google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প ।। বিনিতার চোখে নারী দিবস লেখা ।। অমিত কুন্ডু - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

গল্প ।। বিনিতার চোখে নারী দিবস লেখা ।। অমিত কুন্ডু

বিনিতার চোখে নারী দিবস

অমিত কুন্ডু

 
বিনিতা তার ছয় বছরের মেয়ে রিনিতাকে সন্ধ্যেবেলা পড়াতে বসেছে, রিনিতা তার মাকে বললো
- মা একটা কথা বলবো? 
- কি কথা বল ।

নারী দিবস কথাটার মানে ছোট রিনিতা জানে না, তাই সে তার মাকে যখন জিজ্ঞাসা করলো 

- মা , নারী দিবস মানে কি? 

এই প্রশ্নে ঠিক কি বলবে বুঝতে পারলো না বিনিতা। আসলে ও কখনও এই আলাদা করে নারী দিবস পালন করেনি। 
তাই সে বললো-

- এই নারী দিবস মানে সমাজে যত নারী বা মেয়ে  আছে তাদের জন্য একটা দিন, এই দিনে সকল নারীদের সম্মান জানানো হয়। 

- ও এই ব্যাপার।  আচ্ছা নারীদের সন্মান জানাতে আলাদা দিন কেনো মা। 

- না, এমন কোন বিষয় না,সন্মান আসে মন থেকে আর এই মনে যদি প্রতিদিন নারীদের সহযোগিতা করার মানুষিতা থাকে তাহলে এই একটা দিনের দরকার হয় না।  তুই পড় এবার । 

 মেয়ের এতো কৌতুহল দেখে বেশ ভালোই লাগলো বিনিতার। বিনিতার মনে পরে গেলো বেশ কিছু বছর আগেকার কথা। তার চোখের সামনে পুরাতন দিনের সুন্দর ঘটনা গুলো ভেসে উঠছে। 

তখন সবে কলেজের পড়া শেষ হয়েছে বিনিতার। বাবা একদিন একটা সমন্ধ দেখলো। তার আগে অবশ্য মেয়ের থেকে বিয়ে করার ইচ্ছা আছে কিনা জেনে নিয়েছিলো। বেশ ভালো ঘরের ছেলে, ভালো চাকরি করে, বিয়ের পরে যদি মেয়ের ইচ্ছা থাকে তাহলে চাকরিও করতে দেবে ওরা বলেছে, আর তাছাড়া ছেলের বাবার সাথে ওর বাবার পূর্ব পরিচিত। 

পাএ পক্ষ দেখতে এলো, প্রথম দেখাতে পছন্দ হলো। 
পাএ ও পাএীদের দুজনের মতামতের জন্য আলাদা কথা বলার ব্যবস্থা হলো। 

বিনিতা ছোট থেকেই একটু চাপা স্বভাবের। পাএের নাম অম্বিকেশ সেন। অম্বিকেশ প্রথমে কথা বলা শুরু করেছিল। সে কলকাতা তে একটি বেসরকারি  কোম্পানির  ম্যানেজার পদে আছে। তার বাড়ি ও বাড়ির মানুষদের কথা সে বলেছিল। 
অম্বিকেশ এর পরে বিনিতার কথা শুনতে চেয়েছিলো। তার কি এখন বিয়ে করার ইচ্ছা আছে জানতে চেয়েছিলো, ওর এর পরে পড়াশোনা করার ইচ্ছা, চাকরি করার ইচ্ছা এই সব শুনতে চেয়েছিলো। দুজনে ঠিক করে তারা এখন ভালো বন্ধু হয়ে একটা বছর থাকবে, দুজন দুজনকে ভালো করে চিনবে, তার পরেই বিয়ে করবে। 

আসলে বিনিতার অম্বিকেশ কে ভালো লাগলো, ওর ব্যবহার বেশ ভালো, অম্বিকেশ মেয়েদের সন্মান করতে পারে। আসলে একটা মেয়ের যে ইচ্ছা থাকে, সেটা মন দিয়ে শুনেছে অম্বিকেশ,সেটা পূরন করার দায়িত্ব নেবে বলেছিল। 
এর পরে বিভিন্ন সময়ে বিনিতা বোঝে অম্বিকেশ সত্যি ভালো ছেলে। 

একবছর পরেই দুজনের রেজিস্ট্রি হয়। আর এর কিছু মাস পরে সাত পাকে বাঁধা পরে দুজনে। 
অম্বিকেশ বিনিতার সাথে সব কথা শেয়ার করতো। এতো ব্যস্ততার পরেও অম্বিকেশ সময় করে কথা বলতো, রাগ হলে মান ভাঙাতো, আবার ঘুরতেও নিয়ে যেতো। অম্বিকেশের ইচ্ছাতে বিনিতাও চাকরি করা শুরু করলো একটি প্রতিষ্ঠানে। 
 
বিনিতাদের অফিসে মেয়ে স্টাফ কম। মেয়েদের জন্য অফিসে ঢোকা ও বেরানোর সময়ের কিছুটা ছাড় ছিলো। 
আসলে অফিসের বস একজন মেয়ে তাই উনি জানেন সব কাজ সেরে অফিস বেরোতে একটু সময় লাগে। 
মাসের বিশেষ দিনে দুদিনের ছুটি থাকে, তাদের প্রয়োজনে ওই ছুটি নিতে পারতো। 

বিনিতা অফিস যাওয়ার জন্য যখন ট্রেনে যেতো তখন দেখতো মহিলা কামড়া আছে। কেবল মাএ মহিলারা প্রবেশ করতে পারে। 
বাসেতে মহিলাদের জন্য আলাদা সিট। 

সকালে অম্বিকেশ একটু তাড়াতাড়ি চলে যায়। যেদিন একটু বিনিতার আগে ফিরতো সে, রাতের খাবার তৈরির আয়োজন শুরু করে দিতো অম্বিকেশ ।  অম্বিকেশ জানতো বিনিতাকে ফিরেই এতো কাজ করতে হয়, যদি একটু কাজ আগিয়ে রাখা যায় তো তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে রাতের খাবার। বিনিতার কষ্ট বুঝে মাসের ওই সময়গুলো  একটু আগে অফিস থেকে ফেরার চেষ্টা করতো। 
বিয়ের পরেই বিনিতা আর অম্বিকেশ কলকাতা চলে আসে, ওর শ্বশুরের গ্রামে একটি দোকান আছে,শ্বশুর আর শাশুড়ি গ্রামেই আছে। অনেকবার বলেও তাঁদের শহরে আনতে পারেনি। 
শাশুড়ি বলেছিলো তোমরা দুজনে একসাথে থাকো। সময় সুযোগ হলে আসবে। আর আমার ছেলেটার দিকে খেয়াল রাখবে। আমরা বুড়ো বুড়ি এখানে থাকবো। শহরে ঠিক মানাতে পারবোনা। 

বিনিতা আর অম্বিকেশ স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্কের থেকেও বন্ধু বেশি। 

কোন কিছুর প্রয়োজন হলে দুজনে মিলে আলোচনা  করে। সমস্যা হলে বসে আলোচনা করার চেষ্টা করেছে। 

বিনিতা তখন সবে গর্ভবতী। ওর শাশুড়ি ওই দিন গুলো ওর সাথে থেকেছে, কখনও ওর মা। ওকে একটাও কাজ করতে দেয়নি। আসলে এই সময়টা মেয়েদের মানুষিক ও শারীরিক যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন, মানুষিক ভাবে অম্বিকেশ ওর পুরো যত্ন করেছে। কখনও কষ্ট পেতে হয়নি। 

যখন মেয়ে হওয়ার পরে মেয়েকে নিয়ে গ্রামে গেলো ওরা, কিছু জন বলেছিলো। 
- এর পরে বংশে বাতি দেওয়ার জন্য ছেলে চায়। 
তখন বিনিতার শ্বশুর বলেছিলো,
- এই নাতনি আমার লক্ষী। একেই ভালো করে মানুষ করে দেখিয়ে দেবো। তখন তোমরা বলবে এই মেয়ে কোন ছেলের থেকে কম না। 

আজকে বিনিতা মেয়েকে মানুষ করার জন্য চাকরি ছেড়েছে। গ্রামের বাড়ি তে আছে সবার সাথে। আর বাকি সময়টা ছোট বাচ্চাদের পড়ায়। এই এতো কিছুর পরে কখনও ওর মনে হয়নি আলাদা করে নারী দিবস পালন করার দরকার পরবে।বিনিতা ভাবলো ওর  মতো অন্য মেয়েদের  জীবন এতো সহজ সরল না। কত কঠিন হয় জীবন,কত বাঁধা পেরোতে হয় বাকি মেয়েদের। বিনিতাও মনে মনে ভাবে যদি মেয়েরা একটু স্বাধীনতা, সন্মান আর তার কাছের পুরুষ টার কাছ থেকে খুব ভালোবাসা পায় তাহলে আর এই একদিনের নারীদিবস থাকবে না। তখন সেই মেয়ের প্রতি দিনই নারী দিবস উৎযাপন করবে। ভালো থাকুন সমাজে নারীরা, স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাসে গড়ে উঠুক তাদের জীবন। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন