google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re ছোটগল্প ।। রণজিৎ হালদার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ছোটগল্প ।। রণজিৎ হালদার



আগুন 



অন্ধকার ঘরে দুটো জিন্দা লাশ । দরজা জানালা হাট করে খোলা।বাইরে একটানা বৃষ্টি। ঝাপটায় সামুদ্রিক ঝড়ের তেজ ।বিছানা ভিজে, মেঝে ভিজে। সারা ঘর জলে ভাসছে ।ঝড়ে ওপরের জানলা ভাঙছে, টেবিলের ওপর রাখা কাল রাতের খাবার হঠাৎ মেঝে পড়ে গেল । কারোর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।কারোর কিছুই যায় আসে না। সারা বাড়ি ফাঁকা। আত্মীয় পরিজন সন্ধ্যার আগে চলে গেছেন। ফাঁকা বাড়ি। শুধু একটা ঘরে ,বিদ্যুতের আলোয় দেখা যায় একজন মেঝেতে পড়ে রয়েছে আর একজন দরজার চৌকাঠে বসে । ঝড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে  বৃষ্টিও বাড়ছে।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত , রাত থেকে মধ্য রাত আসে। চারিদিক, অন্ধকার সমুদ্রে ডুবছে আর ভাসছে।
আজ রাতে মনে হয় পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে। এইত শুভ সময় পালানোর-- চিরদিন, চিরকালের জন্য। 
রাত আন্দাজ দুটো। এতক্ষনে অশোকের বডি পুড়ে নিশ্চই ছাই হয়ে গেছে ।বৃষ্টির জলে চিতার ছাই ধুয়ে গেছে।
অন্ধকার হাতড়ে এক ছায়া-মুর্তি ঘর থেকে আপন খেয়ালে বেরিয়ে যায়। পাশের ঘরে , সিঁড়ির  তলায় রান্নাঘরে মরিয়া কিছু খুঁজতে থাকে।
তারপর হঠাৎ খোলা ছাদে উঠে যায়। আবার কি মনে হতে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে।
এরপর  একহাতে কেরোসিন এর জারিকেন ,আর এক হাতে দেশলাই তুলে নেয়। খানিকক্ষণ বিদ্যুতের রূপালি ঝলক দেখে ।আবার দেখে।
আবার।
আবার। 
 তারপর হঠাৎ  পুরো কেরোসিন নিজের উপর ঢেলে নেয়। এবার দেশলাই জ্বালার পালা। যতবার আগুন জ্বালার চেষ্টা করে ততবার  হাওয়ার দমকে দেশলাই  কাঠি নিভে যায়। 
মরিয়া হয়ে খুব জোরে দেশলাই জ্বালতে গিয়ে  দেশলাইটা হাত থেকে সজোরে ছিটকে পড়ে ।

অন্ধকারে  পাগলের মত  দেশলাই টা খুঁজতে থাকে।না কোথাও   তো নেই কোথাও  গেল ! নেওয়ার আগে কে যেন দেশলাই টা তুলে তার দিকে এগিয়ে দেয়। 
লাশটা চমকে ওঠে । কার হাত । কে তাকে মরতে সাহায্য করতে চায়।
হঠাৎ আকাশের বিদ্যুত চমকে ওঠে। জোরালো আলোয় প্রথম লাশটা দেখে পিছনে আর একটা লাশ ।যে এতক্ষণ মেঝে পড়েছিল। অন্য  লাশটা এতখন ধরে তাকে ফলো করে এসেছে। 
" কেন মরতে চাও? " 
" আর কি করব ? "
" মরলে সব মিটে যাবে ? "
"হ্যাঁ" ।
"তাহলে আমায় সঙ্গে নাও।"
 "তেল আর নেই ।আমায় জড়িয়ে ধরে থাকতে পারবে ?"
"হয়ত পারব না । মরে লাভ ? যারা আমার ছেলেটাকে মারল , তাদের তো আরও সুবিধা  হবে? "
" আমি একা কি করব? দেখলেনা সবাই মিলে খুন করল।"
" আমাদের বাড়ি ,ঘর  জায়গা,  জমি , এত টাকা  কি কাজে লাগবে ? 
" জানিনা "
"বিক্রি করে ......যারা মারতে পারে তাদের দিই চলো !  আমরা কেন জ্বলব ?  একা না জ্বলে চলো ওদের জ্বালাই। "
"লাভ .... কি হবে ?   "  ও গো দেখো , আর কোন অশোক কে   তাহলে এভাবে মরতে হবে না......... মরতে দেব না ...... মরতে দেব না।"
সপ্তাহ ধরে চান, খাওয়া, বিশ্রাম না পেয়ে , দুঃখ, কষ্ট , ক্ষোভ,  চরম হতাশা , আর  চাপা যন্ত্রণার আগুনে পুড়তে পুড়তে লাশ হয়ে যাওয়া দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ঝড়ের মুখে শক্ত ভাবে দাঁড়ায়।
বাইরে শুধু বাজ পড়ছে। দেশলাইটা দ্বিতীয় লাশটা আগলে থাকে। আর যেন কোন বৃষ্টিতে  সেটা না ভেজে ।

================


সহযোগিতা কাম্য

এই সংখ্যার সমস্ত লেখা একত্রিত করে একটি সুসজ্জিত ইবুক তৈরি করা হয়েছে। আপনি যদি সংগ্রহ করতে আগ্রহী হন তাহলে ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ নম্বরে ন্যুনতম ১০ টাকা google pay, phonepe, paytm, freecharge বা amazon pay করতে পারেন। প্রদানের স্ক্রীনশট ওই নম্বরে whatsapp করলেই ইবুকটি পেয়ে যাবেন। সহযোগিতা কাম্য।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন