।। "৪র্থ তৎপুরুষ"।।
।। শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস।।
।। সান্নিধ্য।।
যে প্রাণকে ছুঁয়ে দেখি
শতানীক রায়
"৪র্থ তৎপুরুষ" শব্দের অর্থ কি হতে পারে? এ কি কোনো শরীর যা যুদ্ধের সময়
মানুষের ভেতরে গজিয়ে ওঠে! ফলন হিসেবে যদি সংঘর্ষ থেকে লক্ষ্মীর জন্ম হয়
তাহলে পাশাপাশি তপস্যার কৌপীনও আসতেই পারে। প্রবল এই বিশ্বায়নের যুগে
দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করতেই পারি, কবি শর্মিষ্ঠা বিশ্বাসও করেছেন তাঁর পঞ্চম
কাব্যগ্রন্থ "৪র্থ তৎপুরুষ"-এ। বাইরের স্রোত একটা মানুষকে ভেতর থেকে
ভাঙে। শ্লেষের উদ্ভব হয় তখন। বর্তমান সময়টা শ্লেষাত্মক। আমরা ফাঁপালো হয়ে
পড়ছি দেহ-মন থেকে।
ভাঙন তাহলে নিত্য চলছেই। প্রত্যেক মুহূর্তে। এর ছাপ আমার চলনে
বলনে পড়বেই। ফাঁপালো মানুষ তখন হাসতে হাসতে ব্যথাতুর হবে। ছুঁয়ে সে বোঝার
চেষ্টা করবে তাঁর আসল অবস্থানটা কোথায়! অবজেক্টিভিটির দৃষ্টান্তের ভেতর
তাঁর মন বয়ে যেতে যেতে সাবজেক্টিভ হয়ে পড়বেই। আত্মপলব্ধির শূন্যতা আরো
বেড়ে গিয়ে আরো নিবিড় হতে চায়। আমি এই কাব্যগ্রন্থ হয়ে উঠতে দেখেছি। তাই
বড় বেশি করে অনুভব করি কবিতাগুলোর প্রত্যেকটা শব্দ। একটি ঘন এবং বিরাট
দর্শনের মধ্যে বিচরণ করতে করতে সেই মানুষও বদলে গিয়েছিল। কবি শর্মিষ্ঠা
বুঝেছিল তাঁর অন্তর্জগতের এই বিরাট দোলন। কবি তখন নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে
দ্যাখে। সে প্রবেশ করে তিনকালের বাইরের কোনো আত্মায়। আত্মা তারপর সত্তা
হয়। অন্য একটি মানুষকে তখন সে না ছুঁয়েও উপলব্ধি করতে পারে।
'আমাদের শশধর লেনের ঝড়েশ্বর/ মাছ বাছতে বাছতে বললেন,/ "বুঝলে
মইনুদ্দিন/ পচা আর টাটকা চেনার উপায় হলো/ শরীর পতনের সময় কতটা যুদ্ধরত/
পরিস্থিতি শিকার করেছে মাছকে"'... দর্শন থেকে এই বোধের উদয় হয়। কবিতার
উৎস দর্শন। কবি বইতে নানা ভাবে এই চারপাশের ঘটমান লৌকিক অনেক প্রসঙ্গকে
বারবার সর্বজনীন একটা বোধের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর কিছু
কবিতা পড়ে তো মনে হয় যে সেগুলো অসম্পূর্ণ। পাঠক সে চিন্তাকে পূর্ণতা
দেবে।
প্রবল আড়ালও হয়তো হয়। একটা প্রকাণ্ড আড়াল। তখন কবি অবিনাশের আশ্রয়
নেয়। অবিনাশ তাঁকে শান্ত করে। আর দেখতে গিয়ে সঞ্জয়ের আশ্রয় নেয়। দেখাকে
সঞ্জয়ের চোখ থেকে ঠিকরে বের করে ছড়িয়ে দেওয়া চতূর্দিকে। কেবল জানা যে,
আমি আছি আর আছে আমার তিনকাল এবং মহাবিশ্বের তিনকাল। অতীত এখানে উপনিষদীয়
কাল হয়ে আসে আর ছুঁড়ে দেয় বাণ ভবিষ্যতের দিকে। তখন কবিতার জন্ম হয় :
গৌরবচন
বল, গৌর গৌর গৌর...
জলভাঙা প্রতিবিম্বের টুকরো-টাকরা-গুলোকে সযত্নে রেখেছি কোটোরে। ওখানে
আগুন, ভষ্ম হয়ে বৃক্ষমূলে করেছে প্রণিপাত।
মহাশয়...
আমাদের দ্বিবিধ সুখ ও দূঃখের জীবনে, আপনি আমার প্রিয় রাজন।
বনপর্বে ধর্ম গেছে অতীত অধর্ম ছেড়ে। এই দুর্যধন আমাদেরই পাপ, একথা
জেনেছি। ভোরের সূর্যঘড়ি যে পথে বেজেছিল--ঢং! আমি সেই পথকর দিতে চলেছি আজ
কাম্যক বনে...
এরপর মহামতি বিদুর ইতিহাস হলে মহাভারতীয় যুদ্ধ শুরু হল। প্রতিটি ক্ষেত্র
কুরুক্ষেত্র হয়েছে এতকাল। বোফর্স,তাহেলকা,নারদ সারদ!!
বিদুর, বিদুর থাক, ধৃতরাষ্ট্রই রাষ্ট্র!! এরপর অস্তাচলগামী যত গাড়ি, যত
গরুত্মান, অভিমুখ এক! আমি সঞ্জয়সঞ্জাত, আমি দূরদর্শন। চোখ পেতে রেখেছি
একা, লালকেল্লার চূড়ান্তবাদের সমরক্ষেত্রের দিকে। আজ আর আমি একা নই।
এখানে মৈত্রেয়, শৌণক,ধৌম্য ইত্যাদিস্থানীয় মহাগুরু ওয়েভ বন্ধুপেজ!! কত
কথা ত্রিবিধ শান্তির আশায়, কত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জীভবনে ওম, শান্তি শান্তি
শান্তি ওম!! তবুও দিনগত পাপক্ষয়ে রাতের সমস্ত বাতি নিভে এলে আমি সবচেয়ে
ক্ষয়িভূত মোমের আলোর নিচে আমারই গঙ্গা যমুনা, সরস্বতী তীরদেশে এক তৃণাদ
ভূমি এঁকে চলি।
"৪র্থ তৎপুরুষ", শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস, সান্নিধ্য।
ঠিকানা :
শতানীক রায়,
প্রঃ চন্দন রায়,
প্রান্ত পল্লি,
পোস্ট + ডিস্ট্রিক্ট- মালদা।
পিন- ৭৩২১০১।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন