অণুগল্প ।। যমুনা বাড়ি ফেরেনি... ।। চন্দন দাশগুপ্ত - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Sunday, March 17, 2024

অণুগল্প ।। যমুনা বাড়ি ফেরেনি... ।। চন্দন দাশগুপ্ত

যমুনা বাড়ি ফেরেনি...

চন্দন দাশগুপ্ত

       প্রায় রোজই সব কাজ শেষ করে বেরুতে দেরি হয়ে যায়। আর তারপর দুটো কুড়ির ক্যানিং লোকাল ধরবার জন্য যমুনাকে রীতিমতো ছুটতে হয় প্রায় মাইলখানেক। পরের ট্রেন আসবে পাক্কা আড়াই ঘণ্টা পর, তাহলে ঘরে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে।
       রোজ ভোর পাঁচটায় যমুনা ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ছটা বাড়ির কাজ সেরে ওকে ফিরতে হয়। ওকে ফেলে রেখে বরটা সেই কবে চলে গেছে। তারপর একে একে কেটে গেছে বাইশটা বছর। পেট চালানোর জন্য যমুনাকে বাধ্য হয়ে বেছে নিতে হয়েছে এই কঠিন  'কাজের লোকে'র জীবন। 
       আজ বোধহয় বিশ্বকর্মা পুজো। ভর দুপুরেও আকাশে উড়ছে কতো রঙবেরঙের ঘুড়ি। কোথায় যেন মাইকে গান হচ্ছে... "এই পথ যদি না শেষ হয়...।" মনটা হুহু করে ওঠে যমুনার। বছর তিনেক আগের ঘটনা। ওর একমাত্র ছেলে  চিন্টুর তখন উনিশ বছর বয়েস। ঘুড়ি ওড়াতে বড্ড ভালবাসতো ছেলেটা। ওর ঘুড়িটা আটকে গিয়েছিল ল্যাম্পপোস্টে। আর সেটা খুলতে গিয়েই শক খেয়ে মারা যায় সে।
       ভাবতে ভাবতেই স্টেশনের ওভারব্রিজে উঠছিল যমুনা। কিছুক্ষণ আগেই বোধহয় এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে, তাই ওভারব্রিজের সিঁড়িগুলো এখনও ভেজা। হঠাৎ যমুনার চোখে পড়ল দুটো কুড়ির ডাউন ক্যানিং লোকাল তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে। পড়িমরি করে ওভারব্রিজ দিয়ে নামতে শুরু করে সে।
         আর তক্ষুনি ঘটে মর্মান্তিক ঘটনাটা। একটা কেটে যাওয়া ঘুড়ির চিনা মাঞ্জা দেওয়া সুতো আচমকা গলায় জড়িয়ে যায় তার। আর চমকে গিয়ে ভেজা সিঁড়িতে পা হড়কে সে ছিটকে পড়ে প্রায় কুড়ি ফুট নিচের রেললাইনে। 
      সমস্ত লোকের চোখের সামনে তার ছোটখাটো শরীরটার ওপর দিয়ে চলে যায় দুটো কুড়ির ডাউন  ক্যানিং লোকাল।
       মাইকে তখনও ভেসে আসছে  সেই গানটা..." এই পথ যদি না শেষ হয়....."
 
===================

চন্দন দাশগুপ্ত 
সি/৩০/১, রামকৃষ্ণ উপনিবেশ, রিজেন্ট এস্টেট, 
কলকাতা--৭০০ ৯২

No comments:

Post a Comment