Featured Post

ছোটগল্প ।। চাঁদনী রাতে তাজমহল ।। দীপক পাল

 

চাঁদনী রাতে তাজমহল

দীপক পাল

 


              সালটা ছিল ১৯৬৯ এর অক্টোবর মাস। পূজোর ছুটিতে আমরা জন গিয়েছিলাম সিমলা বেড়াতে। কালকা থেকে টয় ট্রেনে চেপে সিমলা পৌঁছেছিলাম। এত সুন্দর আর রোমাঞ্চকর সে জার্নি, যে মুগ্ধ হতে হয়। সিমলার ম্যাল অতি সুন্দর আর গোটা ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বড়। ম্যালে খুব বানরের উৎপাত। ম্যাল থেকে চারিদিকের দৃশ্য, বিশেষত উত্তর দিকে অনেক স্নো-পীক দেখা যায়। সে দৃশ্য দেখলে মুগ্ধ হতে হয়। কিন্তু আমাদের দুই বন্ধু প্রচন্ড ঠান্ডায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই মাত্র তিনদিন সিমলায় থেকে আমরা কালকা ব্যাক করে অনেক কষ্টে মাত্র দুটো দিল্লী যাবার জেনারেল সিট কালকা মেলে জোগাড় করতে পারলাম। সেই সুবাদে আমরা সবাই ওই রিজার্ভ কামরায় উঠতে পারলাম। এখন এটা সম্ভব কিনা জানিনা। সেদিনের রাতটা আমরা কত কষ্ট করে যে দিল্লী পৌঁছেছিলাম সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। যাই হোক দিল্লী স্টেশন থেকে বেরিয়ে আমরা  দুটো ট্যাক্সি ভাড়া করে কেরল বাগের কাছে মন্দির মার্গে, কালী মন্দিরে এসে নামলাম। 
              কিন্তু কালী মন্দিরে থাকার কোন জায়গা পাওয়া গেলনা। সুখেন্দু বাবু কলকাতা থেকে মানি অর্ডার করে থাকার জন্য টাকা পাঠিয়েছিল, এখানে সেই রসিদটা দেখাতেই আমাদের থাকার একটা ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ করে দিল। তবে দুদিন পরে। আর বললো, 'পরশুদিন হিন্দু মহসভাতে একটা ঘর দেওয়া হবে, কিন্তু আজ আর কাল রাতটা হলঘরে আপনাদের কাটাতে হবে একটু জায়গা করে নিয়ে। এমনিতে আর কিছু অসুবিধা নেই। স্নান খাওয়া বাথরুম সবেরই ব্যবস্থা আছে।
            বাইরে ট্রাভেলার বাসগুলো একদিন দুদিন ঘোরাবার জন্য ডাকাডাকি করছে। আমরা দুদিনের জন্য একটা বাস বুক করলাম। তারা ঘোরাবে মথুরা, বৃন্দাবন, আগ্রা, ফতেপুর সিক্রি। লাইন দিয়ে একে একে স্নান করে নিলাম। তারপর খাওয়া, ওপরে পাত পেরে। খাওয়ার মান বেশ ভালই। মাল্পত্রগুলো বাসের ওপর তুলে দিয়ে বাসের ভিতরে সিট দখল করে বসলাম। বাস ছাড়ল।
            সব দেখার পর আমাদের বাস প্রায় রাত দশটায় তাজমহলের কাছে তাজ রেস্টুরেন্টের গায়ে দাঁড় করাল। আমাদের গাইড বললো, ' এই রেস্টুরেন্টের ভেতরে গিয়ে লাইন দিয়ে কুপন কেটে খেতে হবে। আর যদি আপনারা তাজমহল দেখতে যান, তবে এসে আর খাবার পাবেন না।' ব্যাস, আমাদের দুই লিডার শ্যামল আর সুখেন্দু বাবু তৎপর হয়ে উঠলো। ' এই তোরা বাস থেকে নেমে যে যার মালপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাক।' শ্যামল মাল্পত্রগুলো নামাচ্ছিল নিচে দাঁড়িয়ে, আর সুখেন্দু বাবু কুপনের জন্য রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। পরের দিন ছিল লক্ষী পূজো তাই আমার বুটোর মতলব ছিল আলাদা। এই ভরা জ্যোৎস্নায় দুচোখ ভরে তাজমহল দেখবো না? খাওয়াটাই বড় হলো? যদিও খিদে পেয়েছে খুব, তাই বলে ......  আমি আর বুটো বাসের সিঁড়ি থেকে এক লাফে নিচে নেমে সবেগে ছুটে গেলাম তাজমহলের টানে। গিয়ে দেখি জনসাধারণের সুবিধার জন্য লম্বা লম্বা বাঁশ লাগিয়ে এঁকে বেঁকে কাউন্টার পর্য্যন্ত নিয়ে গেছে। যাতে ধাক্কা ধাক্কি না হয়, নির্বিঘ্নে পর পর কাউন্টার অব্দি পৌঁছতে পারে। এত রাতে কাউন্টার বন্ধ।  আমরা বিশাল গেটের কাছে গেলাম। দেখি দরজা খোলা। যেন এক আশীর্বাদ আমাদের প্রতি ভগবানের। আমরা চট করে ভেতরে ঢুকে সামনের বড়ো উঁচু ঢাকা চাতালে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। সামনে তাজমহল। আহা কি দেখিলাম, জন্ম জন্মান্তর ভুলিব না কভু। চিরটা কাল স্মৃতিতে রয়ে যাবে। জ্যোৎস্নার মায়াবী আলো ছড়িয়ে পড়েছে তাজমহলের গায়ে। আবার আমরা লাফ দিয়ে নামলাম নিচে তাজমহলের দিকে। নেমে এক দৌড়ে তাজমহলের সিঁড়ি ডিঙিয়ে ওপরে উঠে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম তাজমহলের চাতালে। কারা যেন পিছন থেকে বলছিল, ' মৎ যাইয়ে, মৎ যাইয়ে, অভি ফটক বন্ধ হো যায়েগা।এরকম ভাবেই একটু আগে শ্যামল অশোকদের ডাক শুনেছিলাম ' যাস না যাস না, খাবার কিন্তু পাবি না।কিন্তু আমরা যে দেখার নেশায় ছুটেছিলাম তখন। দেখেছিলাম  আকাশ ভরা চন্দ্র তারার নিচে জ্যোৎস্নায় ভেজা তাজমহলের ঝক ঝকে রূপ যা সত্যিই অকল্পনীয় সৌন্দর্য্য। ভারতের পরাধীনতার সুযোগে ব্রিটিশরা আসল বহু রঙে রঙিন অতি মূল্যবান রত্নে খচিত মনি মানিক্য লুণ্ঠন করে তার পরিবর্তে নকল পাথর বসিয়ে দেয়। কিন্তু এই নকল পাথরে চাঁদের আলো পড়ে কেমন জ্বল জ্বল করে চতুর্দিকে আলো ছড়িয়ে দিয়েছে, আসল রত্নে যে কিরকম দেখাত তা সহজেই অনুমেয়। এমনি এমনিই কি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হয়েছে তাজমহল।
            হঠাৎ দেখি ফটকের ভিতরে যেন কয়েকটা ছায়ামূর্তির নড়াচড়া। মনে হয় ছায়ামূর্তিগুলো এদিকে আসছে। কাছে আসতেই দেখি আমাদের টিমেরই বাকি ছজন। ওদের মুখেও যেন মুগ্ধতা গ্রাস করেছে। গুন গুন করছে তারা পরস্পরে। সবাই আমরা বসে চুপচাপ। কিন্তু বেশিক্ষণ না, দুজন প্রহরী আমাদের এখুনি বেরিয়ে যেতে বললো এই বলে যে তারা ফটক বন্ধ করে দেবে। বেরিয়ে এলাম সবাই। আট বন্ধুর কারো মনে কোনো খেদ ছিল না সেদিন অভুক্ত থেকেও, কারণ তাদের পাওনার ভাগ যে অনেক বেশী ছিল।

 

----------

 

Address : -

---------

Dipak Kumar Paul,

DTC Southern Heights,

Block-8, Flat-1B,

Diamond Harbour Road,

Kolkata-700104.

Mb: 9007139853

 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী