google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re ভ্রমণ কাহিনি -- তরুণ প্রামানিক - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ভ্রমণ কাহিনি -- তরুণ প্রামানিক





                  বৈচিত্র্যময় বিচিত্রপুরের চাঁদবালিতে চাঁদমারি 

                       তরুণ প্রামানিক

" মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলি বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো, সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে ...!!!! "
প্রিয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের খেদ থেকে গিয়েছিল তিনপ্রহরের বিল তাঁর আর দেখা হয়নি
কিন্তু হে  ভ্রমণ পিপাসু পাঠককুল আজ আমি কথা রাখবো ! আমি আঁকবো সেই মায়া জগতের রূপকথার আখ্যান পদ্মের মাথায় কালো ভ্রমরের গুঞ্জন নয়, দেখাবো প্রকৃতির জলরঙে আঁকা সুবর্ণরেখার মোহনা আর চাঁদবালিতে অপরূপ ভাব বিভঙ্গে একলাহয়ে যাওয়া সমুদ্রতটে  বৈচিত্র্যময় ম্যানগ্রোভের বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপএর  মোম ছবি  

বিপুলা প্রকৃতির অপার নৈশব্দের মাঝে ,যারা বরাবর ব্যতিক্রমী সুখের স্বাদ খোঁজেন , তারা হুট্ করে একদিন বেরিয়ে পড়ুন কোথায় যাবেন ? আরে বাবা কোথায় আবার দীঘাতে দিঘার কথা শুনে যারা এতক্ষনে আমাকে তেড়ে মারতে আসবেন বলে ভাবছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলি ওল্ড দিঘা , নিউ দিঘার সমুদ্র সৈকত , শঙ্করপুর , তাজপুর, মন্দারমণি ,উদয়পুর ,তালসারি ঘুরে ঘুরে যখন অলস ক্লান্তির বোঝা ঘাড়ে চেপে বসছে ভাবছেন কপর্দকশূন্য  পকেটের সামান্য পুঁজিতে কোথায় যাওয়া যায় ঠিক তখনি গগনভেদি আকাশবাণীর মতো দিগ্বিদিক আলোকিত করে আমার চিৎকার আপনার 'কানের ভিতর দিয়া মরমে পসিয়া' দৃপ্ত কন্ঠে বলবে কেন ? বিচিত্রপুর
 বিচিত্রপুর ? সে আবার কোথায় ? জানি জানি আপনি কেন অধিকাংশ দিঘা প্রেমী মানুষই এই নামটিতে বিশেষ পরিচিত নয়
বাঙালীর / দিনের উইকএন্ড   দিঘা আপনি কিভাবে যাবেন সেটি নাহয় নাই বা বললাম ওল্ড দিঘা থেকে চন্দনেশ্বর মন্দিরের পাস দিয়ে রাস্তা চলে গেছে বিচিত্রপুরে দিঘা থেকে টোটো বা অন্য কোনো ছোট গাড়িতে ওই রাস্তায় আরও খানিকটা পথ এগোলেই এই বিচিত্রপুর মোট ১৮ কিমি পথে ভাড়া আনুমানিক ৪০০ টাকা মতো বৈচিত্র্যময় বিচিত্রপুরের সাথে ঘুরে নিতে পারেন ভূষণ্ডেস্বর, কীর্তনিয়া, চন্দনেশ্বর সে ক্ষেত্রে গাড়িভাড়া ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা মতো হতে পারে
অবস্থানগত বিচারে বিচিত্রপুর মূলত ওড়িষ্যার বালাসোর বা বালেশ্বর জেলায় অবস্থিত প্রাতঃরাশ সেরে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ুন বিচিত্রপুরের উদ্দেশ্য পৌঁছে বিচিত্রপুর  ইকো ট্যুরিজম অফিস থেকে স্পীডবোটের টিকিট কেটে নিন জনের ১০০০ টাকা, জনের ১২০০ টাকা শুধুমাত্র জোয়ারের সময়ই  দ্বীপটি জেগে ওঠে মাত্র  ঘন্টা ছয়েকের জন্য তাই জোয়ারের সময় দেখে বিচিত্রপুর ভ্রমণ করা দরকার প্রয়োজনে আগের দিন ফোন করে জেনে রাখুন জোয়ারের সময় টা খাঁড়িতে জোয়ারের জল ঢুকলে সেই  জলের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অসাধারন এক  যাত্রাপথ খাঁড়ির মধ্যে দিয়ে প্রচন্ড স্পীডে বোট ছুঁটে চলেপাড়ে দুধারে সুন্দরী, গঁরান গাছে যেনো এক টুকরো সুন্দরবন এরপর ১৫ মিনিটের বোট যাত্রার পর পৌঁছে যাবেন সুবর্ণপুর
বিস্তীর্ণ সমুদ্রে  চাদঁবালির বালুচরে সুবর্ণরেখার মোহনাএমন দিগন্ত জোড়া তার সৌন্দর্য যে আকাশও তাকে মাটিতে মাথা ঠুকে সেলাম জানায় জানায় অনন্তে মিশে যাওয়ার আহ্বাণ 
হুডরুতে সুবর্ণরেখা শৈশব কাটিয়ে ঘাটশিলায় যৌবনবতীর পুর্ণাবয়ব রূপ  গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রামের পরতে পরতে সে পরিপূর্ণ হয়ে, এই সন্ধিস্থলে এসে মিলনের ইপ্সিত অভিসারে যেন সমুদ্রের বুকে আছড়ে পড়েছে সমুদ্রের স্বচ্ছ নীলচে জল ঠেলে কচ্ছপের পিঠের মতো জেগে ওঠা চাঁদবালির দ্বীপ জুড়ে যত্রতত্র পাতাহীন ম্যানগ্রোভের অবাধ বিচরণ অসাধারণ এক শৈল্পিক বিভঙ্গে দাঁড়িয়ে থেকে যেন আকাশকে টেনেহিঁচড়ে নামাতে চাইছে মাথার উপর চকচকে নীলাকাশ জুড়ে সুদূর প্রসারী সুনীল শামিয়ানা ম্যানগ্রোভের ফাঁক দিয়ে যেদিকে দুচোখ যায় দিগন্ত ব্যাপী শুধুই অসীম সমুদ্রের নীলচে জলরেখা ঢেউয়ের মাথায় চড়ে আসা ফেনিল শুভ্র জলরাশির উদ্ধত আস্ফালনে আপনাকে হতে হবে বাক্য হারা পায়ের নিচে দ্বীপের সাদা বালিতে রক্তগোলাপের মতো ছড়িয়ে থাকা অজস্র লাল কাঁকড়া আর মাডস্কিপারদের ইতিউতি আনাগোনা আপনাকে করবে বিস্ময়াবিভূত নীলচে সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে উড়ে আসা দামাল নোনা হাওয়া বুনে দেবে এক অলৌকিক স্বপ্নের নীলচে গজল দ্বীপের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ঘুরে ক্রমে ক্লান্ত শরীরটাকে নিয়ে যখন পা ঢুবিয়ে বসবেন উত্তাল সমুদ্রের স্ফটিক জলে , নিজের ভিতরের ঘুমিয়ে থাকা সুপ্ত কলম্বাস যে কখন আপনার অবচেতনে জেগে উঠবে তা আপনি টেরই পাবেন না
নির্ধারিত সময় ফুরিয়ে গেলে আপনাকে আবার ফিরে আসতে হবে ওই পথেই, মোমছবির মৌতাত ভুলে
বিচিত্রপুর থেকে ফেরার পথে ঘুরে আসুন কীর্তনিয়া থেকে এটি একটি মৎসবন্দর ,অনেকটা আমাদের শঙ্করপুরের মতো সকাল সকল গেলে অনেক টাটকা মাছ পাওয়া যায় কীর্তনিয়া থেকে সুবর্ণরেখা নদীর সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়    
এরপর ভূষণ্ডেস্বর অন্যতম বৃহৎ শিবলিঙ্গ এটি ভূষণ্ডেস্বরের শিবলিঙ্গ মাটির উপর ফুট এবং মাটির নিচে ফুট ব্যাপী ব্যাপ্ত এপ্রিলে গাজনের মেলা বসে পূজা দিতে কোনো পান্ডার উপদ্রব নেই একদমই শান্ত জায়গা মন চাইলে পূজা দিতেই পারেন
ওখান থেকে দিঘা ফেরার পথে  দেখে নেওয়া যায় চন্দনেশ্বর শিবমন্দির এটিও খুবই জাগ্রত মন্দির তবে পান্ডাদের মাত্রাতিরিক্ত অত্যাচার আর দুর্ব্যবহারে মন্দিরটি ক্রমে তার অতীত  গরিমা হারাতে বসেছে তাই ওখানে যাওয়া বা না যাওয়াটা একান্তই আপনার পছন্দের উপর নির্ভর করবে
ক্লান্ত দিনের শেষে চাদঁবালিতে ফেলে আসা জল চন্দনের রেশমকষ্ট, মায়ার পশমে জড়িয়ে থাকার স্নেহচিহ্ন হৃদয়ে রয়ে যাবে চিরকাল একথা আমি হলফ করে বলতে পারি 
                                            ------------------

দরকারি কিছু তথ্য
যোগাযোগ: রিসোর্স ম্যানেজার, .এফ.এস.ডি.পি, বালাসোর, ওয়াইল্ডলাইফ ডিভিশন, বালাসোর, ওড়িষ্যা
মোবাইল নম্বর : +৯১৭৮৯৪৫৪২৫০০, +৯১ ৯৯৩৭১৫৪৩৩২(যাওয়ার আগে একবার ফোনকরে জেনে নেওয়া ভালো বোটিং হচ্ছে কিনা)
বোটবুকিং: সিটার ১০০০টাকা, সিটার ১২০০টাকা
বোটিংটাইম : সকাল ১০:৩০ থেকে বিকেল :৩০ পর্যন্ত তবে প্রথমদিকে ঘুরে আসাই ভালো ফেরার সময় অন্য স্পট গুলো ঘুরে নিতে পারবেন
ঘন্টা মতো সময় ওখানে থাকতে পারবেন , সঙ্গে রাখুন জল সাথে কিছু শুকনো খাবার
    লাইফ জ্যাকেটের কোনো ব্যবস্থা নেই,তবে বিশেষ ভয়ের কিছু নেই

========================================


Tarun kumar Pramanik
9332881855
9875349800