনী, চা খেয়ে যাস। এই বসালুম বলে। খুব দেরি হবে নে।

অবনী: আচ্ছা কাকী।

বড়মা: তোর কাকার কি হলো বল দিখনি!

এখনো তো আসার নামটি নি! তোদের পাড়ায় গেল নাকি?

অবনী: আমাদের পাড়ায় গেলে পাঠিয়ে দোবখনে। সরারহাটে গেলে কিচ্ছুটি করতে পারবনি।

 

অবনীর বাড়ি ফেরার পথে "মরাদা"র চা দোকান পড়ে , সেখেনে চা "খোর"দের এবেলা ওবেলা আড্ডা। এখনকার মতো সেই সময় বাড়ি বাড়ী চায়ের চল তখন ছিল না! অতএব "মরাদা"র চা দোকান। ভালোই চলে। সারাদিন লোকে সেখানে চা খায়, গুলতানি মারে, কেষ্টবিষ্টটু থেকে রয়টার্সের ক্লার্ক, ইস্কুল মাস্টার থেকে জনমজুর সবাই। মুরুব্বিদের বাড়ি "জন" খেটে বাড়ি ফেরার সময় মরার দোকানে চা খেলে গায়ের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। অবনী সেখানেই কাকাকে দেখতে পেল। পরেশবাবু দোকানে উপস্থিত মোসাহেবদের শোনাচ্ছিলেন, "অবনী আর আগের মতন হাল করতে পারে না, বলদদুটোর সাথে ও বুড়ো হয়ে গেছে" ,হটাৎ কথাটা অবনীর কানে এলো। বুকটা ঝ্যেত করে উঠলো, কানদুটো লাল হয়ে উঠলো, গায়ের রং কালো তো, তাই, তেমন বোঝা গেলো না। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলে ও মুখে কিছু না বলে চুপি চুপি বাড়ি চলে গেল। 


অবনী সেই কবে থেকে পরেশবাবুর বাড়িতে যাতায়াত করছে। তখন তার ভরা যৌবন। কালো পাথর থেকে কুঁদে কুঁদে যেন স্বয়ং রামকিঙ্কর তার শরীরখানা বানিয়েছেন। পেশীবহুল আর পেটাই। অপরূপ মুখশ্রী। বড়মা বলতেন, আমাদের সুকুমারের থেকে অবনীকে অনেক ভালো দেখতে। হালে জুড়ে দেওয়া বলদ দুটোর খাটনি কমাতে হলধরেরা লাঙ্গলের "ফলা"কে বেশি মাটির ভিতরে ঢোকায় না। ফলে বলদের খাটনি কমে গেলেও জমির কাদা ও ভালো হয় না, জমি রোয়া করতে অসুবিধে। অবনী এসব ফাঁকির মধ্যে নেই। মন প্রাণ ঢেলে হাল করে। এই জন্যে তার নাম ডাক। আজ পনের-বিশ বছর হয়ে গেল পরেশবাবুর জমিতে অবনী হাল দিচ্ছে। সত্যি বলতে কি এখন অবনীদার চেহারায় সেই জৌলুশ নেই, এবং শরীরে সে শক্তি ও নেই, হয়তো সত্যিই আগের মতো সে আর হাল করতে পারে না, কিন্তু মন মানতে চায় না, এই হালই যে তার পরিচয়। এখনো অবনী নিজেকে ফাঁকিবাজদের দলে ফেলতে পারে না।


এবছর হালের মরসুম সবে শুরু হয়েছে। অবনী হালে গেছে, সঙ্গে পরেশবাবু। তদারক করছেন, এটা ওটা নির্দেশ দিচ্ছেন। তাঁর মনে হলো, জমির কাদা ভালো হচ্ছে না। বললেন, "অবনী, ভালো করে বাগিয়ে হাল ধর দেখি!" কথাগুলো কানে যেতেই অবনীর খারাপ লাগে, অভিমান উথলে ওঠে, লাঙ্গলটাকে জোরে মাটিতে চেপে ধরে। হাল টানতে গিয়ে বলদ দুটোর কাঁধ বেঁকে যায়। তারা কোনো ক্রমে পড়ে যেতে যেতে উঠে দাঁড়ায়। লাঙ্গলের ফাল থেকে মাটির বড়ো বড়ো চাঁই ওঠে। অবনীর মুখ থমথম করে। আজকাল চায়ের দোকানে পরেশবাবু ও অবনী দূরত্ব রেখে বসে। 

সেদিন অবনী বাড়ি ফেরার পথে মরার দোকানে একবার ঢুঁ মারে। দেখে সেদিন ও তার সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে। অবনী আর নিজেকে সামলাতে পারলো না, প্রতিদিন একই কথা শুনতে কারই বা আর ভালো লাগে! সে বলেই ফেললো, "কাকা, যদি আমার হাল পছন্দ না হয়, আমাকে ছেড়ে দাও না কেন!" মেশমশাই এটা আশাই করেন নি। প্রথমে কিছুটা হতবাক হয়ে পড়লেন, বাকি শ্রোতারা চুপ, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে পরেশবাবুর ধীরে ধীরে বললেন "আবনী, যা, আজ থেকে তোকে ছেড়েই দিলাম।" অবনী ও এতটা আশা করেনি, কিছুক্ষন মুখ নিচু করে রইল। মরার দোকানে অবর্ণনীয় নীরবতা। অনেকক্ষণ বসে থেকে শেষে একটা দীর্ঘস্বাস ফেলে অবসন্ন ধীর পায়ে অবনী বাড়ি চলে গেল। বাড়ি গিয়ে তার কড়া পড়ে যাওয়া হাতদুটো কাঠের লাঙ্গলের উপর রেখে বোলতে লাগলো, বলদ দুটোর গায়ে হাত বুলাতে লাগলো। দেখলো তাদের চোখ থেকে জলের ধরা গড়িয়ে একটা রেখা তৈরি হয়েছে নাক অবধি। নিজের চোখদুটো ছলছল করে উঠলেও কোনো ক্রমে নিজেকে সামলে নিল।

 

 

—------------০০০—-------------

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক