মিলিত চোখ
দুরালাপনীর সেই রাগত কণ্ঠ ভেসে ওঠার
কথা ভুলিনি, ভুলা যায় না, কী করে ভুলি সে কথা ?
অনেক বছর হয়ে গেছে, তাই না - কি বলো ?
পেছনে তাকাতে আমি আর চাইনা আজকে
সামনে যাবার মানুষ, অতীতে অনেক কিছুই
ছিলো কি ছিলো না থাকতে পারে কি পারে না সে কথা
ভাবলে অবাক হবার নানান ঘটনা আসবে
এসব ঘটনা বিহীন আমাকে খুঁজলে পাবে না
যাকগে পেছনে দোরের সাজোয়া নিকট নগর
এবার বলছি তোমাকে দেখতে যাইনি তা নয়!
উদার আকাশ আর জাগর নদীর তীর
হৃদয় অতলে নিয়ে, সামনে নজর ঢেলে
বড়ই একা চুপচাপ হেঁটে গেছি আমি -
সেদিন কোথায় ছিলে তুমি খুব কাছাকাছি
না কি এক হাজার মাইল দূরে ?
ভোর চলে যাবার মিলিত চোখ
হাসির খোয়াব হঠাৎ হারিয়ে ফেলছিলো শুধু
মোহন রাতের গোলাপ খুনের ভাষা ভুলে গিয়ে।
পরিপূর্ণ তুমি
ডুবে যাচ্ছি নাতো, ঠাঁই কোথায় ? দূরে না কাছে
ময়ূর পঙ্খী নাও, ভীষণ দুলছে
দুঘন্টি পালে দমকা হাওয়া খেলছে দারুণ খেলা
এরপর আরো আছে ঢেউয়ের মাতলামী
ঠাঁই কি নেই তাহলে আজকে আমার
আপৎকালীন আশ্রয়ের পারাপারে
আপন বলতে এক নাম জানি সে আর কেউ নয়
আশায় ভালোবাসায় সেতো তুমি
তুমি ছাড়া এ দুর্মর ক্ষণে কারো কথা কোন স্মৃতি
মনোভূমি আলোকিত করার সাহস করেনি
ডুবে যাচ্ছি নাতো ঠাঁই কোথায় দূরে না সুদূরে
মনপবনের নাও ভীষণ দুলছে হালে পানি নেই নেই
তুফানী হাওয়া যা খুশী তাই বলছে
ঢেউয়ের দাপট বাড়ন্ত লাউয়ের ডগায় সুন্দরী ফণা তুলে
আপন পর ভুলে হানছে আঘাত
তবে কি কোথাও যাবার নেই কিছুই পাবার নেই
অভীরু মনোপ্রাণ ছুঁই ছুঁই করছে ভয়ের আকাশ
চেনা জানা কেউ নেই ধারে কাছে
অবসাদ আর ক্লান্তির কাটাতারে জড়িয়ে যাচ্ছি কেবল
দশদিক থেকে ঘিরে ফেলছে গোলাপ বাগান
কোথায় তুমি নিশিভোর স্বাগত সূর্যমুখী
উদ্ধার করো ডুবে যাচ্ছি হে বিপত্তরাণেষু
চাঁদ ডুবলে ওঠে আসে রোদে ভাজা কড় কড়ে সূর্য
আমি ডুবলে ওঠে এসো তরতাজা পরিপূর্ণ তুমি।
ঝিনুক গোলাপ
মেঘ যায়
বাতাসের হাতে গোলাপ ছড়িয়ে
চোখ যায় নিশিভোর দোভাষী বাগানে
চারুকারু জীবনে বাজ পাখিরা এখন
বলে যায় কাহিনীর চেয়ে সরল আকাশ
বড় বেশী প্রয়োজন তাই
তুমি যাও সাগরের কিছু রূপালি ভাষণ
শুনে আসো বারুদের জ্বালা হৃদয় গভীরে
পরিচিত শোক সভা ডেকে বলুক এসেছি
রাত যায় যেতে থাক, চোখে দিবস হনন
এককথা তুমি যাবে যেতে থাকবে সাগরে
একা একা জলহীন শুধু জলের সোহাগ
বুক পেতে নেবে আর দেবে ঝিনুক গোলাপ
হিংস্র আদিম ভোরাই যৌবন ছুঁয়ে
বলবে আরও অধিক পাবার কথা
আমূল পাবার দ্বন্দ্বে ছন্দ তুলে
হারায় হারাবে অনাচাষী হৃদয় গ্রাম।
ঢেউ দেখে কেউ
সেহেলী তোর কারুকাজহীন ঠোঁটের লাল দীঘিতে
এখনো কি বেদনা অপার হাসির পদ্ম ফুটে কি-না?
জানিনা জানিনা জানবোনা আর কোনদিন
একদশক বাদে বাহাদুর শাহ লেকের ধারে
শুধু চোখের দেখা হলেও কথা হয়নি তোর সাথে
সে দুঃখ বোধটা আজকাল মনের ভাঙ্গা মঞ্চে
স্মৃতি সভার আয়োজন করে বসছে নোটিশ ছাড়াই।
দুলালী তুই বলীর পাঠা আমার কাছে পূজোর ফুল
কল্পনা সেতো স্নান ঘাটের জলকন্যা, বেদানা তুই
ছুটে যাওয়া জাবর কাটা ঘাস বিচালি সারা জীবন
পারশীন চিরদিন দিল আফরোজ নাচে গানে
মুখর হয়ে থাক তুই নীল কাঁচ জলসা ঘরে।
বেলী গন্ধছন্দহীন স্বরাজে বিরাজিত থাক
বাবলি তোর হাসির ঢেউ দেখে কেউ হারিয়ে না যায়
নীলকণ্ঠ নীলাঞ্জ তোর নীল নদের দুই তীরে
দন্ডায়মান যুদ্ধ পাগল কামচতুর সমরজান্তা।
ভুলের স্বরাজ
ফুল পাখি নদীর বিপদ ছিলো খুব কাছে
ছিলো গান একদা তোমার সুরে পরাজিত
সে কথা বেগমতির তীরকে অস্থির বানায়
ফুলের পাপড়ি ছড়াবে
পাখির গান অভিমানে
নদীর আবেগ জড়াবে
তাজমহলের জানা ইতিহাস ভুলে যাও
ভুলের স্বরাজ কামনা করছি নির্ভয়ে
তুমি যদি চাও হে সূর্যমুখী
সে ফুল পাখি নদীর ঘাটে যেতে
তারকাটা দুঃখে ভেসে যাবে লোকসুখ
তোমার ছেঁড়া ছবি দেখে হাসবে
হৃদয় খুনী সমতট নিবাসী
সেই পুরনো প্রেমিক পাপী।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি :
কবি ও সাংবাদিক শেখ সামসুল হক ষাটের দশকের কবি, সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা।
মাতা-মৃত কুলসুম বিবি, পিতা-মৃত শেখ জয়নাল আবেদীন। জন্ম ২২ নভেম্বর, ১৯৪৯
সালে ফরিদপুরের পশ্চিম চর টেপাখোলা। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
এম.এ পাশ করেন। কাব্যগ্রন্থ-৪টি : চমৎকার সাহস-১৯৮৫, যাই ফিরে যাই-১৯৮৯,
রমণীয় স্বাধীনতা-২০১৪, রূপালী জলের করাত-২০১৬। গবেষণা গ্রন্থ-১টি
(ফরিদুপরের লোকসাহিত্য-১৯৮৪), যৌথ কাব্যগ্রন্থ-১টি (শব্দের আকাঙ্খায়
সূর্য-১৯৭২), বিষয়ভিত্তিক কাব্য সংকলন সম্পাদনা ২০টি। একক কবির সমালোচনা
গ্রন্থ সংকলন ও সম্পাদনা ৫টি। সম্মাননা- ৫টি, পুরস্কার-৩টি ও
স্বর্ণপদক-১টি। সভাপতি-ছাত্র ইউনিয়ন (ফরিদপুর শহর কমিটি- মেনন
গ্রুপ-১৯৬৮-৬৯), ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে আলবদর বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে
কারাবরণ, ২০ এপ্রিল, ১৯৭৪ সালে কবি রফিক আজাদের কবিতার ফিচার লিখে
গ্রেপতারি পরোয়ানা। আহবায়ক- ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (অনুপ্রাস
ইউনিট-১৯৯২), ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্বে গণগ্রেফতার। ফরিদপুর জাদুঘর
প্রতিষ্ঠাতা ও আলাওল সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তকদের অন্যতম। সম্পাদক মাসিক
নীলাঞ্জ ও মাসিক অনুপ্রাস। খলিলউল্যাহ মৃধা স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ
সম্পাদক, বাংলাদেশ বনবাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু
বিজ্ঞান কবিতা পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ও অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠনের
নির্বাহী সভাপতি।
শেখ সামসুল হক (Sk. Shamsul Haque) জে-২৮ (৬ তলা), বর্ধিত পল্লবী, ঢাকা
-১২১৬ । ফোন : ০১৬৭৪৩৩৬০৯৯।
anupraskabita@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন