স্বপ্নের রঙ
সুচন্দ্রা বসু
দেবুদা এসেই বলল শোন ডাক্তার, নববর্ষে কি করছো।
কি আর করব বল?
ডাক্তারিটা পারি, তাই করছি।
দেবুদা বলল বাঙালির বর্তমান ক্যান্সার আক্রান্ত। তুমি এর চিকিৎসা জান?
হঠাৎ তুমি এমন কথা বলছো কেন ?
না বলে আর কি করি বল ?
আচ্ছা, তুই ভেবে দেখ, বাঙালির নিজস্ব বলতে এখন আর আদৌ কিছু আছে?
কেন বাংলার আচার আচরণ ও সংস্কৃতি তো আছেই।
সে ছিল একসময়।আজ সে'সব হারিয়ে গেছে। আজ যেটা বাঙালির আছে সেটা অ-সদাচরণ অপ-সংস্কৃতি।
পঞ্জিকা মতে বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ।
না এখন আর বারোমাসে তের পার্থবণ নয়। চোদ্দপার্বণ।
বাঙালি অন্যের সংস্কৃতি গ্রহণ করতে ওস্তাদ এখন।
দেখ না কোনকালে বাঙালি এমন ঘটা করে গণেশ পুজো করত? কিম্বা খ্রীস্টমাস ডে বা নিউইয়ার পালন করত? আমাদের ছিল সবেধন নববর্ষ, পৌষসংক্রান্তিতে পিঠে-পুলি-পায়েস খাওয়া।
সেসব কোথায় হারিয়ে গেল। আছে শুধুমাত্র দূর্গাপূজা কালীপূজা লক্ষ্মীপূজা।
তা যা বলেছিস
ভেবে দেখ,শিক্ষিত বাঙালিরা নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে লজ্জা পায়।ক'জনে আর বলে । তারা আধুনিক হতে গিয়ে ইংরেজি ভাষার সমাদর করে। বাংলা মাধ্যম স্কুলে না পাঠিয়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে নিজেদের সন্তানদের পাঠায়।
শুনে দেবুদা আফসোস করে বলল, জানি রে বাঙালির বাঁচার আশা নেই।
এইতো সেদিন আমার চেম্বারে আঠারো বছরের একজন তরুণী এসেছিল। তাকে আমি পরীক্ষা করতে করতে,কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করলাম 'বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও ?'
মেয়েটি আমাকে আশ্চর্য করে বললো, "মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই"। আমি তার মুখের দিকে থমকে
তাকালাম।সচরাচর কেউ তো এমন কথা বলে না। বুঝতে পারলাম মেয়েটির স্বপ্নে রঙ ধরেছে।
বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে সে। বাবা মায়ের ইচ্ছে ছিল ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার করে গড়ে তুলবে তাকে।বাবা মায়ের ইচ্ছায় মেয়েটির কোন সায় ছিল না। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার তো অনেকেই হয়। কিন্তু মানুষের মতো মানুষ ক'জন হয় এই সমাজে। মেয়েটি মানুষের মতো মানুষ হতে চেয়েছিল ।কিন্তু তার বাবা মা সে ইচ্ছের কোন মূল্য দেয়নি।আসলে বুঝতে চায়নি মেয়েটির ইচ্ছের গভীরতা।
শুনে দেবুদা বলল সত্যি এটা বাঙালি-জীবনের বড় ট্রাজিডি। বাঙালিরা সন্তানের ভিতর দিয়ে তাদের নিজেদের ইচ্ছে পূরণ করতে চায়।কিন্তু সন্তানদের ইচ্ছে পূরণে কোন সহযোগিতা করে না।
অথচ দেখ পাশ্চাত্যদেশের লোকেরা তাদের সন্তানদের ইচ্ছেমতো মানুষ হতে দেয়। তারা তাদের সন্তানদের ভিতর দিয়ে নিজেদের ইচ্ছে পূরণ করতে চায় না। বাঙালিদের মতো তারা তাদের সন্তানদের কিছু বানাতে চায় না। ইচ্ছেমতো মানুষ হতে দেয়।
শুনে ডাক্তার বলল বাঙালির এই রোগটা হৃদয়বিদারক, ক্যান্সার আক্রান্ত।
================
সুচন্দ্রা বসু
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন