১.
বিদ্যায় বানভাসি সংসার সমুদ্র
তুমি গুনী তুমি বিদ্যালঙ্কার, শৌর্যের আস্ফালন আত্ম-অহংকার, বাচালতায়
বাকপটু, শিক্ষনীয় আদর্শের চাটুকারিতা। বিনা প্রয়োগে অসারের তর্জন গর্জন
সার।
অল্প বিদ্যা ভয়ংকারী উচ্ছাসে আত্মগোপন চাতক পাখি।সম্মুখে হায় সাগর
শুকায়ে যায়। বালতি ভরে জল ট্যাঙ্ক ভর্তি, চোখে মুখে আত্মভরি জৌলুসে চকচক,
চকচক করলেই সোনা হয় না। উপমায় মার্জিত উচ্চাশায় বুক বাঁধা স্বপ্ন।
ব্যতিক্রমী চালচলন প্রশয়ে পক্ষপাতিত্ব।
সিলেবাসের ঐকান্তিক ইন্দ্রজালের আটপ্রহরে গুটিয়ে নিরাশ্রয় মুর্খ, কথায়
কথায় হেয় হীনমন্ন্যতার আত্মগ্লানি। শ্বাসরোধে জীবনি শক্তি ওষ্ঠাগত।নুন
আনতে পান্তা ফুরায়, ভাতের পূর্ন থালা স্বপ্ন। চোখে আঁচড়ে রক্ত জল
শিরানালী শুকায়। ঘুমিয়ে অতীত গুমড়ে থাকা চাহিদা দিনপ্রতিদিন, হাহাকার
ছেঁড়া বইয়ের পাতা। হাড়জিরজিরে আঙুল বুলাতে থাকে অপদার্থের আদ্যাক্ষর।
সাঁকোর ওপারে শস্যশ্যামলা ক্ষেতে ঝকঝকে মডেল স্কুল। হাতছানি বিলাসিতা
বৈভব, শৈশবের হাত ধরাধরি আগামী প্রজন্ম।
ঠাটবাট কলার ঝোলানো টাই ইংরেজ সন্তান। মাতৃভাষায় পরজীবি শোষনে ইংরেজী আধিক্য।
আদব কায়দায় দেশী অপ্রচলিত বস্তাপচা। গড়গড় ইংরেজী নম্র মিষ্টি
মাতৃভাষার আঁচল নেয় কেড়ে।পাঠশালায় সাবধানী গুটি গুটি পায়ে অগ্রসর
নিতান্ত নগন্য সামর্থ্য।চাদরের বাইরে হাত পা প্রসারনে দশবার ভাবতে
হয়।শিক্ষা কি মেপে বুঝে বাড়াবে যোগ্যতা মস্তিষ্কের সীমারেখা। না কালো
অক্ষর হবে যেন তেন প্রকারেন অন্ধকার সূর্য।ঘোচাবে অমাবস্যার তমনিশা।আনবে
জ্যোৎস্না স্মিত হাস্য শৈশব চাঁদ গলে যাবে। হবে মায়ের আঁচলে লুকানো সম্বল
আগমনী সূর্য।গনগনে আঁচে সেঁকবে টাটকা রুটি ভূচিত্র, নখদর্পনে সকল
ভবিষ্যতের পরিকাঠামো। পরিশ্রমে খাতায় কলমে আনবে মরা গাঙে সৌভাগ্যের
জোয়ার। হাসি খুশী বঙ্গবাসী পরিনত উন্নত মস্তিষ্কে হবে বানভাসি উচ্ছাসে
সকল সংসার সমুদ্র।।
২.
অতৃপ্ত প্রমীলা
অতৃপ্ত প্রমীলা আমি ফেলে গেছো ছায়া,
কায়াতে নেই তোমার জীবন শৈলী,
শুধু অব্যক্ত যন্ত্রনা দলা পাকিয়ে মাংসপিন্ড হৃদগহ্বরে।
তোমার কাফিনে চাপড়ে চাপড়ে ভাঙ্গতে লেগেছি,
ঠুনকো লৌকিকতার আচার বিচার, আমি যে এয়োস্ত্রী।
চলে গেছো কতক্ষন আগে তুমি,
শুধু পড়ে রয়েছে নিথর, নিষ্প্রান শুষ্ক,
অস্থিচর্মসার।
অন্ধ প্রত্যাশা হাতড়ে হাতড়ে খোঁজে,
নির্বিকার বিবেক অথৈ জলে টালমাটাল,
প্রশ্ন করে কোথায় তুমি।
কোথায় আমার নিশ্চিত আশ্রয় যে সারাজীবন আগলে,
ধরে রাখতে চেয়েছে অতীন্দ্রীয় প্রহরীর ন্যায়,
তার দ্বিধাহীন ছোট বুকে।
আজ আমি সত্যিই অবলা হয়েছি,
কতক্ষন চাপড়াচ্ছি তবু বিধুর বিকল,
ফিরে আসে না প্রান কোনভাবে ঐ বুকে।
তোমার শিয়রে রেখেছি জট ছাড়া প্রাঞ্জল কেশে,
অনেক অভিযোগের চাদরে লুকানো আবদার।
তুমি আসবে তো,
বলো না আসবে আবার লক্ষ্মীটি ফিরে এসো না আমার বুকে।
এই আমার শেষ আবদার।
সকলে মিলে বলতে লেগেছে তুমি আর নেই।
কিন্তু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার নিষ্পাপ হাসি।
এখনো ভুলে ফেলে গেছে বিধি তোমার মুখে।
ঐটুকু আমার শেষ সম্বল।
তোমাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছি শক্তভাবে,
ধুন্ধুমার আন্দোলন চলছে বুকের খালি চরায়।
জোর করে শুকিয়ে দিতে চায় আমার নদীর বুক।
আমি ফিরাতে চাই নতুন করে জীবন্ত টাটকা প্রান।
কানে রেখে ঠোঁট কথাগুলো ফিসফিস করেই যাচ্ছি,
অনর্গল ধারায় অব্যক্ত কথাস্রোত।
তবুও পাড়ের দুদিক কবেই গেছে ভেঙ্গে।
এখন শুধু ছিটকে সরিয়ে পালাতে চায় বুক খালি করে।
সিঁদুরের সিঁথি হতে লেগেছে বাজারের বিক্রীত পন্য।
দুটাকায় কিনে আবার রাঙাবে কেউ অন্যের সিঁথি,
অন্যের সুখের অধিকার।
আজ আমার পংক্তি একেবারে বেমানান, পাপ,
তা পুনরায় তোমার নামে গ্রহনযোগ্য হতে।
কেন বুঝতে চাইছো না তুমি ছাড়া আমিও খাপছাড়া।
চাকা ছাড়া অগতির কেমন করে হবে গতি।
তুমি বড় অবুঝ মানতেই চাও না আমার কোন কথা।
সকলে মিলে টেনেহিঁচড়ে আমাকে ছাড়াতে চায়,
তোমার সঙ্গ,
একদিন এরাই দিয়েছিল চার হাত এক ঘটা করে।
শাঁখ বাজিয়ে উলুধ্বনি সহকারে।
আজ ভ্রমিল শকুনের ছপাৎ শ্যেনদৃষ্টি,
সংসার হল আমার শশ্মান উঠিয়ে ক্রন্দনধ্বনি।
জানিনা তোমার ঐ ধড়ে আছে কোন প্রান,
তবুও জোর গলায় বলতে চাই,
তুমি শুধু আমারি আছো।
আমাদের আজ বৈবাহিক আটচালা চুল্লী,
আজকেও তোমার হাতে শক্ত করে বাঁধা,
আমার হাত।
সকলে আমাকে ফেলে দিয়ে নিয়ে গেল,
সাদা বস্ত্রে আপাদমস্তক ঢাকা তোমার অঙ্গ,
কেউ পাচ্ছে না দেখতে তোমার আকুতির যন্ত্রনা,
তোমার আমার শরীর ঘেঁষটে শুয়ে থাকা।
ছেড়ে দাও ওকে তোমরা কিসে কেন তোমাদের অতো তাড়া,
ছিনিয়ে নিতে কিসে তোমাদের স্বর্গসুখ।
নিত্যদিনের ঝকমারি ঠেলাগোঁজা আর ব্যস্ততার অনুরনন, এটা দরকার ওটা করো।
আজ তো আমাদের দুজনকে আমাদের মতন করে ছাড়ো।
না এখানেও নৈব নৈব চ, শুধু মিথ্যা আস্ফালন।
নিয়ম নিয়ম একটা প্রান নিলে কেড়ে।
বিন্দুমাত্র নেই কোন ভ্রূক্ষেপ।
আবার দলবেঁধে গাইতে চাও অন্য গান।
আমাদের তো আজকের মতন পালা শেষ।
চুল্লীতে নিয়ে যাও আমার শরীর।
ধুপধুপ অন্তর্গমনে ধোঁয়াশা অতৃপ্ত আত্মা আমি।
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে যতই চেষ্টা করো তোমরা,
তবুও পারবে আমার স্বামীকে কেড়ে নিতে।
ঐ দেখো ওর আত্মা বাড়িয়ে দিয়েছে হাত স্মিত হাস্যে,
করবে আমাকে উষ্ণ আলিঙ্গন সব দুঃখ যাবে ঘুচে।
আমার স্বামী এসেছে নগ্ন দেহে শুদ্ধতম সার।
ফেলে দিয়ে আঁচল অস্তাচলে ছুটতে লেগেছি আরপার।
দূরে মা গঙ্গার কোলে দিলাম অন্তর্জলী যাত্রা,
স্বামী সোহাগে তাকে বুকে টেনে নিয়ে,
তুমি ছাড়া আমার অস্তিত্ব অসম্পূর্ন।
তোমা ছাড়া আমি বাঁচতে চাহিনা এই সুন্দর ভুবনে।
আমি শুধু চাই তোমায় প্রিয়া।
তুমি আমার ঐকান্তিক আবদার।
৩.
সোহাগ আমন্ত্রন
নুনে পোড়া ছাপোষা আলুসেদ্ধ ভাত,
সংসারের তেলে জলে বাড় কলমি শাকে তৃষ্ণার্ত ধানীজমি।
বুকেতে বৃষ্টিস্নাত মাটির ঘ্রাণ।
কন্যে তুমি লাল শাড়ি পড়ে,
হাতের থালায় উপচে পড়া জঠরের ক্ষিধে সাদা ভাত।
ফুঁসছে ক্ষুধার্ত সর্প জঠরে।
ওজনি তালা ঝুলিয়েছে স্তনে মাটির স্বাদ।
তোমার চোখের অন্তরালে আমার প্রেম।
আমার অক্ষমতার রোগ।
আমার প্রত্যাশা স্বপ্নমদীর দুগ্ধবতী ধান ফসল।
অন্তিম লাবণ্যে ব্যস্ত সকালের হেঁশেলের সহজপাঠ।
সার্থকতা দুপুরে চাদরের তলায় ঘুম খেয়ে দেয়ে।
লম্বা এক হাত হাই তুলে,
প্রেয়সী তুমি তো সেই কোলবালিশ,
আমার নির্ঘুম চোখে।
তোমার আন্তরিক সোহাগ আমন্ত্রন,
আমার দুপুরের ভাতে।
৪.
ময়ূরকন্ঠীর অন্তর্দহন
পুরুষালী গম্ভীর আওয়াজ ময়ূরের ডাক,
আয় বলছি রাগে হুঁশহুঁশ, আমার চাই তোকে।
ময়ূরী মেলেছে ছত্রে ছত্রে আগমনী প্রেমালাপ।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে যত্র তত্র আঁচলের,
ছেঁড়া ছেঁড়া সুখ পালক।
তুমি বড় বেহায়া লুটেপুটে খাও আমায়,
ক্রমাগত নিষিদ্ধ চুম্বন, আমিও সর্বভুক।
সর্প তোমাকেও নিই আষ্টেপৃষ্ঠে গিলে।
জানি তুমি চলে যাবে একলা ফেলে পশ্চাদগমনে,
তবুও জ্ঞানপাপী নাচি বেঘোরে। তাতা, থৈ থৈ।
বৃষ্টির ছমছম বিবাহের আটচালা।
প্রেমিক তুমিই তো হবে আমার স্বামী একদিন।
অন্তর্দহন বিষাক্ত অমাবস্যা,
নীলঘুম সর্পের অভিশাপ।
ছটফট ক্লান্তির আঘ্রান খোলস।
পরিত্যক্ত রূপ নব নব উন্মোচনে।
নগ্ন মধুপ জ্যোৎস্নার স্রোতে।
নীল সর্পের স্বস্তি ক্ষনিকের ঘুম।
জড়িয়ে জড়িয়ে জট অঙ্গ প্রত্যঙ্গের,
ভ্রমিল উচাটন শঙ্খ লাগা।
ধূপের ধিক ধিক দহন,
নিষিদ্ধ চুম্বন অমৃতসুধা।
পরবাস নীল আঁচলের,
চাদরের তলায় লুকানো নীল প্রেম সর্পের হাঁচি।
সোনা আমি আছি তাকিয়ে দেখো।
আমি থাকবো, সুবিধার সবটুকু রস শুষে নিয়ে, সর্বস্বান্ত
উজাগরে ক্লান্তি,
ঢালতে লেগেছি অবসাদের গহ্বরে। চাই চাই
আমার অমৃত।
যতই কাঁপুক বিষে শরীর।।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন