google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re নিবন্ধ ।। এবার পুজো হোক ন্যায়বিচার ও সম্প্রীতির ।। পাভেল আমান - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৪

নিবন্ধ ।। এবার পুজো হোক ন্যায়বিচার ও সম্প্রীতির ।। পাভেল আমান

 

এবার পুজো হোক ন্যায়বিচার ও সম্প্রীতির 

পাভেল আমান

 
দেবী পক্ষের সূচনার মধ্যে দিয়ে সারা বাংলা জুড়ে শুরু হয়ে গেছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন। শেষ মুহূর্ত প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে প্রস্তুতির ব্যস্ততা ও প্রতিমার স্থাপন। এক কথায় বলতে গেলে সাজো সাজো রব। চারিদিকে তাকালেই নয়নাভিরাম কাশফুলের অপূর্ব বাহার জানান দিচ্ছে  মায়ের আগমন। যদিও এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ঘনঘটাতে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলাতে বানভাসি অবস্থা। তবুও প্রত্যাশা রাখি নিম্নচাপ বিদায়ে রোদ ঝলমলে আবহাওয়াতে আপামর বাঙালি তাদের প্রাণের উৎসব শারদ উৎসবে মেতে উঠবে। সারা বছরের প্রতীক্ষার প্রহর গুনে আবাল বৃদ্ধ বণিতা পুজোর এই কটা দিনে তারা যেন আনন্দ উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। এভাবেই ধারাবাহিকতার সাথে বাঙালিরা তাদের ভালোলাগার বড় গর্বের শারদ উৎসবকে পালন করে আসছে। 
 
    কিন্তু এ বছরের দুর্গা পুজোতে বাঙালি যেন বিষণ্ণ মনমরা তাদের প্রতিবাদী কাছের জন আর জি করের তরুণী চিকিৎসক তিলোত্তমার নৃশংস ও বিভীষিকাময় মৃত্যুতে। রাত দখলের লড়াই থেকে শুরু করে দুমাস ধরে চলছে গলি থেকে রাজপথ প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল তিলোত্তমার ন্যায় বিচারের দাবিতে। এবারের পুজোতে মিশে গেছে একরাশ দুঃখ যন্ত্রণার নিদারুণ কথা মালা যেখানে তিলোত্তমার অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের মুখরিত স্লোগান। আমরা ভুলতে পারবো না তিলোত্তমার আত্ম বলিদান দুর্নীতি অন্যায় অত্যাচারীর বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই। বুকের মাঝে জমানো বিক্ষোভকে লালন করে ন্যায় বিচারের জন্য সম্মিলিত কলরব। সারা বাংলা জুড়ে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আপামর বাঙালি মননে এখনো দগ্ধতা বিষাদের আবহ। 
 
    মহালয়ার পিতৃতর্পণের মধ্যে দিয়ে পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের সূচনাতে বারংবার ফিরে আসছে আমাদের তিলোত্তমার কাঙ্খিত ন্যায়বিচার। ইতিমধ্যে চারিদিকে  দোকান বাজারে শপিংমলে পুজোর শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ভিড়। ব্যবসায়িকরা আশায় বুক ভরে পুজোকে ঘিরে উপার্জনের জন্য। কত মানুষের রুজি রোজগার সারা বছরের সংসার খরচের টাকা অনেকটাই উঠে আসে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর মধ্যে দিয়ে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না দুর্গাপুজো আজ ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত যেখানে মুসলিম রাও অংশগ্রহণ করে। সম্প্রীতির পিঠস্থান ধর্মনিরপেক্ষতার ধাত্রীভূমি এই বাংলাতেই হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একে অপরের পারস্পরিক সহযোগিতায় দূর্গা পুজো করে আসছে। পুজোর অমলিন আনন্দে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে একে অপরের ভাব বিনিময়ে এভাবেই গড়ে উঠেছে বাংলার সংহতি ভাতৃত্ব সৌহার্দ্য সমন্বয়ে সর্বোপরি সম্প্রীতির নিখুঁত মেলবন্ধন। এখানেই শারদ উৎসবের প্রাসঙ্গিকতা। যদিও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির  বিস্তারে বিদ্বেষ বিভাজন অসহিষ্ণুতা বাতাবরণে কোথায় কোথাও বিনির্মিত অদৃশ্য বিভাজনের বেষ্টনী। 
 
    তবে একটি কথা বাঙালি সংস্কৃতি ঐতিহ্য কৃষ্টি সমন্বয়ী ভাবনাকে আত্মস্থ স্মরণ লালন করে বাঙালিরা এখনো সম্প্রীতি সৌহার্দ্যের আদর্শ নীতিতে হেঁটে চলেছে। ভুলে গেলে চলবে না এই বাংলা রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মহসিন রবীন্দ্রনাথ নজরুলের চিন্তাভাবনায় পরিপুষ্ট। মন্দিরের ঘন্টা ধ্বনির পাশাপাশি মসজিদের আজানে বাঙালির দিন যাপনের ধারাবাহিকতা প্রবাহমান। ঈদ পূজোর উৎসবে আমরা সবাই আনন্দটাকে মন প্রাণে উদ্দীপিত করতে উদগ্রীব হয়ে উঠি। সেখানে আমাদের একটাই পরিচয় আমরা বাঙালি। বাংলা সংস্কৃতি বাংলা ভাষা বাংলা ঐতিহ্য আমাদের বড় গর্বের আনন্দের। এভাবেই যুগ যুগ ধরে সুখে-দুখে বিপদে-আপদে ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে বাঙালি চেতনায় জাগরনে শান দিয়ে আমরা পারস্পরিক সহযোগিতা সহমর্মিতা সহানুভূতি মনোভাবেই বেড়ে উঠেছি এই শস্য শ্যামলা সুজলা বাংলায়। 
 
    পরিশেষে একটি কথা আসুন আমরা সবাই মিলে দল বেঁধে পবিত্র মননে মায়ের আরাধনার মধ্যে দিয়ে বিদ্বেষ বিভাজনকারী অপশক্তিকে দূরে সরিয়ে সমাজ থেকে অত্যাচারী নারী ঘাতক অসুরদের বিনাশ করতে বিবেক চেতনা ও মনুষ্যত্ববোধকে জাগিয়ে তুলি। দেবী দুর্গার কাছে আমাদের প্রত্যেকের বিনীত প্রার্থনা শোষণ বঞ্চনা অন্যায় অত্যাচার নিপীড়ন দুর্নীতি সাম্প্রদায়িকতার বিনাশে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক ন্যায় বিচার মানবতা সর্বোপরি আজন্ম লালিত সম্প্রীতি। 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন