প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

ওমা, দিদি কবে আসবে? কত দিন দেখিনি।
দিদি যে বলল,আমার জন্য একটা নতুন জামা আনবে আর একটা মোবাইল।
আমার বন্ধুদের এ--ই এত্তো বড় বড় ফোন। নতুন নতুন কত গেম খেলে।স্কুলের প্রজেক্ট করে। এখন সবাই ফোনের সাহায্যে সব প্রশ্ন উত্তর খুঁজে পায়। আমাদের কেন নেই বাবা?
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র রানা। দিদিই তার সব।
পঙ্গু বাবা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,এত বায়না কিসের তোর? জানিস না, ছোটদের মোবাইল দেখতে নেই। মন দিয়ে বই পড়। সব খুঁজে পাবি।
দিদিকে এসব কথা খবরদার বলিস না।
বাবা জানে, মেয়ে দুর্গার কানে একবার কথাটা গেলে, যেমন ভাবেই হোক ঠিক কিনে আনবে একটা স্মার্টফোন ।
বাবা এও জানে ভায়ের আবদার মেটাতে দুর্গা আরও কাজ খুঁজবে। আরও পরিশ্রম করবে। খাওয়ার সময় পাবে না।৷ যে বয়সে মেয়ের লেখা পড়া করার সময়। সেই বয়সে দূর্গা বাড়ি বাড়ি কাজ করে। টাকা উপার্জন করতে।
পাঁচ বাড়ি কাজ করে দশ হাজার টাকা রোজকার তার।
তবু অভাব মেটে না। বাবার ওষুধ, ভায়ের পড়াশোনা সব সামলে হাতে ক'টা টাকায় বা থাকে। তবু সে কাউকে অখুশি রাখতে চায় না।
পুজা আসছে। ভায়ের আবদার একটা স্মার্টফোন। ভাইকে খুব ভালোবাসে। দূর্গা জানে,তার খুব কষ্ট হবে এতগুলো টাকা রোজকার করতে।
তাই একটা আয়া সেন্টারে কাজ নিয়েছে। দিনে -রাতে সারাক্ষণ পরিশ্রম করে।
সপ্তমী অষ্টমী শেষ আজ নবমী।এল দুর্গার ফোন। ভাই তোর জন্য অনলাইনে একটা স্মার্টফোন অর্ডার করেছি। দশমীতেই পেয়ে যাবি। আমি ফিরব ওই দিন।
দশমী শুরু। মা দুর্গার বিসর্জন।
ভাই অপেক্ষায়।ওমা মা,দিদি কখন আসবে? একটা ফোন এল।
চমকে উঠলো মা।
কিপ্যাড ফোনটা পড়ে গেল মায়ের হাত থেকে।
এতক্ষণে পাড়াময় হইচই।
বড় রাস্তার পাশে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে দুর্গার লাশ। কে বা কারা এমন করল তার কোনো প্রমাণ নেই। আছে কিছু ক্ষত চিহ্ন। সারা শরীরে রক্তের কালো দাগ। আমার দুর্গার বিসর্জন।
মায়ের বোধন শুরু হয়েছে। শুভ বিজয়া।
==============
অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ
গ্রাম- ভগবান পুর
পোস্ট - দিঘির পাড় বাজার
থানা-ফলতা
জেলা-দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
পিন-৭৪৩৫০৩
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন