Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

ছবি
  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত

যোগ্য জবাব 

  সমীর কুমার দত্ত 

   

ঐশী ফিরে এলো বাপের বাড়ি । বাবাকে বললো, "  বাপি,আমি ফিরে এসেছি ওকে ডিভোর্স দেবো বলে। ওর মতো ছেলেকে মাথায় তুলে ভুল করেছি। আমি আই. এ. এস -এর জন্য প্রস্তুতি নিতে চাই। ওকে আমার এবং আমাদের পরিবারের জাতটা চিনিয়ে দিতে চাই। পায়ের তলার জুতো কখনো মাথায় তুলতে নেই। ও নিজেকে ভাবে কী? ভালোবাসা করার সময় তো অনেক বড়ো বড়ো কথা বলেছিলো। বিয়ের ছ'মাসের মধ্যেই ওর মুখোশ খুলে গেলো। 

ঐশী ও তৃষান দুজনেই নৃত্যশিল্পী। দুজনে নৃত্যনাট্যে মেন রোলে নৃত্য করে। সেহেতু দুজনেই দুজনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রেমের বন্ধনে বাঁধা পড়ে। ঐশী মাকে সব কথা খুলে বলে। মা, গৌরী দেবী শুনে বললেন," তোর বাবা কিন্তু শুনলে রাগ করবে। আমরা কী পরিচয় দেবো ? না জামাই নৃত্যশিল্পী। তোকে নাচে এমনিতেই ভর্তি করার পক্ষে উনি ছিলেন না, পড়ার ক্ষতি হবে বলে। আমি জোর করেই রেখে ছিলাম। এখন ভাবছি রেখেই কাল করে ছিলাম। তাহলে আজকের এই দিনটা দেখতে হতো না। এখন তোর বাবাকে যে কি বলবো!" ঐশীর বাবা দীনেন্দ্রনাথ নিজে একজন রিটায়ার্ড আমলা। সেহেতু চেয়েছিলেন মেয়েকেও একজন আমলা বানাতে। ছেলেতো হলো না। সে হলো এম.বি. বি.এস ডাক্তার। চেয়েছিলেন আমলা বানাতে। কিন্তু ছেলের হচ্ছে ডাক্তার হ‌ওয়ার। তাই তিনি আর জোর করেন নি। যাই হোক ডাক্তার তো হয়েছে। মেয়ে ঐশী বাবার খুব অনুগত ছিলো। তাই একসময় বাবার ইচ্ছাকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু বাদ সাধলো ওই নৃত্যশিল্পী তৃষান। দেখতে হ্যান্ডসাম। দিনের পর দিন ঐশীকে প্রেমের বন্ধনে বাঁধবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো। অবশেষে ঐশী ওর ফাঁদে পা দিলো। আগে জানতে পারলে নাচ বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারতো।

একদিন দীনেন্দ্রনাথ ঐশীকে বললেন," শোনো, এইভাবে নেচে বেড়ালে চলবে না। দরকার হলে নাচ ছেড়ে দাও। আই.এ.এস-এর জন্য প্রস্তুতি নাও। এক চান্সে যে হয়ে যাবে এমন নয়। একবারে না হলে দু-তিন বার দেখতে হবে।" 
"না বাপী, আমি নাচ ছাড়তে পারবো না।"—ঐশী ইতস্ততঃ না করেই বলে ফেললো। 
—কি বললে? আমি ঠিক শুললাম তো? কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। তা নাচ না ছাড়ার কারণটা জানতে পারি কি?
—ও আমি বলতে পারবো না বাপী। তুমি মায়ের কাছে জেনে নিও।
—কেন কী এমন করেছো যা নিজে মুখে বলতে পারবে না। মায়ের কাছ থেকে আমাকে জানতে হবে। এমন গুনের কাজ  করেছো যে নিজের মুখে বলতে লজ্জা লাগছে। ডাকো তোমার মাকে। আর তুমি সঙ্গে থাকবে। তোমার সাক্ষাতেই আমি জিজ্ঞাসা করবো।"
ঐশী মাকে ডেকে দিয়ে ও নিজে আর এলো না। 
"বলো কী বলছো?"—গৌরী দেবী জিজ্ঞাসা করলেন।
— ওকে ডাকো আগে। ওর সামনে কথা হবে।
" এই ঐশী,এখানে আয়। বাপী ডাকছেন।" গৌরী দেবী হাঁক পাড়লেন। ঐশী মাথা নিচু করে এসে দাঁড়ালো।
—মেয়ে কী এমন করে বসেছে যা তুমি জানো অথচো আমি জানি না? 
—মেয়ে তোমার নাচের স্কুলের একটি ছেলের প্রেমে পড়েছে।
—আর ছেলে খুঁজে পেলো না। তুমি জানতে, তা আমায় জানাওনি কেনো? 
—কী বলবো বলো না। অতো বড়ো মেয়ে তার কোন জ্ঞান বুদ্ধি নেই? আমি তো শুনে স্তম্ভিত। কী বলবো তোমায়!
দীনেন্দ্রনাথ মেয়েকে বলতে থাকেন," একদিন তুমি নিজে মুখে আই.এ.এস হবার কথা বলেছিলে। এই নিয়ে দাদাকে কম কথা বলতে ছাড়োনি। দাদা তো তবু সমাজের একজন প্রয়োজনীয়,গন্যমান্য মানুষ হয়ে উঠেছে। আর দাদা ডাক্তার হতে চাইলে তুমি কী বলতে, "আজকাল ডাক্তার তো আকছার হচ্ছে। একটা ভালো ডাক্তার তো বের হয় না। আমলা কতোজন হতে পারে? বাবাকে দেখছিস তো বাবার কতো সম্মান।" আর আজ তুমি যা বলছো তার দর সমাজে কতোটা? আগে তো লোকে এই পেশাটাকে ভালো চোখে দেখতোই না। আজ‌ও বিশেষ মর্যাদা নেই। ধরো না তোমার নাচের স্কুলের দিদিমনির কথা। তিনি কী এমন একজন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী হয়ে উঠেছেন। তোমাকে আমরা নাচ শিখতে দিয়ে ছিলাম একস্ট্রা ক্যারিকুলার অ্যাকটিভিটি হিসাবে। নৃত্যকে পেশা করিবার জন্য নয়। সঙ্গীত, নৃত্য, চিত্রকলা এই সমস্ত বিনোদনের জন্য। এগুলোকে পেশা করলে  কতোজনের দুঃখ ঘুচবে? হ্যাঁ, খেলাধূলাটা আলাদা । শরীরের জন্য অপরিহার্য। তুমি তো আগে আই. এ.এস হবার স্বপ্ন দেখতে। নিদেনপক্ষে ইঞ্জিনিয়ার‌ও হ‌ওয়া যেতে পারতো। কিন্তু নাচতে গিয়ে একজন নৃত্যশিল্পীকে প্রেম করে বসলে। একমাত্র জামাই। কী পরিচয় দেবো। বলবো জামাই আমাদের নৃত্যশিল্পী। আজ পেশাটার মধ্যে কী এমন পেলে যে আই.এ.এস হ‌ওয়ার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেলো? ওই বদ ছেলেটার জন্য তুমি নিজেকে শেষ করে ফেললে। ভালো করেছো কি মন্দ করেছো তা সময়‌ই বলে দেবে।  আমি বাবা হয়ে তোমার অমঙ্গল কামনা করতে পারি না। তুমি ভালো থেকো, সুখী হ‌ও।  বিয়ে আমরা দেবো দাঁড়িয়ে থেকে। কারণ তুমি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাবে। 

বিয়ে হয়ে গেলো। স্বপ্নের ঘোরে কেটে গেলো ছটা মাস।  তারপর মোহভঙ্গ হলো যখন তৃষ্ণান নবাগতা সুন্দরী এক দক্ষ মহিলা নৃত্যশিল্পী নয়না মৈত্র দলে যোগদান করে ঐশীর জায়গা দখল করে নেয়। তখন থেকে নায়ক তৃষ্ণান নায়িকা হিসেবে নয়নাকে পায়। নায়ক-নায়িকার অভিনয় করতে করতে বাস্তবে নয়নার হিরো হবার চেষ্টা করে। তাদের দুজনের আলাপচারিতায় দলের মধ্যে গুঞ্জন উঠতে শুরু করে।
ঐশী দুজায়গায় অপমানিত হয়। এক, দলের কাছে। তাকে সরিয়ে দিয়ে ওই জায়গায় নয়নাকে এনে তার স্বামীর পেয়ার তৈরি করে। দ্বিতীয়তঃ, স্বামীর নয়নার প্রতি ঘনিষ্ঠ হ‌ওয়া। ঐশী খুব অপমানিত বোধ কোরে তৃষ্ণানকে ডিভোর্সের হুমকি দেয়। তৃষ্ণান ভাবলো ভালোই হয়েছে তার পথ নিজের থেকেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যখন,তখন আপত্তি করে লাভ কী। ঐশী ডিভোর্স ফাইল করে বাড়ি ফিরে এলো। বাপের বাড়ি ফিরে এসে ঐশী দৃঢ় সংকল্প করে যে সে একজন আই. এ. এস হয়ে তৃষ্ণানকে সে বুঝিয়ে দেবে যে সে তার যোগ্য নয়। সে তাকে  বিয়ে করে নিজের প্রতি অবিচার‌ করেছে।  বাবার কথা অমান্য করে জীবনে ধাক্কা খেয়ে সে  আই. এ. এস পরীক্ষার  প্রস্তুতিতে গভীরভাবে মনোনিবেশ করে। বাবা একজন আই. এ. এস হ‌ওয়ার জন্য ওর অনেক সুবিধা হয়। প্রিলি পাশ করে মেন্স ও ইন্টারভিউতে অসাধারণভাবে সফল হয়ে সে একজন আই. এ. এস হয়। বাবাকে বলে," বাপী তুমি একদম ঠিক। তোমার কথা অমান্য করে পরিবারের ঐতিহ্য বিরোধী কাজ করাটা একদম ঠিক হয়নি। নৃত্যকে আমি পেশা করতে চাই নি। চেয়েছিলাম ওকে ভালোবেসে বিয়ে করতে। সেটা যে কতোবড়ো অন্যায় তা তো প্রমাণ হয়েই গেলো।  দেখলাম ও ভালোবাসার যোগ্য‌ই নয়। ও আমাদের পরিবারের বেমানান। আমি তাই তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ আমার ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।"
এবার তার প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ঐশীর আই. এ. এস হ‌ওয়ার খবর চলে যায় তার নাচের স্কুলে। এদিকে তৃষ্ণান নয়নাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়।প্রত্যাখ্যাত হ‌ওয়াই স্বাভাবিক ছিলো। কারণ যে ছেলে একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করে কিছুদিন পর আবার অন্য মেয়ের দিকে হাত বাড়ায়, তাকে কেউ বিশ্বাস করে না। তাই সুযোগ খুঁজতে থাকে ঐশীকে অভিনন্দন জানানোর এবং ডিভোর্স পেপার  যাতে উইথড্র করে নেয় সেজন্য তাকে অনুরোধ করার। পথে একদিন দুজনে মুখোমুখি হয়। তৃষ্ণান ঐশীকে অভিনন্দন জানালে, ঐশী উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে না করে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।ঐশীর ফার্ষ্ট পোস্টিং হলো হাওড়ার এ.ডি. এম পদে। 

এর মধ্যে নাচের স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল বন্দনা সেন প্রথমতঃ, ঐশীকে অভিনন্দন জানাতে, দ্বিতীয়তঃ, স্কুলের একটা প্রোগ্রামে নয়নার অনুপস্থিত থাকায় ঐশীকে প্রক্সি দে‌ওয়ার জন্য অনুরোধ করতে আসেন।  ঐশীর মা গৌরী দেবী ঐশীকে কথা বলতে না দিয়ে তিনি নমস্কার জানিয়ে বলতে শুরু করেন, "সরি, আমার মেয়ে এখন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পদে নিযুক্ত। তার পক্ষে আর কোন প্রোগ্রাম করা সম্ভব নয়। এতোদিন আমার মেয়ে মেন রোলে চান্স পেয়ে এলো। আর যেই সুন্দরী আর এক নৃত্যশিল্পী এসে হাজির গেলো, ওমনি আমার মেয়ে বাদ পড়ে গেলো। এটা ওর পক্ষে অপমান নয়? আজ তার হয়ে ও প্রক্সি দেবে ভাবলেন কি করে? নাচটাকে পেশা করার জন্য ওকে নাচ শিখতে দিই নি। আমাদের বাড়ির একটা ঐতিহ্য আছে। একটা পরম্পরা আছে। আপনার স্কুলের ওই বদ্ ছেলেটাকে ভালোবেসে  ও বিয়ে করার পরেও অন্য মেয়ের দিকে ওই  ছেলে হাত বাড়ায় কী করে?  ওই মেয়েটিই তো আমার মেয়ের সর্বনাশের কারণ। আপনি সেদিন চূপ ছিলেন। একটা বাক্য‌ও ব্যায় করেননি কিংবা ওকে বের করেও দেননি আপনার স্কুলের স্বার্থে। আজ আমার মেয়ে আপনার স্কুলের কথা ভাবতে যাবে কেন? সরি, আমার মেয়ে আজ আপনাকে কোনভাবেই সাহায্য করতে পারবে না। আপনি এখন আসতে পারেন।"
----------------------
 

 
Samir Kumar Dutta 
23/1/A, Mohanlal Bahalwala Road 
Bally, Howrah 711201


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল