# সরোবর বাঁধে খরতাপ
# সুকমল দালাল
'অনুভূতি'রা বেঁচে থাকবে তাঁর স্বপ্নে, কাব্যে, ভালোবাসায়...
প্রতীতি চৌধুরী।
'কবিতা' এই তিন অক্ষরের শব্দটা আমার বড্ড প্রিয়। হয়তো সেই ছোট্ট বেলা
থেকে বন্ধুত্ব, খুনসুটি, মান-অভিমান, প্রেম, বিরহ, মন খারাপের বেলা,
প্রতিবাদী মনের কথা, ইচ্ছা, ভাবনা, চেতনা সব কিছুই কবিতার মাধ্যমে বরাবর
কয়েদ করেছি ডায়েরিতে।কবি সুকমল দালালের সঙ্গে অল্প সময়ে আলাপ লেখা লেখির
সূত্রে।বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের ছাত্র।গত বৈশাখে তার একুশের জন্মদিনে
কবিতার বই 'সরোবর বাঁধে খরতাপ' প্রকাশিত হয়েছে। শান্তিনিকেতনের 'রুআক'
প্রকাশনী থেকে। 'আন্তঃ কবিতাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত-একজন শ্রমিকের বই
এটি' ভূমিকাতেই উল্লেখ করেছেন কবি রাহুল ঘোষ।কবিতাগুলি পড়লে মনে হয় সত্যি
যেন রুদ্রতেজের কবিতা।
বিশ্বভারতীর ছায়াতেই মনে হয় এমন কিছু প্রাণের স্পন্দন রয়েছে, এমন কিছু
অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে যা সাধারণ মানুষের মধ্যেও কাব্যধারা সঞ্চার করতে
সক্ষম। বইয়ের প্রতিটা কবিতাই বেশ ভালো। বলা ভালো ছোট্ট বইটিতে ছোটো বড়ো
সকলেরই পড়ার উপযোগী কবিতা রয়েছে।
কয়েকটি রয়েছে একেবারে বাচ্চাসুলভ মেজাজে লেখা ছোটোদের পড়ার মতো ছড়া, যেমন
'আনন্দসেতু', 'শরৎকন্যা', 'বৃষ্টি'।
আবার কয়েকটি কবিতা যেমন 'অবৈধ নির্মান', 'নিঃশব্দ অরণ্যে নিস্তব্ধ
জনহীনে' আমরা খুঁজে পাই এক প্রতিবাদী কবি সত্ত্বাকে। এই কবিতাগুলোর
নিগূঢ় অর্থ হয়তো আমাদের মনকে একটু হলেও নাড়া দেবে।
প্রেমিক কবিকে আমরা খুঁজে পাবো 'উষ্ণ ভালোবাসা' বা 'রামধনু' রঙে। কোথাও
হয়তো বিরহের সুরও বেজে উঠেছে 'নিঃসঙ্গ' বা 'বিদায় লগ্নে'। রাগ, অভিমান,
অনেকখানি আবেগ বয়ে গেছে কবির কবিতা 'তোমাকে না বলা কথা' তে।
বিরহী মন বিদ্রোহী রূপ নিয়ে রচনা করেছে 'জ্বলন্ত সুর', 'সীমান্তের
সেলুকাস'। কখনো কবি নিজেকে টেনে নিয়ে গেছে কোপাইয়ের তীরে, কখনো বা
কোঠাঘর, কখনো আবার ফুটপাথে। বেসুরে গাওয়া বাউল গানে লেখা কবির কিছু কবিতা
পড়ে সত্যিই মনে হবে,
"এ জীবন এখনও জ্বলছে
এ জীবন, জ্বলন্ত অপরূপ।"
শুধু মাত্র নানান বিষয়েই নয়, নানান পরিবেশ, নানান প্রকৃতি খুঁজে পাবেন
কবির লেখাতে। কোথাও শীতের একাকী রাত, কোথাও ঢেকেছে শহর মেঘে, কোথাও
"বসন্ত জাগ্রত দ্বারে"। কোথাও সূর্য কিরণ ঠিকরে পড়ে, কোথাও বা স্নিগ্ধ
সাঁঝবাতি জ্বলে। মন দিয়ে পড়লে মৃদু হলেও আলোড়ন তুলতে বাধ্য কবির বেশ কিছু
কবিতা, 'এখন সব অলিক' বা 'নিঃশব্দে কোনো একদিন'।
আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে 'খেলাঘর' কবিতাটি। তিনি হয়তো
শান্তিনিকেতনের আবাসিক ছাত্র জীবনের যাপিত সময়ের স্মৃতিচারণা করেছেন।কবির
ভাষা দিয়ে বলতে গেলে এ সত্যিই "বিন্দু বিন্দু স্মৃতি" যা জমে আছে আমাদের
প্রত্যেকেরই নিজের কোনো এক খেলাঘরে। যেখানে আমাদের ভালোবাসা নিজেই নিজের
জায়গা করে নেয় কোনো এক কুঠুরিতে। সত্যিই কবি ঠিকই লিখেছে কোনো এক
কবিতাতে,
"স্মৃতিরা অদ্ভূত!
ঘুমের দেশ বারবার ফিরে আসে।"
না, কোনো বড়ো মাপের কবি বা কোনো বিখ্যাত কবিতার সাথে আমি সুকমল দালালের
লেখার তুলনা করতে চায়না। সে নিজেই নিজের সৃষ্টিতে মেতে থাকে। কবির তুলনা
হয়ে উঠেছে তার নিজেরই লেখার সাথে।পরিশেষে এই কথায় বলতে চাই কবি সুকমলের
"ভাবনার গন্ডি ধুয়ে বিলীন" হয়ে যাওয়ার পরেও সে সৃষ্টি করে চলেছে আরও নতুন
কবিতা "জয়ন্তির পাথুরে বুকে কুলকুল জলের খুশিতে"। 'নিঃশব্দে কোনো একদিন'
বিপ্লব ডেকে আনবে তাঁর কবিতা। 'অনুভূতি' রা বেঁচে থাকবে তাঁর স্বপ্নে,
কাব্যে, ভালোবাসায়, আর.....
"শুধু ভাবনার খেলায়।"
Pratiti choudhury
At- Sankattala,
PO+PS- Bishnupur,
Dist- Bankura,
Pin- 722122,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন