Featured Post

নবপ্রভাত পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গ্রন্থ-প্রকাশ : ১। সম্পূর্ণ পত্রিকার খরচে ও ২। পত্রিকার অনুদানে

ছবি
  নবপ্রভাত পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে  গ্রন্থ-প্রকাশ বিষয়ক বিজ্ঞপ্তি ১। সম্পূর্ণ পত্রিকার খরচে এক ফর্মার ১০টি পুস্তিকা : এই প্রকল্পে লেখক-কবিদের থেকে কোনো খরচ নেওয়া হবে না।        পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বইগুলি প্রকাশিত হবে। লেখক/কবিকে সশ্রদ্ধায় সৌজন্য সংখ্যা দেওয়া হবে।       যাঁদের আগে কোন বই হয়নি , তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। নতুনদের উপযুক্ত লেখা না পেলে বাকিদের লেখা নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরিত হবে।       লেখা সকলেই পাঠাতে পারেন। মেলবডিতে টাইপ করে বা word ফাইলে ।   ই-মেল : nabapravat30@gmail.com  (এবং হোয়াটসঅ্যাপেও)। বইয়ের শিরোনামসহ ১৫টি কবিতা বা ১৫টি অণুগল্প পাঠাতে হবে , শব্দ সংখ্যা বা লাইন সংখ্যার বাঁধন নেই । মনোনীত হলে মানানসই বইয়ের ফরম্যাটে যে কটি যাবে রাখা হবে ।       সঙ্গে লেখক পরিচিতি , ঠিকানা , যোগাযোগের ( কল ও হোয়াটসঅ্যাপ )   নম্বর ও এক কপি ছবি দেবেন। লেখক পরিচিতিতে অবশ্যই জানাবেন, এটি আপনার প্রথম প্রকাশিত বই হবে অথবা পূর্ব প্রকাশিত গ্রন্থতালিকা। অনলাইন বা মুদ্রিত পত্রিকা বা সমাজ - মাধ্যমে প্রকাশিত লেখাও পাঠানো যাবে । তবে কোনও গ্রন্থভুক্ত লেখা

গল্প ।। উৎশব উৎসব ।। বন্দনা সেনগুপ্ত

উৎশব উৎসব

বন্দনা সেনগুপ্ত 


"উফ! এত দিনে এবার বোধহয় আমি রেহাই পাবো।"


রাসু বামনী বলে লতু বুড়িকে। ওরা দুজনে ভুসুন্ডির মাঠের একটা আস শেওড়া গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে গল্প করছিল। লতু বুড়ি এক পুরোনো দিনের ভুত, তাতে সে অতশত বোঝেও না। সে শুধু জানে রাসু যা বলে, সেটা ঠিকই বলে।


রাসু নিজের জীবনে ডাকসাইটে সুন্দরী ছিল। সে অবশ্য আজ থেকে তিনশ চারশ পাঁচশ ছশ বছর আগের কথা। কত, সেটা গুণে বলতেও পারবে না। কিন্তু, রূপের গুমরে যে পা পড়ত না, সে কথা বেশ মনে আছে। সেদিনের নিয়মে বোধহয় বছর চারেক বয়েসেই বিয়ে হয়েছিল। আরও ক' বছর পরে শ্বশুর ঘর করতে গিয়েছিলেন। যেমন আজ, তেমন সেদিনও মেয়েদের সুরক্ষা ছিল না। মেয়েরা শুধুই সুন্দর লোভনীয় মাংস, উপভোগ করার বস্তু। সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ছিল কঠিন অবরোধ প্রথা। সেটা অবশ্য ওঁদের অভ্যাস ছিল। ঘরের বাইরে বেরুবার কথা ভাবতেই পারতেন না। যদিও যেতে হত, তাহলে গরুর গাড়ি বা পালকি করে যেতে হত। সঙ্গে পুরুষ সঙ্গী থাকত। তাহলেও, দুশ্চরিত্র জমিদার বা রাজা গজারা ঠিকই লোকের বাড়ির সুন্দরী বউ ঝিয়ের খোঁজ খবর রাখত। সেই রকমই একজনের হাতে পড়েছিলেন রাসু। কিন্তু, ইজ্জত রক্ষা করেছিল গাঁয়ের মেছুনি। সে কিনা ছোট জাত! তাই তার লাজ লজ্জা ভয় ডর সবই কম। বদ লোকগুলোকে আঁশ বটি নিয়ে তেড়ে গেছিল। তারা পালিয়ে বেঁচেছিল। তারপর রাসুকে সে ধমকে বলেছিল যে ইজ্জত বাঁচাতে গেলে দরকারে প্রাণ নিতে তৈরি থাকতে হবে। মিউ মিউ করে আর্তনাদ বা কাকুতি মিনতি করলে কেউ শুনবে না। 


সেই শুরু। রাসু গ্রামের কামারকে দিয়ে একটা খুব ধারালো খাঁড়ার মত দা তৈরি করে সব সময় কাছে রাখতে শুরু করলেন। প্রথমে ভাবনাটা ছিল যে ইজ্জত যাবার আগেই নিজের প্রাণ দেবেন। কার্যকালে দেখা গেল যে অত্যাচারীরা প্রায়ই কাপুরুষ হয়। তারা দা বঁটি খাঁড়া দেখে পালিয়ে বাঁচতে পথ পায় না। শেষে এমন হল যে শুধু নিজের গ্রামের নয়, অন্যান্য গ্রামের মেয়েরাও ওঁর আশ্রয় চাইতে লাগল। উনিও নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে শক্তিশালী করে তৈরি করেছিলেন। ওঁর স্বামী টুলো পন্ডিত হলেও প্রাণের বন্ধু ছিল পরান বাগদি। সেই রাসুকে আক্রমন ও আত্মরক্ষার কিছু কিছু পদ্ধতি শিখিয়েছিল। অবশ্য, দুষ্ট জমিদারের কাজে বাধা দেওয়ায় তার লেঠেলের ছোঁড়া বর্শাতেই রাসুর প্রাণ গিয়েছিল। সে যাক। তাতে রাসুর দুঃখ নেই। দুঃখ এটাই যে শরীরটা মজা খালের নিচে পড়ে রইল, কেউ দেখতেও পেল না। সৎকারও হল না। 


কিন্তু, মরেও রাসু শান্তি পায় নি। এখানে সে দেখেছে, কত মেয়ে অত্যাচারিত হয়ে এখানে আসে। কাউকে বাড়ির লোকেরাই কষ্ট দেয়। কাউকে বাড়ির বাইরের লোক। আত্মীয়রা যখন কষ্ট দেয়, তখন রাসুর যেন পাগল পাগল লাগে। এই তো সেদিন … একটা মেয়ে, চাঁপা, খুব কাঁদছিল। তার সৎ বাবা তাকে নষ্ট করেছে। আর মা কিনা চুপ থাকতে বলছে! কি না সম্মান যাবে! লোকে কি বলবে? মেয়েটা লজ্জায় ঘেন্নায় গলায় দড়ি দিয়েছিল। তারপর এখানে এসে কি কান্না! নিজের হাতে নিজেকে শেষ করা কি চাট্টিখানি কথা! রাসু এখানের প্রতিষ্ঠিত ভুত শিবেকে নিয়ে গেছিল চাঁপার বাড়ি। ওদের জন্য সে এক মজার কথা। শিবে গিয়ে চাঁপার মাকে ভর করেছে। আর, চাঁপার মা গিয়ে চাঁপার বাবাকে গলা টিপে মেরে ফেলেছে। তারপর পুলিশ স্টেশনে গিয়ে ধরা দিয়েছে। কার্য ও কারণ বর্ণনা করেছে। পুলিশ ডাইরি লিখে নেওয়ার পর শিবে যেই চাঁপার মাকে ছেড়ে দিয়েছে সে ধপ করে মাটিতে বসে "আমি কোথায়", "আমি এখানে কি করছি",  "আমি কিছু জানিনা" এই সব শুরু করেছে। ওদিকে লাশের গলায় তার আঙ্গুলের স্পষ্ট ছাপ। রাসু আর শিবে হাসতে হাসতে ফিরে এসেছে। তা নাহলে রাসু ভয় দেখিয়েই কাজ সারে। আগুনের গোলার মত রূপ, আর হাতে খাঁড়া নিয়ে তেড়ে গেলে, সবাই প্রাণ নিয়ে পালায়। 


রাসু যখন বেঁচে ছিল, তখনের কথা আলাদা। তখন দেশে শাসন ছিল না। দেশ বা আইন বলতে কি বোঝায়, তাইই লোকে জানত না। রাজা বা জমিদার বা মোড়ল ভালো হলে, লোকে ভালো থাকত। তারা ভালো না হলে, সাধারণ লোকেদের দুর্গতির শেষ ছিল না। কিন্তু, রাসু তো ব্রহ্মদত্যি ঠাকুরের কাছে শুনেছে দেশ নাকি এখন স্বাধীন হয়েছে (মানেটা অবশ্য রাসু তেমন বোঝে নি)। দেশে নাকি এখন আইনের শাসন। এখন নাকি অন্যায় অপরাধ করে আর পার পাবার জো নেই। রাসু ভেবেই পায় না যে তাহলে মেয়েগুলোর উপায় হয় না কেন! 


তবে আজকের কথা একদম আলাদা। আজকে যে মেয়েটা এসেছে, সেই মেয়েটা যেন আলো দিয়ে তৈরি। প্রথমে কিছুক্ষণ এক জায়গায় ছিল। তারপর সেই আলোর ফুলকিটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে, ছড়িয়ে যাচ্ছে, এক থেকে অনেক হচ্ছে। কি যে হচ্ছে, কেউ বুঝতে পারছে না। এমন সময় শিবে পৃথিবী থেকে ঘুরে এসে বলল ওখানে নাকি কি একটা হয়েছে। সবাই মিলে চলল দেখতে। গিয়ে দেখে রাতের আঁধার আর আঁধার নেই। এমনিতেই বিদ্যুতের আলোয় চারিদিক ঝলমল করে। আজকে সাথে আবার রয়েছে মোমবাতি। কত লোক। মেয়ে। পুরুষ। কত রাত হয়ে গেছে, তাও লোকের যেন ঢল নেমেছে। তারা গর্জন‌ করছে "বিচার চাই"। সবাই শুনল একটি মেয়ের উপর অত্যাচার হয়েছে আর সারা শহর, সারা রাজ্য, সারা দেশ বিচার চাইছে। সেই আলোর মেয়েটি সবার বুকের মধ্যে আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। কেউ আর একা নয়। কেউ ভয় পাচ্ছে না। 


সবাই একসঙ্গে লড়ার জন্য তৈরি। এবার বোধহয় রাসু বামনী বিশ্রাম পাবে, শান্তি পাবে।


পাবে কি???

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী