Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

হাসির নাটক ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক




যেমন কর্ম তেমন ফল 

 চরিত্র:  হীরু, করিম, নেত্যকালি, সুবির, রতন, জমিদারের বড় ছেলে, অনুপ কুমার, পেয়াদা, পাড়ার লোকজন ...... 


।। প্রথম দৃশ্য ।। 
 
(দুজন পেশাদার নাট্য কর্মী। বয়স ৩০/৩৫।সেদিন মদ্যপান করে কদম তলার পার্কে নাটকের অনুশীলনে ব্যস্ত । ওরা এবার হাসির নাটক করতে চায়,সময় - সন্ধ্যা )
করিম- হা হা হা, হো হো হো ,হি হি হি......
হীরু- কি হল ,শেষের টা যে পেত্নির হাসি হল মশাই
করিম- হা হল ত , সেটাই ত প্যাক্টিস করছি
হীরু- মানে! এটা আবার কোথায় ইনপুট করবে?
ক- কেন ? যখন তোমার ঐ রাম ডাক্তারের বউ টা মরতে বসবে... তখন...
হী- হো হো হো ...
ক- হাসির কী হল ?
হী- মড়ার আগেই ভুতের ,থুড়ি পেত্নির আবির্ভাব?
ক- মন্দ কি! মানুষের টাইম গ্যান পেদনির যদি নাই থাকে ,বিশেষত যদি মুখু পেদনি হয়, তো কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হল মশাই?
( নেপথ্যে- পেত্নি - মুকখু কি রে ছোঁরা মুখু কি? আমাদের যে এখন রোজ কেলাস হয়,সে খবর রাখিস নি বুঝি? )
ক - ওরে বাবারে , রাম রাম রাম...
হী- ঘাট হয়েছে পেত্নি দেবি,ঘাট হয়েছে । আমাদের ক্ষমা ক্রুন এই ইই কান ধরছি ,নাক মুলছি, ( পাশে তাকিয়ে ) এই কান ধর, কান ধর বেটা । এই আমি আপনারে পায়ে ধরছি ( বলে সাষ্টাঙ্গে শুয়ে পড়ে) ।
নেপথ্যে পেত্নি- হে হে হে ...,পায়ে ধরবি কি রে? পায়ে ধরবি ,পা আমার পেলে ত...
ক - তো মা র পা নেই ? মরে গেলে বুঝি পা থাকে না? ( নিজের পা দুটো ভাল করে দেখতে থাকে)
পেত্নি- ত্যা থাকবে না কেন রে মুখু? আমাকে ত তুঁই রেলের সামনে ... হে হে হে । পা দুটো তোঁ তখনই ...,এঁরই মধ্যে ভউঁ লে গেলি...? হারাম জাদা
হী- তবে কি তুই... মানে তুমি নেত্যকালিইইই...?
পে- এই তো ঠিক চিনেছে আমার পেয়ারের মিন্সে ট্যাঁ...
ক- বৌদি ... তুমি ... (কপালে হাত তুলে মুসলিম দের ভঙ্গি তে পেন্নাম করে )
পেত্নী- তা দু বন্ধু মিলে কি এত হা হা হি হি হচ্ছে শুনি... ( স্বগত- বেশ ফুর্তি তেঁ আঁচও, ফুর্তি তোমার ঘোচাছি)
ক- ( আমতা আমতা করে )হাসির নাটক হবে কিনা , তাই...
হি- না মানে, তুমি চলে যাওয়ার পরে বড় একা একা লাগত, জানো ? রাত দিন খালি কান্না কান্না পেত । তা ভাব্লুম অনেক দিন তো কেদিছি (নিজেকে দেখিয়ে)দ্যাখো না কেমন রোগা পেনা হয়ে গেছি । তা করিমকে
বল্লুম অ করিম এমন ধারা চলতে থাকলে আমি আর কদ্দিন বাঁচব বল ? তা অই বললে অনেক দিন কেঁদেছ হিরু দা, এবার একটা ব্যলেন্স করে নাও ...
পে- কি?
হি - ব্যলেন্স । ব্যলেন্স বোঝো না? অই যে সমান সমান তুমি আমি , আমি তুমি ...হে হে হে ...
পে - ওঁ তাই বল । সমান সমান ...
ক- শরীর টা কে তো রাখতে হবে , না হলে তোমার জন্যে কি আর এমন করে কাঁদবে বল তো ?
হী- ( হেসে) তাই ই ...
পে- তা তঁ বটে, তা ত বটে। শরীর না থাকলে জল বেরুবে কোঁথা থেকে, আর দেখবেই বা কে? তুমি তোঁ আমার চোখে হারাতে কিনা !( রেগে, স্বগত উক্তি - ভেবেছো তোমার কোন খবর রাখি না ,দেখাছি মজা তোমার )
তা সত্যি কথা টাই বল না কেন ভালও করে হাঁসতে না পারলে এই নাটক ট্যাঁই জমবে না , কি ঠিক কিনা করিম ভাই ?
ক - ঠিক ঠিক বউ দি । এত দিন আছি এত নাটকে অভিনয় করছি কিন্তু হাসি টা ঠিক আসে না । তোমাদের তো অনেক জানা - শোনা ভুতপেত আছে , দেখোনা যদি বলে কয়ে , ম্যনেজ করে শম্ভু মিত্র অজিতেসদা,
উতপল দা , রবি দা বা ভানু দা - কাউকে দিইয়ে যদি একটু তালিম দেওয়াতে পারো .........
পে- ওঁ , শম্ভু , অজিত , উৎপল - এদের হবে না। হেব্বি চাহিদা, বুকিং হয়ে গেছে । পুজো পর্যন্ত রবি , ভানুর , চ্যান্স নেই।
(চিন্তা করে), তবে হা অনুপ কে বলে কয়ে যদি ......
হী - অনুপ কুমার মুখটা কেমন দুঃখ দুঃখ করে থাকে দেখলেই মায়া হয় । ও আবার হাসি শেখাবে কি?
পে- ওঁ ওকে তোমাদের পছন্দ হল না? তবে... তবে...... (ভ্যানিস)
ক- বউ দি ... বউ দি... যা শালা, একেবারে ভ্যানিস হয়ে গেল মাইরি ।
হ - চলে গ্যাচে, যাক বাঁচা গেছে বাবা , যা ভয় পাইয়ে দিয়ে ছিল।
ক- আমার কিন্তু হেব্বি লাগছিল , অন্য ভুতে দের মত নয়।
হি- আজ কী বার বল দেখি ।
ক- মঙ্গলবার ।
হী- মঙ্গলবার। পাঁচটা বাজে, ঠিক ঠিক মনে পড়েছ । হ্যাঁ, ...( কি যেন চিন্তা করে ) শালা মরে পেত্নি হয়ে গাছে গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এখনো স্বভাব গেল না ।
ক- কি?
হি- কি আবার হবে ? মনে নেই ?আয়পেন্মেণ্ট । প্রত্যেক মঙ্গল বার এই কদম তলার পার্কে এক ছোঁড়ার সাথে বাদাম খেত , তোর মনে নেই ? সে অভ্যেস এখনও যাই নি দেখছি । এ দেখছি নিশ্চয় বাদাম গিলতেই
গ্যাছে। যাগে মুড়ুক গে আমার কী?
ক- হা হা হা ..., বেশ বলেছ হীরু দা , মুরুগ গে ,বলি আর কত বার মরবে ? আর বাদাম খাক আর মিষ্টি খাক এখন তোমার কি ?
হি - তাই বলে... ( কান্নায় ভেঙে পরে ) মরে ভুত হয়ে গেল , এখনও আমায় জ্বালাছে ? এমন বদ ...
ক- ( গামছা দিয়ে চোখ মুছয়ে দিয়ে ) আর কেদে কি করবে হীরু দা ? (ওরা কথা বলেতে বলতে একটা গাছের আড়ালে চলে যায় ,একটা বোতল বের করে ) তার থেকে বরং এই নাও গলা ভিজিয়ে নাও । দেখবে
সব দুঃখ চলে গ্যছে।
হী- দে দে তাই দে । এই নিয়েই তো ক বছর আছি । ( ওরা মদ খাওয়ার আয়োজন করে )
(এই সময় ভুত অনুপের প্রবেশ,নাকি সুরে)
অনুপ- কি হে ছোকরা রা আমাকে তোমাদের মনে ধরল না তো ? ধরবে কি করে ? তোমরা তো শালা লাতখর পাবলিক । হাসির এমন প্যাঁচ ছাড়ব না তোমাদের চইদ্দ পুরুষ ভিম রি খাবে ।
হী- কে হে বাবা তুমি ? এই ভর সন্ধ্যে বেলা আমাদের হাসি শেখাতে এলে...
ক- কত রকম হাসিই বা জানও তুমি ?
অনুপ- কত রকম চাই বাবা ।
ক- স্যম্পেল আছে কিছু?
অ- স্যম্পেল ,? এই বিনি পয়সায় স্যম্পেল খেয়ে খেয়ে বাঙালি জাত টাই গোল্লায় গেল।
হি- অ্যাঁ ।
অ- না কিছু না । তা কটা স্যম্পেল তোমাদের চাই ?
ক- আপাতত একটা ছাড়ো তো বাবা ।
অ - হি হি হি ... অ, হা হা হা , (বিকট হাসি তে দুজন কেই বশ করে ফেলে। হটাত হাসি থামিয়ে ) শোন , এদিকে আয়, কানে কানে বলতে হবে ( ওরা ঘন হয়ে বসে) তোদের একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিই ।
হেসে হেসে বলবি কথা / হাসির কথা হোক বা না হোক/জীবন টা যে সহজ সোজা/ এবার এটাই জানুক লোক । (অনুপ অদৃশ্য হয়ে যায় । শুধু তার মন্ত্র শোনা যায় ।
মঞ্চ জুড়ে হাসি চলতে থাকে।ওরা ভয়ে গুটিয়ে যেতে থাকে । পর্দা নামে।) 

  



দৃশ্য ২ 
 
( সময় - সন্ধ্যা । কদম তলা পার্কের পিছনে শেওড়া গাছে ডালে বসে পেত্নি নেত্যকালি ও তার বয় ফ্রেন্ড সুবির বসে বাদাম খাচ্ছে। নেত্য কালি মারা যাওয়ার পর শোকে মুজমান সুবির গলায় দড়ি দিয়ে
আত্মহত্যা করে । তা প্রায় ৪/৫ বছর হয়ে গেল। সেই থেকে ওরা এক সঙ্গে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়। এখন নেত্য নিজের হাতে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে সুবির কে খাওয়াছে )
নেত্য- আহা, এই কটা য় তোমার কি এমন ক্ষেতি করবে?
সুবির- আঃ, বলছি না বেশি বাদাম খেলে মানুষ মোটা হয়ে যায় ।
নে- তা তুমি বুঝি মানুষ ! আমাদের মোটাই বা কি আর রোগাই বা কি ? শরীর টাই যখন আর নেই । তুমি বাদাম খেতে ভাল বাস বলেই না ভজ ইয়ের(হরি) দোকান নিয়ে এলাম। আর তুমি বলছ ... (কেঁদে ফেলে)
সু- তুমি আবার চুরি করেছেও ?
নে- না গো । একমুঠো তুলে নিয়ে এলাম, আমাকে কেউ দেখতে পায় নি ।
সু- কেমন করে দেখতে পাবে ? তোমার যেমন কথা, মানুষ গুল্লোর কী চোখ আছে ? ( সে কটা বাদাম তুলে নিয়ে গালে ফেলে) ওয়াক থু, থুঃ কি তেতো ,বেটা এক নম্বরের হাড় কিপটে ,বজ্জাত লোকেকে
এভাবে ঠকা ছে?
নে- মরে ভুত হয়ে গেলে তবুও তোমার তেতো খাওয়ানোর অভ্যাস করতে পারলাম না ।
সু- তখন তো বেশ মণ্ডা মিঠাই এনে এনে খাওয়া তে । এখন
নে- সে তো তোমার মুখে মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনব বেলেই না । মিন্সে কে তো রোজ উচ্ছের সুক্তো ,হিমচের দালনা খাওয়াতুম,জান না তেত খেলে সুগার বাড়ে না, দিন রাত মানুষের রক্ত চুষছ ও তো সব
সুগারের ডিপো ।অই খেয়ে খেয়ে শেষে তোমার ও যদি ...
সু- হে হে হে ... আমাদের কি আর মানুষের মত শরীর আছে ? যাগকে , আঁচলে কি নুইকে রেখেছ দেখি ।
নে- ও কিছু না । মিন্সের জন্যে একটু তালের পাটালি । কদ্দিন ধরে তাল গাছ কে বলে কয়ে রসের বদলে একটু পাটালি করিয়ে নিলুম ।
সু- ও, আমার জন্যে তেততো বাদাম আর মিন্সের জন্যে তালপাটালি ?
নে- তখন উনি কাছে ছিল তাই উনাকে তেতো খাইয়ে তোমাকে মিষ্টি খায়াইনি ? এখন উনি দূরে থাকেন , তাছাড়া ...
সু- কি ?
নে- মানুষের রক্ত মিষ্টি হলে আমাদের তো নাভ।
সু- তার মানে ।
নে- হে হে হে ......, বুঝলে না তো ( নাকি সুরে গান ধরে ,টপ্পার সুরে। ) পীরিতি রসের গজা/চুরি করে খেতে মজা/ এ গজা খেয়ে ছিল / তোমার ঐ বাপ ঠাকুর দা/
আর গজার তরে ভেবে ভেবে / মিনসে আমার দিলো ফেলে/পায়ের উপর দিয়ে গেল / ফু ঝিক ঝিক রেলের চাকা/
পীরিতি রসের গজা ............
( দুজনে ভুতের কায়দায় নাচতে থাকে )
সু - আঃ, থামা দেকিনি । কানের ধারে খালি ভাজর ,ভাজর, (নীচের দিকে দেখিয়ে) ঐ দেখ তোর মিনসে এদিক পানে আসছে ।
নে- চল ওদের একটু নাচাই।
সু- কি করে ?
নে- আঃ, চলই না , শুধু ওদের হাঁটার গতি মুখ টা ঘুরিয়ে দাঁও । তারপর দেখ না কি হয়
সু - এই দিলুম ঘুরিয়ে ,( ওরা গাছ থেকে নেমে এসে ওদের বন বন করে ঘুরিয়ে দেয় , লক্ষ্যভস্ট হয়ে হীরু ও করিম পথ হারিয়ে ফেলে । ভয়ঙ্কর ভুতের মিউজিক বাজতে থাকে ) 

 

দৃশ্য ৩ 
 
( রাজপথ। পর্দা উঠতে দেখা যায় রায় বাড়ির ভিতর থেকে মরা কান্নার আওয়াজ আসছে।কর্তা মশাই ভোর রাতে গত হয়েছেন । দলে দলে লক-জন ঢুকছে বেরছে।সেই পথে
হঠাত করিম ও হীরু।দুজনেই মদ্যপ। করিম অনুপ কুমারের নকল করে কথা বলে )
ক- এই আমরা কোথায় চলেছি রে?
হী- এই বলেছি না এখন থেকে যা বলবি সব হেসে হেসে বলবি। তোর কিচ্ছু মনে থাকে না? শালা পাঁড় মাতাল কোথাকার।
ক- হা হা হা । শালা আমি মাতাল ? তুই কি তবে ?
হি- হা হা হা আমি ও মাতাল ।মোরা দুজনাই মাতাল( সুরে) ...
ক - হা হা হা ... , এই চুপ চুপ। একটা কান্নার আওয়াজ আসছে মনে হচ্ছে......
হি- হা হা হা ... কান্না!হা এ তো ঐ রায় বাড়ি থেকেই আসছে মনে হচ্ছে । এক বার যাবি নাকি ?
ক- হা হা হা । কেউ পটল তুলেছে মনে হয়।
হি- হা হা হা , ও বাড়ির বুড়ো কর্তা পটল তুলেছে মনে হচ্ছে। হা হা হা ...
ক- হো হো হো , কর্তা বাবু ই এবার আমাদের লতুন গুরু মশাই হবেন । হা হা হা , এই কর্তা লোক কেমন ছিল রে ? হাসতে- টাসতে জানত ?
হি- কোন দিন তো বুড়ো কে কেউ হাসতে দেখেছে বলে মনে পড়ছে না । ( হিরু হটাত হাসতে ভুলে যাওয়ায় করিম চোখ বের করে তাকালে সে এতক্ষণে জোরে জোরে হাসতে শুরু করে।) হো হো হো
ক- হি হি হি , এখনি কি আর মার্কেটে ছাড়বে ? বছর দুই তালিম না দিয়ে...
হি- হা হা হা , শুনলি না মার্কেটে কেমন ক্রাইসিস চলছে , মনে হয় না আর দেরি করবে বলে ।
ক- হা হা হা , সে যাই হোক , আমি কিন্তু তোদের, কর্তা কে বুক করে দিলুম।
হি- ( হটাত গম্ভীর হয়ে যায়) মানে টা কি অ্যাঁ, এখানে আবার আমি আসছে কোথা থেকে ? বল আমরা ......
ক- হা হা হা , তুই কিন্তু এবার চাঁটি খাবি , বাব্বা, ভুতের চাঁটি,
হা- কেন ?
ক- হা হা হা , আবার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে কেন ? হা হা হা ।
হি - ( হাসির কথা মনে পরে , প্রান হীন হাসি হেসে উঠে ) হা হা হা ...
ক -( ওর অবস্থা দেখে জোরে জোরে হেসে উঠে ) হা হা হা , না বাবা ঐ ভাগা ভাগি তে আমি নেই ।
হি-( শুকনো হাসি দিয়ে ) হা হা হা , আচ্ছা চল ভেতরে যাই ,জেনে দেখি কক্ষন মরে এ এ ছে , যদি বলে রাত্তিরে তবে তোর, আর...
ক- যদি বলে সকালে তবে তোর।বেশ ।
হি- কিন্তু হদি বলে ভোরবেলা ।
ক- হা হা হা , তবে দুজনার ......
( ওরা হাতে হাত মেলায়। তারপর ভয়ে ভয়ে গুটি গুটি পায়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে ।
থম্থমে পরিবেশ। মৃত দেহ ঘিরে কান্নার রোল উঠছে ।গিন্নি মা - ওগো তুমি আমায় এ কোথায় রেখে গেলে গো ? ...... এই জাতিয় বিলাপ চলছে ।ছেলেরা মেয়েরা ও ব্যস্ত।) বাড়ির কাজের লোক কয়েকটি
ফুলের মালা নিয়ে ঢুকছে দেখে, হিরু তাকে ধরে )
হি- হা হা হা , কর্তা বাবু বুঝি মারা গেলেন ? বেশ বেশ ।
রতন -( হকচকিয়ে যায়) আজ্ঞে ...
ক- হা হা হা , তা কখন মরল তোমার কর্তা !
র- আজ্ঞে, আজ...
ক- ( মুখের কথা করে নিয়ে ) রাত্তিরে ? হা হা হা , ও আমি জানতুম ।
র - আজ্ঞে না , কর্তা বাবা তো ...
হি- সকালে মারা গেছেন । হা হা হা ... আমি ঠিক জানতুম , কিছুতেই সকালে না হয়ে যায় না , হা হা হা
র- ( স্বগত) এ বলে আমি জানতুম, ও বলে আমি জানতুম, ।( রতন নিজেকে সামলে নিয়ে) আপনেরা কে বলেন তো ? খুব মজা পেয়েছেন মনে হচ্ছে। নিচয় খাজনা বাকি পড়ে ...
ক- হা হা হা , আরে না না , সে সব কিছু না ,
র- তবে ... ( বাড়ির ভিতর থেকে ডাক পরে - রতন আই রত্নে, এত দেরি কেনরে , কোথায় গেলি )
র- আগ্নে যাই বাবু উউউউউউ।
( করিম সহসা রতনের পথ আগলে দাঁড়ায় ।)
ক- এই যে কিছু না বলে চললে যে বড় ...
র- পথ ছাড়েন বাবু , আমার হাতে এখন মেলাই কাজ,
হি- ও কথা বললে তো হবে না ভায়া, হা হা হা , কাজ ও কি আমাদের কম নাকি ?
র - অ্যাঁ, ছাড়ো , বাবু ডাকতি ছেন।
ক- না যদি ছাড়ি ।
(ধস্তা ধস্তি ,হৈহল্লা তে ভিড় জমে যায়। বড় ছেলে পেয়াদা নিয়ে প্রবেশ করে ।)

ছেলে- কি হল রতন এত চেঁচামিচি কেন ?
র- দেখুন না বাবু, এরা আমার...
ছে- অ্যাই, তোরা কে ? কি চাই ?
ক- কিছু না, কিছু না, হে হে হে বুঝলেন না ...( আমতা আমতা করে)
হি - হে হে হে , আমি আপনারে বুঝিয়ে কইছি,
ছে- এখন তোমাদের কোন কথা শোনবার সময় ও নেই, ইচ্ছা ও নেই। পেয়াদা----
পেয়াদা- জো হকুম মালিক,
ছ- এই দু বেটা কে ঐ গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখ, দেখিস যেন পালিয়ে না যায়, কাজ কম্ম সব মিটে গেলে তারপর ওদের আমার কাছে আনিস। এ নিশ্চয় খাজনা ফাঁকি দেওয়ার মতলব ।
পে- জো হকুম মালিক।
ছে- রতন, তুই ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বেটা, আয় ভেতরে আয়।
র- হ্যাঁ, চলুন বড় বাবু,চলুন ( উভয়ের প্রস্থান)
(পেয়াদা ওদের কসে বাঁধতে থাকে। ওরা পরস্পরের মুখ চাওয়া চায়ি করতে থাকে। ওরা হাসি ভুলে যায়।) নেপথ্যে অনুপের গলা শোনা যায় ,ওরা শুনতে পায়,সেই -
হেসে হেসে বলবি কথা.........( পেয়াদা র প্রস্থান)
অনুপ- এরি মধ্যে মুখ শুকিয়ে গেল ? সবে তো কলির সন্ধে ।(নেপ থে)
হি-( মুখে কান্না, চোখে হাসি) হে হে হে আমাদের কথা টা একবার শুনুন মশাই ( বাইরে মার মার আওয়াজ শোনা যায়, উন্মত্ত জনতার )
ক - ও হিরু দা এ যে পড়লাম মহা ফ্যসাদে, হে হে হে এবার বোধ হয় নিখাত পরান টা যাবে ।
হী-( মার মার আওয়াজ তা যেন কাছে এগিয়ে আসছে) না হাস লে ভুতে খাবে আবার হাসলে জমিদারের লোকজন , হে হে হে কার মুখ দেখে যে আজ ওঠে ছিলাম কে জানে ( তোতলাতে থাকে)
( করিম কিছু বলার আগেই নেত্য র আবির্ভাব । )
নে- কি গোঁ । তোমরা যেঁ ভঁয় পেয়ে গেলে। অ্যাঁর হাসছও না যেঁ বড়। সে দিন যেঁ খুব হেঁসে ছিলে দুজনে ...হাঁস হাঁস ও সেদিন......(হিরু ও করিমের কিছু মনে পড়ে , ওর ভয় পেয়ে যায় । ( ফ্লাস ব্যাকে নেত্য কালির খুনের দৃশ্য দেখানও হয়)
{ ফ্লাসব্যাক}

(পার্কের এক কোনে একটি ফাঁকা বেঞ্চে নেত্যকালি ও সুবির বসে বাদাম খেতে খেতে গল্প করছে। )
নে- না না , আর একটু বসি।তোমার সবে তেই শুধু তাড়া।
সু - অনেক দেরি হয়ে যাবে । এবার উঠি গো ।
নে- না, তুমি বড় বেইমান। নিত্যদিন বাড়ি থেকে কর্তা কে ফাকি দিয়ে কত খাবার দাবার নিয়ে আসছি,খাওয়াছি ,তবু তোমার মন পাওয়া যায় না ( কপট রাগ দেখায়)
সু- সে কি আর আমি জানি না ? একবার চাকরি টা পেতে দাও, তারপর তোমাকে নিয়ে আমরা অনেক দূরে চলে যাব।
নে- ঠিক?
সু- ঠিক। এই দেখ তিন সত্যি করছি, ঠিক ঠিক ঠিক
নে- আচ্ছা বাবা হয়েছে । আর দিব্যি কাটতে হবে না ,
সু- তবে এখন উঠ ।
নে- উঠছি। ঐ দেখ একটা লোক অনেক ক্ষণ আমাদের ফলো করছে মনে হচ্ছে। লোক টা কে চেনা চেনা মনে হচ্ছে, কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না
সু- হবে তোমার কেউ চেনা জানা,
(ঠিক এ সময় করিম হন্ত দন্ত হয়ে প্রবেশ করে)
ক- (কান্না কান্না মুখে) বউদি বউদি আপনি এখানে ? আর ওদিকে যে সব্বনাশ হয়ে গেছে।
(দুজনে চমকে উঠে) নে ও সু- কি কি হয়েছে ?
ক- দাদার ...
নে- দাদার কি হয়েছে ?
ক- দাদার যে অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে ।
নে- নাআআআআআ। কোথায় ? আমি যাব।
সু - চল,আমি ও যাচ্ছি ।
নে- না, তোমার কোথায় যাওয়ার আছে বলছিলে যাও, আমার সঙ্গে যেতে হবে না।
সু- কিন্তু...
নে - তাছাড়া সে রকম দরকার হলে আমিই তোমাকে ডেকে নেব,
ক- হ্যাঁ। তাছাড়া আমরা তো সব আছি। বউদির কোন সমস্যা হবে না।
( ওরা দুজনে দ্রুত বেরিয়ে যায়। সুবির ইতস্তত করে চলে যায়। ব্যস্ত স্টেশন । প্রচুর লোকজনের ভিড়। ট্রেন আসার আওয়াজ পাওয়া যায়। খুব জোরে একটা চিৎকার। সমবেত স্বরে লোকজন
চিৎকার করে - পড়ে গেল পড়ে গেল , আহারে মেয়ে টা পড়ে গেল।হেই হেই রব শোনা যায় । রেল চলে যাওয়ার শব্দ ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসে।
পূর্বের জায়গায় ওরা দাঁড়িয়ে পড়ে,ফ্লাসব্যকের আগের জায়গায়।)
নে- হাঁস, হাঁস না সেদিন তো দুজনে খুব হেঁসে ছিলে, বুঝেছ আমি কিছু বুঝতে পারিনি?
ক- বিশ্বাস করুন বউদি আমি কিচ্ছু করিনি, সব ওর বুদ্ধি
হি- বেইমান। ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার বুধি কে দিয়েছিল ?
( ওরা দুজন নিজেদের মধ্যে ঝকড়া করে। ওদিকে আপার স্টেজে দেখা যায় পেত্নি নেত্য ও সুবির হাত ধরা ধরি করে নাচছে, । পিরিতি রসের গজা গান বাজতে থাকে আস্তে আস্তে হতে হতে জোরে খুব
জোরে বাজতে থাকে ,এই গান বাতাসে মিলিয়ে যায় , ব্যাকগ্রাউনড মিউজিক দিয়ে বাজতে থাকে ) 

।। যবনিকা...।। 

================






বিশ্বনাথ প্রামাণিক
সোনারপুর






সহযোগিতা কাম্য

এই সংখ্যার সমস্ত লেখা একত্রিত করে একটি সুসজ্জিত ইবুক তৈরি করা হয়েছে। আপনি যদি সংগ্রহ করতে আগ্রহী হন তাহলে ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ নম্বরে ন্যুনতম ১০ টাকা google pay, phonepe, paytm, freecharge বা amazon pay করতে পারেন। প্রদানের স্ক্রীনশট ওই নম্বরে whatsapp করলেই ইবুকটি পেয়ে যাবেন। সহযোগিতা কাম্য।

 



মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩