রমণী রতন
মানস কুমার সেনগুপ্ত
আমাদের পরিবারে এমন এক রমণীকে ছোটবেলা থেকে দেখেছি, যার কথা আজওস্মৃতিতে উজ্জ্বল। তিনি আমাদের ঠাকুরদা, বাবা-কাকা এবং আমাদের ভাই-বোনদের সকলের 'বুড়োমা' । বুড়োমা ছিলেন আমার ঠাকুরদাদার মা। আমাদের যৌথ পরিবারে মা-ঠাকুমাদের সঙ্গে বুড়োমাও সমান কর্মঠ এবং সক্রিয় ছিলেন আমাদের বড় করে তুলতে।ঠাকুরদাদাদের তিন ভাইকে বড় করে তুলেছেন অল্প বয়সে স্বামীহারা হয়ে। বাবা-কাকাদের প্রজন্মকেও একইভাবে আগলে রেখেছিলেন তিনি। বুড়োমা দীর্ঘায়ু ছিলেন। তাই আমরা সব ভাই-বোনেরা স্নেহ এবং প্রশয়ে সমানভাবে বড় হয়ে উঠেছি তাঁরই হাতে।ছোটবেলায় আমার এবং আমার দিদির একইসঙ্গে খুব বেশীরকম গুটিবসন্ত হয়েছিল। আমার আজও মনে আছে, দুজনকে নিজের দুপাশে শুইয়ে সারারাত নিমের পাতা গায়ে বুলিয়ে দিয়েছিলেন। পৌষ পার্বণের দিন নিজের হাতে পিঠে-পুলি তৈরী করে আমাদের খাওয়ানোর দায়িত্ব একাই নিতেন বুড়োমা।ঐ দিন সবাইকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে তুলে, নিজের হাতে তৈরি মাটির সরায়় চিতোই পিঠে তৈরি করে, ঝোলা খেজুর গুড় আর নারকেল কোরা দিয়ে খেতে দিতেন। সেদিন ভাত খাওয়ার পাট প্রায় থাকতোই না। বিকেলবেলা চুসি পিঠে, নারকেলের পুর দিয়ে পুলিভাজা ইত্যাদি চটজলদি তৈরি হয়ে যেত। আমাদের মা-ঠাকুমারা ছিলেন সাহায্যকারী মাত্র। 'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে'এই প্রবাদকে আমাদের সবার বুড়োমা তাঁর নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। ঠাকুরদাদার মা খুব অল্প বয়সে তিন ছেলেকে রেখে মারা যাওয়ার পর, ঠাকুরদাদার বাবা যাকে বিয়ে করেন তিনিই আমাদের বুড়োমা। আমাদের ঠাকুরদার মৃত্যুর পরে বুড়োমা মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পরে আমাদের ঠাকুমা জানান যে তিনি ছিলেন আমাদের ঠাকুরদার সৎমা। বুড়োমা নিঃসন্তান ছিলেন। কিন্তু ঠাকুরদাদাদের তিন ভাই, আমাদের বাবা-কাকা এবং পরবর্তী প্রজন্মের সব ভাই বোনদের আদরে, প্রশয়ে বড় করে তুলতে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে, রেখে গেছেন এ সংসারে রমণীদের আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রমণীরা সত্যিই রতন।=======================মানস কুমার সেনগুপ্ত, ১৭/৮, আনন্দ মোহন বসু রোড, দমদম, কলকাতা ৭০০০৭৪.
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫
ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত
Tags
# ৮৫তম সংখ্যা ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫
# ফিচার

প্রসঙ্গ : নবপ্রভাত পরিবার
ফিচার
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
'নবপ্রভাত সাহিত্য পরিবার'
* 'নবপ্রভাত' মাসিক ব্লগ-ম্যাগাজিন সাহিত্যের সমস্ত শাখার লেখাই প্রকাশ করে। গোষ্ঠীর ছুঁৎমার্গ নেই।
* মুদ্রিত নবপ্রভাত বছরে ১/২ বার প্রকাশিত হয়।
* নবপ্রভাত প্রকাশনী সুনামের সঙ্গে তার পথ চলা জারি রেখেছে।
* সাধারণ সম্পাদকঃ নিরাশাহরণ নস্কর। প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬।
* আমাদের পরিবারের অন্য দুটি মাসিক ব্লগজিন— ১) কথাকাহিনি (সমস্ত রকম গদ্য প্রকাশিত হয়। সম্পাদকঃ শ্রী বিশ্বনাথ প্রামাণিক) এবং ২) কিশলয় (শিশুকিশোর উপযোগী আঁকা-লেখা প্রকাশিত হয়। যুগ্ম সম্পাদকঃ শ্রী প্রিয়ব্রত দত্ত ও শ্রী কার্তিক চন্দ্র পাল)। * সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্য—শ্রী লক্ষ্মণ চন্দ্র নস্কর, জগবন্ধু হালদার, অরবিন্দ পুরকাইত, চন্দন মিত্র, পরিতোষ মণ্ডল প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন