ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Saturday, March 15, 2025

ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত

রমণী রতন 

মানস কুমার সেনগুপ্ত        

                 

আমাদের  পরিবারে  এমন  এক  রমণীকে ছোটবেলা থেকে দেখেছি, যার কথা আজও
 স্মৃতিতে উজ্জ্বল। তিনি আমাদের ঠাকুরদা, বাবা-কাকা এবং আমাদের ভাই-বোনদের সকলের 'বুড়োমা' । বুড়োমা ছিলেন আমার ঠাকুরদাদার মা। আমাদের যৌথ পরিবারে মা-ঠাকুমাদের সঙ্গে বুড়োমাও সমান কর্মঠ এবং সক্রিয় ছিলেন আমাদের বড় করে তুলতে।
ঠাকুরদাদাদের‌ তিন ভাইকে বড় করে তুলেছেন   অল্প বয়সে স্বামীহারা হয়ে। বাবা-কাকাদের      প্রজন্মকেও একইভাবে আগলে রেখেছিলেন তিনি। বুড়োমা দীর্ঘায়ু ছিলেন। তাই আমরা সব ভাই-বোনেরা স্নেহ এবং প্রশয়ে সমানভাবে বড় হয়ে উঠেছি তাঁরই হাতে। 
                 ছোটবেলায় আমার এবং আমার দিদির একইসঙ্গে খুব বেশীরকম      গুটিবসন্ত হয়েছিল। আমার আজও মনে আছে, দুজনকে নিজের দুপাশে শুইয়ে সারারাত নিমের পাতা গায়ে বুলিয়ে দিয়েছিলেন। পৌষ পার্বণের দিন নিজের হাতে পিঠে-পুলি তৈরী করে আমাদের ‌‌খাওয়ানোর দায়িত্ব একাই নিতেন বুড়োমা।ঐ দিন সবাইকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে তুলে, নিজের হাতে তৈরি মাটির সরায়়   চিতোই পিঠে তৈরি করে, ঝোলা খেজুর গুড় আর নারকেল কোরা দিয়ে খেতে দিতেন।  সেদিন  ভাত খাওয়ার পাট প্রায় থাকতোই না।     বিকেলবেলা চুসি পিঠে, নারকেলের পুর দিয়ে পুলিভাজা ইত্যাদি চটজলদি তৈরি হয়ে যেত। আমাদের মা-ঠাকুমারা ছিলেন সাহায্যকারী মাত্র।                                                                       'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে'এই প্রবাদকে আমাদের সবার বুড়োমা তাঁর নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। ঠাকুরদাদার মা খুব অল্প বয়সে তিন ছেলেকে ‌‌‌‌‌‌রেখে মারা যাওয়ার পর, ঠাকুরদাদার বাবা যাকে বিয়ে করেন তিনিই আমাদের বুড়োমা। আমাদের ঠাকুরদার মৃত্যুর পরে বুড়োমা মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পরে আমাদের ঠাকুমা জানান যে তিনি ছিলেন আমাদের ঠাকুরদার সৎমা। বুড়োমা নিঃসন্তান ছিলেন। কিন্তু ঠাকুরদাদাদের তিন ভাই, আমাদের বাবা-কাকা এবং পরবর্তী প্রজন্মের সব ভাই বোনদের আদরে, প্রশয়ে বড় করে তুলতে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে, রেখে গেছেন এ সংসারে রমণীদের আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রমণীরা সত্যিই রতন। 
                               
=======================
মানস কুমার সেনগুপ্ত, ১৭/৮, আনন্দ মোহন বসু রোড, দমদম, কলকাতা ৭০০০৭৪.

No comments:

Post a Comment