Featured Post

নবপ্রভাত পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গ্রন্থ-প্রকাশ : ১। সম্পূর্ণ পত্রিকার খরচে ও ২। পত্রিকার অনুদানে

ছবি
  নবপ্রভাত পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে  গ্রন্থ-প্রকাশ বিষয়ক বিজ্ঞপ্তি ১। সম্পূর্ণ পত্রিকার খরচে এক ফর্মার ১০টি পুস্তিকা : এই প্রকল্পে লেখক-কবিদের থেকে কোনো খরচ নেওয়া হবে না।        পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বইগুলি প্রকাশিত হবে। লেখক/কবিকে সশ্রদ্ধায় সৌজন্য সংখ্যা দেওয়া হবে।       যাঁদের আগে কোন বই হয়নি , তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। নতুনদের উপযুক্ত লেখা না পেলে বাকিদের লেখা নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরিত হবে।       লেখা সকলেই পাঠাতে পারেন। মেলবডিতে টাইপ করে বা word ফাইলে ।   ই-মেল : nabapravat30@gmail.com  (এবং হোয়াটসঅ্যাপেও)। বইয়ের শিরোনামসহ ১৫টি কবিতা বা ১৫টি অণুগল্প পাঠাতে হবে , শব্দ সংখ্যা বা লাইন সংখ্যার বাঁধন নেই । মনোনীত হলে মানানসই বইয়ের ফরম্যাটে যে কটি যাবে রাখা হবে ।       সঙ্গে লেখক পরিচিতি , ঠিকানা , যোগাযোগের ( কল ও হোয়াটসঅ্যাপ )   নম্বর ও এক কপি ছবি দেবেন। লেখক পরিচিতিতে অবশ্যই জানাবেন, এটি আপনার প্রথম প্রকাশিত বই হবে অথবা পূর্ব প্রকাশিত গ্রন্থতালিকা। অনলাইন বা মুদ্রিত পত্রিকা বা সমাজ - মাধ্যমে প্রকাশিত লেখাও পাঠানো যাবে । তবে কোনও গ্রন্থভুক্ত লেখা

মগরাহাট (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এলাকার স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগ্‌ধারা ইত্যাদি (পর্ব—ছয়) ।। অরবিন্দ পুরকাইত

মগরাহাট (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এলাকার

স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগ্‌ধারা ইত্যাদি (পর্ব—ছয়)

অরবিন্দ পুরকাইত


স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগ্‌ধারা ইত্যাদির সংগ্রহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রামচন্দ্র নস্কর সম্পাদিত 'চর্যা' পত্রিকায়, ২০১৬ সালে। সে সংগ্রহ যায় নিজের 'গাঁ-ঘরের কথা' পুস্তকে, ১৪২৩ সনে। পরে এই ব্লগজিনেও কিছু সংগ্রহ প্রকাশিত হয় ১৪২৮ সনের আশ্বিন মাসে, পৌষ ১৪২৯-এ, আষাঢ় ১৪৩০ ও নববর্ষ ১৪৩১ সংখ্যায়। তার পরেও ধীরে ধীরে আরও কিছু সংগৃহীত হয়েছে, সেগুলিই এখানে রাখা হল।
       নিজের আগের সংগ্রহে এসে-যাওয়া শব্দ যদি এখানে এসে থাকে, তার বাড়তি বা ভিন্ন কিছু বলার প্রয়োজনেই। নিজের আগের সংগ্রহ খুব ভাল করে যে মিলিয়েছি তা নয়, পুরো সংগ্রহ একত্র করার সময় তা করা যাবে যতটা সম্ভব নিখুঁত করে।
       আগে আগে সংগ্রহ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা হয়েছে, বিশেষত প্রথম প্রকাশের সময় একটু বিশদভাবে। এখানে আর কিছু বলা নয়, কেবল সংগ্রহটাই তুলে ধরা গেল।

অবুদি — অবধি, অব্দি। কত আর জল হবে, বড়জোর বুক অবুদি।
আমড়া খাই-টক খাই — আমতা আমতা করা, কী বলতে হবে ভেবে না পেয়ে কথা হাতড়ানো বা অপ্রাসঙ্গিক উত্তরের চেষ্টা, অপ্রতিভভাবে কিছু-একটা বলে সামাল দেওয়ার চেষ্টা।
অ্যালা/এলে যাওয়া — মূলত আর খাওয়ার ইচ্ছা না থাকা, রুচি না থাকা। বাবা, এত মিষ্টি খাওয়া যায়!— গা মিইটে উটেচে। এ বচর আম খেয়ে তা এলে গিচি সব। গঙ্গা ককনও মড়ি অ্যালে! মড়ি— শব।

আগচুল খাড়া হয়ে যাওয়া — রাগের অনুভূতি বোঝাতে বলা হয়ে থাকে, রাগে যেন মটকার চুল সোজা খাড়া হয়ে ওঠা! তুই হাসতিচিস?— শুনে আমার আগচুল খাড়া হয়ে উটেচে!
আচকাআচকি — মন-কষাকষি, ঝগড়া-বিবাদ। হ্যাঁ, ও ওই কতা বলতি গেল!— ওর সঙ্গে ওর আচকাআচকি আচে ন্যায়! (সঙ্গে উচ্চারণ সোঙ্গে)
আদকেরালে — (আদ— আধ) মাঝারি আকারের। আদকেরালে মতন এট্টা উইমাচ হয়চে, আর কিচ্ছু হয়নে একনও। উইমাচ— রুইমাছ।
আরুতি — আরতি।

উগরুতি না পারা, ফুগরুতি না পারা — কোনও কারণে 'পেটের কথা' চেপে রাখতে হচ্ছে এমন পরিস্থিতি। ওগরাতে বা উগরে দিতে না পারা বা ফোকরাতে অর্থাৎ মুখে বলতে না পারা।
উটোন-কাটান — উঠান, বাড়ির আনাচ-কানাচ ইত্যাদি। উটোন<উঠোন<উঠান।
উদ্ধু — ঊর্ধ্ব। অত উদ্ধুই বাঁদিসনি। কী করবে, শেষে উদ্ধুশ্বাসে পালালো!

এ-দবুড় সে-দবুড় — (উচ্চারণ দোবুড়, অর্থ দৌড়) এদিক থেকে টানা সেই ওদিক পর্যন্ত। কোনও দীর্ঘ লম্বা আকৃতির ঘরবাড়ি সম্বন্ধেও বলা হয়ে থাকে। বাবা, মামাদের ত্যাকন গরু কদ্‌গুনো!— গোলঘর তা সে এ-দবুড় আর সে-দবুড়! (গোলঘর গোয়ালঘর)
এনচাপ — আন্দাজ, অনুমান। এট্টা এনচাপ করে দেক না, কৎটা রোজন হতি পারে এটার। (রোজন উচ্চারণ রোজোন— ওজন)

কামড়ি/কামটি মেরে থাকা — কোনও কিছু নাছোড় ধরে থাকা বা আঁকড়ে পড়ে থাকা, কোনও কিছুতে অনড় থাকা (যেন কামড়ে ধরে থাকা!)।
কুটুম্বসাক্ষেৎ/কুটুম্বসাক্ষাৎ — লোককুটুম্ব, আত্মীয়স্বজন। হ্যাঁ, ওদের কাজে অত নোক হবেনে!— ইমনি কুটুম্বসাক্ষেতের তো গাদা!
কুমদুনি — নাচন-কোঁদনের 'কোঁদন' যেন। অত কুমদুনি কিসির, অ্যাঁ!
কুঁড়ুক — ছত্রাক, ব্যাঙের ছাতা, 'মাশরুম'।
কেইরে কেইরে হাঁটা — পা ফাঁক করে করে হাঁটা (সচরাচর 'কোলভাগে' রগরগে ভাব থাকলে)।
কেজরাকেজরি — বিতিকিচ্ছিরি। ওদের বের দিন এত বিষ্টি— সে কেজরাকেজরি অবস্তা!
কেদ্‌রে পড়া/যাওয়া — কাতর হয়ে পড়া/যাওয়া। মাচগুনো এগবারে কেদ্‌রে গেচে! এই ওদে বেলাভর মাটি কেটে কেদ্‌রে গেচে এগবারে! (ওদ রোদ)

খপ্পুরি — ছোটখাটো চেহারার চটপটে মহিলা। পুংলিঙ্গে খপ্পুরের চল আছে, তবে কম।
খানধাবড়ে — (সচরাচর গরু সম্বন্ধে প্রযোজ্য) বেয়াড়া। খোঁটাটা না তুলতি তুলতি এমন ছুট নাগালো!— এমন খানধাবড়ে গরু, ধরে আকে কার সাধ্যি!
খুচো — খুচরো। খুচো থাগলি আর দিই না! এট্টু দাও খুচো।
খুঁদির ভাত — খুদের ভাত, ভাঙা-ভাঙা চালের ভাত, সচরাচর কড়াইতে বসানো হত/হয় ডাল ছড়িয়ে, আলু ভাতে দিয়ে, লবণ-সহ গায়ে-গায়ে ফ্যান মেরে অর্থাৎ ফ্যান ঝারা বা ফ্যান গালা হয় না।

গড়াভুজো — চালের সঙ্গে গোটা-গোটা মুগ কড়াই সহযোগে লবণ-সহ গায়ে-গায়ে ফ্যান মারা ভাত, সচরাচর কড়াইতে করা হত।
গাডার — গার্টার থেকে। হাতে গাডার দিচিস কেন, অক্ত জমে যাবে ন্যায়।
গা ত্যাড়ব্যাড় করে ওটা — গা-গুলোনো, বমি-বমি ভাব।
গান্ডি পিটে গেলা — ঠেসে খাওয়া।
গুপোনা — যেখানে গু অর্থাৎ পায়খানা ফেলা হয় বা পায়খানা করা হয়। একইভাবে মুতপোনা যেখানে মোতা হয়, অর্থাৎ পেচ্ছাপ করা হয়। 'ঢেঁকুস-কুকুস কী মাচ ধরি' ছড়ায় শেষে মতামত নেওয়া হয়, সোনাপোনায় পড়বি, না গুপোনায়? বলা বাহুল্য, গুপোনায় কে আর পড়তে চায়, বারবার সোনাপোনাতেই পড়তে চাই আমরা।

ঘরযোগের কতা — (উচ্চারণ অনেক সময়ই ঘজ্জোগের) ঘরোয়া কথা, নিতান্ত কোনও এক সংসার বা পরিবারের কথা। এ কি ঘজ্জোগের কতা দেকিচিস, অদ্্বড্ডা কাজ! অদ্্বড্ডা হল অত বড়টা।

চড়কা — বাজ, বজ্র, অশনি। শুদু বিষ্টি হলি তো হত, কী চড়কা পড়তেচে!
চড়িচোট — চটপটে। কাজ পোষ্কার হোক না হোক, চড়িচোট আচে মেয়ে।
চপালি — চোয়াল।
চোবরা/চোপা — মুখে মুখে তর্ক করা।

ছাগল-তাড়ানে বিষ্টি — ক্ষণ-বৃষ্টি, ঝমঝম করে এসে শীঘ্র থেমে-যাওয়া বৃষ্টি।
ছানা লাগা/দাওয়া — ক্ষতস্থানে আঘাত লাগা। কাটাটায় ছানা নেগে আবার অক্ত বেইরেচে!
ছেরাপন — শ্রাবণ।
ছোড় ধরা/গায় ছোড় ধরা — বিরক্ত লাগা।

ঝাল্লে-কুল্লে/ঝাল্লে-মাটি — ময়লা-আবর্জনা/ময়লা-মাটি (সাধারণত ঘর-দোর-উঠান ঝাঁট দেওয়া)।

টটবিটট/টরবিটর — তরবিতর, এদিক-ওদিক। ও বাবা, ওর বাবার কোনো কিচ্ছুতে এট্টু টটবিটট/টরবিটর হবার জো নি!
টেমক (উচ্চারণ ট্যামোক) — দেমাক বা অহংকারময় উচ্চারণ। তোর অত্থ আচে তা আমার কী?— তোর অত টেমক-টেমক কতার কে ধাদ্ধারে রে (ধার ধারে রে)!

ঠেকে-জোড়ে চলা (উচ্চারণ ঠ্যাকে-জোড়ে) — জুড়ে-গেঁথে কোনোরকমে চলা, কোনোপ্রকারে জীবন চলা, কোনো গতিকে মানিয়ে নিয়ে চলা। এ পাটাটা এই মোরশোমটা ঠেকে-জোড়ে চলে যাবে মনে হয়। ওই ঠেকে-জোড়ে আচি সব কোনো পকারে এক সংসারে (মোরশোম— মরশুম। উচ্চারণ পোকারে, সোংসারে)

ডেড় — দেড়, এক এবং অর্ধেক। টাকা নি, বাবা!— এবারে একসঙ্গে ডেড় বিগে জ্যায়গা কিনল! (উচ্চারণ একসোঙ্গে)
ডোক — ডগা। দুটো কুমড়োর ডোক কেটে আনদেন, মাচের ঝোলে ফেলে দিই।

ঢলকা — তরল কাদা বা কোনও কিছুর মিশ্রণ বা মাখা। অত জল দে ফেললি, ও তো ঢলকা হয়ে যাবে— তোর ওই আটা মাকায় উটি হবে! (উটি রুটি)

তামরি পোনা — কোনও মাছের অতি ছোট বাচ্চা।

থাদ্রিখেকো হওয়া — (থাতরি খেকো) তালকানা অবস্থা, কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
থিদ্‌রুতি/থিত্‌রুতি না দাওয়া — থিতু হতে না দেওয়া।
থোঁতা মুক ভোঁতা — বাগাড়ম্বর বন্ধ হওয়া, আক্কেল গুড়ুম।
থোবাড়ি দাওয়া — বকে ওঠা, কিছু বলার প্রেক্ষিতে দু-কথা শুনিয়ে দেওয়া। আরে, সে উলটোপালটা বকতি শুরু করেচে, এমন থোবাড়ি দিচি, শেষে আমড়া খাই-টক খাই কত্তেচে।

দবা — দফা। খাবার দবা তা ইতে দেলে!
দামচি মারা — কোল-কাঁধ ইত্যাদিতে বসে-বসেই ধাক্কা দেওয়া (সচরাচর বাচ্চারা)। কোলে বইচিস বইচিস, তা ওরম দামচি মাত্তিচিস কেন!
দাঁত-খামটি মারা — উপর ও নিচের পাটির দাঁতে দাঁতে আটকে রাখা।
দিকি — দিকে। এই জষ্টি মাস অব্দি দেনা শোদ করে দোবো, তারপর শকের দিকি যাব। (শক— শখ)
দুরমো/দুম্মো — (উচ্চারণ দুর্মো) ডাব ও নারকেলের মাঝামাঝি অবস্থা, 'ফুল ডাব' নয় আবার জলও নড়েনি এমন শাঁসে-জলে অবস্থা।

ধরঙ্গা করা — বৃষ্টির সাময়িক ধরা বা বন্ধ হওয়া, বৃষ্টির সাময়িক বিরতি। একন বেইরুনি, বড্ড জোরে বিষ্টি হচ্চে, এট্টু ধরঙ্গা কল্লি বেইরো।
ধরুনে/ধরুনী — হওয়ার সময় বাচ্চা ধরেন যিনি অর্থাৎ প্রসব করান যিনি।
ধেউড়ে — অনেকখানি লম্বা জায়গাজুড়ে অবস্থিত, লম্বা, বড়সড়ো। ধেউড়ে গোল (গোয়াল), ধেউড়ে ঘর।

নরমি ভাব — (উচ্চারণ নর্মি) আবহাওয়া খুব গরম না থাকা। বাবা, দু-দিন ঝা গরোম পড়েছেল! আজ এট্টু নরমি ভাব আচে।
নাতকুড় — নাতি বা নাতনির ছেলেমেয়ে।
নিল্লয় — নির্ণয়। সেকেনে তা নোকের নিল্লয় আচে তাই! অর্থাৎ এত লোক হয়েছে, নির্ণয় করা মুশকিল।
নিয়তক ( বেশির ভাগ সময় উচ্চারণ নিয়োতোক) — শব্দ নিয়ত। নিয়মিত। নিয়োতোক তুই নেশা করে এসে অশান্তি করবি, মানুষ কত সজ্য করবে রে?
নিষকে নিষকে দেকা — গোপনে দেখা, না জানতে-দিয়ে দেখা।
নুড়কে — বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। লেড়ক/লেড়কি থেকে কি? নুড়কে ছাবালপন থাকলি বাপ-মার হাতের ফাইফুটকি এট্টু করে না, হ্যাগো?
নোগুদো/নকুতো — বিয়ে, অন্নপ্রাশন ইত্যাদির নিমন্ত্রণে দেয় অলঙ্কার, জামাকাপড় প্রভৃতি। অনেকসময় এটাকে 'দেনা'ও বলা হয়ে থাকে— দেক না, পরপর দুটো বে-বাড়ির দেনা পড়ল! দেনা করে নিমন্ত্রণ রক্ষা করা থেকেও এমন চল হতে পারে।

পব্ব (উচ্চারণ পব্বো) — ব্যাঙ্গে সচরাচর, অর্থ কাণ্ড বা রঙ্গ। পর্ব থেকে।
পরিবার — স্ত্রী। বড় পরিবার— ঁলতিকা মণ্ডল, ছোট পরিবার— বৃহস্পতি মণ্ডল।
পাগলানো/পাকলানো — ঠিকমতো দাঁত না থাকলে নেড়েচেড়ে খাওয়া। এট্টু কচি দেকে দুটো ডাঁটা দিলুম, দেকো পেগলে পেগলে ঝেদি খেতি পার। (ঝেদি/ঝদি— যদি)
পাড়া-পতিবেশী — (উচ্চারণ পোতিবেশী) পাড়া-প্রতিবেশী, পাড়ার লোক তথা প্রতিবেশী।
পাদলা/পাতলা — শাপলা। পুকুট্টায় কেরম পাদলার/পাতলার ফুল ফুটেচে দেক! (পুকুট্টা—পুকুরটা)
পাদা — বায়ুত্যাগ করা, বাতকর্ম করা। পাদে কী দুর্গন্দ/দুগ্গন্দ, হেগে আয়-হেগে আয়।
পুরষাপুরষি — পুরুষের পর পুরুষ, কয়েক পুরুষের, কয়েক প্রজন্মের। ও জমি আমরা পুরষাপু্রুষি চাষ করে আসতিচি। 'পুরষাপুরুষ ধরেও' চালু।
পেঁইপা — পেঁপে।
পোতা — উঁচু জায়গা, বনেদ বা বনিয়াদ, ভেঙে-যাওয়া বা বিনষ্ট ঘরের উঁচু স্থান। ঘরের পোতায় কুমড়ো গাচ দিছিলুম, কী গাচ হয়চে রে!

ফাইফুটকি করা/ফাইফরমাস খাটা — ছোটখাটো হাতের কাজ করা, তেমন কাজের ফরমায়েশ পালন করা। বাড়িই নুড়কে মেয়ে থাকলি মার হাতের দু-এট্টা ফাইফুটকি করে না, বলো!
ফাবরি মারা — শাসনের গলায় হেঁকে ওঠা।
ফিচকিরি — পিচকারী।
ফুতি মারা — কানভাঙানি দেওয়া, কারও সম্বন্ধে বিরূপ কথা বলা বা ভাসিয়ে দেওয়া। না-না, তারা কেটে দেচে— কে নাকি ফুতি মেরেচে, এট্টা ছাবালের সঙ্গে ওর ভালবাসা আচে বলে।
ফেইদে পড়ে থাকা — অসমাপ্ত এলোমেলো পড়ে থাকা।

বচর খোঁড়া করা — কোনও মরশুমি ফল-মূল-মিষ্টি বছরে অন্তত একবার খাওয়া বা প্রথম খাওয়া (কোনও মরশুমি কাজ বা কৃত্য ওই রকম করা বা নিয়ম মানা ইত্যাদির বেলাও)। এবার একদিন বাজার থেকে নিচু আনবে, বচর খোঁড়া করা হলুনি একনও— ঝা গরম পড়েচে ক'দিন থাগবে তার ঠিক নি!
বাওয়ানো — ছোড়া, ছুড়ে দেওয়া। তুই বাওয়া না/বেইয়ে দে না, আমি নুপে/নুবে নিচ্চি (নুপে/নুবে— লুফে)।
বিকেবেলা — বিকেলবেলা, বৈকাল।
বিজনা-শয্যা — শয্যাগত। সে তো এগবারে বিজনা-শয্যা হয়ে গেচে! (বিজনা— বিছানা)
বিলেট/বেলেট — ব্লেড। সুতোটা খুব শক্ত, এট্টা বিলেট আনদেন, কাটি।
বেচেনারি — যা বা যাকে আর চেনা যাচ্ছে না/যায় না।
বেড় খেলা — প্যাঁচ কষা, সরাসরি উত্তর না দিয়ে বা কাজ না করে ঘুরিয়ে উত্তর দেওয়া বা কাজে অবহেলা করা। এক কতায় বলবি পারবিনি, অত বেড় খেলার কী আচে রে!
বুঁজো বেঁদে আকা — কাপড়, কাগজ বা অন্য কোনো কিছু তালগোল পাকিয়ে, মুড়েমেড়ে গুঁজেগেঁজে রাখা। বুঁজো দাওয়া — কাপড়, কাগজ বা অন্য কোনো কিছু তালগোল পাকিয়ে বা 'নুটি করে' ফুটো বা ফাঁকফোকর বন্ধ করা।

ভগলস/ভগলাস/ভগলোস/ভোগলাস — পোশাক-আশাক অথবা পর্দা, চট ইত্যাদিতে গর্ত বা ছেঁড়া জায়গা।
ভাঙুর/ভাঙর — পথ, উপায়। শেষে উদ্ধুশ্বাসে পালাতি ভাঙর পায় না!
ভাসপো — ভাসুরপো, ভাসুরের ছেলে।
ভোঁক — মূলত পাদ বা বাতকর্ম করার শব্দ বোঝাতে। ঝ্যাত/ঝত (উচ্চারণ তো) বলবি বল/পোঁদের তলায় দে গল,/ভোঁক করে পেদে দোবো/গিলতি গিলতি চল।
ভোঁট — ভোট (vote), নির্বাচন।

মড়াঞ্চে — একাধিক বার বাচ্চা হয়ে হয়ে মারা যাওয়া।
মন-মন দেকা — মনে মনে দেখা, না জানিয়ে দেখা, গোপনে দেখা।
মাচের পোনা — কোনও মাছের বাচ্চা।
মিন্তুখেনি/মিন্তুখানি — একটুখানি, অতি সামান্য। বেশি দিতি হবেনে, মিন্তুখেনি দেনা, খাই।
মোগড়া — প্রথম, সামন অর্থাৎ সামনে। মোগড়া-চটা — প্রথমটা চটে যায় যে। ও মোগড়া-চটা হলি কী হবে, মনটা সাদা। মোগড়া নাওয়া — সামনে থেকে মোকাবিলা করা।

রগ্‌ড়ে দগ্‌ড়ে জীবন যাওয়া — কোনো প্রকারে বেঁচে থাকা, কায়ক্লেশে জীবনধারণ করা, কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটা। সকালবেলা উটে মনে হয় না আর কলকেতায় যাই, মনে হয় পড়ে পড়ে ঘুমুই— কী করব, রগ্্ড়ে দগ্্ড়ে জীবন যায়!

লেতোনো — (লেথোনো, লাথি থেকে) একাধিক বার লাথি মারা।

শত্তুর ও মউত্তুর — শত্রু ও মিত্র বা খুব ভাল।  না রে বাবা, কেউ শত্তুর কেউ মউত্তুর।— সবাই কি আর খারাপ হয়! মহত্তর থেকে? তা হলে, অনবদ্য এই নিজের মতো করে নেওয়া।
শানা — কার্যকর হওয়া, সারা, উপশম হওয়া। থালি ও ওষুদি তোর শানবেনে, তুই বরং অন্য এট্টা ডাক্তার দেকা।

সিড়িঙ্গে — হালকা লম্বা চেহারার।
সিঁইটে যাওয়া — সিঁটিয়ে যাওয়া, সেঁটিয়ে যাওয়া। খিদে প্যায়চে, মুড়ি ক'টা খাব, তা সে মুড়ি এমন সিঁইটে গেচে...!
সেদনে — সেদিনে।
সোঁটা — সোডা। আর এক হয় লাটিসোঁটা-র সোঁটা, অর্থাৎ লাঠিজাতীয়।

হাতছানা — মাছ ধরার বিষয়ে। মূলত হাতের সাহায্যে মাছ ধরা, কাপড় বা ছাগনি জাল ইত্যাদির সাহায্যে হতে পারে।
হিল্লেট — রাশি, মজুত। অত বড় কাজ করবেনে কেন, পয়সার হিল্লেট হয়ে গেচে ন্যায়। পয়সার হিল্লেট করে নেচে ন্যায়-ও চলে।
হেইদে মরা — হেদিয়ে মরা।
হৌসির মারি — ঢালাও, গড়পরতা।
হ্যাল নাওয়া — হেলা থেকে। হেলে পড়া, ঈষৎ হেলে যাওয়া, কোনও পক্ষের দিকে ঝোঁকা।

====================

অরবিন্দ পুরকাইত 
গ্রাম ও ডাক — গোকর্ণী,
থানা — মগরাহাট,
জেলা — দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী