google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার

সম্পর্ক

গৌতম সমাজদার


শুভ্রা খুব ছোট বয়স থেকেই মাকে কাছে পায়নি, যাকে মা বলে ডাকে, সে প্রকৃতপক্ষে biological মা নয়, ছোটবেলা থেকে তা জানে। কিন্তু অলকার কাছে শুভ্রা মাতৃস্নেহেই মানুষ হয়েছে। কোনদিন অন্য কিছু ভাবেনি। যখন শুভ্রা দ্বাদশ শ্রেণীতে পরে তখন এক সন্ধ্যায় অলকা ভাবে আর বোধহয় শুভ্রার কাছে প্রকৃত তথ্য গোপন রাখা ঠিক হবে না, তাই শুভ্রার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, "বস মা, একটু কাছে বস, আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি," "হ্যাঁ বল"- শুভ্রা বলল। "শোন তোর মা তোকে জন্ম দিয়েই cancer এ আক্রান্ত হয়, তোর দিদির সাথে তোকে মানুষ করার মত সাহস বা পরিস্থিতি কোনটাই তোর মায়ের ছিল না, তাই তোকে আমার কাছে দিয়ে গিয়েছিল, আমি তোকে নিজের মেয়ের মতোই মানুষ করেছি, কোনদিন এর অন্যথা নিশ্চয়ই তুই অনুভব করিসনি, তবে হ্যাঁ এটা গোপন রাখার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী, লজ্জিত। ইচ্ছাকৃতভাবেই তুই কিছুটা পরিণত মনস্ক হওয়ার পর বললাম। তোর মা রুগ্ন শয্যাশায়ী অবস্থায় আজও বেঁচে আছে, ইচ্ছা করলে তুই ফিরে যেতে পারিস, ভেবে দেখ কি করবি" শুভ্রা বলল, "হ্যাঁ আমি কষ্ট পাচ্ছি বটে বা গোপন করেছে বলে রাগ হচ্ছে, কিন্তু তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মা বলে ভাবতে পারবো না। আর হ্যাঁ আমার biological মায়ের প্রতিও আমি দায়িত্ব পালন করতে চাই, আগামীকাল ওনার সাথে আমি দেখা করব, আশীর্বাদ চাইবো।"

পরের দিন দেখা করতে গেলে ওর মা অসীমা ওকে কোনক্রমে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,"ক্ষমা করিস, জন্ম দিয়েও তোর প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারিনি, তবে সবসময়‌ই তোর প্রতি আশীর্বাদ আর শুভ কামনা ছিল, নিজে অপরাধ বোধে ভুগছি। শুধু বলি এগিয়ে যা সত্যের পথে থাক।"

সব বুঝেও একবুক কষ্ট নিয়ে শুভ্রা ফিরে আসে, ভাবে কোন অপরাধে ভগবান তাকে স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত করল? তবে শুভ্রা যাকে মা হিসেবে পেয়েছে, সে কোনদিন কিন্তু ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে দেয়নি, আশ্চর্যজনকভাবে আরো দুটো ছেলে মেয়ের সাথে একই ভাবে মানুষ করেছে, এর থেকে একটা উপলব্ধিতে পৌঁছায়, পৃথিবীতে মা-রা এক রকমই হয়।

এর মধ্যে অনেকটা সময় চলে গেল, শুভ্রা স্নাতক হল, কিন্তু শুভ্রার biological মা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে ওরা দুজনে দেখতে গেলে, অসীমা বলে, শোন শুভ্রা, আমি আজ আছি কাল নেই, তোর বিয়েটা দেখে যেতে চাই, আমি তোর জন্য কোনদিন কিছুই করে যেতে পারিনি, এটা দেখে যেতে পারলে শান্তিতে মরতে পারতাম, অলকা তুমি ওকে একটু বুঝিয়ে বল।" শুভ্রা বলে, "আমি তোমাদের কথা মেনে নিতে পারি, কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।" অলকা, অসীমা দুজনেই বলে, "বল তোর শর্ত শুনি" শুভ্রা বলে, "আমি মাতৃহীন আর সন্তান আছে এমন কোনো পুরুষকে বিয়ে করতে চাই, তাকে মাতৃস্নেহে মানুষ করতে চাই।" দুজনে প্রথমে অবাক হলেও পরে ওর কথা মেনে নেয়, কাকতালীয়ভাবে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া সদ্যজাত সন্তান রেখে মারা গেছে, এমন একটা পাত্রের খবর আছে, অলকা বলে, "যদি সেই পিতা সন্তানের স্বার্থে রাজি হয় তবে তোর এই কষ্টকর অথচ মহান ইচ্ছাকে আমরা মেনে নেবো, তুই বিয়ের প্রথম বছর গুলো আনন্দে, মজায় না কাটিয়ে, এত তাড়াতাড়ি এত কঠিন দায়িত্ব নিবি, সেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে, তবুও আমরা রাজী।" 

বিয়েটা হয়ে গেল, বিয়ের পরদিন, ও বাড়িতে গেলেই, নির্মল পায়ে হেঁটে হেঁটে একটি বাচ্চা মা মা বলে শুভ্রাকে জড়িয়ে ধরে, ওকে বুকে নিয়ে শুভ্রা খুব আদর করল। খুব তাড়াতাড়ি ওকে আপন করে নিল, শিশুটির নাম রাখল সেরা। সেরা নামে ডাকলেই ঝাঁপিয়ে শুভ্রার বুকে চলে আসে। কি যে ভালো লাগে শুভ্রার, প্রাণটা আনন্দে ভরে ওঠে, স্বামী সুদীপও খুব খুশি, না হলে বাচ্চাটাকে নিয়ে অকূলপাথারে পড়তে হতো, নষ্ট হতো জীবনটাই। যদিও সুদীপ ছিল খুব বহির্মুখী।

শুভ্রা ধীরে ধীরে জানতে পারে, সুদীপের আগের স্ত্রী মারা গেছে অবহেলায় আর অত্যাচারে, আগের বউ নাকি অনেক বার ভালো ডাক্তার দেখানোর কথা বললেও সুদীপ কখনোই গুরুত্ব দেয়নি, তাছাড়া অনেক রাত করে মদ খেয়ে বাড়ি ফেরা, এসবের প্রতিবাদ করলে জুটতো দৈনিক নির্যাতন। যেহেতু শুভ্রা বাড়ির অমতে সুদীপকে বিয়ে করেছিল, ফলে নিজের বাড়িতে লজ্জায় কিছুই বলতে পারেনি। মুখ বুজে সব অত্যাচার মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। শুভ্র ভাবল ওকে এবার ঠিক রাস্তায় ফেরাতে হবে। ঠিক মতো অফিস না যাওয়ার জন্য প্রতি মাসে বেতন কম পাওয়া, এটা নিয়ে প্রথম দিন যখন বলল, সুদীপ বলল, "আমি এরকমই। পাল্টাতে পারবো না নিজেকে, তুমি যেচে বিয়ে করেছো, দায়িত্ব তোমার" শুনে শুভ্রা অবাক হয়ে বলল, "এটা কি বলছ সুদীপ! তুমিও সেরার বাবা, তোমার দায়িত্ব নেই? তোমাকে নিজেকে পাল্টাতে হবে, ওকে মানুষ করতে হবে, তোমার আমার যৌথ দায়িত্ব।"

এভাবেই কেটে যাচ্ছিল, কিন্তু শুভ্রা মনে মনে ভাবল ও বিএড টা পড়বে, কারন একটা চাকরি দরকার, পড়াশোনা শুরুও করল। বাচ্চাও মানুষ করার পাশাপাশি পড়াশোনাও চলল, ভালোভাবে পাশ‌ও করল। বিভিন্ন সময়ে school service কমিশনে apply করতে করতে একটা Higher Secondary school এ চাকরিও পেয়ে গেল, তখন সুদীপ বলল, "কিগো শুভ্রা তুমি সত্যিকারের মা হতে চাও না? অন্যের সন্তান পালন করেই জীবনটা কাটিয়ে দেবে?" "দেখ সুদীপ আমি সেরার মা হয়ে খুব খুশি, কোনো খেদ নেই আমার, তবে তুমি চাইলে ভেবে দেখতে পারি" এটা বললেই সুদীপ শুভ্রাকে কাছে টেনে নিয়ে আদরে ভরিয়ে দিল। একটা ব্যাপারে শুভ্রা অবাক হয় যে সুদীপের মন বলে কিছু না থাকলেও কি করে এত কাছে টেনে নেয়, আদরে আদরে পাগল করে দেয়, এর ব্যাখ্যা খুঁজে পায়না, এটার একটা টান আছে। বিছানায় ওকে কিছুতেই এড়ানো যায় না, পরের বছরই শুভ্রা মা হলো, চাকরি, দুটো বাচ্চা সব মিলে নাজেহাল অবস্থা শুভ্রার, এরমধ্যে সুদীপের কোন সাহায্য না পাওয়া, মনে একটা চাপ তৈরি হল শুভ্রার। শুভ্রা যে আশাস্বপ্ন নিয়ে নতুন জীবন শুরু করেছিল, তা আজ অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে, তবু স্বপ্ন দুটো বাচ্চাকে মানুষ করে তোলা, ও রাতে কোনো অপরাধ করেনি, সুদীপের এত বাজে ব্যবহার সহ্য করলো একসাথে আছে, থাকার চেষ্টাও করে যাচ্ছে, সুদীপকে বলে, "এবার থেকে রোজ অফিস যেতে হবে, টাকার দরকার। কিন্তু সুদীপ রেগে গিয়ে বলে, "নইলে তোমার সংসার, আমি আগের মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকব।" শুভ্রা শুনে আকাশ থেকে পড়ে। কিন্তু ওকে একটু tight দেওয়ার জন্য, যাতে ও হাত পেতে টাকা না চায়, এই মাসের শেষে পুরো বেতন পায় তাই রাজি হয়ে যায়। তাছাড়া রোজ মাতাল হয়ে ফেরে, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না, আবার ভাবে এই বিচ্ছিন্নতা মেয়ে দুটো কিভাবে নেবে, শুনে থেকে ওরা কাঁদছে, দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরে। শুভ্রা বোঝাবার চেষ্টা করে দুজনকে, বলে এক বাড়িতেই তো থাকবি তোরা কোন সমস্যাই হবে না। কিন্তু ভেঙে যায় সম্পর্ক,শুভ্রা অনুভব করে ওদের খাওয়া-দাওয়া যত্নের ক্ষেত্রে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। সুদীপ রাগারাগি করছে মেয়ের সাথে, আর আরো বেশি রাত করে বাড়ি ফিরছে। খুবই কষ্ট হচ্ছে শুভ্রার। চেষ্টাও করছে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে। কিন্তু সুদীপ সাড়া দেয়নি ইগোর জন্য, কিন্তু শুভ্রা বুঝতে পারে যে, সুদীপ লুকিয়ে লুকিয়ে শুভ্রাকে দেখে, সেই তাকানোর মত একটা ভালোবাসার গন্ধ পায় শুভ্রা। দুজনেই খুব কষ্টে আছে, বাবার সামনে দুজনে কথা বললে সুদীপ খুব রেগে যায়। দুই বোন আলোচনা করে কি করে শান্তি আনা যায়। পৌলমী একদিন দেখে বাবা আগের মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ চিৎকার করে বলে, "আমি তোমায় অবহেলা করেছি, ভালো ডাক্তার দেখায়নি, হ্যাঁ এগুলো সত্যি, কিন্তু তুমি ছেড়ে চলে যাও এটাও তো চাইনি, কি বলছ? এখনকার স্ত্রীকে যত্ন করতে, নাহলে আমি দুটোর ক্ষতি হয়ে যাবে! কি বলছ, শুভ্রা খুব ভালো মানুষ, ওকে দেখতে? হ্যাঁ আমি তোমার কথা রাখার চেষ্টা করব। আজ থেকেই, আর জানোতো বলতে দ্বিধা নেই, শুভ্রাকে আমি ভালোবাসি ও তো আমার প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।

পরের দিন দুই বোন মা চলে যাবার পর ফুল দিয়ে ঘর সাজালো, আলোয় আলোকিত করল, মালা আনল আর সকালে বাবাকে বলে দিলো সন্ধে ছটার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসতে। সন্ধ্যাবেলায় দু বোন দুজনকে নিয়ে সেই সাজানো ঘরে ঢোকল, দুজনেই অবাক হল, সুদীপ জিজ্ঞাসা করল, "কি হচ্ছে এসব, এই ছেলেমানুষি ভালো লাগছে না, তখনই বড় মেয়ে আরো জোরে হাত ধরে দুজনকে পাশাপাশি বিছানায় বসিয়ে ছোটকে বলল, আলোটা জ্বালিয়ে দে বোন " আলো জ্বালতেই ওরা দুজনে অবাক হল, সুন্দর ফুলের গন্ধে ম ম করছিল, বড়জন মালা এনে বাবার হাতে দিয়ে বলল, "আজ তোমাদের বিবাহ বার্ষিকী, নাও নতুন করে মালা পড়াও মা-কে, আর আলিঙ্গন করো, সারা জীবন একসাথে আমরা সবাই থাকবো।" শুভ্রা বলল, "তোরা তো অবাক করে দিলি।" সুদীপ‌ও এড়াতে পারল না মালা পরিয়ে আলিঙ্গন করল, চারজন মিলে সেলফি তুলল, সবাই মিলে একসাথে dinner করল।
--------------------- 

Goutam Samajder, 22/86 Raja Manindra Road, kol-37

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন