Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

অণুগল্প : কৃষ্ণেন্দু পাল






।।গল্প হলেও সত্যি ।।




আজ ভোর ভোর ঘুম ভেঙে গেল, ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল তিস্তা। তিনতলার এই ব্যালকনিটা থেকে এই আবাসনের অনেকটা দেখা যায়। চওড়া রাস্তা মাঝখানে, তার দুপাশে সারি দিয়ে কোম্পানির কোয়ার্টার্স বা ফ্ল্যাট, রাস্তার দুপাশে গাছের সারি , তার পরে দূরে ফুটবল গ্রাউন্ড দেখা যাচ্ছে, টেনিস কোর্ট, ভলিবল কোর্ট, তারপর কমপ্লেক্সের সীমানা ছাড়িয়ে দূরে ছোটবড় পাহাড়ের উঁকিঝুঁকি। ঝাড়খণ্ডের রাজরাপ্পায় সি. সি. এল কলোনি, ছোট নিরিবিলি শহর । আসানসোল থেকে এখানে বিয়ের পর এসে উঠেছিল তিস্তা , তারপর কখন যেন ভালবেসে আপন করে নিয়েছিল শহরটা কে ও নিজেও জানেনা।

এখন ভোর পৌনে ছটা প্রায় , তিস্তা তাকিয়ে দেখল সুমিত্রাদি নীচে ঝাঁটা হাতে মন দিয়ে সামনের রাস্তা টা ঝাড়ু দিচ্ছে, শুকনো পাতাগুলো তুলে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলছে। সুমিত্রাদিকে যত দেখে তত অবাক হয় তিস্তা , আজ বাদে কাল কলোনির সুইপার পোষ্ট থেকে অবসর নেবে ও , কিন্তু আজও কেমন নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজ করে যাচ্ছে । 'ও ..সুমিত্রা দি ' ডাকল তিস্তা ব্যালকনি থেকে , প্রথমে শুনতে পায়নি সুমিত্রাদি। আর একবার ডাকায় মুখ তুলে তাকিয়ে হাসল সুমিত্রা, তারপর ফ্ল্যাটের নীচে এসে হাসি মুখে বলল "কেমন আছ বহু ? কোনো কাজ আছে তো বলো আভি , পাখানা বাথরুম সাফা কোরতে হবে কি?"

তিস্তা বলল "না না সব পরিষ্কার আছে ,দুদিন আগেই তো করলে।" তিস্তার মায়া পড়ে গেছে সুমিত্রাদির ওপর বলল "কাল রাতের রুটি আছে, খাবে ? চা করছি এসে নিয়ে যাও "
"কেন খাব না বহু, দাও, ওউর তো একদিন, কালহি তো হামার রিটায়ারমেন্ট আছে ।আর তো তুমার সাথে দেখা হোবে না।" বলে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের কোনা মুছল সুমিত্রা । সুমিত্রা দির ওপর তিস্তার মায়া অমূলক নয় , গত দশ বছরে একদিনও মানুষ টা কে ছুটি নিতে দেখেনি , যখন যা বলেছে হাসি মুখে করেছে , মুখে কোনো কথা নেই। তিস্তার অবাক লাগে এই দশ বছরে কোনোদিন সুমিত্রাদি কে জিজ্ঞেস করা হয়নি ওর বাড়ির কথা , কে আছে না আছে , শুধু জানে স্বামী অন- সাইট মারা যাওয়ায় নিরক্ষর সুমিত্রাদির কপালে এই সুইপারের চাকরিটি জুটেছিল। তিস্তা যখন যেমন পারে পুরোনো শাড়ি, খাবার এসব দেয় ওকে , হাসি মুখে নিয়ে যায় সুমিত্রা দি । আরও ভালো লাগে এই জন্য যে কোনো চাহিদা নেই এই মহিলার। এই সুমিত্রাদি কাল চলে যাবে ভাবতেই খারাপ লাগছিল তিস্তার।

গ্রুপ -ডি সুইপারের পোষ্ট হলেও অফিসের তরফ থেকে আবাসনের ক্লাবঘরে একটি ছোট্ট বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। লোকজন খুব কম , বেশিরভাগ ই অফিসের । তিস্তা একটা সাড়ে তিনশো টাকার ছাপা শাড়ি কিনে নিয়ে গিয়ে বসে আছে , আজকের দিনে এইটুকু উপহার ঐ মানুষ টিকে দিতে চায়। প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে সুমিত্রাদি আজ একটা সাদা-নীল পাড়ের নতুন শাড়ি পরে এসেছে , তিস্তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল । মঞ্চের মাঝখানে সুমিত্রাদিকে বসানো হয়েছে জোর করে , 'সাহাব' দের পাশে চেয়ারে বসতে লজ্জা পাচ্ছিল সুমিত্রাদি। আশেপাশে অফিসের বড়বাবুরা। এক এক করে সবাই সুমিত্রাদির কর্তব্যনিষ্ঠার কথা বলে যাচ্ছেন, তিস্তা দেখছে সুমিত্রাদি চুপ করে মাথা নিচু করে শুনে যাচ্ছে। তিস্তা ভেবে পাচ্ছিল না , কখন দেবে শাড়ি টা । সুমিত্রাদি কে অফিসের তরফ থেকে উপহার গুলি দেওয়া হচ্ছিল, সাকুল্যে পঞ্চাশ জন লোক বসে আছে। সুমিত্রাদিকে কিছু বলতে অনুরোধ করা হল বিদায়ের দিনে ।

আঁচলের কোনায় চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়াচ্ছিলেন সুমিত্রাদি , এই সময়ের হুটারের আওয়াজ করতে করতে তিনটি গাড়ি পর পর এসে দাঁড়াল ক্লাবঘরের দরজায়। সবাই অবাক হয়ে গেল , যখন প্রথম লাল বাতি লাগানো গাড়ি থেকে পুলিশ প্রোটেকশন এ নেমে এলেন সিওয়ানের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট মহেন্দ্র কুমার । তার পিছনের গাড়ি গুলি থেকে পর পর আরো দুজন সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তি, গট গট করে তারা ক্লাবে ঢুকে মঞ্চের দিকে এগোতে লাগলেন। কি হয়েছে কেউ কিছু বুঝতে পারছে না , কিন্তু সবাই উঠে দাঁড়িয়েছে স্বয়ং ডি.এম বলে কথা। ডি.এম মহেন্দ্র কুমার মঞ্চে উঠেই যেটা করলেন তা দেখে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেল। এ কী করছেন উনি ? সামান্য সুইপারের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম? তার পর যা হল যেন ভাষায় প্রকাশ করার অতীত। সুমিত্রা দেবী জড়িয়ে ধরলেন ডি.এম মহেন্দ্র কুমার কে , ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন । কেউ কিছু বুঝতে পারছে না! পরের আরো দুজন ব্যক্তি ও পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে জড়িয়ে ধরলেন সুমিত্রাকে । মাইক টা টেনে নিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে ডি.এম মহেন্দ্র কুমার কথা বলা শুরু করলেন আর মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিল সবাই ।

"হ্যাঁ , আপনাদের সুইপার দিদি সুমিত্রা দেবী আমাদের মা । আমি মহেন্দ্র কুমার , সিওয়ানের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, ওনার ছোটো ছেলে, আমার মেজদা ধীরেন্দ্র কুমার হলেন একজন চিকিৎসক, আর আমার বড়দা বীরেন্দ্র কুমার একজন রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার। আমাদের বাবা মারা যাওয়ার পর মা ছোট থেকে অনেক কষ্ট করে আমাদের পড়িয়েছেন । সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন পড়াশোনায় । বলতেন বেটা তোকে আমার সাহাবদের মতো বড়ো হতে হবে । আমরা কিন্তু মাকে নিরাশ করিনি , মায়ের কষ্টের দাম দিয়েছি আমরা , আজ আমরা সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। আমরা মাকে কতদিন বলেছি মা , আর এই কাজ কেন করছ তুমি ? মা উত্তর দিয়েছেন যে কাজ করে তোমাদের এতো বড়ো করেছি , আজ অবস্থা ভালো হওয়াতে সেই কাজ ছাড়ি কি করে ? এই কাজ মায়ের কাছে অনেক দামী আর প্রিয় । মার থেকে শিখেছি কোনো কাজই ছোটো নয় , সবারই এটা শিক্ষণীয়।"

তিস্তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল , হাতের শাড়িটা কে কোথায় লুকাবে ভেবে পাচ্ছিল না । সুমিত্রাদি কে তখন মাইকটা দেওয়া হয়েছে । কিছু বলতে পারছিলেন না , ত্রিশ বছর সুইপারের কাজ করা সুমিত্রাদি, অনেককষ্টে বললেন হাতজোড় করে , " সাহাব আমার ছেলেরাও তোমাদের মতো সাহাব ।" সবাই হাততালি দিয়ে উঠল ।

সুমিত্রাদি মঞ্চ থেকে নেমে যাচ্ছে , তিস্তা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে । সবাই কে অবাক করে দিয়ে সুমিত্রা দি তিস্তার সামনে এসে দাঁড়াল , "এই বহু , আমার শাড়িটা দিবি না? " হাসি মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুমিত্রাদি , তিস্তা এই প্রথম জড়িয়ে ধরল সুমিত্রাদিকে , ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল , অনেকদিন পর মায়ের স্পর্শ পেল যেন।

=== সমাপ্ত ===

কৃষ্ণেন্দু পাল 
Hill View Park (South) 
                 Asansol  
                 PIN :713304 
                 West Burdwan
                 WB 
Phone no. 9832161689

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩