Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

সিনেমা রিভিউ ।। ছবি : বহুরূপী, পরিচালক : রাজাদিত্য ব্যানার্জি ।। আলোচনা : জয়শ্রী ব্যানার্জি


                     
বহুরুপী অর্থাৎ বহুরূপ যার। । ঈশ্বর তো সর্বশ্রেষ্ঠ বহুরূপী । তাঁকে আমরা সাধনার মাধ্যমে শক্তির আধার হিসাবে বহুরূপে পাই ।আবার মানুষের কত রূপ!  ভালোমানুষের মুখোশের আড়ালে এক জঘণ্য চরিত্র । কিংবা কারো বাহ্যিক সৌন্দর্য এর আড়ালে কুৎসিত মন ।
 সমাজের বিভিন্ন দিকে বিভিন্ন বিষয়ে আমরা তাদের গিরগিটি রূপে দেখা পাই । সময় ঠিক বুঝিয়ে দেয় তাদের বহুরূপতা । তারা বহুরূপী ।
তবে এখানে   সমাজের এক শ্রেণির অবহেলিত ও প্রান্তিক শিল্পীদের ও একইসঙ্গে একটি সুপ্রাচীন শিল্পের পতনোন্মুখ অবস্থা এবং তাকে রক্ষার প্রয়োজনীয়তার সম্পর্কে কিছু কথা আলোচনা করবো।

আমরা যারা জেলার মানুষ গ্রামে মফস্বলে বড়ো হয়েছি তারা অবশ্যই বহুরূপী শব্দ বা এই কালচারের দের সাথে পরিচিত আছি । বৃহস্পতি বার বাদ দিয়ে ( গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে সাধারনত বৃহস্পতি অর্থাৎ লক্ষ্মী বারে লক্ষ্মী পুজো হওয়াতে তারা ঐ দিন টাকা পয়সা দিতে চায়তো না ) গ্রামে নিয়মিত বহুরূপী আসতো নানা সং এ নানা ঢং এ। ছোটবেলায় বহুরপী দের দেখে ভয় পায় নি এমন মানুষ কম আছেন ।কখোনো দেব দেবী সেজে কখনও বুড়ো মানুষ কি বুড়িমা র ছদ্মবেশে কখনও বাঘ সিংহ ভালুক সেজে কখনও বা রাক্ষস রাক্ষসী ভূত পেত্নী হয়ে ! 
বহুরূপী চলছে আগে আগে পিছনে হৈ হৈ করতে করতে উঠতি ছেলে দের দল । তাকে মাঝে মাঝে এটা ওটা কটাক্ষ মশকরা । সে একবার পিছন ফিরে ওদের দিকে তেড়ে আসছে আর হুড়মুড়িয়ে পালাতে গিয়ে এর ওর ঘাড়ে পড়ছে ছেলেদের দল । কোন বাচ্ছা দুষ্টু খুব ,কে পড়তে বসে না ,খায়না তাদের মা কি বাবা কি কাকা ডেকে আনতো বাচ্ছার কাছে ব্যাস অমনি বহুরূপী দেখে সেই মুহূর্তে জগতের সব থেকে লক্ষ্মী শান্ত ছেলেটি কি মেয়েটি ! দেব দেবীর রূপ ধরে সেজে  এলে বহু বয়স্ক মানুষ তাদের প্রণাম করতেন ।টাকা পয়সা কাপড় কি আনাজপাতি,চাল যে যেমন  পারতো দিত । এমনি করেই বছরের পর বছর চলেছে  তাদের পেশা বা শিল্প ! 

 বর্ধমান , বীরভূম বাঁকুড়ার অনেক জায়গাতেই এই বহুরূপী দের আখড়া। ঢুঁ মারলে দেখা যায়  খড়ের চালের গায়ে লাগা লাল মাটির ঘর কারো এক টুকরো দাওয়া । চলছে বহুরূপী দের ঘরকন্না । এরা নিজেদের লোক শিল্পী বলেন । বাস্তবিক এটা লোক শিল্পের ই অংশ ।  এই শিল্প কার্যের মধ্যে ফুটিয়ে তোলেন তাঁরা শিল্প নৈপুণ্য। এখানে তাঁদের  এক শিল্পী মনের পরিচয় পাওয়া যায় । 

সরকারি সার্টিফিকেট অনুযায়ী এরা এস টি ক্যাটাগরির। নিজেদের এরা বেদ বা ব্যাধ জাতি বলে মনে করেন । বিভিন্ন জায়গায় এঁদের বিভিন্ন পদবী যেমন বিষ্ণুপুর গেলে পাখমারা অর্থাৎ পাখি মারতো যারা মানে ব্যাধ জাতি আবার বিষ্ণুপুর আখড়াতে রায় আবার মুর্শিদাবাদে রাই বীরভূমের শীতল গ্রামে বাজিকর আবার ওই জেলার বিষয়পুর, নাওতারা তে  চৌধুরী।
রোজগার তেমন হয় না ।যা হয় কিছু সংসার এর জন্য রেখে কিছু পেশাগত দরকারে সাজের ড্রেস মেকাপের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হয় । তবে বেশির ভাগ জন নিজেরাই  নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস বানিয়ে নেন নানা রকম  ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে ।সেগুলো সুন্দর ও মানানসই হয় বেশ ।
বহুরূপী সেজে গ্রামে, গঞ্জে, মন্দির চত্বরে বা শহরের কোথাও আনাচে কানাচে ঘোরার সাথে সাথে 
 কখনও কোনো শোভা যাত্রা তে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে  অংশ নিয়ে , ঘোড়া নাচের সাথে  চটুল ছন্দে নিজেদের তৈরি  মাদকতায় ভরা উপভোগ্য দেশজ বাজনা বাজিয়ে ,কখোনো বা মধু সংগ্রহ করে কখনও বা বসুয়া গরু কি  ষাঁড় ( যে গরু কি ষাঁড় এর পিঠ বা কুঁজে অতিরিক্ত ঝুলন্ত অংশ থাকে এবং কোথাও  লোক বিশ্বাস অনুযায়ী শিবের বাহন মানা হয়) দেখিয়ে রোজগার করে । বীরভূমের শীতল গ্রামে গেলে দেখা যায়  এমন । আবার কেউ কেউ টুকটাক চাষ আবাদের কাজেও যুক্ত থাকেন ।


তাদের মধ্যে নিরক্ষরতার সংখ্যা ও আছে বেশ ! তবে তাঁরা এখন বুঝেছেন শিক্ষার সাথে একটা সম্মান এর ব্যাপার আছে ।তাই এই সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকেই এখন স্কুল কলেজ মুখী হচ্ছেন।
বর্তমান আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায় এই শিল্প এক সংকট ময় পরিস্থিতি তে দাঁড়িয়ে প্রায় বিলুপ্তর পথে । এই সম্প্রদায় তাই খুব উদ্বেগে ও হতাশ হয়ে এই শিল্পকার্য ত্যাগ করছেন ছেন।
এদের কথা সামনে এনে বা এদের জন্য কাজ করে এই শিল্প বাঁচাতে  সাহায্য করতে পারেন কোনো  সংস্কৃতিমনা, ঐতিহ্য সচেতন মানব বা শিল্প দরদী মানুষ কি শিল্পী সম্প্রদায় বা সমাজ ।নাহলে এই গৌরব ময় শিল্প অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং শুধুই গল্পকথায় থেকে যাবে ।

এমনই এক সংস্কৃতিমনা ঐতিহ্য সচেতন ভারত বর্ষের ভিতরে ভারতের আনাচে কানাচে অমৃত কুম্ভের সন্ধানে থাকা হৃদয়বান এক মানুষ পরিচালক রাজাদিত্য ব্যানার্জি  এদের কথা তুলে ধরেছেন পোস্টারভারত ও ফিনল্যান্ডের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত তার ছবি 'বহুরূপী ' Daying art of the Bahurupis of Bengal  ছবিতে ।
তিনি দেখিয়েছেন বাংলার ঐতিহ্য এই 'বহুরূপী শিল্প', নিছক শিল্পের গণ্ডিতেই তার যাতায়াত সীমিত নয়। সমাজ, ধর্ম, আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও ভাষাগত প্রকাশের নানাবিধ ক্ষেত্রগত দিকের সঙ্গে সেটির সংযোজন। বহুরূপীর ইতিহাস কেবল একটি শিল্পের কথা নয়, ওই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের জীবনের ওঠা-পড়ার গল্প, কীভাবে জীবনসংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এই শিল্পীরা তাঁদের প্যাশন অবলম্বন করে বেঁচে আছেন,এখন ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছে এই শিল্প এবং তার সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের জীবন । 
ছবিতে তা তুলে ধরার সত্য ঘটনা পাওয়া যায় তাঁর ছবিতে । 
একইসঙ্গে এই ইতিহাস এক বিশেষ ধরনের পারফরম্যান্সের, যা আত্মস্থ করে বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্যকে আজও প্রাণপণে টিকিয়ে রেখেছেন কিছু মানুষ।  সে সব ই তিনি বিচক্ষণতার সাথে তুলে ধরেছেন । বীরভূমের ভূমি পুত্র ও মামার বাড়িও সেই জেলাতে হওয়ায় তিনি এই বিষয় গুলি সম্পর্কে আরও জ্ঞাত।  
 এই ধরনের কাজ করতে গেলে পরিশ্রম ও হয় খুব কারণ তথ্যচিত্র নির্মাণ করতে গেলে সত্যতা তুলে ধরতে হয় সততার সাথে । অনেক গবেষণা করতে হয় ।
বলা বাহুল্য, বহুরূপী শিল্পের উদ্ভবের ইতিহাসের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে এইসব শিল্পীদের পারফরমান্সের একটি গবেষণাধর্মী ও উপভোগ্য পরিবেশন পাওয়া যায় এই চলচ্চিত্রে । 
 
রাজাদিত্য বাবুর ছবিতে বহুরুপীদের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হয়েছে এই শিল্প নিয়ে তাঁদের  মতামত কি ?  সারা বছর কেমন কাজ চলে,বিশেষত করোনাকালীন লকডাউনের পরিস্থিতিতে তাঁদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম কেমন ছিল,  বহুরূপী দের সাজ, পারফরমান্স এবং জীবনযাপনের নানা দিক, এবং সার্বিক ভাবে, বহুরূপী শিল্পের দুরবস্থাকে  এই ছবিতে সামনে আনা হয়েছে  যা দর্শক মনকে ভাবতে বাধ্য করবে যে বাংলার লোক ইতিহাসের পাতায় এই শিল্পের অবস্থান কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ এবং সেটা অনুভব করলে এখনকার সময় এই শিল্পের  খারাপ অবস্থা দেখে কষ্ট লাগে   !

 বহুরূপী নিয়ে বিখ্যাত পরিচালকও সত্যজিৎ রায়ের কাপুরুষ মহাপুরুষ ছবিতে সামাজিক ভন্ডামি কি প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের সুবর্ণরেখা 
ছবিতে দেশভাগ উদ্বাস্তু সমস্যা দেখানোর মাঝে বহুরুপী এলেও তাদের জীবনী সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে অর্থাৎ পুরোপুরি তাদের কেই নিয়েই যে কাহিনী দেখি  তা স্বনাম খ্যাত আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত পরিচালক রাজাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় এর এই বহুরূপী  ছবিতেই ।
তাই সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা windows production এর বহুরূপী দেখে যেসব  টলিউড তারকারা কি পরিচালক  বলছেন বহুরূপী নিয়ে এমন ছবি আগে কেউ বানান নি বা সাহস দেখান নি হয় ওনারা হয় ভুলে গেছেন বা দ্যাখেন নি অথবা জেনেও ইচ্ছাকৃত ভাবে স্বীকার করছেন না বা কেউ কেউ  তৈল মর্দনের কাজ করছেন কোথাও কারো কাছে অত্যন্ত  সচেতন ভাবে  যা আগাগোড়া চলে ইন্ডাস্ট্রি তে ।

 এখনও তথ্যচিত্র আর কমার্শিয়াল ছবির মধ্যে ফারাক করা হয় । বরাবর ই কমার্শিয়াল ছবি নিয়ে মাতামাতি বেশি করা হয় । সেই সব নিয়ে প্রচার বেশি হয় । হল রাখা হয় তাদের জন্যই বেশি  !  আর তথ্যচিত্র বানাতে যে  যথেষ্ঠ পরিশ্রম করতে হয় গবেষণা করতে হয় কারণ সত্যি টা তুলে ধরতে হয় , কাহিনী বানিয়ে রাখা হয়না সেখানে সেই জিনিস গুলো অনেকের  দৃষ্টি গোচর হয় না । 
তথ্য চিত্র গুলো কে কমার্শিয়াল ছবির তুলনায় অবহেলা পেতে হয় এটা ধ্রুব সত্য । লোকে টিকিট কেটে বানানো কাহিনী দেখতে যেতে পারে কিন্তু সত্যি দেখতে আগ্রহ প্রকাশ তুলনায় কম । মানুষ বরাবর সস্তা জিনিসের ভিড়ে সামিল হতে খুব পছন্দ করে ।
এই সমাজে মূল্যবান জিনিসের মূল্য বুঝতে গেলে নিজেকেও সেই বিচক্ষণ হতে হয় যা অধিকাংশের মধ্যেই  নেই । 

অনেক সময় ফুল লেন্থের এই তথ্যচিত্র গুলো কে কোনো জায়গায় দেখাতে হলে সেখানকার চাহিদা মতো ফিল্ম শর্ট করতে হয়।  তথ্য চিত্র গুলো কে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় তারপর নোংরা  রাজনীতির ব্যাপারও থাকে অনেক সময় ,এই সব কিছু নিয়েই  তথ্য চিত্র বানানোর পরিশ্রম অনেক ।

তাই বহুরূপী নিয়ে সিনেমা হয়েছে আগেই সেটা সাহসের সাথেই বানিয়ে দেখিয়েছেন পরিচালক রাজাদিত্য ব্যানার্জি । তাই যাঁরা এই বিপন্ন শিল্প নিয়ে সত্যি ভাবিত বা কিছু করতে চান তাঁরা ছবিটি দেখুন অনেক কিছুই উত্তর পাওয়া যাবে । ভাবতে শেখাবে কিছু করার উদ্যোগ শেখাবে। 

পরিশেষে বহুরূপী নিয়ে একটি মজার ঘটনা স্মৃতি তে আজও আসে সে কথা বলে শেষ করবো ।
আমি যখন ক্লাশ ফোরে পড়ি একবার বাবা আর দুই কাজিন দিদি দের সাথে তারকেশ্বর গেছিলাম শিবের মন্দিরে ।  নতুন জায়গা তে এসে ভালই লাগছিল আমার । পুজো দেওয়া হবে ।মন্দির চত্বরে ঘোরার সময় হঠাৎ দেখি এক জায়গায় একটা দোকানের সামনে শিব ঠাকুর বিড়ি তে সুখ টান দিচ্ছেন । 
আমি চমকে গেছি ভীষণ ।বাবা তারকনাথ কেই ভাবছি ।কেউ দেখছি পাত্তা দিচ্ছে না ব্যাপার টা এমন কি আমার  বাবাও না ! সবাই ক্যাজুয়াল। আর আমি এদিকে ভাবছি উনি বোধহয় শুধু আমাকেই দেখা দিচ্ছেন আর কেউ দেখতে পাচ্ছিনা তাই সবাই ক্যাজুয়াল । ভয় ভয় করছিল খুব । ওই বালিকা মনে স্বয়ং শিব কেই ভাবছি । হঠাৎ আমায় কেনো দেখা দিচ্ছেন কি চান? এই সব ভাবছি !
পরে বুঝি উনি বহুরূপী । শিব সেজেছেন । ঘটনা টি মনে পড়লে এখন হাসি পায় কিন্তু সেই সময় ভয়ে ঘামছি জীবন্ত ঠাকুর সামনে দেখে  । 
এই রকমই ছিল তাঁদের শিল্প কলা। একই অঙ্গে নানান রূপ, এই ছিল বহুরূপীদের মূল উপজীব্য। নিত্যনতুন পোশাক আর রং মেখে দর্শকদের নজর কাড়তেন। তাঁদের অভিনয়ের মঞ্চ বলতে মূলত গ্রামের মেঠো পথ অথবা গৃহস্থের বাড়ি গুলি ছিল। শহুরে রাস্তায় কিংবা গ্রাম মফস্বলের কোনো মেলায় চোখে পড়ত  বহুরূপী দের কয়েক বছর আগেও!বাংলার এই প্রাচীন লোকশিল্পের কত দিনের প্রাচীন তা আজ হয়তো হিসেব করে বলা সত্যিই কঠিন হবে !  আজকাল আর চেনা ছবির  বহুরূপী দের  চলতি পথে দেখা মেলে না ।
 আমরা সবাই এখন কেমন যান্ত্রিক হয়ে অস্তিত্বের জীবন সংগ্রামে। নিজেদের কোনো ইচ্ছে, শখ এই শব্দগুলো রোজনামচা জীবন থেকে প্রায় হারাতে বসেছে। একদা ভীষণ জনপ্রিয় এই লোকশিল্প এখন পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চল থেকে ক্রমশ লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কয়েক প্রজন্ম ধরে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা বহুরূপী শিল্পীরা কোনোমতে জীবনধারণ করেছেন।  বর্তমানে বিনোদন সংক্রান্ত অনেক বদল আসায় মানুষের রুচিও পাল্টে গেছে তাই  বহুরূপী সম্প্রদায়ের  তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা এই পেশা ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।, আধুনিকতার আর ব্যস্ততার ইঁদুর দৌড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছেন বাংলার এই  বহুরূপীরা। 
 আমাদের কি সত্যি কোনো দায় নেই সমাজের প্রতি ? কিছু করণীয় নেই ? শুধুই কি পলিটিক্যাল পার্টির হাতে দেশ আর রাজ্য  কে ছেড়ে দিয়ে দায় মুক্ত হয়ে নিশ্চিন্তে বসে থাকবো ঘরের আরামে ? 
নিজেদের দেশের কি রাজ্যের কি অঞ্চলের কোনো সংস্কৃতি ঐতিহ্য বাঁচানোর জন্য একটু সচেষ্ট হতে পারি না কি ? 

(কিছু কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে গুগলের সাহায্য নিতে হয়েছে ) 


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক