।। নবপ্রভাত বর্ষাবিচিত্রা ২০১৭ (মুদ্রিত) সম্বন্ধে পাঠ-প্রতিক্রিয়া ।।
"নবপ্রভাত" পত্রিকা একটি ছোটো পত্রিকা। এটি সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা। পত্রিকাটি অবয়বে ছোটো হ'লে কী হবে এর একটি বিশেষ ধরনের গুণমান আছে যা অনেক বড় বড় পত্রিকাকেও পিছনে ফেলে দেয়। এর সৌন্দর্য ও অতুলনীয়।
নবপ্রভাতের সূচিপত্রে লেখক-লেখিকা ও কবি-সাহিত্যিকদের উপস্হিতি যথেষ্ট লক্ষ্যণীয়। তারা যদিও কোনো বিশ্বসেরা কবির সুনাম অর্জন করতে পারেনি ঠিক তবুও তাদের কবিতার ছন্দ ও ভাষার লালিত্য বড় বর্ণময়। তাদের লেখনী অনেক বলিষ্ঠ বলেই আমার বিশ্বাস।
এবারে বলি সম্পাদকীয় সম্পর্কে। সম্পাদক মহাশয় তার বলিষ্ঠ লেখনী ও নিপুন হাতের স্পর্শে সম্পাদকীয় লিখেছেন বর্তমান সমাজের সামাজিক পরিস্হিতিকে সামনে রেখে।
এই সংখ্যায় প্রবন্ধ কলামে প্রবন্ধকার অরবিন্দ পুরকাইত মহাশয় কবি শঙ্খ ঘোষের সম্পর্কে যে মননশীল তথ্য সমৃদ্ধ প্রবন্ধ লিখেছেন তা সত্যি সত্যি বেশ উচ্চমানের --- যা পাঠকের মনে কবি
শঙ্খ ঘোষের নিজস্ব স্টাইল ও স্টেটমেন্ট সম্পর্কে একটা সুন্দর ধারনার সৃষ্টি করতে পেরেছে অবশ্যই।
কবিতাগুচ্ছ দুই ভাগে বিভক্ত। ১ম ভাগে সম্ভবত নবীন কবিদের লেখা আর ২য়টি অপেক্ষাকৃত যারা ভালো লেখেন তাদের। যাইহোক, দুটি ভাগের কবিতাগুলোই বেশ ভালো লেগেছে। প্রতিটি কবিতা খুব সুন্দর ও মাধুর্যমণ্ডিত।
নবপ্রভাত বর্ষা বিচিত্রাতে গল্পগুলো যদিও গুটিকতক তবুও লেখাগুলো বেশ মননসমৃদ্ধ ও বিশেষত্বের দাবী রাখে।
সবশেষে বলি, নবপ্রভাত বর্ষাবিচিত্রায় পাঠকের মতামত, পুস্তক পর্যালোচনা প্রভৃতি কলম না থাকায় মানের তুল্যমূল্য বিচারে যথেষ্ট সৌন্দর্যহানি ঘটেছে বৈকী!
---শেফালী সর, জনাদাঁড়ি, গোপিনাথপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর।
‘জনতা’ নামে বিস্ফোরক-এর খোঁজ উসকে সম্পাদক রথারোহী আর রথচক্রের আবহমান ট্রাডিশনের প্রতি আঘাত হানেন। প্রশ্ন তোলেন - ভারতীয় রাজনীতি-নির্ভর অর্থনীতির চাতুর্যের দিকে। লিটিল ম্যাগ-এর সম্পাদকীয়তে চাপা থাকে এতটা বারুদ?
বর্ষাবিচিত্রা ১৪২৪ সংখ্যার ‘নবপ্রভাত’ পত্রিকার রং - বৃষ্টির মলাট খুলেই বুক পকেটের গভীরে ‘শঙ্খ প্রসঙ্গ’ বিনম্র প্রণতি জানাতে বাধ্য পাঠক। ক্রমশ কবিতা ভূবনে আমন্ত্রণ, দুটি অংশে প্রায় সত্তর জন কবির সৃজন পরম্পরায় সুসজ্জিত। অনুগল্পের মতো স্বল্প পরিসর বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের একতোড়া গল্প সংখ্যাটির অন্য সম্পদ। নব প্রভাতের আলো এভাবেই নিয়ে চলে দিগন্তের ধারে।
সম্পাদক নিরাশাহরণ নস্কর তার সামর্থ্যে যে গঙ্গা-ধারা আনয়নে দৃঢ় সংকল্প, তার সফলতা পত্রিকার রুচি, সজ্জা, ভ্রান্তিহীনতা ও নির্মেদ নির্মাণ। সস্তা দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নেই, কিন্তু নতুন বই বা পত্রিকার বিজ্ঞাপন আরও থাকলে ভালো। লেখক-সম্পাদক-পাঠক এই ত্রিভূজ যে পত্রিকার প্রাণ হয়ে ওঠে তার সাফল্য অনিবার্য। সম্পাদকের আন্তরিকতায় পরবর্তী সংখ্যাগুলি আরও সমৃদ্ধ হবে এটি সঙ্গত আশা।শুধু সম্পাদক নন পিছনে এক গুচ্ছ মানুষ আছেন, তাদের এই সাহিত্য প্রকাশ প্রক্রিয়ার প্রতি সংগ্রামী অভিনন্দন।
--অনিরুদ্ধ সেন, ধর্মপুকুরিয়া, বনগাঁ, উ:২৪পরগনা।
"নবপ্রভাত"-এর "বর্ষাবিচিত্রা" স্বল্প পরিসরে সুসজ্জিত এক অসামান্য সাহিত্যসম্ভার। সুদীপ্ত পালধি-র প্রচ্ছদ চোখে লাগার মতো আকর্ষণীয় তথা প্রাসঙ্গিক। বইটির গোটা বহিরঙ্গ সার্বিকভাবে সুদৃশ্য তথা তথ্যসমৃদ্ধ। বাহান্ন পৃষ্ঠার বইটির বাঁধন চমৎকার এবং কাগজের মান প্রশংসনীয়। বইটির "সম্পাদকীয়" অংশ সচেতন পাঠকবর্গের কাছে এক বড় প্রাপ্তি। ব্যঙ্গ-কৌতূক মিশিয়ে মাননীয় সম্পাদক স্বল্প পরিসরেও চমৎকারভাবে আজকের আর্থ-সামাজিক তথা রাজনৈতিক চালচিত্র অনায়াসে তুলে ধরেছেন তাঁর বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে। শ্রী অরবিন্দ পুরকাইত বিরচিত ‘প্রসঙ্গ শঙ্খ ঘোষ : দু-চার কথা’ স্পষ্টতই লেখকের নিরলস পরিশ্রম তথা গবেষণার লব্ধ ফল। গোটা বইতে দু'টি অংশে উপস্থাপিত নাতিদীর্ঘ আনুমানিক সত্তরটি কবিতা আধুনিক কবিতার পাঠকবর্গের কাছে এক সংরক্ষণযোগ্য প্রাপ্তি। প্রকাশিত অণুগল্পগুলির কাহিনীও বিষয়বৈচিত্র্যে ঠাসা। বইটির বিনিময় মূল্য যথার্থ। নিঃসন্দেহে একটি সংগ্রহযোগ্য সাহিত্য সম্ভার। আগামীতেও "নবপ্রভাত"-এর সৌরভ অনন্তবিস্তৃত হোক, শুভেচ্ছা রইল।
-- সৌরভ দত্ত, দুর্গাপুর, বর্ধমান।
‘একই সাথে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের জীবন...’ (লং জার্নি ৯-সন্দীপ রায়) কিংবা ‘আজ পুরনো ছায়ায় কোন পাখি নেই/শিকারিও নেই/মৃত ব্যাধ গার্হস্থ্য সন্ন্যাসী হয়ে গেছে’ (মৃত ব্যাধ-তৈমুর খান) কিংবা ‘বাকি যা কিছু/অলিখিত কবিতার মতো/নেমেসিস অথবা দায়ভার’ (শিরোনামহীন ৪-পিয়ালী মজুমদার) কিংবা ‘চৌকাঠে দায়িত্ব রেখে/বাবারা বুঝি কুয়াশা হয়ে যায় একদিন’ (বাবা-সুব্রত আঢ্য) কিংবা ‘এসো,হাত ধরো, হেঁটে যাই পাশাপাশি/ভালোবাসি, ভালোবাসা শেখাক মানবতা’ (এসো হাত ধরো-সৈকত শী) কিংবা ‘তবু রাজপথে রাজ-পেয়াদার সামনে আজও/কত কাঠিপোকা যে দেখতে পাই’ (কাঠিপোকা-গৌতম রায়) -- এরকম কবিতার লাইনগুলো আজ দিনের অনেকটা সময় জুড়ে বিহ্বল করে রেখেছিল। একটা লিটল ম্যাগাজিন যে অনেকগুলো ভালো কবিতার আকর হতে পারে, তার একটা উদাহরণ পেলাম ‘নবপ্রভাত’ পত্রিকার আগস্ট ২০১৭ সংখ্যাটি পড়ে। সংখ্যাটিকে একটি কবিতাপত্র অনায়াসেই বলা যেত। কারণ অনেকগুলো ভালো কবিতার সমাবেশ ঘটেছে এই সংখ্যায়। শুরুতেই রয়েছে এ সময় ও সর্বকালের অন্যতম সেরা কবি শ্রী শঙ্খ ঘোষের ওপর একটি তথ্যনিষ্ঠ প্রবন্ধ। সৌরভ দত্তের গল্পটি আজকের দিনে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সব মিলিয়ে নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদিত পত্রিকাটি পড়ে দেখার মতো।
--নির্মলেন্দু কুন্ডু, সম্পাদকঃ পদক্ষেপ, চুঁচুড়া, হুগলি।
নবপ্রভাতের বর্ষাবিচিত্রা সংখ্যা সম্বন্ধে প্রথমেই যা নজরকাড়ে তা হল এর প্রচ্ছদ। মনে হয় “আমাদের মন খারাপের শূন্যতা কোথায় উড়ে গেছে” আর পড়ে আছে কিছু বৃষ্টিকণা যা ঈশ্বরী করে তোলে মেঘমল্লারকে। কিন্তু কোথায় যেন থেকে যায় আজ আমাদের ভয়গুলো। “আবার একা হয়ে যাব আমরা সবাই।” হামাগুড়ি দিয়ে ঘরময় খুঁজে বেড়ায় নিজের অস্তিত্ব ও শৈশব। আর তারমধ্যেই পাতা উল্টে আমরা বড় হয় উঠি।
ক্রমশ চলে সম্পর্কের হাতবদল। “চৌকাঠে দায়িত্ব রেখে/বাবারা বুঝি কুয়াশা হয়ে যায় একদিন” বেঁচে থাকবে প্রবাহ ও আমাদের ভবিষ্যৎ। “কোলাহল থেমে গেলে আঁধারঘরে ঘুমিয়ে গেলে পাখি” জেগে উঠবে বহুরূপীর মতো। যদিও কিছু লাইন নয়, পুরো সংখ্যাতেই রয়েছে অনেক নজরবন্দী লাইনগুচ্ছ, যাতে “পিছুটান রয়ে যায় কিছু মেঘে ঢাকা রাতে”
--সুচেতা রায়, সুভাষগ্রাম, কলকাতা।
নবপ্রভাত পত্রিকার 'বর্ষাবিচিত্রা' সংখ্যা (আগষ্ট ২০১৭) শুরু হয়েছে সম্পাদক নিরাশাহরণ নস্কর মহাশয়ের এক অতি জরুরি উক্তির মধ্য দিয়ে- "তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্য জাতির রোগ বিশেষ- বহুশ্রুত এই প্রবাদ বাক্য নব্যযুগেও সমান প্রাসঙ্গিক৷ সারা ভারত জুড়ে কৃষকের আত্মহত্যার মিছিল আর ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ার আত্মম্ভরি ঢেকুর-উদ্গার এই অর্বাচীন প্রবাদটিকে উত্তরাধুনিক আলোকে প্রোজ্জ্বল করে তুলেছে৷" এছাড়া প্রারম্ভেই কবি শঙ্খঘোষ সম্পর্কে দু-চার কথা- প্রাবন্ধিক অরিন্দম পুরকাইত এর হাত ধরে ফুটে উঠেছে পত্রিকার কিশলয়ে৷
এবার আসি পত্রিকার কবিতাগুলির আলোচনায়৷ প্রতিটি কবির কবিতায় আপন আপন মহিমায় উজ্জ্বল এবং প্রতিটি কবিতা যেন পত্রিকায় উনিশ-বিশ স্তরে স্তরে সাজানো৷ এখানে কার লেখা ভালো আর কার লেখা মন্দ তা অবশ্য আমার বিচার্যবিষয় নয়৷ প্রতিটি কবিই তাঁর কবিতা আপন অনুভূতি ও কল্পনার মধ্য দিয়ে রচনা করেছেন৷ এগুলি কবিদের নিজস্ব মনোজগতের বিষয়৷
পত্রিকার প্রারম্ভের কবিতাটি লিখেছেন মনোজ মাজি। কবিতার নাম- 'ইতিউতি'৷ কবিতার প্রথম কয়েকটি লাইন অসাধারণ--
"বাতাসে মালিন্য নেই তথাপি উদাসীন- আউটলুক
আশার মতো তবু তো ফুটে ওঠে কিছু শাপলাশালুক
সূর্যালোকিত"- এই চরণগুলিতে ঔদাসিন্যের মধ্যে আশার বানী প্রকাশ পেয়েছে। আবার দ্বিতীয় অংশে কবি চেয়েছেন মনের মতো পদ্মফুল ফুটে উঠুক সরবরে, কিন্তু তা হচ্ছে না৷ একটুখানি আশা রাখার জন্য সরবরে শুধু ফুটে উঠছে লাল-হলুদ বর্ণের শালুক যা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল৷ এই ভাবেই কবি আপন মনের মাধুরীকে স্বমহিমায় পত্রিকার কিশলয়ে উজ্জ্বল করে তুলেছেন৷
পত্রিকায় দ্বিতীয় কবিতাটি লিখেছেন সন্দীপ রায়। কবিতার নাম- লং জার্নি৷ এই কবিতার প্রথম লাইনগুলি এমন -- "সভ্যতাকে পিছনে ফেলে হাঁটা/ আদিমতার উৎসমুখ৷/ পথের প্রান্তে কাঁপুনি ডিজিট্যাল"৷ এখানে কবি আধুনিক জনবহুল নাগরিক জীবনের কর্মব্যস্ততায় ক্লান্ত৷ তাই তিনি চেয়েছেন এই জীবন থেকে মুক্তি পেতে এবং সেখান থেকে চলে যেতে চান 'আদিমতার উৎসমুখে'৷ কবি নতুন ভাবে নিজের মতো করে সব কিছুকে সাজাতে চান৷ যেখানে পথের কাঁপুনি তথা যানবাহনের চাঞ্চলতা থাকবে না৷ এই মনোবৃত্তিই কবিতাটির ছত্রে ছত্রে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি সন্দীপ রায়৷
এছাড়া আরও কিছু কবিতা রয়েছে যেমন, হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'তোমার কথা' কবিতার লাইন গুলিতে তীব্র দুঃখ বেদনার প্রকাশ পেয়েছে৷ কবিতার শুরুতে কবি বলেছেন-
"কথার দল বেঁধে এসে দাঁড়ালে/ আমার সাদা পাতায় বৃষ্টি নামে"৷ এখানে কবি তার মানস প্রিয়ার কথা ভেবেছেন এবং দুঃখপ্রবণ হয়েছেন, যা খাতার পাতায় চোখের বৃষ্টি রূপ কলমের কালি বেদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে৷ এটি অবশ্য একটি রূপক ধর্মী কবিতা, যেখানে সর্বত্রই কবি তাঁর প্রেয়সীকে 'তুমি' রূপে সাজিয়েছেন৷
আমার সমস্ত কবিতাই ভালোলেগেছে৷ তবে জোর গলায় বলতে পারি, এই পত্রিকার কবিতাগুলি একেবারেই অত্যাধুনিক৷ প্রতিটি কবিতার মধ্যে আধুনিকতার ছাপ স্পষ্ট৷ কবিতাগুলির ভাষা একটু জটিল হলেও তা যদি নিবিড়ভাবে পাঠ করা হয় তাহলে তার ভাবার্থ আপনা আপনি মনের মধ্যে প্রকাশ পাবে৷
--- অমিত পাল ।। শঙ্করপুর ।। মঙ্গলকোট ।। পূর্ব বর্ধমান।
‘নবপ্রভাত’ আগষ্ট ২০১৭ পেয়ে খুশি হলাম। অরবিন্দ পুরকাইতের যত্ন করে লেখা প্রবন্ধ ‘প্রসঙ্গ শঙ্খ ঘোষ ......’ এ সংখ্যার এক মূল্যবান সংযোজন। গল্প ও কবিতা সুনির্বাচিত ও সুখপাঠ্য। তবে মনে হয় দু’তিনটি পূর্ণাঙ্গ, নাতিদীর্ঘ গল্পের অভাব অনেকেই অনুভব করবেন। সেজন্য কবিতার সংখ্যা হ্রাস অযৌক্তিক হত না। এমন পরিচ্ছন্ন , সুমুদ্রিত, বিজ্ঞাপনবর্জিত একটি নির্ভেজাল সাহিত্য-পত্রিকা দীর্ঘকাল ধরে প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলে ধন্যবাদার্হ। সুদীপ্ত পালধির প্রচ্ছদচিত্র মানানুগ। তবে সূচিপত্রে শিল্পীর নামউল্লেখ প্রত্যাশিত।
--রঞ্জিতকুমার ভরদ্বাজ, শিলিগুড়ি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন