শুধু নারীদের লেখায় এক উচ্চমানের পত্রিকা
কোয়েলী ঘোষ
নানা জেলায় অনেক ছোট পত্রিকা দেখি কিন্তু নারীদের নিয়ে পত্রিকা খুব কম ।
নারীজীবনের অন্তরের কথা ,দুঃখ ,ব্যথা অকপটে বলার সুযোগ কম । সে কথা মনে
রেখে বীরভূম জেলার হেতমপুর থেকে প্রকাশিত হয়ে চলেছে আলোর বেণু । সেই আলোর
পথের দিশারী সম্পাদিকা রীনা কবিরাজ ।তাঁর সাথে আছেন প্রাক্তন শিক্ষিকা
,অধ্যাপিকা , লেখিকা ,কবিরা -- যাদের লেখনীতে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে পত্রিকা ।
সম্পাদকীয় কলমে রীনা কবিরাজ চেয়েছেন অপসংস্কৃতির পরিবর্তে সুস্থ্য
সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে আহ্বান জানিয়েছেন । নানা সাহিত্যসভায় তাঁর তিক্ত
অভিজ্ঞতাও হয়েছে যেখানে টাকার বিনিময়ে ব্যাচ ,পুরস্কার দেওয়া হয় যা
যথেষ্ট নিন্দনীয় । তুলে ধরেছেন গ্রামীণ লোকসংস্কৃতির এক সার্বজনীন রুপ ।
সেই নির্মল আনন্দের আড্ডায় যেন ভাটা পড়েছে ।
কাজী নজরুল ইসলামের শিশুপ্রেমিক রুপটি তুলে ধরেছেন মীরাতুন নাহার । পুত্র
বুলবুলের মৃত্যুতে শোকবিহবল কবি গেয়েছেন --
''গানের পাখি গেছে উড়ে ,শূন্য নীড় / কণ্ঠে আমার নাই সে আগের কথার ভিড় ''
। কচি ,নিষ্পাপ শিশুর প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালবাসার প্রকাশ পেয়েছে
লেখনীতে ।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যসময়ের এক উল্লেখযোগ্য কবি প্রিয়ম্বদা দেবী । কবি
রবীন্দ্রনাথের সাথে তাঁর আত্মীয়তা ,পত্রাবলী নিয়ে মনোজ্ঞ প্রবন্ধটি রচনা
করেছেন প্রণতি গাঙ্গুলি । তাঁর কবিতার দুঃখ , গভীরতা ,আশ্রয় ,বিচ্ছেদ একে
একে ফুটিয়ে তুলেছেন ।
বাংলা সাহিত্যের এক রাজেন্দ্রাণী ,রানী চন্দের জন্মশতবার্ষিকী
অন্যমনস্কভাবে পেরিয়ে এসেছি । তাঁর আঁকা ,লেখা , শান্তিনিকেতনের সঙ্গে
,কবির সাথে যোগসূত্র যত্নসহকারে লিখেছেন গীতশ্রী বন্দনা সেনগুপ্ত ।
''যাঁহা যাঁহা নেত্র পড়ে তাঁহা কৃষ্ণ স্ফুরে '' ভক্তহৃদয়ের সেই উপলব্ধি
নিয়ে যায় সেই আনন্দ সাগরে -- তারই প্রতিচ্ছবি শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা
প্রবন্ধে বানী দাস । প্রাণের ঠাকুরকে মর্ম চোখে দেখা , গোপিনীর সাথে লীলা
,সেই বাঁশির সুর যেন মোহিত করে রচনায় ।
চীন ভ্রমণের কাহিনী , সে দেশের খাদ্য , জীবন যাপন ,নানা বিখ্যাত স্থানের
বর্ণনা অজ্ঞাত এই দেশকে জানার সুযোগ করে দেয় ।
এক বিতর্কিত লেখিকা কমলা দাস । তাঁর কবিতা নিয়ে সুদীর্ঘ আলোচনা ও
ইংরাজিতে অনুবাদ অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে ।লিখেছেন সুমিত্রা পাল ।
''এখন মেয়েরা '' প্রবন্ধে মেয়েদের বর্তমান পরিস্থিতি ,ঘরে বাইরে তাদের
দুর্দশা ,ধর্ষণ ,কন্যাভ্রুন হত্যা ইত্যাদি সামাজিক সমস্যা নিয়ে কলমে
প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনুরাধা কুণ্ডু ।
''গল্প শেষ ''প্রবন্ধে সেকাল এবং একালের নানা বিবর্তন ,পরিবর্তন নিয়ে
অনবদ্য লেখা লিখেছেন দেবযানী দাস সিংহ ।
'' তিন তালাক বনাম অভিন্ন দেওয়ানী বিধি '' মনীষা বন্দোপাধ্যায়ের এক
প্রতিবাদী লেখা যা বাস্তবে রুপ পেয়েছে আইনসম্মতভাবে ।
সার্ধ শতবর্ষ স্মরণে রজনীকান্ত সেনকে নিয়ে লিখেছেন রীনা কবিরাজ । কবির
জীবন , আধ্যাত্মিকতা , আত্মনিবেদন ,দেশাত্মবোধ রূপটি ,শেষ জীবনের দুঃখ
,অসুস্থ্যতা ,প্রয়াণ চমৎকার বর্ণিত হয়েছে ।
''কবে শুরু পথ চলা '' ঊর্মিলা চক্রবর্তীর অসাধারণ লেখনীতে সেই হ হোমারের
অডিসি মহাকাব্য থেকে শুরু করে আজকের নারী মহিলা কবিদের বোধ,জীবনদর্শন
কোথাও পিছিয়ে নেই । মৌনতা ভেঙে মেয়েরা এগিয়ে আসবে ,প্রেরণা পাবে ।
সম্প্রতি গত হয়েছেন লেখিকা পুষ্প কর । রয়ে গেছে তাঁর অনেক লেখা ।তার মাঝে
এক অসাধারণ গল্প ভূমিজ । পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের সাহেব হয়ে যাওয়া
ছেলের ফিরে আসা মাটির টানে ।
প্রেমের সম্পর্কের মান - অভিমান , শেষে মনের মধ্যেই মনের মানুষের বাস ,
এই উপলব্ধি নিয়ে লিখেছেন ''চিরন্তন শ্লোক গল্পটিতে শান্তা সরকার ।
পাত্রপক্ষ গল্পটিতে মুক্তি রায় চৌধুরী এক ঠকে যাওয়ার গল্প লিখেছেন ।
পার্বতী ভট্টাচার্যের লেখা ''যে ঘর পৃথিবীর কোথাও নেই '' অসফল এক প্রেমের
কাহিনী , জীবনের শেষেও সেই ঘর খুঁজে যাওয়া ।
''অশ্রুনদীর এপার অপার '' গল্পটি ডাঃ শর্মিষ্ঠা দাসের লেখা । একটি মেয়ের
অ্যাসিড আক্রমণের পরও শিরদাঁড়া সোজা করে হাঁটার গল্প টি সময়োপযোগী ।
বৃষ্টি এবং সেই নদী গল্পটি কেয়া গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ।শিক্ষিকা ,ছাত্রীর
গল্প ,প্রকৃতি সেখানে জীবনের সাথে একাত্ম হয়ে গেছে ।
কোয়েলী ঘোষের লেখা আঁধারে আলো গল্পটি এক গ্রাম্য মেয়ের গল্প ।অল্প বয়সে
বিয়ে না দিয়ে মেয়েটির চোখে আলো আনার কথা বলা হয়েছে ।
সোমা প্রামাণিকের লেখা ভোরের আলো গল্পটি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে ভুল
বোঝা বুঝি এবং পরে বুঝতে পারা ,ফিরে আসা ।
বিকলাঙ্গ শিশু জন্মের সময় মাতৃ হৃদয়ের টানাপোড়েন,যন্ত্রণার অনুভব মধুমিতা
সরকারের ' মা '' রচনা । চমক এনেছে রম্যরচনা ''চিরুনী বিলাস '' অনুভা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ।
কবিতা '' দুটি মানুষ '' ঊর্মিলা চক্রবর্তীর লেখা অসামান্য ।দুই বিপরীত
ধর্মীর বোনের কাব্যকাহিনী । যূথিকা বসুর লেখা ''সত্যদ্রষ্টা কবি '' ,
জ্যোৎস্না কর্মকারের লেখা '' বিবাহগীত '' , মধুছন্দা মিত্র ঘোষের লেখা
''সফরনামা '' ,
রিমি দের লেখা উত্তাপ , অঞ্জলি দাসের লেখা ''ফেরার গল্প '' , ভাস্বতী রায়
চৌধুরীর লেখা '' বুঝতে পারা '' শীলা বিশ্বাসের ''অক্ষর রৌদ্র '' পাপড়ি
ভট্টাচার্য র লেখা পোশাক ,রঞ্জনা রায়ের উৎস কবিতাগুলি অপার মুগ্ধতায় ঋদ্ধ
করেছে । পাখির জন্ম অনিন্দিতা গুপ্ত রায়ের দীর্ঘ কবিতা অসাধারণ । বেড়া
পার স্বাতী ঘোষের লেখা কবিতা ,ছায়ার মায়ায় -- শেফালি চক্রবর্তী ,বছর
পরে--কৃপা লক্ষ্মী দাস , ভোরের আলোয় --সুজাতা দে , সভ্যতার সংলাপ --সাধনা
ভট্টাচার্য ,রাঙা আলো সময় --ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায় , ভরা --কুসুমপ্রভা
বিশ্বাস --- প্রতিটি কবিতাই নিজস্ব লেখনীতে সমৃদ্ধ করেছে ।
আলোর বেণু সব মিলিয়ে এক উচ্চমানের পত্রিকা । সুগম হোক পথচলা ।আগামীর জন্য
শুভেচ্ছা ,শুভ কামনা ।
পত্রিকাঃ আলোর বেণু ২০১৭
সম্পাদিকা --রিনা কবিরাজ । সহ -সম্পাদিকা -- মধুমিতা সরকার ।
বীরভূম জেলার হেতমপুর থেকে প্রকাশিত
মুল্য --মাত্র ৩০ টাকা ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন