কাব্যগ্রন্থ - চিত্রল ছায়ার খোঁজ
কবি - বলদেব দাস
প্রকাশক - হুগলি জেলা কবিতা আকাদেমি
প্রকাশকাল - 21/02/2017
বিনিময় - একশত টাকা।
চিত্রল ছায়ার খোঁজে
* * * * * * * * * * *
কান্তিলাল দাস
নিরহঙ্কার এই কবির এটি একাদশ কাব্যগ্রন্থ।1986 তে প্রকাশিত তাঁর প্রথম
কাব্যগ্রন্থ 'মানুষের জন্য'।2011তে 'কাব্যে কথায় নির্বাচিত বলদেব' একটি
সুন্দর সংকলন, যাতে বিধৃত আছে তাঁর অন্ততঃ নটি কাব্যগ্রন্থের আত্মা।
আলোচ্য কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলিকে তিনি নিজেই উল্লেখ করেছেন
'ব্যক্তিগত কবিতার সংকলন' বলে।বইটির শুরুকথার কিছু অংশ তুলে ধরে কবির
অভিপ্রায় সম্পর্কে একটু ধারনা দেবার প্রয়াস করি।
"অহং-এর বেড়া টপকে বারংবার চেষ্টা করা অনন্তের উঠোনে যেতে। সে কর্ম সহজ
নয়। অসাধ্য ভেবে ক্লান্ত দিনান্তে বালিশে মাথা রাখা। গলি ছেড়ে রাজপথে
নিজেকে হারানো, ফের ফিরে আসা গলি মাড়িয়ে আপাত নিরাপদ সংসারে।....হে
বিশ্বের কল্যাণকারি, তোমার অবিরল কৃপা বর্ষিত হোক আপামর আমাদের উপর। সেই
কৃপার চিত্রল ছায়ার খোঁজে- ই যেন মগ্ন থাকে এই জীবন।"
বইটির ভূমিকায় শিল্পী যোগেন চৌধুরী লিখেছেন এমন, যা নিয়ে কোনো দ্বিমত
থাকতে পারে না : " কবি বলদেব দাসের একটি ভাবুক দার্শনিক মন খুঁজে পাই তার
কবিতাগুলির মধ্যে।নানান চিত্র ও ভাষা, দৃশ্য ও দৃশ্যাতীতকে নিয়ে তার
ভাবনা এবং কল্পনা। সেসব মিলে মিশে তার কবিতার স্রোত।জলে-জঙ্গল, শেষ
বিকেলের বুকে, কৃষ্ণচূড়ার দোলায়, জ্যোৎস্না রঙের নিঃসীমতায়, রাতের আকাশ
জুড়ে তার অবাধ গতি এবং চলাফেরা। তিনি চলেছেন, চিত্রল ছায়ার খোঁজে,
মধ্যরাতে যখন নদী ভিজে উঠেছে জ্যোৎস্নায়।"
তিয়াত্তরটি কবিতায় সাজানো এ কাব্যগ্রন্থ বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছে তাঁর মননের,
দর্শণের।কাব্যভাষা ও শব্দচয়ন আকৃষ্ট করে রাখে পাঠককে এবং কখন অজান্তে
পাঠক যেন তাঁর সাথে হাঁটতে থাকেন।
" মৌনী তরু দাঁড়িয়ে একা ঠায়--/ হাওয়ায় রোদে এখন সে সম্পৃক্ত/ মাথায় কাঁধে
তার যে অশেষ দায়/ ক্রন্দসী এই ধরনীকে রাখতে দূষণমুক্ত।" (
গাছের দায়)
ফিরে আসেন গাছের কাছে, আবার, অন্যভাবে যেখানে গাছ আর মা একাকার :-
" রোদের মধ্যে রোদ কুড়িয়ে/ কবির চোখে জল/ কলম ঘিরে মা-ঠাকুমা/ স্মৃতির
কোলাহল/ তীব্র রোদে গাছের মত/দাঁড়িয়ে আছে মা/গাছের পায়ে অশ্রু
ঢেলে/ধুচ্ছি মায়ের পা।"
( গাছের পায়ে অশ্রু ঢেলে)
প্রকৃতি ও মানুষ যুগপৎ ভাবিয়েছে তাঁকে,
তাদের সে ধ্বস্ত অবস্থায় কবির বিশ্বাস ;-
" প্রাচীন ক্ষতরা শুশ্রূষা পাবে বলে/উন্মুখ আজও পাহাড়ি টিলারা জলে আর
জঙ্গলে/ক্ষতগুলি যদি দ্রুত হয় নিরাময়/প্রকৃতি মানুষ হবেই শান্ত সুন্দর
শিবময়।"
( নিরাময় হোক ক্ষত)
বৃক্ষরোপণ স্থান করে নিয়েছে এইভাবে ;-
" প্রার্থণা হোক জলদ মেঘের অঝোর বৃষ্টিধারায়/সম্ভাবনায় পাথরে মাটিতে
হাসুক সবুজ প্রাণ/তেমনই শপথে রোপণ করেছি একটি গাছের চারা/দহন জুড়িয়ে করে
যাবে যে বিশ্বের কল্যাণ।"
(একটি গাছের চারা )
মানুষের মৃত্যু ও মৃত্যুত্তোর সময় নিয়ে তাঁর বোধ ;-
" এখন কেউ চলে গেলে গান শুনি/ মৃত্যু সংক্রান্ত জীবনমুখী গান/ কবিতাও
ঘাঁটি পাতা উল্টে/ শান্তির ললিত বাণী নিভৃতে/কোথায় শুয়ে আছে.../ তারও পরে
থাকে জীবনবীমার দাবিদার/ সম্পত্তির উত্তরাধিকার ইত্যাদি ইত্যাদি/ যাবার
পরেও না যাবার অভিমানগুলো/ সন্ধ্যাকালে তারাদের মত ফুটতে থাকে..."
( আপাত মূর্খামি )
দিবাবসানে তাঁর বোধ কী প্রোজ্জ্বল :-
" নিবিড় ছায়ায় কাটে বর্ণময় এক একটি দিন/ আর্ত বা লোভী হয়ে ভুলি লজ্জা
ঘৃণা--/ দেখি, ছায়াপথে কল্পতরু বিলোচ্ছেন করুণা।" ( করুণা )
'ব্যক্তিগত কবিতার সংকলন'চিহ্নিত বলদেব দাসের এই কাব্যগ্রন্থ" চিত্রল
ছায়ার খোজ" আদ্যন্ত 'সবারে করি আহ্বাণ' পর্যায়ে চলে যায় , নিবিষ্ট পাঠে।
কবির কাছ থেকে এমন আরো অনেক
কবিতা আমরা ভবিষ্যতেও পাব আশা রাখছি যা ব্যক্তিগত হয়েও সর্বজনীন ।
................
আলোচক :
কান্তিলাল দাস
কিসমত অপূর্বপুর
( বেলতলা লেন )
ডাক - সিঙ্গুর
জেলা- হুগলি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন