google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re পুরাবর্ত্ম – নতুন সরণী বেয়ে পুরাণের নবনির্মাণ। লেখক শমীক জয় সেনগুপ্ত।।আলোচকঃ দীপা কর্মকার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৬ জুন, ২০১৮

পুরাবর্ত্ম – নতুন সরণী বেয়ে পুরাণের নবনির্মাণ। লেখক শমীক জয় সেনগুপ্ত।।আলোচকঃ দীপা কর্মকার






# পুরাবর্ত্ম – নতুন সরণী বেয়ে পুরাণের নবনির্মাণ।
# লেখক শমীক জয় সেনগুপ্ত। 
# প্রকাশক – অভিজয় প্রকাশনী।








সম-বিসম-উভকামিতা এসবের উর্দ্ধে গিয়ে মানুষের সম্পর্কের কথা 

 

দীপা কর্মকার



কলকাতা বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন প্যাভেলিওনে ঘুরতে ঘুরতেই হঠাৎ দেখলাম কোন
এক নিউজ চ্যানেলে ভদ্রলোক (যদিও দেখে মনে হল খুব বেশী বয়স হলে পঁচিশ বছর
হবে) বাইট দিচ্ছেন। প্রসঙ্গ – ভারতীয় পুরাণ মহাকাব্য ও সমকামিতা।
সমকামিতা এমনই এক সেক্সুয়াল প্রেফারেন্স বা যৌন চাহিদা যা নিয়ে লোকজন যে
প্রকাশ্যে কথা বলে এমন ধারণা আমার ছিল না। অনেকের মতে আমিও ভাবতাম এ
জিনিসটা আমাদের দেশে কেন? কিন্তু ছেলেটির কথা বলার মধ্যে এমন এক সততা ছিল
যা আমাকে মুগ্ধ করে। চলে যেতে চেয়েও পাশের টেবিলে বই নাড়াচাড়ার অছিলায়
দাঁড়াই। শুনি কি বলছে। কথাগুলো যুক্তিসঙ্গত তাও মানতে কেন জানি দ্বিধা
হচ্ছিল। চ্যানেলের লোকজন চলে যেতে ওদের স্টলে গেলাম। সপ্তপর্ণ পত্রিকা।
আর পাঁচজনের মত ছেলেটি আমাকে বই পত্রিকা এসব দেখাচ্ছিল। আমি সাহস করে ওর
ওই মিডিয়াকে বলা কথাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারলাম না। একে আমার ছেলের
বয়সী, তায় আমি এই বিষয়ে কথা বলতে অভ্যস্ত নই। তা যা হোক যে বইটা প্রসঙ্গে
এত কথা সেটি কিনলাম। সঙ্গে আরো দু একটা কুচো বই। কিন্তু বেশীক্ষণ
দাঁড়াইনি। তাড়াতাড়ি বইটা নিয়ে বেরিয়ে যাই। পুরাবর্ত্ম – নতুন সরণী বেয়ে
পুরাণের নবনির্মাণ। লেখক শমীক জয় সেনগুপ্ত। প্রকাশক – অভিজয় প্রকাশনী।
কি একটা যেন পুরস্কারও পেয়েছে বইটা। লেবেল সাঁটা ছিল, বাড়ি আনতে আনতে
খুলে পড়ে যায়।

আমার বাড়ি চন্দননগর। ট্রেনে করে আসতে আসতে পড়া শুরু করলাম। ভেবেছিলাম
সমকামিতা ও পুরাণ নিয়ে ভারী ভারী প্রবন্ধ টবন্ধ হবে। যারা বই এর ওজন তার
কাগজের পরিমাপে করে তারা হয়তো আশি পাতার এই বইটা দেখে নাক সিঁটকাবে।
কিন্তু আমি বলি কি পড়ে দেখুন। খুব সাবলীল ভঙ্গিতে লেখা গদ্য যা কেবলমাত্র
সমকামিতা ও ভারতবর্ষ নয়, সম- বিসম- উভকামিতা এসবের উর্দ্ধে গিয়ে মানুষের
সম্পর্কের কথা বলে। লেখকের কথা যেখানে লিপিবদ্ধ সেখানে এক তরুণের চোখে
সামাজিক অবক্ষয়ের শিকার হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক মুখগুলোই এসে দাঁড়াচ্ছে
মহাকাব্যের চরিত্র হয়ে। সেখানে কেবলমাত্র যৌনতা নেই, নেই কোন সময়ের বিধি
নিষেধ। যা আছে তা তখনো ছিল, যার প্রতিকার তখন সম্ভব এখন আমরা তা করে উঠি
না। এমনই নানান প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন তরুণ এই লেখক তার
পাঠকদের। ভাষায় ব্যুৎপত্তি আছে, ধার ভার দুইই সমান; কিন্তু কোথাও
বেখাপ্পা বা আরোপিত মনে হয়না। আর আছে পরিমিত কিন্তু তীব্র ক্রোধের
বহিঃপ্রকাশ। এই ক্রোধ কি সমাজের প্রতি? আমার মনে হয় না? এ ক্রোধ সমাজকে
যে দ্বিচারী মানুষগুলো ভুল পথে চালায় তাদের প্রতি। সেখানে চাইল্ড
মলেস্টেশন থেকে নারী নির্যাতন বা আর কোন মানসিক বিকার সবেরই প্রতি লেখকের
উষ্মা বেশ প্রকট। আর হ্যাঁ তারই একটা বড় অংশ জুড়ে আছে সমকামীদের আন্দোলন।

বইটিতে মোট ৭জন চরিত্রের কথা বলা হয়েছে। সাতটি চেনা বা কম চেনা চরিত্রদের
অজানা বা জানা ঘটনার পুনর্বিন্যাস। সব চরিত্ররাই সমকামী নয় কিন্তু সবাই
অবহেলা উপেক্ষা আর বঞ্চনার শিকার। কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়িয়ে জবাব দিয়েছে আর
কেউ দিতে পারেনি। কিন্তু লেখকের পেনের আঁচড়ে সবাই যেন কথা বলছে আমাদের
সঙ্গে। প্রথম চরিত্র সত্যবতী, রাজার মেয়ে হয়েও পরিত্যক্তা। তার সম্রাজ্ঞী
হওয়ার গল্প বলে পুরাবর্ত্ম। দ্বিতীয় শিখণ্ডী, নারী হয়েও যে পুরুষ। যার
মনে শুধু প্রতিহিংসা নয় আছে প্রেম, আছে সংসার তৈরীর স্বপ্ন। শমীক অর্থাৎ
সংযমী। জন্ম না দিয়েও যে পিতার কর্তব্য পালন করে, মায়ের স্নেহে বড় করে
তোলে। বৃহস্পতিজায়া তারার উপাখ্যান আমার কাছে যেন এ যুগের মেয়েদের একক
মাতৃত্বের পথে যে অন্তঃরায় সমাজ সৃষ্টি করে তার জীবন্ত উদাহরণ। শান্তা,
রাজার মেয়ে, ঋষির স্ত্রী। কিন্তু স্ত্রী যে স্বামীকে শিক্ষয়িত্রীর মত
মার্গ দেখায়, মায়ের স্নেহে যত্ন করে আবার নর্মসহচরী হয়ে রতি সাহচর্য
প্রদান করেন এ বিষয়ে এক জীবনের রেখাচিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন শমীক জয়
সেনগুপ্ত। সমকামিতা অবৈধ বলে গলা ফাটাচ্ছে যারা তারাই আবার দরকারে দুই
মেয়েকে কামকেলি করতে বাধ্য করে। ভগীরথ জননীদের নিয়ে উপাখ্যান সেটাই। ভীম
হিড়িম্বার যে নাতিও ছিল আর তার নাম যে বর্বরিক এ কথা ও তার শৌর্য আমার মত
অনেকেই জানতে অক্ষম। কিন্তু সে কথাও কি সুন্দর ভাবে তুলে ধরা। আর ফুটনোটে
নর-নারায়ণ, হরি হর, ইল বুধ কত শত চরিত্রেরা উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। বোঝাই যায়
এ যাত্রাপথ এখানে আপাতত বিশ্রাম নিচ্ছে। তৈরী হচ্ছে কালকে অতিক্রম করার
উদ্দেশ্যে।


পুরাবর্ত্ম – নতুন সরণী বেয়ে পুরাণের নবনির্মাণ। লেখক শমীক জয়
সেনগুপ্ত। প্রকাশক – অভিজয় প্রকাশনী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন