নারী দিবস পালন ও যৌক্তিকতা
রাণা চ্যাটার্জী
কিসের নারী দিবস! নারীদের জন্য আলাদা করে দিন পালন শুনতে তো ভালোই লাগছে কিন্তু নারীরা কি আজ এই দিনে স্পেশাল সুবিধা পাচ্ছে তাদের প্রিয় জন,প্রিয় সমাজ ব্যবস্থা থেকে।এই যেমন বাড়ির লোকজন কি আদৌ বলছে মা আজ তোমার ছুটি,গিন্নি আজ আমি আমরা সামলে দেবো বাড়ির যাবতীয় ঝক্কি ঝামেলার কাজ! বাড়িতে আজ কি তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে!!সুতরাং অমন ভেক দেখানো নারীদিবস পালনের মানে টা কি যেখানে পান থেকে চুন খসলে দোষারোপের আঙুল ওঠে নারীদের প্রতি।
যে নারীকে বাড়ি,সমাজ ,অফিসে রাস্তা ঘাটে যোগ্য সম্মান আদায় করতে লড়তে হয়,লোভ লালসার আগুন চোখ থেকে বাঁচতে শরীর ঢাকতে হয়,অগোছালো মুহূর্তে সামান্য অপ্রীতিকর অবস্থায় হাঁ করে শরীর গিলতে আসা শকুনের মতো কামুকের চোখ চকচক করা দেখেও প্রতিবাদের ভাষা চেপে রাখতে হয় এই ভেবে যে একা পেলে যদি দিল্লির বাসের মতো নির্ভয়া কান্ড ঘটিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে বীর পুঙ্গব,কিংবা উত্তর প্রদেশের মতো জ্বালিয়ে মেরে দেবার ঘটনা নিছক হাতের খেল হিসাবে গণ্য হয় অতি কামুকদের!আইন আদালত সব কব্জা করে বিচার ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করার ক্ষমতা রাখা শাসন ব্যবস্থা যখন নারী দিবসে পোস্টার হাতে নারীরাই দেশের আসল শক্তি বলে স্লোগান তোলে ভরসা হয় না,বরং বড্ড বেশি মেকি লাগে। রক্ষক ই ভক্ষক এই বার্তা আরও বেশি জোরালো হয়।
টিভি,পেপারে যেকোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারী শরীরকে ব্যবহার করে প্রোডাক্টকে আকর্ষণীয় করার প্রবনতা আগেও ছিল,এখন আরও বেড়েছে।বিজ্ঞাপন জুড়ে নারীকে কেবল ভোগ্যপণ্য হিসাবে দেখানোর প্রয়াস,ক্রেতাদের ওই বস্তুর প্রতি আকর্ষণ বাড়ায় জেল্লা দেওয়া উন্মুক্ত নারী শরীর , সেখানে নারী দিবস নিয়ে গলা ফাটানো সত্যিই আদিখ্যেতা !
ব্যস্ততায় জরুরী কাজে দুটো দিন যদি বাড়িতে মহিলারা না থাকে সব ডামাডোল , লন্ড ভন্ড অবস্থার সৃষ্টি! দোষারোপের আঙুল ওঠাতে পিছুপা হয় না পুরুষ! যেন চুক্তি করা আছে নারীদেরই বাইরের সাথে ঘর সংসার সামলাতে হবে। পরিবার,সমাজ রাষ্ট্র,দেশ প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা অস্বীকার করার জায়গা নেই কিন্তু পুরুষ তান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বদল হচ্ছে কই?নারী সুরক্ষা নিয়ে কেবল গলা ফাটানো!মোমবাতি মিছিল,প্রতিবাদের যে ঝড় ওঠে কিন্তু শাসকের আবার চোখ রাঙানি তে অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কতজন পেয়েছে!!
বিরাট বাজেটে আলোর রোশনাই, নারী শক্তি আরাধনায় দুর্গাপূজা,কন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, বেটি বাঁচাও পোস্টার অথচ ডাস্টবিনে কুকুরের সাথে লড়াই করে এঁটো উচ্ছিষ্ট খাবার খোঁজে ভিখারিনী, বিয়েবাড়ির এলাহী ব্যবস্থায় গেটের বাইরে অপেক্ষা রত অনাথ শিশু কন্যাটা খাবারের গন্ধে ঘুমিয়ে পড়ে, কেউ দেখেও ভ্রুক্ষেপ না করা চাহনিতে রীতিমতো মোবাইলে নারী দিবস উইস করতে নিমগ্ন হয়, এমন নারী দিবস পালনের আসল যৌক্তিকতা কোথায়!! যে সেলিব্রেশন অভাবী নারীদের ভাত দিতে অপারগ,পরনের ন্যুনতম লজ্জা নিবারণের কাপড় আর মান সম্ভ্রম তাতে কি হবে দেশজুড়ে এমন শুভেচ্ছা স্রোত। উল্টে যৌবনের ডালপালা মেলে ওঠা ডাগর মেয়েটির শরীর গিলতে আসে সমাজের বুড়ো ভাম কামুক শয়তান দল,তাদের দ্বারা নারী দিবস পালনের রমরমা সত্যই ভয়ের উদ্রেক আনে।আজ নারী দিবসেও দেশের কোনায় প্রত্যন্ত অঞ্চল সহ স্মার্ট শহরে নির্যাতন,গৃহ হিংসা যৌন নিপীড়ন খবর তবে এমন দিবস পালনের কি প্রয়োজন !সকলে বরং নিজের বিবেকের কাছে শপথ করুক নিজের পরিচিত, অপরিচিত সকল নারী র প্রতি রুচি সম্মান বোধ জাগ্রত করে অন্যদের উৎসাহ করবে।বন্ধ হোক রোজ রোজ সংবাদ শিরোনামে আসা নারীদের প্রতি বীভৎসতা। সুরক্ষিত ও পল্লবিত হোক নারীদের স্বপ্ন সন্ধানী মনের।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন