Featured Post
ভৌতিক গল্প ।। পাঁচ ভূতের প্রতিশোধ ।। মিঠুন মুখার্জী
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মিঠুন মুখার্জী
বহু বছর আগের এক ঘটনা। বর্ধমানের শক্তিগড়ের কাছেই সেই গ্ৰামটি। তখন জনসংখ্যা খুবই কম ছিল ।দুটি বাড়ির মধ্যে একশো গজ দূরত্ব। একজনের ঘরের খবর অন্যজন জানতে পারতেন না। গ্ৰামে কারেন্ট ছিল না। সন্ধ্যার পর সারা গ্ৰামের ঘরে ঘরে টেমি ও হ্যারিকেন জ্বলত। কারো বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলে হ্যাচাকলাইট জ্বালানো হতো। একটু সচ্ছল পরিবারে জেনারেটর ভাড়া নিতেন। কেউ মরে গেলে নদীর পাড়ে পুড়াতে যেত। সঙ্গে যাওয়ার জন্য খুব বেশি লোক পাওয়া যেত না। ঐ গ্ৰাম থেকে বাজারের দূরত্ব তিন কিলোমিটার হবে। বাজারে সন্ধ্যার পর জেনারেটরের লাইন ভাড়া নিয়ে সকলে লাইট জ্বালাত ও ফ্যান চালাত। বাজারে যাওয়ার সময় একটা বিরাট মাঠ পার হতে হত। যে মাঠের পুরোটা একজায়গায় দাঁড়িয়ে দেখা যেত না। গ্ৰামের মানুষেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করত, সন্ধ্যার পর এই মাঠে ভূতেদের আখরা বসে। তারা অনেকেই রাত্রি বেলা ওই মাঠে ভূতেদের দাঁড়িয়ে কখনো বসে জটলা পাকাতে দেখেছে। এই মাঠের উত্তর দিকে একটি বিশাল তেঁতুল গাছ ছিল। এই গাছ থেকেই ভূতেরা মাঠে নেমে আসত নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। তাদের আলোচনার বিষয় ছিল--- কে কিভাবে মরার পর ভূত হয়েছে। পাঁচটি ভূত থাকত ঐ তেঁতুল গাছটিতে। একদিন রাত দশটার সময় পাঁচটি ভূত মাঠে বসে নিজেদের মানুষ জীবন নিয়ে আলোচনা করছিল।নান্টু,জগা,বিল্টু,লুল্লু ও ভজা নামে এই পাঁচজন ভূত ছিল সেখানে। সবার প্রথমে নান্টু নিজের মানুষ জীবন নিয়ে বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেলে। সে বলে --- "জানো তো ভাই সকল, আমি একজন কৃষক ছিলাম। নিজের আড়াই বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে ভালোই দিন কাটত আমার। পঁচিশ বছর বয়সে বাবা এক চাষীর কন্যার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের পর গিন্নিকে নিয়ে কী সুখেই না ছিলাম। সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। দুবছরের মাথায় যমজ মেয়ে সন্তান হয়েছিল আমাদের। দেখতে দেখতে তাদের বয়স দশ পেড়িয়ে যায়। একদিন রঞ্জিত মহাজন আমায় বললেন --- 'নান্টু আমার টাকাটা সুদে-আসলে দুদিনের মধ্যে মিটিয়ে দিস। আর আমি ফেলে রাখতে পারব না।' আমি চাষের জন্য ওনার কাছ থেকে সুদে দুহাজার টাকা নিয়েছিলাম। মহাজনকে বলি-- 'বাবু আর মাসখানেক সময় দিন আমায়। আমার মেয়ে দুটোর শরীর খারাপের জন্য আপনাকে দেওয়ার জন্য তুলে রাখা টাকা খরচ হয়ে গেছে।' কিছুতেই আমার কথা শোনেন না রঞ্জিত মহাজন। তিনি আবার বলেন --- 'দ্যাখ টাকাতো আমায় দিতেই হবে। নতুবা তোর জমিখান আমায় দে। আমার টাকা বাদ দিয়ে তোর যা প্রাপ্য তা আমি তোকে দিয়ে দিচ্ছি।' আমি রাজি হই না। হাত দুটো জোড় করে মহাজনকে বললাম--- ' বাবু, আপনার তো অনেক আছে, এটুকুতে নজর দেবেন না। আমি কথা দিচ্ছি একমাসের মধ্যে আপনার টাকা সুদ সমেত পরিশোধ করে দেব। না পারলে তখন জমি নিয়ে নেবেন। এটুকু দয়া করুন মাই বাপ।' কোনো কথাই শোনেননি মহাজন। দুই দিনেই টাকা পরিশোধ করার কথা বলে গজগজ করতে করতে তিনি চলে যান। টেনশনে ঠিকঠাক ঘুম আসে না আমার। দুই দিন পার হয়ে যায়। মহাজন তাঁর লেঠেলদের নিয়ে আমার জমি দখল করতে আসেন। আমি বাঁধা দিতে গেলে তার লেঠেন বাহিনী আমায় লাঠি দিয়ে খুব মার মারে। জমিতে খুটো পুঁতে দিয়ে চলে যায়। বলে --- 'আজ থেকে এই জমি আমার।' আমি আধমড়া হয়ে পড়ে থাকায় নকল দলিল বানিয়ে তাতে আমার টিপসই দিয়ে নেন। এই শোকে ও লেঠেলদের মারের গুঁতোয় তিন দিন পর আমি মারা যাই। আমার বউ ও দুই মেয়ে মহাজনের জন্য পথে বসে।"
নান্টুর মানুষ জীবনের এই গল্প শুনে অন্য ভূতেরা খুব কষ্ট পায়। বিল্টু বলে --- "মানুষেরা খুব নিষ্ঠুর। আপনজনের পেটে ছুরি বসাতে এরা দুবার ভাবে না। লোভ-হিংসা-অহংকার এদের মধ্যে ঈশ্বর ভরে ভরে দিয়েছে। এগুলো যার মধ্যে যত আছে তার চলার পথ ততই কঠিন। সাময়িক ভালো থাকলেও এর ফল ভোগ করতে হয় তাদের।" এরপর জগা ভূত বলে --- "আমার মানুষ জীবনের কথা আর কী বলব ভাই। আমি এক সৎ মানুষ ছিলাম। একটা গেঞ্জির কারখানায় কাজ করতাম। অন্যায় দুচোখে সহ্য করতে পারতাম না। নিজে কোনো দিন অন্যায় করি নি, কেউ করলে ছেড়ে দিতাম না। বাবা-মা আমায় অনেক বকাবকি করতেন। বাবা বলতেন --- 'তোর কি দরকার অন্যায়ের প্রতিবাদ করার। আজ প্রত্যেক মানুষ নিজেরটা নিয়ে ভাবে। অন্যের কী হল না হল কারো মাথা ব্যথা নেই। তবে তোর এতো মাথা ব্যথা কেন? নিজের ভুলে বিপদ ডেকে আনছিস তুই। এরজন্য শুধু তোকে নয়, আমাদের পরিবারকেও ঝুঁকি পোহাতে হবে। তোর ঘরে একটা আয়বুড়ো বোন আছে,সে চিন্তা তোর আছে। ওর যদি কিছু হয়ে যায় তবে আমরা লোকের সামনে মুখ দেখাবো কি করে? নিজেকে শুধরে নে এখনো সময় আছে।' বাবার কথাগুলি অনুচিত ছিল না। কিন্তু আমি কিছুতেই আমার মধ্যে থাকা এই প্রতিবাদী ভাবটা দূর করতে পারি নি। একদিন আমি সকাল দশটার সময় মার হাতের গরম গরম রুটি খেয়ে কারখানায় যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা ছেলেকে কয়েকজন মিলে খুব মারছে। আমার সহ্য হয় নি। ভেবেছিলাম কোনো কথা বলব না। বাবার কথাগুলো আমার কানে তখন বাজছিল। আমি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ওই ছেলেটা এসে আমার পা জড়িয়ে ধরে বাঁচানোর কথা বলে। তবুও আমি তাকে কিছু না বলে চলে যেতে থাকি। তারা এসে ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গিয়ে লাইটপোষ্টে বাঁধে। আমার কাছে এবার বিষরটা বাড়াবাড়ি মনে হয়। দেখি একজন বন্দুক বার করছে। যখন ছেলেটাকে গুলি করতে যাবে,তখন আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। দৌড়ে গিয়ে যে বন্দুক ধরেছিল তার হাতে একটি লাথি মারি। বন্দুকটা ছিটকে অনেক দূরে চলে যায়। এরপর ছেলে গুলো আমার উপর চড়াও হয়। আমি প্রচন্ড মার খাই তাদের কাছে। অন্য একজন তার কোমড় থেকে বন্দুক বার করে ওই ছেলেটিকে যখন গুলি করে,তখন আমি ওকে বাঁচাতে গিয়ে আমার বুকে গুলি লাগে। চিৎকার করে আমি মাটিতে পড়ে যাই। আমার চিৎকার ও গুলির শব্দ শুনে আসে পাশের মানুষজন জড় হলে গুন্ডাগোছের ছেলেগুলো পালিয়ে যায়। ছেলেটি এযাত্রা বেঁচে গেলেও আমি মরে যাই। স্থানীয় লোকজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচাতে পারে নি। এই খবর পেয়ে আমার বাবার হার্ট অ্যাটাক হয় ও মা পাগল হয়ে যায়।
সকল ভূতেরা জগার মানুষ জীবনের গল্প শুনে খুব দুঃখ পায়। লুল্লু ভূত বলে --- " আগেকার দিনের মতো মানুষ আর নেই। নিজের স্বার্থের জন্য এখন নিজের মানুষদেরও হত্যা করছে তারা। সবার মধ্যেই এখন একা খাব একা পড়ব ভাব। অন্যেরও যে পেট আছে,সেও যে মানুষ-- তা তারা ভাবে না। এর পরিনতিও ভালো হবে না। বিপদের সময় কারোকে পাবে না। একজন অন্যের বিপদে এগিয়ে আসুক তা অনেকেই চান না।" সকল ভূতেরা লুল্লু ভূতের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলে --- "তুই ঠিক বলেছিস লুল্লু, ঠিক বলেছিস।"
এরপর বিল্টু ভূত তার মানুষ জীবনের হাড় হিম করা গল্প বলে। সে বলে --- "আমি একজন মুরগি বিক্রেতা ছিলাম। মুরগির মাংস বিক্রি করতাম। খুচরো ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাইকারি দরে মাংস দিতাম। সংসারে বাবা-মা ছাড়াও দুই বোন ছিল আমার। তাদের বিয়ে দিয়ে আমি বিয়ে করবো ভেবেছিলাম। আমার বয়স ত্রিশ বছর এবং বোনেদের একুশ ও চব্বিশ। আমি মুরগির মাংস বিক্রি করলেও মানুষকে কখনো মুরগি করতাম না। তাই আমার দোকানে বাজারের অন্যান্য দোকানের তুলনায় একটু বেশি ভিড় থাকত। আমার সাহায্যের জন্য বোনদের দোকানে নিয়ে যেতে বলতেন মা। কিন্তু আমি নিতাম না। কারণ মানুষের চোখ ভালো না। বিপদ বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে।
একদিন খুব বিপদে পড়েছিলাম আমি। এক বিয়ে বাড়িতে দেড় কুইন্টাল মাংস দেওয়ার কথা ছিল আমার। যিনি বরাত দিয়েছিলেন, তিনি একটু দাদা গোছের লোক। অনেকেই এই বরাতটি আমায় নিতে বারণ করেছিল। কিন্তু সংসারের দিকে তাকিয়ে আমি তাকে ফিরিয়ে দিই নি। আমি মনে মনে ভেবেছিলাম, ঠিক সময়ের মধ্যে ম্যানেজ করে নেব। একজন লোক নিলে দুজনে মিলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বিয়ের দিন সকালে আমার দোকানে মুরগি আসে বেলা দুটোর সময়। বারোটার সময় মাংস দেওয়ার কথা ছিল। সেই মাংস যায় বিকেল চারটের সময়। আমার মনের ভিতর কু-ডাকতে থাকে। আমি বুঝতে পারি আমার কাল কপালে আছে। টাকা পাওয়া নিয়ে সমস্যা হবেই। তখন মনে হয় এই বরাতটা না ধরলেই পারতাম। কথায় বলে 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে'।
সেই মাংস রান্না করতে রাত আটটা বেজে যায়। গোধূলি লগ্নে বিয়ে ছিল। তাছাড়া অনেকে দূরে যাবার কারনে সন্ধ্যা ছটায় খাবার ব্যাচ বসাতে হয়েছিল। অনেকেই মাংস না খেয়ে চলে গিয়েছিল। যাওয়ার সময় কয়েকজন মেয়ের বাবাকে বলেছিলেন --- "এভাবে অনুষ্ঠান নাও করতে পারতেন। মেনু কার্ডে মাংস লেখা অথচ আমরা কেউ মাংস পেলাম না। এভাবে লোক ঠকাবেন না।" এই কথাগুলো শুনে মেয়ের বাবা হাউ হাউ করে কেঁদে দেন। যে আমার কাছে মাংসের বরাত দিয়েছিল,সে মেয়ের কাকা। দাদার এই অপমান দেখে সে রাগে আগুন হয়ে যায়। বিয়ের দিন রাগ চেপে রেখে পরদিন আমার দোকানে আসেন। মাংস দেড়িতে দেওয়া নিয়ে দু-এক কথায় দুজনের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মুরগি কাঁটারি নিয়ে আমার গলায় কোপ মারে। মুরগির রক্ত আর আমার রক্ত মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। পা দাপাতে দাপাতে আমি মারা যাই। আমার সংসার জলে ভেসে যায়। বোন দুটোর আর বিয়ে হয় না। আমার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবাও মারা যান। শয়তান বিভাস টাকা দিয়ে কেসটা চাপা দিয়ে দেন। গরিবের পাশে দাঁড়ানোর মতো আজকের সমাজে কোনো মানুষ নেই।
বিল্টু ভূতের মৃত্যুর কাহিনী শুনে সকলে খুব হতাশ হন। ভজা ভূত বলে --- "আমার তো মনে হয় মানুষের থেকে আমরা ভালো। আমাদের মধ্যে একতা আছে। তাছাড়া আমাদের ক্ষতি না করলে , আমরা সহজে কারো ক্ষতি করতে চাই না।" ভজা ভূতের এই কথা শুনে সকল ভূতেরা বলে--"ঠিক বলেছ ভায়া, একশো শতাংশ খাঁটি কথা। এখন আর মানুষের মনুষ্যত্ব নেই।"
লুল্লু ভূতের মানুষ জীবন ছিল একটু অন্যরকম। লুল্লু ভূত বলে --- "তখন আমার আঠাস বছর বয়স। ষোলো বছরের এক রাজকুমারীকে ভালো বেসেছিলাম আমি। তার বাবা ছিলেন কোটিপতি। তাঁর মেয়ে দিব্যা প্রতিদিন একটি সুন্দর এসি গাড়ি করে স্কুলে যেত। অভাবের কারণে আমি বেশিদূর পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারিনি। তাই আইসক্রিমের দোকান দিয়েছিলাম। দিব্যা প্রতিদিন স্কুল যাওয়ার সময় আমার দোকান থেকে বিভিন্ন দামি দামি আইসক্রিম কিনত। ওর টানা টানা চোখ, অসাধারণ ঠোঁট আমায় পাগল করে তুলেছিল । আমি ওর প্রেমে পরে যাই। মনে মনে ভাবি---' ওইরকম বড়লোকের মেয়ে আমার মতো অভাবী ছেলেকে কখনো মেনে নেবে না। আমার মনের কথা বললে ও যদি ওর বাবাকে বলে দেয়, তবে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।দরকার নেই বলার। নিজের এক্তিয়ারের মধ্যে থাকাই ভালো।' ফলে বেশি দূর আমি এগোই না। পরের দিন মেয়েটি আমার দোকানে আইসক্রীম খেতে আসে নি। আমি ভাবি আজ স্কুলে হয়তো যায় নি। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। ওর এক বান্ধবীও ওর কাছে শুনে আমার দোকানে আইসক্রীম খেতে আসত। তাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি মেয়েটির প্রচন্ড শরীর খারাপের কারণে স্কুলে যাচ্ছে না। আমি খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন। কোনো কিছুই ভালো লাগত না। মেয়েটির নাম যে দিব্যা তা আমি ওর বান্ধবীর কাছ থেকেই জেনেছিলাম।
একসপ্তাহ পর সে আবার আমার দোকানে আসে। সেদিন আমি নিজেকে সংযত করতে না পেরে মনের কথা সব ওকে বলে দিই। আমার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে ছিল না। আমি কোনো দিন ওর ক্ষতি চাই নি। ও কোনো কথা না বলে মাথা নত করে চলে গিয়েছিল। পরদিন থেকে ও আর আমার দোকানে আসে নি। দিন দিন আমি ওকে পাবার জন্য পাগল হয়ে উঠি। একদিন হিতাহিত জ্ঞান ভুলে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে রাত্রি বেলায় দিব্যার বাড়ি যাই। তখন রাত একটা। বাড়ির কার্নিশ বেয়ে আমি এবং আমার এক বন্ধু দোতলায় যেঘরে দিব্যা ঘুমায় সে ঘরে ঢুকি। সেই সময় দিব্যা ঘুমিয়ে ছিল। মুখ চেপে আমরা ওখান থেকে তাকে নামিয়ে নিয়ে আসি। তারপর নিয়ে যাই আমার এক বন্ধুর বাড়িতে, যার বাবা-মা এক মাসের জন্য বেনারস ঘুরতে গিয়েছিলেন।বন্ধুদের একটি ঘরে মুখে রুমাল বেঁধে দিব্যাকে আটকে রাখি। আমি যে তাকে ভালবাসি তা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সে শুধু আমাকে অস্বীকার করে এবং কান্না করে। এদিকে মেয়েকে পাওয়া না যাওয়ায় দিব্যার বাবা পুলিশকে সব জানান। বড়লোকের মেয়ে হওয়ায় পুলিশ বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দেন। অবশেষে আমার একটি ভুলে আমি পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যাই। থানায় নিয়ে গিয়ে খুব মারে আমায়। শেষমেষ আমি দিব্যা কোথায় আছে বলে দিই। পুরো দোষটা আমি নিজের কাঁধে নিয়ে নিই। এদিকে আমার বন্ধুরা জানতে পেরে দিব্যাকে বাড়িতে দিয়ে আসে। আমায় কিডনাপ কেস দিয়ে দেয়। পাঁচ বছর জেল হয়ে যায় আমার। জেল থেকে বেরিয়ে শুনি দিব্যা একটি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। সেই শোকে আমি পাগল হয়ে যাই। নিজের থেকেও বেশি ভালো বাসতাম ওকে। একদিন রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে লোক দেখছিলাম। একটি মেয়ের মধ্যে আমার দিব্যাকে দেখেছিলেম। দৌড়ে তাঁর কাছে যাওয়ার সময় দিব্যার বাবা ইচ্ছা করে আমায় পিষে দিয়ে যায়। পথ দুর্ঘটনা বলে কেসটা চাপা দিয়ে দেয়।
লুল্লু ভূতের মানুষ জীবনের কথা শুনে সকল ভূতেরা খুব রেগে যায়। নান্টু ভূত বলে--- মানুষদের এরকম অত্যাচার মেনে নেওয়া যায় না। এর একটা প্রতিশোধ আমাদের সকলেরই নেওয়া দরকার। না হলে এই শয়তানেরা মানুষের উপর আরো অন্যায় করবে। খারাপ মানুষেরা কখনো ভালো হয় না। শত চেষ্টা করলেও এদের বদলানো যায় না। কি বলছো তোমরা? এরপর সকল ভূতেরা বলে--- "তুমি ঠিক বলেছ নান্টু। আর সহ্য করা যাচ্ছে না।"
এরপর নান্টু ভূত ভজা ভূতকে বলে---"আরে ভজা, তোমার মানুষ জীবনের কাহিনী বল। তারপর আমরা সকলে মিলে যারা আমাদের অকালে অস্বাভাবিক মৃত্যু দিয়েছে তাদেরও ভবলীলা সাঙ্গ করার অভিযান চালাব।" নান্টু ভূতের এই কথা শুনে ভজা ভূত বলে --- "আমি একজন জেলে ছিলাম। নদীতে নৌকা নিয়ে মাছ ধরতাম। যখন মাছ পেতাম না তখন মাঝি হয়ে লোক পারাপার করতাম। আমার বউ সেই মাছ হাটে নিয়ে বিক্রি করত। আমাদের কোনো সন্তান ছিল না। মনের মধ্যে দুজনারি খুব কষ্ট ছিল। আমাদের মনের কষ্ট আমরা কাউকে বুঝতে দিতাম না। অনেক কষ্টে আমি বউকে একটি সোনার চেইন গড়িয়ে দিয়েছিলাম। সেই সময় আমাদের ওখানে খুব ছিনতাই হচ্ছিল। বিশেষ করে মেয়েদের ও বউদের গলার চেইন, কানের দুল, মোবাইল ইত্যাদি। একদিন আমি আমার বউকে নিয়ে বাজার থেকে ফিরছিলাম, তখন হঠাৎ মুখে রুমাল বাঁধা দুজন ছেলে মটরসাইকেল করে এসে গলার চেইন ধরে টান মারে। বউ রাস্তায় পড়ে যায়। সোনার চেইন ছিঁড়ে ছেলেটির হাতে চলে যায়। আমি তখন ঐ ছেলেটির হাত ধরে টান মারলে সে মটর সাইকেল থেকে পড়ে যায়। আমি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতেই সে একটি বেলেট দিয়ে আমার গলার নলি কেটে দিয়ে চেইন নিয়ে পালিয়ে যায়। মিনিট দুয়েকের মধ্যে আমি মারা যাই। আমার বউ কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যায়। সে এখন সম্পূর্ণ একা। অন্যের বাড়িতে কাজ করে।"
ভজা ভূতের করুণ কাহিনী শুনে লুল্লু ভূত বলে -- "আর সহ্য নয়, এতদিন অনেক সহ্য করেছি। এবার চলো, সবাই মিলে হত্যালীলায় মাতি । তারা কি ভেবেছে, ভূতেদের কোনো ক্ষমতা নেই। সকলে লুল্লুকে সমর্থন করে বলে-- 'চলো, তাই হোক'।
সকল ভূতেরা প্রথমে রঞ্জিত মহাজনের এলাকায় যায়। তারা দেখে মহাজন দুজন লেঠেল নিয়ে বাজার করে একটা বাগানের ভিতর দিয়ে বাড়ি ফিরছে। এক লেঠেলের হাতে হ্যাচাক লাইট। হঠাৎ নান্টু ভূত বলে --- কিরে মহাজন কেমন আছিস? আমায় চিনতে পারছিস? নান্টুর গলা পেয়ে মহাজন ভয় পেয়ে যান। বলে -- 'কে রে তুই? সাহস থাকলে আমার সামনে আয়।' এই কথা শুনে সকল ভূতেরা রঞ্জিত মহাজনের সামনে উপস্থিত হয়। লেঠেল দুজন হ্যাচাক রেখে পালিয়ে যায়। মহাজন রাম নাম করতে করতে কাঁপতে থাকে। নান্টু ভূতকে বলে --- 'আমায় ছেড়ে দে নান্টু,আমায় মারিস না। তুই আমার সব সম্পত্তি নিয়ে নে। আমার প্রান ভিক্ষা দে।" নান্টু ভূত বলে --- 'আপনি কি আমায় ছেড়েছিলেন? নিজের কৃতকর্মের জন্য আজ আপনাকে মরতেই হবে।' এরপর পাঁচজন ভূত মিলে মহাজনকে নৃশংস মৃত্যু দান করে। ঘাঁড় মুড়িয়ে দেয়, হাত দুটো ভেঙে দেয়। অবশেষে গাছের ডালে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেয়।
এরপরের পালা আসে জগা ভূতকে যে ছেলেটি গুলি চালিয়েছিল তার। চায়ের দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে ছেলেটি একা একা নির্জন রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। একটু মদ পড়েছিল পেটে। হঠাৎ দেখে তার সামনে জগা দাঁড়িয়ে আছে। বুকে গুলির চিহ্ন ও রক্তাক্ত সারা দেহ। জগাকে চিনতে পেরে সেই ছেলেটি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। কোমড় থেকে বন্দুক বের করে জগা ভূতকে গুলি করে। কিছুই হচ্ছে না দেখে বুঝতে পারে এ ভূত। বাবাগো-মাগো বলে পিছনে দৌঁড়াতে যায়। হঠাৎ ছেলেটি দেখে আরও চারটি ভূত রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকের মুখে রক্ত। এরপর ছেলেটি কাঁপতে কাঁপতে বলে --- " আমাকে তোমরা ছেড়ে দাও। আমি আর কখনো মানুষ খুন করব না। আজ থেকে আমি এই পথ ছেড়ে দেব।" ছেলেটির কথা শুনে জগা ভূত বলে --- " মরার আগে সবাই এই কথাই বলে। মানুষদের মারার আগে এগুলো মনে ছিল না। এবার নিজে মরে দেখ কেমন কষ্ট।" এরপর পাঁচজন ভূত মিলে ছেলেটিকে নিয়ে একটা বড় আমগাছের উপর চলে যায় এবং সেখান থেকে তাকে ফেলে দেয়।
বিল্টু ভূতের হত্যাকারী বিল্টুকে হত্যা করে বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। মাসখানেক হলো গ্ৰামে ফিরেছে। ওই শয়তানের উপর বিল্টু ভূতের প্রচন্ড রাগ। তাকে হত্যা করতে না পারলে সে শান্তি পায় না। তাঁরা পাঁচ ভূত মাঝরাতে যখন তাকে মারতে আসে তখন ঐ বিভাস নিজের ঘরে একা একা ঘুমিয়েছিল। বউ বাপের বাড়ি গেছে। বিল্টু ভূত দরজার কড়া নেড়ে কেঁদে কেঁদে বলে -- " বিভাস দা দরজাটা একটু খোলো না। তোমার খুব বিপদ। এখনি দরজা খোলো।" নিজের বিপদের কথা শুনে বিভাস দরজা খুলে দেখে কেউ নেই। মনের ভূল মনে করে দরজা দিয়ে দেখে খাটে বসে আছে পাঁচ ভূত। তারমধ্যে গলায় কোপ খাওয়া বিল্টুও আছে। বিভাস ভয় পেয়ে দরজা খুলতে গেলে দেখে দরজা খোলা যাচ্ছে না। এরপর প্রানভিক্ষা করে কান্না কাটি জুড়ে দেয়। বিল্টু ভূত বলে --- আমার সেদিনের লঘু পাপে তুই গুরু দন্ড দিয়েছিলি মনে আছে। আমার পরিবারের কথা একবারও ভেবেছিলি পাষন্ড। আজ মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখে প্রানভিক্ষা চাইছিস। আজ বটি দিয়ে তোর গলাটা ধর থেকে আলাদা করে দেব। বুঝবি কেমন মজা। এরপর চারজন ভূত বিভাসের হাত পা ধরে রাখে আর বিল্টু ভূত রান্না ঘর থেকে ধারাল বটি এনে এককোপে তার গলা ধর থেকে আলাদা করে দেয়।
দিব্যার বাবার জন্যই লুল্লু ভূত দিব্যাকে পায় নি ও প্রান গিয়েছিল। তাই তাকে তার কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দেবে বলে সে ঠিক করেছিল। কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। অফিসের কাজ সেরে একদিন রাত বারোটার সময় বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। ড্রাইভার চুপচাপ গাড়ির মধ্যে বসে ছিল। তাকে গাড়ি ঠিক করার জন্য দিব্যার বাবা নামতে বললে সে নামে না। যেই ড্রাইভারের কাঁধে হাত দেন দিব্যার বাবা সেই মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকায় লুল্লু ভূত। লুল্লুকে চিনতে পরে ভয় পেয়ে চিৎকার করতে করতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়াতে লাগে সে। দেখে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে আরো ভূতেরা দাঁড়িয়ে আছে। প্রানে বাঁচার জন্য কি করবে বুঝতে পারেন না। এমন সময় তার নিজের গাড়ি এসে একটা গাছের সঙ্গে তাকে পিষে দেয়। লুল্লুর আত্মা শান্তি পায়।
এরপর ভজা ভূতের প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। যে ছেলেটি ভজার গলায় ব্লেট মেরেছিল সেই ছেলেটি ভজা মারা যাওয়ার পরও প্রচুর মানুষের ক্ষতি করে। পরিবর্তন হয় নি তার। তাই তার ভয়ংকর মৃত্যু দিয়েছিল পাঁচ ভূত। একটা ভাঙা পুরনো ঘরে ছেলেটি মদ খেয়ে সেদিনকার রোজগার হিসাব করছিল। সঙ্গে যে থাকে সে অনেক আগেই বাড়ি চলে যায়। ভজারা পাঁচজন সেই ছেলেটির ঘরে ঢুকে ভৌতিক তান্ডব চালায়। প্রথমে গলা টিপে হত্যা করে। তারপর ব্লেট দিয়ে গলার নলি কাটে। হাতদুটো ভেঙে দেয়। পরের জন্মে যাতে কোনো মানুষের ক্ষতি করতে না পারে। তারপর লাশটা জ্বালিয়ে দেয়।
পুনরায় পাঁচ ভূত সেই তেঁতুল গাছে ফিরে যায়। প্রতিশোধ নিয়ে সকলের হৃদয় শান্ত হয়। সকলে প্রতিজ্ঞা করে কারো প্রতি অন্যায় হলে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আমরা উপকার করবই। ভূতেদের সম্পর্কে মানুষের যে সব ধারনা আছে তা আমরা সবাই মিলে পাল্টে দেব।
=================
মিঠুন মুখার্জী
গ্ৰাম - নবজীবন পল্লী
পোস্ট + থানা - গোবরডাঙ্গা
জেলা - উত্তর ২৪ পরগনা
পিন - ৭৪৩২৫২
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
জনপ্রিয় লেখা
প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা
লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত। সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম। মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন। সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন্ন সাহিত্য
মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', '
কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার
বসন্তের কোকিল তুমি বিচিত্র কুমার (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে। (০২) এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ। তারপর প্রতিটি শীতের ভোরে অনেক রোদের পরশ মেখে ছুঁয়ে যেতে আমার বুকের বাঁ পাস শিশির রেখা, তখন প্রতিটি ভোর হয়ে যেত ভীষণ রকম মিষ্টি আর ছিলো শুধু বসন্তের ঘ্রাণ মাখা। প্রতিটি সকালে একঝাঁক মায়াবী পাখি অনুভবের
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সূচিপত্র কবিতা ।। তৈরি হয় এক নতুন বিপ্লবের পটভূমি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী কবিতা || প্রতিবাদ || জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। সেই মেয়েটি রাত জাগে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। শপথ ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। কোরাস রাত ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই ।। দীনেশ সরকার অণুগল্প ।। ব্যাকবোন ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক কবিতা ।। আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা ।। জয়শ্রী সরকার কবিতা ।। জীবন এখন ।। লাবণী পাল কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই! ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা ।। যুদ্ধ , প্রতিনিয়ত ।। সুমিত মোদক মুক্তভাবনা ।। কী বলব! ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রতিবেদন ।। বিচার পাক অভয়া ।। জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অভয়ার যে চিঠিটা আজো পাওয়া যায়নি ।। আশীষকুমার চক্রবর্তী কবিতা ।। জগন্মাতা নাকি তিনি ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। মেয়েটির মৃত্যু দেখে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। অন্ধকারের আলো ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। ঘোষণা ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। অপেক্ষায় ।। রণেশ রায় কবিতা ।। গ্লানি ।। সুজন দাশ কবিতা ।। বিনীত আবেদন ।। শংকর ব্রহ্ম কবিতা ।। তুই যে মেয়ে তিলোত্তমা ।। অশোক দাশ কবিতা ।। শোক সন্তাপের দুর্গা ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল ক
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪
সূচিপত্র গল্প ।। উৎশব উৎসব ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী ।। সবিতা রায় বিশ্বাস মগরাহাট (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এলাকার স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি (পর্ব-৬)।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। একটি মৃত্যু, অজস্র প্রতিবাদ ।। নাসির ওয়াদেন কবিতা ।। অন্ধকার জগৎ ।। সুপ্রভাত মেট্যা গুচ্ছকবিতা ।। আবদুস সালাম কবিতাগুচ্ছ ।। হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় খোলা কবিতা ।। মানস মণ্ডল নিবন্ধ ।। সম্পর্ক ।। সংঘমিত্র ব্যানার্জি উপন্যাসিকা ।। উদয় ।। তপন তরফদার সিনেমা রিভিউ ।। ছবি : বহুরূপী, পরিচালক : রাজাদিত্য ব্যানার্জি ।। আলোচনা: জয়শ্রী ব্যানার্জি গল্প ।। গল্পটা মিথ্যে নয় ।। বিকাশকলি পোল্যে অণুগল্প ।। স্পিড ব্রেকার ।। দেবাংশু সরকার কবিতা ।। একটা পুরোনো অঙ্ক ।। রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। গোপন সম্মোহন ।। বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ কবিতা ।। আগুনের পাখী হব ।। কাকলী দেব দুটি কবিতা ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। বেঁচে থাকে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। হে অনিন্দ্য, রক্তাক্ত মাকড়সার সর্বাঙ্গ ঋষি দৃশ্য খাও
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু
"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান
"নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)। আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার সফ্ট কপি ডাউনলোড করতে ছবিতে ক্লিক করুন। ====০০০==== মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যাটি অনলাইনে অর্ডার করে বাড়িতে বসে পেতে পারেন অর্ডার করার লিঙ্ক: https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023 NABAPRAVAT30 কোডটি ব্যবহার করলে কম দামে পাবেন। (প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ নিরাশাহরণ নস্কর। সম্পাদক, নবপ্রভাত।)
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় পার্থ সারথি চক্রবর্তী কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই। খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই হবে বলে মনে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন