হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
গোপনে আত্মহত্যা করি
চলো এখন আমরা সবাই গোপনে আত্মহত্যা করি ।সম্পর্কগুলো একসময় ভালবাসার মোড়কে পাশ ফিরে শোবার কথা ভেবেছিল,ভেবেছিল মানুষকে পশু বানানো বাঁ হাতের খেল,আমন্ত্রণ নিমন্ত্রণ সবই বাসনালিপ্ত. ..
ট্রাডিশনালিটির রি মেকিং. ..ফলত: পাতার পোশাকে
আর আধখাওয়া আপেলে একটু স্বস্তির শ্বাস. ..
ফেলবার জায়গা খুঁজছিল ।
আর এদিকে সোনার কাঠি ছুঁইয়ে রূপোর কাঠি ছুঁইয়ে অধুনান্তিকতায় আপডেট চলছিল ,জোরকদমে তবু শেষ রক্ষা হলো না ।
রূপকথার গল্প গুলো চিচিং ফাঁক ...
মস্ত বড়ো ভুল হয়ে গেছে এখন আর উ পায়ে নেই ।
আবরণ অথবা আভরণ কোনো কিছুতেই তাদের বশ করানো যাবে না ....
ভাত ছড়ালে কাক হাজির এসব বস্তাপচা বাক্যে ভবি ভুলবার ন য়,স্থলপথে জলপথে সর্বত্র সাজানো ঝুমঝুমি, সোনালি ত্রিভুজ. ..
সার্কিট চেঞ্জ করতে বেশি সময়ে লাগে না
তবু পাঁচমুড়া ডোকরা বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটির ঘোড়া
ফ্ল্যাটবাড়ির খোপে খোপে কী বিচিত্র আয়নায় ফুটে উঠছে, ডিনার টেবিলে বিসমিল্লাহর পাগলা সানাই ।
অপেক্ষা শেষ হয়ে গেছে বলে যারা গৃহত্যাগ
করেছিল একদিন হেলেঞ্চা আর কচুরিপানার সঙ্গে
তারাও ফিরছে আজ দলে দলে ...
চলো এই সেই প্রকৃষ্ট সময় গোপনে আত্মহত্যা করি. ...
রতিসুখসারে
সবকিছু মূল্যহীন করে এমন এক নতুন জিনিস উপহার দিতে হবে যাতে প্রেমিকার দুচোখ জলে ভরে যায় ,অবশ্যই তা আনন্দাশ্রু অনুমোদনের অপেক্ষা রাখে না।যে সাদা পায়রা সে চিঠি পৌঁছে দেবে ,সে কি জানে প্রেম কাকে বলে ?দিনে দিনে তিল তিল করে জমানো যে মুক্তো কার সামনে উন্মুক্ত হবে তাতো জানার কথা না,ইচ্ছামৃত্যুকে বরণ করাও যা ভালবাসাও ঠিক তাই ।
যে জীবনে রাজভোগ খেল না,সে কি করে বুঝবে
মিষ্টি কতটা ,পূর্ণিমা হবার কামনা বাসনা চাঁদের চিরকালীন অমাবস্যা থেকেই তা বোঝা যায়
বোঝা এক জিনিস আর ভাবা আরেক জিনিস. ..
কিন্তু হয়ে গেলে জ্ঞানী ও নিমেষে মূর্খ হয়ে যায়
পৃথিবীর এই বিপুল আয়োজন সংবিধান
বহির্ভূত বড়ো বিচিত্র এই ভালবাসা, সৃষ্টির কলাকৈবল্য মুখে বললে তার গভীরতা কমে যায়
প্রেমিক প্রেমিকা তাই উভয়েই খুনী যেদিন স্পর্শ করে দেহ, সেদিন ধড়ে আর শরীর থাকে না ,হাতে হাত নেই ...আঙুলে আঙুল নেই, আলিঙ্গনে নেই সে গন্ধরাজ
যাকে তার তিল তিল করে লালন পালন করেছিল সহস্র বছর কত বিনিদ্র রজনী. ..একটি ঢেকিশাল
তুলসীমঞ্চের পাশে,সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি সবই ছিল রতিসুখসারে রহস্যেরঙিন. ...…
আমাদের কবিজন্ম
হঠাৎ এলো মেলো ...
অন্তশব্দবন্ধ এসে ঢেকে দিলো স্বপ্নের বারান্দা, আর কিছু দিনের মধ্যেই কবিজন্ম শেষ হবে সবার ই. হ য় ,পড়ে থাকে খাতায় কলমে মোবাইলে ল্যাপটপে ,কিছু নির্মাণ কৌশল কবিতার মতো কিছু খসড়া, তবু চিঠি আসবে ।
আসবে তোমার আকর্ষণ, অশরীরি ঈশ্বর
একসাথে শূন্যতা বেদনা
তবু লেটার বক্সে পড়ে থাকবে কিছু ফুল কিছু ভুল
কিছু শুভেচ্ছা ভালবাসা, প্রীতি অন্তহীন ....
আসলেই কবিজন্ম শেষ হয়েও হয়না।
বন্ধুর কুশল বিনিময়, তাড়াতাড়ি পাঠাও দুটি কবিতা
অপেক্ষায় আছি, ম্যাটার রেডি
দেরী কোরো না যেন...
অস্তিনাস্তির আশ্চর্য মিলন ,তলহীন অভিসার. ..
এদিকে থমথমে নিস্তব্ধ মেঘ অগোচরে. ...নতুনের ত্রিভুম বিস্তার শেষ হয়েও হ ইলো না শেষ
আমাদের কবিজন্ম ঢাকা পড়ে রয় উপমায় প্রকৃত সংকেতে ...বকুলের ডালে থরেথরে. ..হতবাক আগুনের কাছে. ..তারপর. ..
তারপর অনেক রাস্তা ঘুরে একদিন গোধূলিবেলায় বিপ্লব এসে গেছে, কাঁধে ঝোলা নেই চেনা যায় না
মুখে দাড়ি নেই, নেই পায়ে অজন্তার হাওয়াই ,বসা গাল হাই পাওয়ারের চশমা চুলে জট কিচ্ছুটি নেই
হাঁটা চলার ধরন কথা বলার অ্যাকসেন্ট, সে বলে কুশল কথা ,শুনি আর হজম করি অনন্ত বিষাদ. ..
ঘটন অঘটন জাতপাত দাঙ্গায় অদম্য মানবতা ঘুড়ি
কতিপয় আকাশে ওড়ে ওড়েনা ,হতবাক হয়ে আগুনের কাছে যায় ,স্পর্শ করে স্বাধীনতা দিবসের গান গায়,ধ্বনি থেকে প্রতিধ্বনিত হ য় গগনবিদারী প্রেম,তারপর অনেক রাস্তা ঘুরে একদিন শেষতম ট্রেন ধরে বিপ্লব এসে দাঁড়ায়, আমি তাকে বলি সময় আছে তো দুটো ডাল ভাত খেয়ে যেও
সে বলে কুশলকথা সমাজের খবর নেয়
এখন আর হাওয়াই চটি নেই
গালে তিন মাসের না কামানো দাড়ি নেই
মলিন ঝোলায় কোনো ইস্তেহার নেই
মিথ্যে কেন দোষ ধরি ছাপোষা বিপ্লবীর
বিপ্লব আসবে কোনও না কোনও দিন আসবেই
এই বিশ্বাসে বুক বাঁধি
সেদিন ঠিক দীর্ঘজীবি হবে বজ্রমুষ্টিতে ভর করে ....বুঝতে দিও না
কাউকে কিচ্ছুটি বুঝতে দিও না
যা ছিল বিস্ময় আনন্দের রেশ
চোখের দৃষ্টি প্রত্যেকের আলাদা আলাদা
কিংবা ঘৃণা অপমান ক্ষত অশ্রুহীন আরোপিত
প্রতিশ্রুতি ঝলমলে আলোর দোকান
সব কিছু একদিন ঝরাপাতা কুয়াশা সফর
ধুলোয় ধূসর নীল গোধূলি
এভাবেই একদিন নতুন দিনের গভীরে
জন্ম নেবে রাত সতত জিজ্ঞাসার
প্রাচীন অভিজ্ঞতায় নির্মাণ বিনির্মাণে শব্দহীন জলপথে প্রায় যুদ্ধ লাগে লাগে
আচম্বিতে ভূখন্ড অদৃশ্য হয় প্রবল হাওয়ায় বিষ
বেঁচে থাকা অস্থির বিকল্প যেন আগ্নেয় ব্রুহাহা...
মুখে তে কুলুপ এঁটে মুশকিল আসান যদি পারো
তবে কিছু করো,জীবনের কিছু ফুল আর ভুল নিয়ে
আকাশে ওড়াও,সাবধানে পা টিপে টিপে
ঘূণাক্ষরেও কেউ যেন কিচ্ছুটি টের না পায় ...... শোষিত ও শাসক
মহৎ বেদনার কাছে কিছু খড়কুটো রেখে যায় পাখি
গতি ময়তায় ঠোঁটের কোণে তুলে দেওয়া মাত্র
কিছু খাবার ও পানীয়
পালকের গন্ধ নেয় শাবক
টাঙ্গি ও ভল্ল নিয়ে তখন ওদিকে সামান্য সরে
দাঁড়িয়েছে শিকারী,পাইন গাছের ফাঁকে তাক করে
জানলা দিয়ে তাকে দেখছে মানমতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কচি কাঁচাদের দল
দূরের নীল আকাশ পুটুস ঝোপ জঙ্গলের শাল মহুয়া তখন চোখ টিপে হাসছে. ..
লোকে বলে যুগে যুগে এই সব হয়
বর্ণভেদে দেওয়াল ও দালান
ময়রা ও মহাজন,শোষিত ও শাসক ....... তবুও মানুষ কিছু চিহ্ন রেখে যায় পথে আলপথে হাজার হাজার বছরের পর প্রতিশোধ নেবে বলে ...
মেঘের আড়াল থেকে
তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো পাঁচমাথার মোড়ে
বাজিয়ে চলেছো পুরনো হারকিউলিক্সের ক্রিং ক্রিং ক্রিং. ..সে যে এখানে এখন থাকে না ...
মেঘের আড়াল থেকে লক্ষ্য রাখছে কেউ
দিন নেই রাত নেই অসার গোধূলি নেই
সে যে এখন বাড়িতে থাকে না
জানলার পর্দা সরিয়ে কেউ জলে ভাঙা য় কেউ
অফিস আদালতে এত সিসিটিভির দৌরাত্ম্য
পথে ঘাটে অলিতে গলিতে, ভাল্লাগেনা
একটু যে নিজের মতো হাঁটবে নিজের পছন্দ মতো
কিছু করবে ,পিছু ফিরতেই কেউ উঁচিয়ে আছে ভল্ল
যাকে প্রাণের কথা বলা যায়
বিশ্বাস করতে পারা যায়
সে ই যখন তীর ধনুক তোলে , একটু শ্বাস ফেলবার জো নেই এত খুন খারাপি এত হিংসা ক্রোধ
এতোই মজ্জায় মজ্জায় পশুত্ব, জলে কুমীর ডাঙা য়
বাঘ ,হায়নার হিসহিস, সারাক্ষণ লক্ষ্য রাখছে কেন কি পোশাকে চুলে খোপা না বয়কাট ...ভাল্লাগেনা. ..
মন বিষিয়ে যায়, আর একবার মন বিষিয়ে গেলে
কোনো কিছুতেই....
অথচ তুমি কি এখনো দাঁড়িয়ে আছো পাঁচমাথার মোড়ে, সেরকম ই বাজিয়ে চলেছো ক্রিং ক্রিং ক্রিং... দিন নেই রাত নেই শীত গ্রীষ্ম নেই...
তবে থাক, এটুকুই তার জন্য সারা জীবনের আনন্দ হয়ে থাক.......
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন