
কুলিয়ার পটে চৈতন্যচর্চার সংহত এক পরিসর
অরবিন্দ পুরকাইত
চৈতন্যদেব সাত দিন কাটিয়েছিলেন কুলিয়ায়। সেখানে মায়াশক্তির পূজারী দেবানন্দ গোস্বামীকে মার্জনা করেছিলেন, তাই স্থানটি অপরাধভঞ্জনপাট আখ্যাত। কিন্তু কুলিয়া গ্রাম, কুলিয়া নগর, কুলিয়াপাট বা শ্রীপাট কুলিয়া ঠিক কোথায় তা নিয়ে ধন্দ, কেন-না একাধিক স্থান সেই মাহাত্ম্যের দাবিদার। প্রবীর রায় তাঁর 'শ্রীচৈতন্যের কুলিয়া : অপরাধভঞ্জনপাট' পুস্তকে চৈতন্যদেব সংক্রান্ত পুস্তক, কুলিয়াকে নিয়ে একাধিক স্মৃতিচারণ তথা লেখা, সাক্ষাৎকার, সাহিত্য-ইতিহাস, সর্বোপরি ক্ষেত্রগবেষণার মাধ্যমে খোলা-মন সন্ধান করতে চেয়েছেন চৈতন্যস্মৃতিবিজড়িত কুলিয়ার প্রকৃত অবস্থানকে।
ছয় ফর্মার পুস্তকটিতে বলতে গেলে সংক্ষেপে চৈতন্যদর্শন হয়ে যায়। প্রকৃত কুলিয়াপাট অনুসন্ধানের পথে বইটিতে এসেছে চৈতন্যদেবের জন্ম ও বংশপরিচয়, চৈতন্য-পরিকর— দীক্ষাগুরু থেকে শিষ্য-অনুগামী, তাঁর রহস্যময় তিরোধান, ব্যক্তিত্ব-পরিচিতি থেকে স্থান-পরিচয় এবং শেষে শ্রীচৈতন্যের বংশলতিকা, মানচিত্র-স্থানচিত্র, মেলা-মন্দির-মূর্তিচিত্র থেকে সমাধি-চিত্র ইত্যাদি।
নবীন সেনের লেখাটি সেকালের কুলিয়ার মেলার একটি অনবদ্য চিত্র। 'হুজুগে' হরিনাম ও ভক্তি-আকুল কীর্তন— উভয়ের সহাবস্থানের জীবন্ত উপস্থাপনা। লেখক বর্ণিত (কুলিয়াপাট মহোৎসব) গয়েশপুর পুরসভার অন্তর্গত একালের কুলিয়া মেলার বাস্তব চিত্রটিও (১৪২৩ বঙ্গাব্দের পৌষের কৃষ্ণা একাদশী) তার বর্তমান চালচিত্র-চরিত্রের পরিচয়বাহী।
শুরুতে লেখকের এক পাতার 'কিছুকথা'য় জানতে পারি যেন ছোটবেলা থেকেই কুলিয়া নামের সঙ্গে পরিচয় শ্রী রায়ের আর তাতে করে যেখানে পেয়েছেন কুলিয়াকে জানার চেষ্টা করেছেন এবং তার ফল হিসাবে আলোচ্য পুস্তকটির মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন চৈতন্যদেবের কুলিয়াকে খোঁজার। "এই প্রচেষ্টা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আঘাতের জন্য নয়। সত্যকে খোঁজার চেষ্টা।" প্রতাপ কুমার মণ্ডলের এক পাতার 'প্রকাশকের নিবেদন'-এ রয়েছে লেখক কর্তৃক আগাগোড়া পরিমার্জিত বইটির এই দ্বিতীয় সংস্করণের বৈশিষ্ট্য তথা পুস্তকধৃত বিষয়ের কথা। দুটি অধ্যায়ে বিভাজিত বইটিতে রয়েছে শিরোনামযুক্ত ক্ষুদ্র বা অনতিক্ষুদ্র অনেক প্রসঙ্গ।
উল্লেখ করা যায় যে কুলিয়াপাট বা কুলিয়ার পাট বৃহত্তর এক গ্রামীণ মানবসমাজের কাছে 'কুলেরপাট' হিসাবে বিদিত। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার আমাদের এদিকে অনেকের মুখেই শুনেছি এই— তাদের উচ্চারণে কুলেরপাট— মেলার কথা।
কোনও কোনও লেখার উৎসনির্দেশ আবশ্যক ছিল।
পুস্তকের নাম : শ্রীচৈতন্যের কুলিয়া : অপরাধভঞ্জনপাট
লেখকের নাম : প্রবীর রায়
প্রকাশকের নাম : ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি
প্রকাশকাল : প্র প্র— আগস্ট ২০১৭, দ্বিতীয় পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত ওরিয়েন্ট সংস্করণ— জানুয়ারি ২০২৪
মূল্য : ২০০ টাকা
=====================
আলোচক: অরবিন্দ পুরকাইত
গ্রাম ও ডাক — গোকর্ণী
থানা — মগরাহাট
জেলা — দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন