google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re বিক্ষুব্ধ এ ভারত ।। রণেশ রায় ।।পর্যালোচনা : নির্মল ব্রহ্মচারী (নরওয়ে) - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৬ জুন, ২০১৮

বিক্ষুব্ধ এ ভারত ।। রণেশ রায় ।।পর্যালোচনা : নির্মল ব্রহ্মচারী (নরওয়ে)

 

বই: বিক্ষুব্ধ এ ভারত
গ্রন্থকার: রণেশ রায়
প্রকাশক: আন্তর্জাতিক প্রকাশন
প্রকাশ: ডিসেম্বর 2017
মূল্য: 130 টাকা

 

 

 

 

 বিক্ষুব্ধ এ ভারত ---- সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা


নির্মল ব্রহ্মচারী (নরওয়ে)



আন্তর্জাতিক প্রকাশন প্রকাশিত বিক্ষুব্ধ এই ভারত নামে রণেশ রায়ের লেখা
বইটি তথ্য ও তত্ত্বের এক অসাধারণ সমন্বয়। সাবলীল ভঙ্গিতে কঠিন তত্ত্বের
বিশ্লেষণ যেমন বিষয়কে সহজবোদ্ধ করে তুলেছে তেমনি পরিসংখ্যান তাঁর
বক্তব্যকে সমর্থন করে তুলতে সমর্থ হয়েছে । প্রবন্ধে কবিতার ব্যবহার এমন
একটা গুরুগম্ভীর বিষয় পাঠকে মনোগ্রাহী করে তোলে। এগারোটি পরিচ্ছদে লেখা
এই বইটিতে আদিবাসী অঞ্চলে যে বিপুল খনিজ সম্পদ তার বিশদ হিসেব দিয়েছেন
লেখক। অপূর্ব নিপুণতায় তুলে ধরেছেন আজকের নয়া সাম্রাজ্যবাদের স্বরূপটা।
আর এই খনিজ সম্পদের ওপর দখল নিতে এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কর্পোরেট দুনিয়া,
সরকার তাদের সহায়ক। আদিবাসীদের উচ্ছেদ যোজ্ঞ চলছে অবাধে। এর বিরুদ্ধে
রুখে দাঁড়িয়েছে আদিবাসী সমাজ। আদিবাসী অভ্যুথ্যানের যেন এক গাঁথা রচিত
হয়েছে বইটিতে । জীবনজিবিকার শ্রেনিযুদ্ধের সঙ্গে পরিবেশ ও প্রযুক্তির
বিষয়টি যে যুক্ত সেটা লেখক এই বইটাতে তুলে ধরেন।


নকশালবাড়ির পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই লেখা। শাসক সম্প্রদায় নানা
কায়দায় যখন আদর্শ ভিত্তিক এই আন্দোলনকে কলুষিত করে তাকে বিকৃত করার
চেষ্টা করছে তখন লেখক নিষ্ঠাভরে সত্যটা তুলে ধরেছেন। যথাসম্ভব সরকারি
তথ্য উপস্থাপন করেছেন নিজের বক্তব্যের সমর্থনে। কেউ যাতে একে মনগড়া
কাহিনী বলে উপেক্ষা করতে না পারে। নিজে আন্দোলনের সংগে যুক্ত ছিলেন এবং
এখনও সেই আদর্শে বিশ্বাসী থেকেও ভুল যেটা মনে করেন সেটা তুলে ধরতে দ্বিধা
করেন নি। তিনি মনে করেন লড়াইএর ময়দানে যে নামে তার ভুল হয়েই থাকে।
প্রশ্নটা হল ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। পলায়নবাদীর ভুল হয় না।


কিভাবে এবং কেন একটা দুর্বল প্রতিপক্ষ সবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রুখে
দাঁড়ায় ও শেষ বিচারে জয় অর্জন করে সেটা বলতে গিয়ে লেখক তাঁর বইতে বলেনঃ


"আজ ভারতে বনজ অঞ্চলে যুদ্ধরত বিবাদমান দুটি গোষ্ঠী সব দিক দিয়ে অসম
এবং বিপরীত। একদিকে রাষ্ট্রের নেতৃত্বে অর্থবলে বলিয়ান সর্বাধুনিক
আগ্নেয়াস্ত্রে ও আধুনিকতম সংবাদ সেবায় সজ্জিত সামরিক ভাড়াটে বাহিনী
অপরদিকে তীর ধনুকের মত সাবেকি অস্ত্র হাতে দারিদ্র পীড়িত অপুষ্টিতে পিষ্ট
আশ্রয়হীন উচ্ছেদ হওয়া `অশিক্ষিত` আদিবাসী জনগণ যাদের নেতৃত্ব দেয় ভারতের
কমুনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)। তাদের জনবল আছে কিন্তু অস্ত্র সম্ভার নগন্য।
দুই প্রতিপক্ষ পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত। এ এক যুদ্ধ, এক অসম যুদ্ধ। সড়ক পথ
জলপথ আকাশপথ ধরে এ যুদ্ধ চলছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় চরম শক্তিশালী
রাষ্ট্র পরিচালিত শক্তির এক ফুৎকারে দুর্বল প্রতিপক্ষ মুহূর্তে পদদলিত
হবে, তাদের শেষ করে দিতে মুহূর্ত সময় লাগবে না। তাও এ যুদ্ধ, দাঁতে দাঁত
দিয়ে যুদ্ধ। জীবন বাজি রেখে এক পক্ষের যুদ্ধ। আর ভাড়াটে বাহিনী আরেক
পক্ষ। শেষ হয়ে গিয়েও শেষ হয় না দুর্বল প্রতিপক্ষ। সবল পক্ষেরও ক্ষয় ক্ষতি
অফুরন্ত। বার বার-ই মনে হয় ওরা শেষ হয়ে গেলো। কিন্তু বার বার-ই আবার
দুর্বল প্রতিপক্ষ উঠে দাঁড়ায়, পাল্টা আঘাত হানে আরও সংগঠিত ভাবে। অবাক
লাগে কোন মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে পঞ্চাশ বছর ধরে এত দুর্বল এক প্রতিপক্ষ লড়ে
যাচ্ছে আজ বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী সবচেয়ে শক্তিশালী মার্কিন বাহিনীর
আশীর্বাদপুষ্ট ভারতের সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট আধাসামরিক বাহিনীর
বিরুদ্ধে। এই হকচকিয়ে যাওয়া অবাক কাণ্ডের গোপন চাবিকাঠি নিহিত আছে ব্যাপক
জনগনের সক্রিয় সহযোগিতার মধ্যে। জনগণই শক্তির উৎস। তাই তাকে শেষ করে
দেওয়া যায় না। যুগ যুগ ধরে এ লড়াই চলে যতক্ষন না একটা ব্যবস্থা আরেকটা
ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করতে পারে। এ যুদ্ধ বহমান। একটা প্রতিক্রিয়াশীল
ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আরেকটা সম্ভাব্য প্রগতিশীল ব্যবস্থার লড়াই। একটা
আপাত শক্তিশালী হলেও ক্ষয়িষ্ণু ব্যবস্থা আর আরেকটা দুর্বল হলেও
প্রতিশ্রুতিতে ভরপুর প্রগতিশীল ব্যবস্থা যা লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই শক্তি
অর্জন করে, ব্যাপক গরিব জনগনের আশীর্বাদপুষ্ট। এ যুদ্ধই রক্তের অক্ষরে
লিখে চলে নয়া-ইতিহাস, এক মুক্তির মহাকাব্য। জনগণের মুক্তির গানে আকাশ
বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে । স্পার্টাকাস থেকে ফরাসি বিপ্লব হয়ে প্যারিকমিউন,
সোভিয়েত থেকে চীন হয়ে ভিয়েতনাম। তেলেঙ্গনা থেকে কাকদ্বীপ। নকশালবাড়ি থেকে
শ্রীকাকুলাম হয়ে দান্তেওয়ারা লালগড়, উড়িষ্যা থেকে ঝাড়খন্ড হয়ে
মহারাষ্ট্র। বিহার থেকে পাঞ্জাব। সর্বত্র। "


সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই প্রসংগে তিনি বলেন,



" আজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই না করে সামন্তবাদের বিরুদ্ধে লড়াই
হয় না কারণ সাম্রাজ্যবাদের মদতেই ক্ষয়িষ্ণু সামন্তবাদ টিকে থাকে। আজ
প্রতিযগিতামুলক পুঁজিবাদের যুগ শেষ হয়ে গেছে যে সামন্তবাদের অবসান ঘটাতে
পারত। সংকটকালের একচেটিয়া পুঁজিবাদ তথা নয়াসাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদের
মননকে টিকিয়ে রাখে নিজের স্বার্থে। নয়াউপনিবেশিক দেশে সে স্বাধীন
পুঁজিবাদের অস্তিত্বও সহ্য করতে পারে না। ধর্মীয় মৌলবাদের ক্ষেত্রেও এটা
সত্যি। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার নামে সামন্তবাদ মৌলবাদ কাউকেই
ছোট বা বড় শত্রু ভাবার কারন নেই। মনে রাখতে হয় তারা আজ টিকে থাকতে পারে
সাম্রাজ্যবাদ থাকলেই। স্বাধীন ভাবে তারা আর আজকের যুগে টিকে ক থাকতে পারে
না কারন তাদের স্বাধীনভাবে টিকে থাকার অর্থনীতিক ভিতটাই নড়বড়ে,ধ্বংসের
মুখে l"


লেখক খোলা মনে বলেন বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক হ'ক। বক্তব্যের সমর্থনে বা
সমালোচনায় সবাই এগিয়ে আসুক l এই বিষয়টি নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা
কাম্য। এছাড়া পরিবেশ ও প্রযুক্তির বিষয়টা আরো গুরত্ব পেলে বিষয়টার নতুন
একটা দিক খুলে যায় যা আজকের প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্বপূর্ন বলে লেখক মনে
করেন। আমরা আশা করব লেখক এই বিষয়গুলো নিয়ে অন্য কোথাও আরো বিস্তৃত
আলোচনার প্রয়াস পাবেন।


এই বইতে নকশালবাড়ির স্ফুলিগ্ন আজ যে জঙ্গল পাহাড়ে ঘেরা আদিবাসী অঞ্চলে
দাবানল হয়ে জ্বলছে তার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। আজকের সাম্রাজ্যবাদের
স্বরূপটা চিত্রিত হয়ে উঠেছে পরিষ্কার। আজ দেশপ্রেমিক আপামর মানুষের লড়াই
যে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সে সত্য তুলে ধরা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদের
বিরুদ্ধে জনগনের লড়াই-এর মহাকাব্যের এক অধ্যায় যেন রচিত হয়েছে এই বইতে।


সাহিত্যিক নির্মল ব্রহ্মচারী

নরওয়ে

বই: বিক্ষুব্ধ এ ভারত
গ্রন্থকার: রণেশ রায়
প্রকাশক: আন্তর্জাতিক প্রকাশন
প্রকাশ: ডিসেম্বর 2017
মূল্য: 130টাকা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন