বঙ্গজীবনে দুর্গোৎসবের আবেগ, আনন্দময় অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আকাশবাণী কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত মহিষাসুরমর্দিনী। অনুষ্ঠানটি অবশ্য বহুদিন থেকে আমাদের কাছে মহালয়া বলেই প্রতীয়মান হয়ে আসছে। ওই দিনটিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয়ে, দেবীপক্ষের আগমনবার্তা ঘোষিত হয়।
সেই কিশোরবেলা থেকে দেখে আসছি মহালয়ার অনুষ্ঠানটি শোনার জন্য বাঙালির ঘরে ঘরে ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রাখা হতো। ভোর চারটে থেকে ঘরে ঘরে রেডিও বেজে উঠলে মনে হতো, সত্যিই পুজো এসে গেছে। বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র মহাশয়ের আবেগমথিত কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের ভাষ্যপাঠেই ঘোষিত হয়ে যেত মা দুর্গার আগমন বার্তা। বানী কুমার মহাশয়ের কালজয়ী ভাষ্যরচনা এবং সঙ্গীতের অংশে অসামান্য সুরের আয়োজনে ছিলেন আর একজন প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ও সুরকার পঙ্কজ কুমার মল্লিক। সুপ্রীতি ঘোষের কন্ঠে 'বাজলো তোমার আলোর বেণু, দ্বীজেন বাবুর কন্ঠে জাগো দুর্গা সহ আরও অনেক গান আজও আপামর বাঙালির মুখে মুখে ফেরে।
সত্যি বন্ধু, আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে প্রচারিত এই অনুষ্ঠানটি নিয়ে আজও বঙ্গ জীবনে আবেগের অন্ত নেই। তবে ১৯৭৬ সালে এই অনুষ্ঠানটির পরিবর্তে দেবী দুর্গতিহারীনিম প্রচারিত হওয়ায় বাঙালির আবেগে সত্যিই সাময়িক ধাক্কা লেগেছিল।
আর একটি কথা, মহালয়ার ভোরে কোথাও কোথাও উচ্চকিত মাইক্রোফোনে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হলে এর কৌলীন্য আঘাতপ্রাপ্ত হয় বৈকি।
তবে এইসব বিতর্ক সরিয়ে রেখে বলতে পারি, আজও বঙ্গ জীবনে মহালয়া বা মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটির আবেদন এক ভিন্ন অনুভূতি এনে দেয়।
==============
মানস কুমার সেনগুপ্ত, আনন্দ মোহন বসু রোড, দমদম, কলকাতা-- ৭০০০৭৪
চিত্রঋণ ঃ আনন্দবাজার।
No comments:
Post a Comment