Featured Post

নবপ্রভাত পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গ্রন্থ-প্রকাশ : ১। সম্পূর্ণ পত্রিকার খরচে ও ২। পত্রিকার অনুদানে

ছবি
  নবপ্রভাত পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে  গ্রন্থ-প্রকাশ বিষয়ক বিজ্ঞপ্তি ১। সম্পূর্ণ পত্রিকার খরচে এক ফর্মার ১০টি পুস্তিকা : এই প্রকল্পে লেখক-কবিদের থেকে কোনো খরচ নেওয়া হবে না।        পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বইগুলি প্রকাশিত হবে। লেখক/কবিকে সশ্রদ্ধায় সৌজন্য সংখ্যা দেওয়া হবে।       যাঁদের আগে কোন বই হয়নি , তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। নতুনদের উপযুক্ত লেখা না পেলে বাকিদের লেখা নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরিত হবে।       লেখা সকলেই পাঠাতে পারেন। মেলবডিতে টাইপ করে বা word ফাইলে ।   ই-মেল : nabapravat30@gmail.com  (এবং হোয়াটসঅ্যাপেও)। বইয়ের শিরোনামসহ ১৫টি কবিতা বা ১৫টি অণুগল্প পাঠাতে হবে , শব্দ সংখ্যা বা লাইন সংখ্যার বাঁধন নেই । মনোনীত হলে মানানসই বইয়ের ফরম্যাটে যে কটি যাবে রাখা হবে ।       সঙ্গে লেখক পরিচিতি , ঠিকানা , যোগাযোগের ( কল ও হোয়াটসঅ্যাপ )   নম্বর ও এক কপি ছবি দেবেন। লেখক পরিচিতিতে অবশ্যই জানাবেন, এটি আপনার প্রথম প্রকাশিত বই হবে অথবা পূর্ব প্রকাশিত গ্রন্থতালিকা। অনলাইন বা মুদ্রিত পত্রিকা বা সমাজ - মাধ্যমে প্রকাশিত লেখাও পাঠানো যাবে । তবে কোনও গ্রন্থভুক্ত লেখা

উপন্যাসিকা ।। উদয় ।। তপন তরফদার

(উপন্যাসিকা)  

uday

উদয়

পন  তরফদার

 

কলকাতার অনেক জায়গা বিভিন্ন কারনে প্রসিদ্ধ হয়ে যায় ডেকার্স লেন নাম শুনেই চোখ বুঁজে বলে দেওয়া যায় ওখানে প্রসিদ্ধ ডেকরেটারদের আস্থানা ডাঁহা ভুল ওটার  অঘোষিত অথচ সর্বজনবিদিত নাম -খাও গলি কলকাতার অফিস পাড়ার অফিস বাবুদের পেটপূজার বা ভুড়িভোজের সর্বোত্তম তীর্থ ক্ষেত্র এই ডেকার্স লেন অফিসের এক ঘেয়েমির যন্ত্রণা, এটুঁলি পোকার মত সর্বক্ষণ লেগে থাকা বুক চিন চিন করার একঘেয়েমি ভাবনায় কিছুক্ষণের জন্য বিশুদ্ধ অক্সিজেনের যোগান দেয় এই খাবার বিক্রেতারা দোকানের কোনো সাইনবোর্ডের দরকার হয়না চকচকে সবুজ কলাপাতায় লুচি,ডাল, ক্ষীরের শিঙাড়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তৃপ্তি করে খায় আর তাকিয়ে থাকে গণেশ ঘোষের দোকানের ক্যাশবাক্সে বসে কে বসে গণেশের বড় ছেলে অসীম এই অসীম সিনেমায় অভিনয় করবে বলে স্টুডিয়ো পাড়ায় ঘুরঘুর করতো ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে যায় পরিচালক তপন সিংহ ওকে পছন্দ করে ভিলেনের ভূমিকায় ব্যাস, এক কোপেতেই ঠান্ডা ক্ষীরের শিঙড়ার সঙ্গে  চর্মচক্ষে দেখতে পাওয়া পর্দার মানুষকে উপরি পাওনা হয়ে যেতে পারে অসীমের সঙ্গে কথা বলতে আসা তাবড় তাবড় তারার জগতের নায়ক শিল্পীদের সঙ্গে

      এই গণেশর দোকান সহ অগুনতি দোকানের জন্য প্রয়োজন অনেক অনেক কর্মচারী শুধুমাত্র খাবার  তৈরি করলেই হবেনা খাবার পরিবেশন করাসঠিকভাবে মনে রাখা কে কি খাচ্ছেখেয়ে পয়সা ঠিকমতো দিচ্ছে কিনা তারও নজরদারি করতে হয়এই দোকানগুলো  বেশ কয়েকজন চাল চুলোহীন কিশোর কাজ করে মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার মানুষেরাও আসে উদরপুর্তি করতে মানুষের খিদের সময় খিদে ছাড়া আর কিছুই মনে থাকেনাতাই এদেরকে নিয়ে  ওদের মালিকের কাছে কোনো উচ্চ বাচ্চা কেউই করে না

        এই ছেলেরা কলকাতারই আশপাশের বস্তিতে থাকেকলকাতার বড় রাস্তার পাশের ছোট রাস্তা ধরে এগোলেই গলির রাস্তা নজরে আসবেএই গলির তস্য কানাগলির ভিতর কতযে বস্তি আছে কলকাতা কর্পোরেশন ও হিসাবে রাখতে পারে নাচওড়া নর্দমার উপরেই কাঠের পাটাতন ফেলে দর্মার বেড়া, মাথায় প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে ঘর বেধেছেওরা যদি এইভাবে বসবাস না করতো শহরের অনেকের বাড়ি অন্ধকার হয়ে যেতঝি, রাঁধুনি পাওয়া যেতনাবাড়ির কি অবস্থা হত কল্পনা করুনএকদিন কামাই করলেই বাড়িতে সকাল থেকেই কাক-পক্ষীরা ধারে কাছে ঘেঁষতে পারেনাআসলে সমাজের চলাচলের জন্য আপনা আপনিই একটা অলিখিত সামঞ্জস্য তৈরী হয়ে যায়ছেলেরা আসে কাজ করে ডেরায় চলে যায় এই ডেরায় থাকার সুযোগ ও কারো কারো থাকেনাপ্রকৃত অর্থে পথশিশুএরা তিন -চার বছর বয়সেই মা-বাবা ছাড়াকি ভাবে যে এগারো -বারো বছরে পৌঁছায় তার অনুসন্ধান করলে যে কোনো মর্মস্পর্শী আখ্যান জোলো হয়ে যাবেএরকমই এক কিশোর যাকে সবাই ফালতু বলে ডাকে নজরে পড়ে যায় কাস্টমস অফিসের আরদালি নির্মলের চোখেনির্মল প্রতিদিন খেতে আসে এখানেবাড়ি থেকে না খেয়েই আসতে হয়, তাই পেট ভরে খেতে সময় লাগে__নির্মল মালের মাঝারি উচ্চতাবয়স অনুপাতে মাথায় কাঁচাপাকা চুল বেশিচুলগুলো এলোমেলোচওড়া কপাল নাকটা টিকলোডানদিকের গালে, মেয়েরা যেমন  কপালে টিপ পরে ঠিক সেই ধরনের গোল টিপের সাইজে একটা কালো আঁচিলতোবড়ানো গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, কিন্তু  চোখটা উজ্জ্বলবড় বড় চোখ দিয়ে নির্মল মাল ফালতুকে লক্ষ করে যায় ছেলেটা কবে থেকে উদয় হলো কে জানেছেলেটা যেন হাওয়ার উপর হেঁটে বেড়ায়আরও নজরে এসে যায় গত বুধবার এক খদ্দেরের পার্সটা পকেটে ঠিকমতো ঢোকাতে না পারার ফলে রাস্তায় পড়ে যায়খদ্দের দ্রুত পা চালিয়ে এগিয়ে যায়ফালতুর নজরে যখন আসে  খদ্দের তখন বড় রাস্তায়ফালতু  ফড়িংয়ের মতো উড়ে গিয়ে মানিব্যাগটা দিয়ে আসেনির্মলের নিজের ছেলের কথা মনের অন্দরে ভেসে ওঠে। 

 

()

       নির্মলের সুখের সংসার একদিনেই কালো অমাবস্যায় ঢেকে গেল আজ পূর্ণিমার আলোয় অবগাহন করে তুরীয় আনন্দ উপভোগ করছি কাল কি হবে কেউ বলতে পারেনা তিথি অনুযায়ী চাঁদের আলো বাড়বে বা কমবে, বিঞ্জানকে অনুসরণ করে বলতে পারি কিন্তু  ব্যক্তিগত ভাবে মানুষের জীবনে কাল কি হবে কেউই বলতে পারেনা যত দিন যাচ্ছে আমরা বিঞ্জান মনস্ক হচ্ছি সত্যকি তাই এখন খবরের কাগজ খুললেই দেখা যাবে স্বয়ং ঈশ্বরের থেকেও শক্তিশালী ওই জ্যোতিশরা বেশ কয়েকটি টিভি  চ্যানেল ওই ভবিষ্যতের ফলাফল জানিয়ে গাদাগাদা টাকা পকেটে পুড়ছে  এখনো মানুষের হুঁশ হচ্ছেনা উড়িষ্যার বালাসোরে করোমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় এতগুলো লোকজনের  কি একই রকমের শনির দশা ছিল তা কি জ্যোতিশরা বলেছিল নির্মল মনে করে সবচেয়ে খারাপ জীবিকা ওই ভবিষ্যতের কথা বলে, ভাঁওতা দিয়ে উপার্জন করা

         মিকি বিড়লা হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র মিকি নির্মলের একমাত্র সন্তানলেখা পড়ায় যেমন ভালো  খেলা ধুলায়ও তেমন ভালোবিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়াশুনা করবে মিকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লু হবেই হবেকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা লেখাপড়ার সঙ্গে খেলাধূলায় বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে পুরস্কারজয়ী  হলে  তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের "ব্লু" স্বীকৃতি দেওয়া হয়স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় রেকর্ড সংখক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে হিন্দু  হাই স্কুলের সর্বকালের রেকর্ড স্থাপন করেছেআনন্দ আর আনন্দমিকির হাতে শ্রেষ্ঠ অ্যাথলিটের ট্রফিমা মমতার হাতেও কয়েকটি পুরস্কার কলকাতার এরিয়ান ক্লাবের মাঠ থেকে  তাড়াতাড়ি পাড়ায় ফিরতে হবে পাড়ার লোকজনকে পুরস্কারগুলো দেখাতে হবে ওদের ঘর এ্ন্টালিতে ফিরতে হবে গেটের সামনেই একটা বাস দাঁড়িয়েরাস্তার বাঁদিক দিয়ে দেখা যাচ্ছে এন্টালি যাওয়ার এস নাইন মিনিবাসটা আসছে রাস্তার ওপাশে দাঁড়াবেঐই বাস চলে গেলে কম করে আধঘন্টা তীর্থের কাকের মত দাঁড়িয়ে থাকতে হবেমা, ছেলে দুজনেই দৌড়ে রাস্তার ওপাশে যেতে চায়রাস্তা পার হচ্ছে ওরা সেই সময়েই দ্রতগামী এক টাটাসুমো চোখের পলকে ওদের পিষে দিয়ে  হাওয়ায় মিলিয়ে গেলমিকির মাথা ফেটে চৌচির হয়ে ডিমের কুসুমের মতো মানব দেহের ঘিলু কালো পিচের উপরে লেপটে রয়েছেহাতে ধরা আছে শ্রেষ্ঠ স্পোষর্ম্যানের ট্রফিটামমতার হাতে শক্ত করে ধরা অন্যান্য পুরস্কার সামনের চাকা ছেলের মাথাকে খেয়েছে পিছনের চাকা  মমতার কোমর গুড়িয়ে দিয়ে চলে গেল এক ঘন্টা আগেও মিকি, মমতা জানতে পারিনি ওদের ভাগ্যে কি ঘটতে চলেছে

           মমতার হৃদপিন্ড ধিক ধিক করে চলছে প্রাণে বাঁচলেও বাঁচার কোন অর্থ হয়নাবিছানায় শয্যাশায়ীপ্রথমে মনে হয়ে ছিল স্মৃতি শক্তি ফিরে পাবেনাধীরে ধীরে স্মৃতি ফিরে পেলেও মমতা নিজের বিষন্ন মন নিয়ে নিজেই বলে যায় বাঁচার থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালনির্মল সকালে মমতাকে চান করিয়ে দুধ মুড়ি খাইয়ে অফিসে চলে আসে।। দুপুর একটার পরে বুড়ি সবিতা মাসি সব বাড়ির কাজ শেষ করে এখানে এসে চান করে এদের চাট্টি ভাত ফুটিয়ে দিয়ে নিজেও খায়, মমতাকে খাওয়ায় রাতের জন্য কিছু  ডাল-ভাত ঢাকা দিয়ে  রেখে যায় নির্মল-মমতার জন্যএইভাবে ধুঁকে ধুঁকে দিনক্ষয় করে নির্মলের সংসার চলছে

 

()

       নির্মল অন্য একজনের থেকে খোঁজ নিয়ে জেনেছে, ফালতুর মা,বাবা আত্মীয় স্বজন নেইশিয়ালদাহ স্টেশনের তেরো নম্বর প্যাল্টফরমের শেষে  রেলের পরিতক্ত সিগন্যাল হাউসে কয়েকজন ভবঘুরের সঙ্গে থাকেনির্মলের ছেলেটাকে খুব ভালো লাগেবিশেষ করে সেদিনের ওই মানিব্যাগ ফেরত দেওয়ার ঘটনাটা চোখে ভাসছেছেলেটার শরীরে ভালো মানুষের রক্তই বইছে।  ওর মা হয়তো ওর পিতৃত্বের পরিচয় দিতে পারেনি বলেই অন্ধকার জগতে ফেলে রেখে পালিয়েছেএমন একটি ছেলেকে যদি ঘরে রাখা যায় দুপক্ষেরই মঙ্গলছেলেটাকে পরিচিতি দিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারেনির্মল রবিবারে ওই খাবারের  দোকান বন্ধের দিনে খুঁজে খুঁজে রেল লাইন পেরিয়ে হাজির ওদের ডেরায়ডেরাটা দেখে আরো কষ্ট পেল নির্মলছেলেটা এখনো কি করে ভালো আছে তাই ভেবেই ভয় পেয়ে যায় নির্মলবেশ কয়েকজন গোল হয়ে বসে  নেশা করছে এখন এক নতুন নেশা বাজারে এসেছে "ইয়াবা"হেরোইনের মতো করেই নেশা করতে হয় ইয়াবারঅ্যালুমিনিয়ামের  ফয়েলের উপর ইয়াবা ট্যাবলেটটা রেখে নিচ থেকে তাপ দিয়ে ওটাকে গলাতে হয়গলানোর ফলে যে ধোঁয়া বেরোয় তা একটা  নলের মাধ্যমে মুখ দিয়ে টানতে হয়ধোঁয়া তত্ক্ষণাত সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রকে উজ্জীবিত করে ফেলে এই ইয়াবা  ট্যাবলেট কে বলা হয় "আপার ড্রাগ" কারণ এটার প্রথম টানেই শারীরিক মানসিক একটা  ঝটকা লাগে যার ফলে সব কিছু  চাঙ্গা হয়ে ওঠে

          পাঁচ-ছজন ছেলে গোল হয়ে বসে আছে ঠিক মাঝখানে কাগজ পুড়িয়ে অ্যালুমিনিয়ামের  ফয়েলে তাপ দিয়ে ধোঁয়া গিলছেনির্মলকে দেখেই  ঝটপট সবাই এধার ওধারে সটকে গেলফালতু  ফ্যাল ফ্যাল করে নির্মলের দিকে তাকিয়ে থাকেফালতু  নির্মলকে চেনেকতদিন খাবার তুলে দিয়েছেচুপচাপ বসে খাবার খেয়ে চলে যায়তেমন মনে রাখার মতো কোনো ঘটনা ফালতুর মনে পড়েনানির্মল সিধে এগিয়ে এসে আন্তরিক গলায় বলে, আমি তোর কাছেই এসেছিফালতু  অবাক হয়ে বলে আমার কাছেআমি তো কোনো খারাপ কাজ আপনার সঙ্গে করিনি আমার সঙ্গে কি দরকার নির্মল বলে, না না আমি তোকে খারাপ বলছিনা ফালতু  বলে, ওদের সঙ্গে  আমাকে মেশাবেন না পারত পক্ষে  আমি ওদের সঙ্গে মিশিনাআমি ভালো ছেলেদের মতো বাঁচতে চাই আমি মানুষের মতো বাঁচতে চাই আমার মা ভদ্রলোকের মেয়ে আমি মায়ের মাথায় হাত রেখে শপথ নিয়েছি, আমি চুরি-চামারি, নেশা, কোনো অসৎকাজ করবোনামা বলেছে আমার বাবা ভদ্র ঘরের ছেলে ভালো মানুষভাগ্যের ফেরে আমার আজ এই অবস্থা বাড়ির অমতে আমার বাবা বিয়ে করে আমার মা নিচু জাতের মেয়ে বলে, দাদু, জ্যাঠারা আমার বাবাকে তাড়িয়ে দেয় বাবা রাগে দুঃখে  মা কে নিয়ে  এক কাপড়ে ঘর ত্যাগ করে সংসার পাতেন সংসার ভালোই চলছিল আমার তখন পাঁচ বছরের সব কিছু  উলোটপালট হয়ে যায় এক দুর্ঘটনার জন্য বাবা বাস ধরার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন বাসের ব্রেক ঠিক মতো কাজ না করার জন্য এক্সাইড মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনকে পিষে দেয়  নির্মলের  পুরানো ক্ষতটা মনের মাঝে ভেসে উঠে যন্ত্রণাটা সহ্য করে নিয়ে বলে, হাঁ ঘটনাটা খবরের কাগজে পড়েছিলাম মা অনেক চেষ্টা করেছিল আমাকে নিয়ে  বাঁচতে বস্তির একটা ঘরে ঠাঁই পেয়েছিলাম প্রতি রাতেই বিশুমামা যে ঘরটা যোগাড় করে দিয়েছিল সে প্রতি রাত্রেই  ঝামেলা করতো মায়ের সঙ্গে  বস্তিতে কিছু  ভালো মনের মানুষ থাকে ওরাই বলে বিশু ভালো লোক  নয় তোমাকে  নষ্ট করে দিয়ে  মেয়ে পাচারকারীদের কাছে  বিক্রি করে দেবে তোমরা পালিয়ে যাও  নির্মল জানতে চায় তোর মায়ের আর কোনো খবর পেয়েছিসফালতু ঝরঝর করে কাঁদতে থাকেনির্মল অপ্রস্তুত হয়ে পড়েনিজেই ওর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে সান্ত্বনা দিতে থাকে ফালতু বলে, আমি জানি মা সবারই সব সময় থাকেনাছোট্ট ফালতু যে এমন বড়দের মতো কথা বলবে নির্মলের ধারণাই ছিলনাফালতু বলে উঠে মা মরেনি গুণ্ডারা আমার মাকে ধরে নিয়ে গেছে ওদের  কথামত  বস্তির ঘর ছেড়ে আমরা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকতে শুরু  করি গভীর রাতআমি আর মা পাল্টফরমে শুয়ে আছি ধ্বসাতাধ্বস্তির আওয়াজে ঘুম ভেঙে গিয়ে দেখি মাকে চ্যংদোলা করে নিয়ে যাচ্ছেআমি মায়ের শাড়ি ধরে আছিআমাকে এক থাপ্পড় মেরে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে তুলে নিয়ে যায়মায়ের সেই কান্না এখনো আমার চোখের সামনে ভাসেআমাকে মানুষের মত মানুষ হতে হবে নির্মল এত কিছু  শুনবে আশা করেনিফালতুর মাথায় হাত বোলায়, বলে শান্ত হওআমি না বুঝে জিজ্ঞাসা করেছিলামআমার পরিবারেও এক অঘটনের ফলে আমাদের সব থেকেও কিছু  নেইনির্মল সব ঘটনা ফালতু কে বলেদুজনের মধ্যে এক অন্তরঙ্গ পরিবেশের সৃষ্টি হয়সেই  মোক্ষম সময়েই নির্মল বলে, তুই আমার সঙ্গে চলতুই আমার বাড়িতে আমাদের ছেলে হয়ে থাকবিফালতু  কোনো কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যায়

 

()

            ফালতু  নিজের মায়ের সেবা করতে পারেনি, মমতাকে মনপ্রাণ উজার করে সেবা করেমমতা, নির্মল  জ্যোতিষে বিশ্বাস  না করলেও  ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখে মনে করে ঈশ্বর সৎমানুষের সঙ্গে থাকে নির্মল, মমতা, ওরা মনে করে তাদের ছেলে কে ঈশ্বরই ফেরত দিয়েছেনিজের ছেলে হয়ে যায় ফালতু ফালতুর নাম বদলে রাখা হয়  উদয়

             নির্মল পাড়ার ক্লাবের ছেলেদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ক্লাবের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সবাই হতবাক হয়ে যায়,বলতে থাকে এ কোথা থেকে উদয় হলো সবকটা দৌড় প্রতিযোগিতায় অবিশ্বাস্য কম সময়ে দৌড়ে প্রথম হয়ে যাচ্ছে মাঠের লোকজন জেনে গেল ছেলেটার নাম উদয় আমাদের পাড়ার নির্মল বাবুর বাড়িতে থাকে কেউ রটিয়ে দিল ওনার  দুরসর্ম্পকের আত্মীয় কেউ  কেউ  বলতে লাগলো  নির্মলবাবু দত্তক নিয়েছে ফালতু দৌড়  কোনো অংশে ভারতের গর্ব মিলখা সিং এর  থেকে কম নয় আর উদয়  মানে  আর্বিভাব এক নতুন অধ্যায়ের শুরু  করলো উদয় নতুন নতুন রেকর্ডের সৃষ্টি হবে এই উদয়ের দৌলতে ছেলেটা ভালো দৌড়ায়ক্লাবের ছেলেরা বলতে লাগল, আমাদের মিলখা সিংহ সুযোগ পেলে ও ভালো দৌড়বীর হতে পারেনির্মল  ওই জ্যোর্তময়ীর  রানার কোচিং সেন্টারে   উদয়ের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে দিল  মমতা  শুয়ে শুয়েই ওকে লেখাপড়া করাতে লাগলপাড়ার সবাইকে  অবাক করে দিয়ে প্রাইভেটে ভালো নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক  পাশ করলো উদয় পড়াশুনার সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি, খেলাধুলা নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে যায়

            মাঠের  ট্রেনিং শেষ করে কাস্টমস অফিসে নির্মলের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে বাড়িতে ফেরে এই সময়ে অফিসের অনেকের ফাইফরমাশ হাসিমুখেই করে দেয়অফিসের অনেকেই ভালোবাসে, পছন্দ করে উদয়কে যে পরিশ্রমী হয়, মানুষের উপকারের জন সচেষ্ট তাকে সবাই ভালোবাসে, সে সহজেই মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারে   সেদিনটা ছিল নভেম্বরের কোনো একদিনসব বামপন্থী দল মিলিত হয়ে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মিছিলের ডাক দিয়েছিলপুলিশের সঙ্গে খন্ড যুদ্ধ বেঁধে যায়পুলিশ গুলি  চালায়প্রতিবাদীরা যানবাহন বন্ধ করে দেয় শহর অচল হয়ে যায়সেই সময়েই অফিসে ফোন আসলো একটা জরুরি ফাইল সুপারিনটে্ন্ডন নিয়ে যেতে ভুলে গেছেনবস দিল্লী যাচ্ছেন রাজধানী এক্সপ্রেসেশিয়ালদহ থেকে ট্রেন ছেড়ে যাবে বিশ মিনিট পরেইবড়বাবু ফ্যাকাশে মুখে বলছে কি করে এই সময়ের মধ্যে এই পরিস্থিতিতে শিয়ালদহ যাবোউনিতো এসব মানবেননাআমাকেই বলবেন অপদার্থ কোনো কাজের নয়নির্মলের খারাপ লাগেঅফিসের সবাই নিরীহ পৌঢ় বড়বাবুকে ভালোবাসেকি করা যায়উদয় সব শুনছেমাথা নিচু করেই বলে, আমি একবার চেষ্টা করবোনির্মল বলে কি করে যাবি সব বন্ধউদয় বলে বন্ধ বলেইতো সুবিধা হবেআমি দৌড়ে স্টেশনের পিছনের রেল লাইন ধরে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে যাবো তোমারা উনাকে ফোন করে বলে দাও হলদে হাফশার্ট পরা, লম্বা একটা ছেলে যার নাম উদয় সে ফাইলটা নিয়ে  যাচ্ছে

          উদয় স্ট্রান্ড রোডের দিকে দৌড় শুরু  করে হাতে চকচকে রেক্সিনে বাঁধানো ফাইলকলকাতার লোক না বুঝেই পরোপকারও করতে ওস্তাদদুজন লোক, চোর চোর বলে উদয়ের পিছনে দৌড়াচ্ছেনা পিছনে তাকিয়ে সময় নষ্টের সময় এখন নয়কে যেন ওর কানে কানে বলছে, "ভাগ উদয় ভাগ।" জীবন যতদিন থাকবে যন্ত্রণাও ততদিন থাকবেউদয় হেড পোষ্টঅফিসের গোলবাড়ির  পিছনের সুলভ শৌচাগারে ঢুকে  লাফিয়ে পিছনের পাঁচিলে উঠে পড়ে পাঁচিল থেকে লাফ দিয়ে নেমে বাঁ দিকে ছুটে ঢুকে পড়ে  ডেভিড লেনেউদয় বাস্তবের ধাক্কা খেয়ে বুঝে গেছে  আনপাড় পাবলিককে কি ভাবে বোকা বানাতে বা বোঝাতে হয়উদয় দৌড়াতে  দৌড়াতে বলছে, আমাকে ট্রেন ধরতেই হবে, আমাকে ট্রেন ধরতেই হবেউদয়ের চিৎকারে পাবলিক ভয়ে বা ভক্তিতে  রাস্তা ছেড়ে দিচ্ছেকেউ মনে করছে পাগল কেউ মনে করছে ক্ষেপা কুকুরের মোতো দৌড়াচ্ছে, সরে যাওয়াই ভালোগায়ে পড়লে বিপদ  এই কানাগলি শর্টকাটে বাগরী মার্কেট মিশেছেওখান থেকে যায় কাশি দত্ত লেনে যা মেডিক্যাল কলেজে মিশেছে মেডিক্যাল কলেজের বাঁ পাশের  হ্যাারিসন রোড ধরে সুভাষ ইন্সটিউ্টকে  পিছনে ফেলে রেললাইনটা ধরে পনেরো মিনিটেই পৌঁছে যায় রাজধানী এক্সপ্রেসেবশ গুলারিয়া শাহ সাদা রুমাল দিয়ে ঘেমো টাক, মুখ মুছেই চলেছেউদয়ের হাতে ফাইলটা দেখেই ধড়ে প্রাণ আসেবাবারও বাবা থাকেদিল্লীর কর্তা যা মধুর বাণী শুনাতো তাতে একটা প্যান্টের পাছা হলদে হয়ে যাওয়ার পক্ষে যথেষ্টকড়কড়ে একশো টাকার নোট এগিয়ে দেয় উদয়ের দিকেউদয় বলে, সাহেব আমার বাবা ওখানে কাজ করে আপনাদের নুন খাইআমারও দায়িত্ব, সুযোগ পেলে আপনাদের  সাহায্য করা আজ গুলারিয়া সাহেবের সব কিছু  গুলিয়ে যাচ্ছেএই প্রথম একজনকে দেখলো টাকা না নিয়ে খুশী গদগদ হয়ে বলে, আমি দিল্লী থেকে ফিরে তোমার একটা ব্যবস্থা করে দেবো উদয় কোনো কথা বলে না, মনে মনে হাসে ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে বড়রা বিপদ থেকে উদ্ধার হতে বা হয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে কার্পণ্য করেনা, এবং ভুলে যেতেও ভোলেনা

          গুলারিয়া সাহেব এক সপ্তাহ হলো ফিরেছেবড়োবাবুকে বলেছে ওই ফাইলটা না নিয়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যেতোবড়বাবুর উপস্থিত বুদ্ধির ও প্রশংসা করেছেকালের নিয়মেই ঝড় থেমে গেছে, অফিস শান্ত হয়ে আগের মতই গতানুগতিক চলছে অফিসে নতুন কোনো ঝঞ্ঝাটের  উদয় হয়নি তাই স্বাভাবিক কারনেই উদয়ের খোঁজ পড়েনিবৃহস্পতিবারের বারবেলায়  অফিসে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লোদিল্লী থেকে খবর এসেছে এইবারের অল ইন্ডিয়া কাস্টমস স্পোর্টস মিট কলকাতায় হবে সব কিছুর ব্যবস্থা এই অফিসকে করতে হবেগুলারিয়া সাহেব বড়োবাবুকে ডেকে রুমাল দিয়ে টাক, মুখ মুছেই চলেছেন বড়বাবু মাখন সমাদ্দার কে সামনে বসিয়ে সব কথা খুলেই  বলেন, বড়বাবু বলেন, সাহেব ঘাবড়াবেন নাওরা বাজেট করে যা টাকা দেবে সেই অনুযায়ী "ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ঠিকাদার" কে বরাত দিয়ে দেবো বলেই ঠোঁটের পাশে মুচকি হাসিএই হাসির অর্থ গুলারিয়ার মর্মে মর্মে গাথাঠিকাদারের থেকে কমিশন পাওয়া যাবেগুলারিয়া এক ফ্যাকাশে মুখ করে বলে লেকিন স্পোর্টসমে  হামারা অফিস কা কেয়া পজিশন হোগাবিপদে পড়লে মাতৃভাষা অজান্তেই পেট থেকে বেরিয়ে আসেগুলারিয়া সাহেবের কোন দোষ নেইসারা ভারতের সব অফিসের সব কর্মচারিবৃন্দর এই প্রতিযোগিতাকলকাতার শাখা যদি কোনো পদক না পায় তাহলে কলকাতার বদনামের  থেকে গুলারিয়ার অযোগ্যতাই বেশি প্রমাণিত হবেকেউ বুঝবানা কত দিন হলো নতুন লোকজন নেওয়া হয় নি স্পোর্টস কোটার কোনো কর্মচারী এই অফিসে কাজ করেনাসমাদ্দার বাবু বলেন, নিয়ে  চিন্তা করবেন নাআপনি অস্থায়ী হিসাবে উদয় কে আমাদের দফতরে ঝাড়ুদার হিসাবে  নিয়োগ করে নিন।  সিনেমার পর্দায় যেমন দেখায় কড়াৎ করে বাজ পড়ার আওয়াজ আর পুরানো সব কথা মনে পরে যায়প্রথম কথাটাই বলে, "আমি কোথায়।" গুলারিয়া টাকে রুমাল ঘষতে ঘষতে মনে পড়ে যায় শিয়ালদা স্টেশনের ঘটনা গুলারিয়া মুখে চুক চুক আওয়াজ তুলে বলে, ভুলে গিয়েছিলাম, লেড়কা বহুত তেজি হ্যায় আচ্ছা হ্যায়

          কাস্টমস অফিসে সাজসাজ রবকেউ হাঁটার রেসে নাম দেবে বলে বাস ছেড়ে দিয়ে হেঁটে অফিসে ঢুকছেকিছুই বলতে পারছেনা গুলারিয়াটিফিন টাইম পাস করে সবাই "প্রাক্টিসে যাচ্ছি" বলে হাওয়া হয়ে যাচ্ছেগুলারিয়ার টাক আরও চওড়া হচ্ছেদিল্লী থেকে হোমড়া চোমড়ারা আসবেশোনা যাচ্ছে শুল্ক বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জ্ঞান সিং আসতে পারে  

       ২৩শে জানুয়ারি মোক্ষম দিনেই অনুষ্ঠানএই দিনে সব পক্ষই এক হয়ে কে কত দেশকে ভালোবাসে নেতাজী অন্ত প্রাণ প্রমাণ করে ছাড়েতেরঙ্গা পতাকা তুলে  জ্ঞান সিং জ্ঞান বিতরণ করতে শুরু  করলেনথামার কোন লক্ষণ নেইসেই কথায় বলে না, যার কেউ নেই তার ভগবান আছেএখানে ভগবান লোড শেডিং করে দিলেনসবাই স্বস্তির নিঃশাস ফেলল আশাতীত দর্শক উপস্থিত হয়েছেকর্মী বর্গের প্রত্যকেই পরিবার পরিজনবর্গ নিয়ে হাজিরফ্রি চা বিস্কুটজম্পেশ লাঞ্চ প্যাকেট পাওয়া যাবে

          হুইসেল বাজিয়ে শুরু হলো প্রতিযোগিতাপ্রতিযোগীরা সর্বোচ্চ কটি বিষয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবে তার কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নিদুটি -তিনটির বেশি বিষয়ে লড়তে গেলে যে দমের দরকার তা কজনের আছেতাছাড়াও যত বেশি প্রতিযোগী থাকবে তত ভালো হবে ফাঁকা ফাঁকা লাগবেনাএকেই বলে কপালের নাম গোপাল উদয়ের কপাল ফুলে কলাগাছপ্রত্যেকটি বিষয়ে  সে একশ মিটার থেকে দুহাজার মিটার দৌড়লং জাম্প থেকে হাই জাম্পসব বিষয়েই প্রথম মন্ত্রী জ্ঞান সিং খুব খুশিহামারা ডিপার্টমেন্ট কি আদমী হামকো বহুত খুশ কিয়াগুলারিয়া কানে কানে মন্ত্রীকে বলে, আমাদের কর্মচারী নয়কয়েক দিনের জন্য ক্যজুয়াল লেবার হিসাবে নিয়েছিমন্ত্রী বলে, আপনাদের এই বুদ্ধি নিয়ে কি করে ডিপার্টমেন্ট চালানওকে স্পোর্টস কোটায় চাকরির জন্য পাঠান, আমি সই করে দেবোগুলারিয়া বড়বাবুকে সাক্ষী রাখতে খোঁজ করলো, পেলোনা।  গুলারিয়া জানে পরের উপকার করবে নিজের ক্ষতি করে নয়চিঠি লিখলে  পাল্টি খেয়ে ওর ঘাড়েই যেন বন্দুক না চাপিয়ে দেয়

          এই সব অনুষ্ঠানে শেষ হয় "গো এজ ইয়ু লাইক" দিয়েপ্রতিযোগীরা যেমন খুশী সেজে আসেকিস্তিমাত করে দিলেন বড়বাবু "মুঝে প্যায়র হোগায়া, মুঝে প্যায়র হো হো গেয়া গান গেয়ে, লুঙ্গি  ড্যন্স, লুঙ্গি ড্যন্সের কায়দায় নেচে সবাইকে ডেকে ওনার সঙ্গে নাচতে অনুরোধ করলেন অনুরোধ কেউ  উপেক্ষা করলোনা ওনার সঙ্গে সবাই নাচতে শুরু  করে দিলমধুরেণুয়তে সমাপ্ত হলো

()

       উদয়কে চাকরি দেওয়া হয়েছেকোনো কাজ করতে হয়না বলে ক্ষোভকবে দৌড় প্রতিযোগিতা হবে তখন দৌড়াবেউদয়কে বলে "রেইড" করতে ওই দলের সঙ্গে পথেঘাটে যাবে ডিউটি করবে উদয় দেখে লরি ভর্তি ফুডর্কপোরেশনের গম রবীন্দ্র সেতুতে উঠেছে ড্রাইভার পকেট থেকে তাসের মতো কি একটা দেখিয়ে স্পীডে সেতুতে উঠে গেলউদয় দৌড়ে লাফ দিয়ে ড্রাইভারের দরজা ধরে টান মেরে বলে, 'রোকো' চোরাই মাল পাচার হচ্ছেশোরগোল বেঁধে যায়খবরের কাগজের লোক, টিভির লোক শকুনের মতো ঘিরে ধরে ছবি তুলতে থাকেকতৃপক্ষ বাধ্য হলো অ্যরেষ্ট করতেরাতেই পুলিশ কমিশনারের ফোন গুরালিয়াকে। "কি ব্যাপারওরা কমিশন দিয়েছে, আপনাকেও কমিশন দেওয়া হয়েছে তাও কেন ধরা হলোআমি জানতে পারলাম ড্রাইভার "পাঞ্জা" দেখানোর পরও ধরা হয়েছেগুলারিয়া টাকে হাত বুলাতে বোলাতে বলে টাকা পেয়েছিকিন্তু বিপদ হয়েছে ওই উদয় ওকে বলা যাচ্ছেনা আমরাই কমিশন খেয়ে ওদের কে ছেড়ে দিই

            কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে উদয়ের নাম অনেকেই জেনে গেছে রাত বারোটায় ডন দাউদ মিঁয়া ফোন করে গুলারিয়াকে বলে, হচ্ছেটা কিএকটা লোককে কনট্রোল করতে পারছেন নাগুলারিয়া বলে, আমি শাঁখের করাতে পরে গেছি ওকে তো এখন ডিউটি থেকে  সরাতে পারিনা ওকে সরালেই কাগজে কাগজে  লেখা লেখি হবে আমার সাত গুষ্ঠি ঘুষখোর প্রমাণ করে দেবে ও যদি নিজে থেকে বলে যাবেনা তবেই সবার মঙ্গল দাউদ বলে আপনাদের মাথায় গোবর ও নেই যত সব ভূষিমালের দল গুলারিয়া সাহেব, ওকে বদলি করে দিন যে কোনো জংলী জায়গায় গুলারিয়া দাউদ মিঙাকে নিজের  বিবির থেকেও বেশি ভয় পায় বিবিরা মুখে টাইট দেবে প্রাণে মারবেনা দাউদের মতো দাউদকে বলবেনা  বলবনা মনে করেও বলে ফেলে, বদলি করলে, এখানে  কর্মচারীদের ইউনিয়ন ঘেরাও করে কাজকর্ম বন্ধ করে বগল বাজাবে টিভির লোকজন দের ডেকে এমন গরমাগরম বক্তৃতা দেবে যা শুনে পাবলিক আমাকে তো ভিলেন বানাবেই সঙ্গে সরকারকে জড়িয়ে রগরগে গল্পকথন শুরু করে দেবে দাউদ  এবার শোলের গব্বরের সেই ডায়লগটা স্মরণ করিয়ে বলে, আব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া গুলারিয়া সাহেব বাথরুমে যাওয়ার সময় পেলোনা প্যান্টেই হয়ে গেল ফোনে বলেই ফেলে উষকো প্রমোশন দেখে ভাগায়াঙ্গে বড়বাবু এই সময়েই ঘরে ঢুকে কথাটা শুনেই চেপে ধরে গুলারিয়াকে গুলারিয়া গড়গড় করে সব উগলে দেয় বড়বাবু উদয়ের বিষয়ে উদ্বিগ্ন পুরো অফিসের বদনাম হয়ে যাবে বড়বাবু বুদ্ধি দেয় ওকে ডেপুটেশনে উত্তর বঙ্গ পাঠিয়ে দিন ওখানকার লোকজন দের কয়েক মাস সাহায্য করতে যাবে গুলারিয়া মনে মনে বলে এই জন্যই বড়বাবুকে শকুন বলে

 

()

         উদয়  পাঠিয়ে দেওয়া হলো উত্তর বঙ্গের ুলবাড়ি অফিসে এই অঞ্চলে  কাঠ মাফিয়া দের রাজত্ব পুরানো অনেক গাছ আছে যার সন্ধানে আন্তর্জাতিক মাফিয়ারা প্রচুর পরিমাণে টাকা  খরচ করে কোনো এক গাছের কাঠের টুকরো এক রাত্রি জলে ভিজিয়ে খেলে মধুমেহ অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগ  সেরে যায় সারা পৃথিবীতে অগুনতি কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে  এই রোগের  জন্য সামান্য  জলে ভিজিয়ে জলপান করলেই যদি রোগ সেরে যায়  তার মূল্য হিরের থেকেও কম দামি নয় এই অঞ্চলের বনে অনেক প্রাচীন মূল্যবান গাছ আছে  যা দুস্প্রাপ্য স্বাভাবিক কারনেই তার মূল্য অনেক  অনেক সমগ্র চোরাচালানিরা উত্তর বঙ্গের এই রাস্তা ধরেই চোরাচালান   করে

       উদয়ের সঙ্গে  আরো তিনজন  আছে ডিউটিতে উদয় ছাড়া তিন জনেরই বয়স ষাটের কাছাকাছি এই অঞ্চলের বাসিন্দা, অবসরের শেষ পর্যায় সবাই বাড়িতে থাকতেই বেশি ভালোবাসে তেমাথার ঢালে দাঁড়িয়ে  দাঁড়িয়ে ডিউটি দিচ্ছে ওরা সাধারণত সন্ধ্যা নামলেই পাহাড়িরা তাড়াতাড়ি  শুয়ে পড়তো এখন টিভির দৌলতে সবাই ঘরে বসেই টিভি দেখে, যার ফলে  যতদূর চোখ  যায় দুর থেকে মনে হয় বড় আকার বিশিষ্ট জোনাকিরা পাহাড়ের ধাপে  ধাপে জ্বলছে

       পাহাড়ি এলাকায় কখন বৃষ্টি নামবে কেউ জানে না হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন সমস্ত প্রকৃতি যেন রুদ্ধ-শ্বাসে প্রলয়ের প্রতীক্ষায় একটা বিদুৎ আকাশকে এফোঁড় ওফোঁড়ে দীর্ণ-বিদীর্ণ করে দেবার পরই প্রচণ্ড শব্দ করে বজ্রপাত হল তারপর আবার সব চুপচাপ কয়েক পল পরেই সোঁ সোঁ শব্দের ঝড় এলো কামান গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে যেন যুদ্ধ আরম্ভ হলো গাছগুলো  হাহাকার আওয়াজ তুলে আর্তনাদ করতে লাগলো পাখিরা বিভ্রান্ত হয়ে  উড়তে লাগল বৃষ্টি নামল বেশ মুষলধারে ঝড় বৃষ্টি দুটোই সমানে চলতে লাগল গাছের ডালপালা ভেঙে ছড়িয়ে পড়তে লাগল, মনে হলো মৃত সৈনিকদের দেহ আছড়ে পড়ছে ঝড়,বৃষ্টি আর অরণ্যের সমন্বয়ে  এক বৈচিত্র্যময় শব্দের সৃষ্টি করলো কখনও মনে হচ্ছে কেউ যেন  অট্টহাসি  হাসছে, পরক্ষণেই মনে হচ্ছিল  কেউ যেন কাঁদছে কান্নার আর্তনাদের সঙ্গে  খিকখিক হাসি মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে এক অসহনীয় আতঙ্কর পরিবেশ

      উদয়রা  ওয়াটার প্রুফটা পড়ে  নিয়ে ডিউটি দিচ্ছে।। উদয়ই রাস্তার ধারে একটা জীপ মাঝামাঝি গতিতে চলে গেল উদয় বুঝতে পারলো এই জীপ আগে আগে রেইকি করে মোবাইলে খবর দিয়ে দিচ্ছে "রাস্তা ক্লিয়ার" উদয় ওদেরকে বলে রাস্তায় আসতে পাখি ধরতে হবে ওরা এগিয়ে আসলোনা একটা লড়ি সোঁ সোঁ করে এগিয়ে আসছে উদয় হাত দেখিয়ে থামাতে বলে লরি না থেমে ওর গা ঘেঁষে এগিয়ে  যায় উদয় রির পাশাপাশি দৌড়াতে থাকে লরির নাগালের বাইরে, পিছন দিক থেকে আর একটা  জিপ জোরে ধাক্কা মারে রাস্তা  থেকে  ছিটকে এক গভীর খাদে পড়ার আগেই দুস্প্রাপ্য পাহাড়ি গাছ  "সোনালু" ডালের এক খাঁজে বাঁ হাতের পাঞ্জ্যা আটকে  যায় ভাগ্যিস ডালে হাতটা আটকে গিয়েছিল তা নাহলে পাঁচশো মিটার নিচের খাদে পাইনের বনে আছড়ে পড়তো  ঝুলতে থাকে উদয়, হাত ফসকালেই অতল খাদে লরিটা এঁকে বেঁকে এগোচ্ছে চড়াই রাস্তা টপ গিয়ারে কচ্ছপের গতি উদয় ঝুলন্ত অবস্থায়  ডান হাতে অত্যাআধুনিক  নাইন এম এম পিস্তলটা টিপ করে ট্রিগার টিপে বলে, কালো বাজারিদের নিকেশ করবই গুলিটা সিধে  লরির ডিজেল ট্যাংকে জ্বলন্ত লরিটা পাহাড়ের অতলস্পর্শ খাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে

      উদয়ে ামহাতে পাঞ্জা সোনালু গাছের দুটি ডালের ফ্যঁকরার মাঝখানে আটকে গেছে শরীর ঝুলছে হাত খুলে গেলে  নিচে আছড়ে পরতে হবে ভোর হতে এখনো কয়েক ঘন্টা বাকি কিছু  অধিবাসি বুঝতে পেরেছে কিছু  একটা হয়েছে উদয়ের সঙ্গে  আরো যারা  ডিউটি করছিল তারা ছুটে এসেছে দু-তিনটে লরি মজা দেখার জন্য দাঁড়িয়ে গেছে ড্রাইভাররা মনে মনে বলছে বেশ  হয়েছে আমাদের ধরার ফল হাতেনাতে পেলি  সহকর্মীরা উপর তলায়  ফোন করে দিয়েছে রাত শেষ  হয়ে  আসছে অহনার আলো বুঝিয়ে দিচ্ছে সূর্য দেবতার উদয় আসন্ন উপর তলার আধিকারিকরা  এখনো ঠিক করতে পারছেনা  উদয়কে বাঁচতে টিম পাঠাবে কি পাঠাবেনা সূর্যদেব উদিত হয়ে উদয়ের মুখেই পড়ছে ওদিকে জ্ঞান হারিয়ে  ঝুলতেই থাকে উদয়

      দর্শকদের একান্ত প্রার্থনা স্বমহিমায় আবার সমাজে ফিরে আসুক উদয়

 

==============

 

 


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী