টুসি সময় নিচ্ছে। শোবার ঘরের লাগোয়া বাথরুম থেকে জলের শব্দ আসছে।রাত হলো বেশ।জানালার বাইরে টুপটাপ করে আবাসনের আলো নিভছে।জিতেন বিছানার ওপরই ল্যাপটপ খুলে বসেছে অফিসের কাজ নিয়ে।কাজ আর শেষ হয় না। অফিস থেকে ফিরতে দেরী হয়ে যায় দুজনেরই।টুসি আই টি ইন্ডাস্ট্রি, জিতেন ফিন্যান্স।অফিসার দুজনেরই কাজের চাপ। প্রায়শই অতিরিক্ত সময় অফিসে থাকতে হয়। উইকেন্ডও বাদ যায় না।তবে নিয়ম করে ডিনারটা তারা একসাথে খায়।খেতে খেতে টুকটাক কথা বলে।সারাদিন অফিস কেমন কাটলো কে কি বললো প্রজেক্ট কতদূর এগোলো এই সব সাধারণ হাবি জাবি কথাবার্তা।কখনো জিতেন আলগোছে একটা নতুন জোকস ছুড়ে দেয়।শুনে টুসি খিল খিল করে হাসে।দিনের শেষে একে অন্যের সঙ্গ ওরা নেয়।
বাথরুমে ছিটকিনি খোলার শব্দ হলো।টুসি বেরোলো।মুখ থেকে দিনের প্রসাধন ধুয়ে নিয়েছে।তবু চোখে মুখে একটা আলগা শ্রী লেগে আছে।সুন্দর পরিমিত শরীরে ওপর একটা হালকা রাতপোশাক জড়িয়েছে। জিতেন টুসির দিকে তাকায়, ভুরু তুলে জিজ্ঞাস করে কি? টুসি চোখ নামিয়ে নেয়, না এমাসেও নয়।জিতেন মুখ কালো করে ল্যাপটপের স্ক্রিনে নজর রাখে।
তিনবছর হলো ওদের বিয়ে হয়েছে।সুখী দম্পতি। দুজনের খুব ভাব। টুসি জানে জিতেন চায় এবার ওদের একটা বাচ্চা কাচ্চা হোক। টুসিও কি চায় না? টুসির মন ভারী হয়ে যায়। নিজেকে দোষী করে। জিতেন এর জন্য কষ্ট হয়। ভাবে অনেকদিন আগেই জিতেনকে সব কিছু খুলে বলা উচিৎ ছিল। এইভাবে একটা মানুষকে দিনের পর দিন প্রতারণা করা ঠিক নয়।
টুসি বিছানায় এসে জিতেনের হাতে হাত রাখে। জিতেন একটু অবাক হয়ে মুখ তুলে তাকায়।
টুসি বলে জিতেন আমায় মাপ করো। আমাদের কোনোদিন ছেলে মেয়ে হবে না।জিতেন আকাশ থেকে পরে কেন?
টুসির চোখ ছল ছল করছে। সে খানিক চুপ করে থাকে। ভাবে বলবে কিনা। তারপর দনামনা করে বলেই ফেলে। জিতেন আমি মানুষ নই রোবট।
আমার আইডেন্টিফিকেশন কোড ট্যু - সি । ইন্টিমেন্ট হিউম্যান বিহেভেরাল প্যাটার্ন স্টাডি করার জন্য আমার কোম্পানি মেসার্স গ্লোবাল রোবটিক্স ইনকর্পোরেটেড তোমার জীবনে আমাকে প্লান্ট করেছে।
শুনে জিতেন ম্লান হাসে। টুসিকে কাছে টেনে নেয়।টুসি অবাক হয়।জিতেন বলে আগে বলনি কেন? আমাদের কোম্পানি তোমাদের কম্পিউটার।আমার কোড জি-টেন।
টুসি চমকে ওঠে।তারপর জিতেনের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদে।ওদের জেনারেশনের রোবটরা হাসতে কাঁদতে পারে।কিন্তু সন্তান উৎপাদন করতে পারে না।
জীতেনের খারাপ লাগে। জি শ্রেণীর রোবটদের আবেগ অনভূতি সাধারণত নিচু পর্দায় বাঁধা থাকে।তবু তার টুসির জন্য মায়া হয় । এই কোম্পানিগুলো কেনো যে এমন বোকার মতো কাজ করে। নিজেদের মধ্যে ডেটাবেস শেয়ার করলে এসব ঝামেলা থাকেনা। জিতেন টুসির চুলে বিলি কেটে দেয়। বলে মন খারাপ করো না টুসি।তোমার যদি খালি খালি লাগে তবে আমরা বাচ্চা আপডেট করতে পারি।
চোখের জল মুখে হাসি নিয়ে টুসি মুখ তুলে তাকায়। বেশ হয় তাহলে। আমাদের কোম্পানি আপডেট করলে চিল্ডকেয়ার লিভও দেয় জানো ? পুরো ছয়মাসের।এ কটা ছোট্ট মানুষ তাদের ঘরে টলমল পায়ে ঘুরে বেড়াবে। আধো আধো কথা বলবে। টুসি তাকে কোলের মধ্যে নিয়ে চটকাই মটকাই করবে। ভাবতেই টুসির গায়ে কাঁটা দেয়।
পরক্ষণেই শিউরে ওঠে। জিতেনের দিকে আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে বলে ওরা যদি আবার একটা রোবট পাঠিয়ে দেয়? জিতেন জবাব দিতে পারে না। একটা নারী রোবট ও একটা পুরুষ রোবট। অসহায় দৃষ্টিতে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। জানলায় আধুনিক পৃথিবী অন্ধকার হয়।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
ইন্দ্রানী গুহ। ১০৪ বি টি রোড কলকাতা ১০৮ মোবাইল নং 8697713951
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন