।। ব্যালেরিনা ও নকশি কাঁথায় নষ্ট গন্ধ ।।
।। কুমারেশ তেওয়ারী ।।
।। প্রতিভাস ।।
।।প্রচ্ছদ-সুদীপ্ত দত্ত ।।
।। দাম ১০০ টাকা ।।
শব্দের কারুভূমি আমন থেকে ইমন ও নকশি কাঁথায় বোনা নিজস্ব শিল্পশস্য
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
কুমারেশ বইটি দিয়েছে অনেকদিন আগে। পড়েছি অনেকবার। পড়তে পড়তে তন্ময় হয়ে
গেছি।সমালোচনা করার জন্য যতবার ছুঁয়েছি অক্ষর ততবারই মুগ্ধ হয়ে গেছি।
সমালোচকের চশমা খুলে একজন পাঠকের দৃষ্টিতেই দেখা তার শিল্পসম্ভার।
পত্র পত্রিকায় বিক্ষিপ্ত কিছু লেখা ছাড়া কুমারেশের কবিতার সাথে আমার
সেভাবে পরিচয় হয়নি।যতদূর জানি "ব্যালেরিনা ও নকশি কাঁথায় নষ্ট গন্ধ " তার
প্রথম কাব্যগ্রন্থ। অথচ এই কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতাতেও কোন অপটু বা
অদক্ষ হাতের স্পর্শ নেই।"স্তব্ধতার ভেতর থেকে উঠে আসা ফুলের ঘ্রাণ" ভরিয়ে
দেয় আমাদের চেতনাপথ।চার ফর্মার এই কাব্যগ্রন্থ জুড়ে শব্দের শস্যবীজ লালন
পালন শুধু নয় তার বিকাশসম্ভাবনাও পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে।
গ্রাম ও প্রান্তিক জীবনের পাশাপাশি নাগরিক জীবনের দ্যুতি ছড়িয়ে আছে পর্বে
পর্বান্তরে। তাই " কুয়োতলা তলা দিয়ে যেতে যেতে লেবুর মন কেমন করা গন্ধে/
বাতাসের শরবত পিপাসা পায়/অথচ লেবুরও যে সংগীতের নিজস্ব ঘরানা আছে / এবং
তা লোকসংগীত" (কুয়োতলা ) এ কথা অনুভব করতে পেরেছে কুমারেশ।আবার " আজন্ম
যে সমস্ত মানুষ অর্ধসমাপ্ত রয়ে যাচ্ছে/তাদের জন্য করুণা রাখার অর্থ নদীর
জুয়াখেলা (অবজারভেশন ) এ কথাও দ্বিধাহীন ভাবে বলার সাহস কুমারেশ অর্জন
করেছে।
টুসুদের গানের অন্তর্লোকে বাস্তবতা আর পরাবাস্তবতার দ্বিঘাত সমীকরণ
ফুটিয়ে তুলেছে নকশি কাঁথার সুচিকর্মে অক্ষরবিন্যাসে-
টুসু চাইছে যে হাতে ফুলের সাজি সেই হাত / ছুঁয়ে দিক সাইকেলের তৃতীয় নয়ন (
টুসুদের গান )
প্রকৃতপক্ষে গ্রামীন এবং প্রান্তস্পর্শী জীবনের অনুভাবনাও বদলে যাচ্ছে
দ্রুত।সেখানেও " শূন্য সময় বেয়ে নেমে আসছে নতুন জ্যামিতি " তার রূপবদল
তার মিউটেশন কবিতাপথের উপকুলে আছড়ে দিচ্ছে আচ্ছন্ন স্রোত। কুমারেশ
স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে তুলে আনে নিজস্ব শব্দের নুড়ি পাথর। " আগুনকে
আগুনের মতো দেখি বলেই পাখি পোড়ানোর কথা ভাবি না কখনও " এ তার উজ্জ্বল
উচ্চারণ।
কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরলেই বোঝা যাবে তার স্বরন্যাসের নিজস্ব ভূমিখন্ড
১
আমনের চুড়ির ঝংকারে ঘুম ভেঙে
জেগে উঠছে আল (আমন থেকে ইমনে )
২
চাঁদ মেঘের আড়ালে গিয়ে পুরোনো ক্ষতমুখে মলম লাগায় ( ডিভাইডার )
৩
বাগান বলতেই একটি ছবি তার
ডালপালা নিয়ে খেলা করতে আসে ( নকশি কাঁথায় নখের আচড়)
৪
শিকড়ের ঘরে সেই কবেকার জমে থাকা জল ( নকশি কাঁথায় নষ্ট গন্ধ )
৫
সোনার চামচ মুখে নিয়ে বাগানে
খেলা করছে চাঁদ ( ব্যালেরিনা )
কুমারেশের কাব্যভাবনায় চিরায়ত জীবনের প্রতিফলন বাস্তবতার পাশাপাশি
মায়াবাস্তবতা এবং স্যুররিয়েলিজমের অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছে।
সুদীপ্ত দত্তের প্রচ্ছদ এই গ্রন্থের প্রাণ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন