উজ্জ্বল উপস্থিতি
অঙ্কিতা পাল
সুকল্যাণ তার উচ্চশিক্ষা শেষ করে এইসবে বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরেছে। তাকে পেয়ে পরিবার খুব আনন্দিত এবং উচ্চসিত, প্রায় পাঁচ বছর পর তার বাড়ি ফেরা। তার মা খাবারের জন্য খাবারের ডালি সাজিয়ে বসে আছেন, এমন সময় সুকলাল প্রশ্ন করে - মা জয়া কেমন আছে? তার মা খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে এবং বলেন - হয়তো ভালো। তার খবর আমরা আর কেউ রাখেনা। তুমিও আর রেখো না। গম্ভীর গলায় বলেন - তার কথা এবাড়িতে আর উচ্চারণ হয় না। তোমার বাবা জানতে পারলে খুব রাগারাগি করবেন, তখন ব্যাপারটা খুব খারাপ হবে। সে তখন তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে - কি হয়েছে মা তুমি কি বলছো বুঝতে পারছিনা। মা আবার গম্ভীর গলায় বলেন - তুমি কি আজও তাকে ভুলতে পারোনি, যত তাড়াতাড়ি তাকে ভুলে যাবে ততই মঙ্গল।
একথা বলে মা চলে যান।
সুকল্যাণ এর ব্যাপারটা ভালো লাগে না।
সে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে জয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তাদের বাড়ি পৌঁছে চিৎকার করতে থাকে - জয়া তুমি কেমন আছো? জয়া মা দরজা খুলে সুকল্যাণ কে দেখে হঠাৎই চমকে ওঠেন এবং চলে যাও বলে দরজাটা বন্ধ করে দেন। সুকল্যাণ যায় না সে দরজার কড়া নাড়তে থাকে এর অনেকক্ষণ পর জয়া র মা দরজা খুলে সুকল্যাণ কে ভিতরে ঢুকিয়ে একটি চেয়ারে বসতে বলেন এবং তাতে সামান্য চা করে দেন। সুকল্যাণ প্রশ্ন করে - কাকিমা জয়া কোথায়? জয়া র মা প্রশ্ন শুনে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে বলে - তিন বছর হয়ে গেল তার বিয়ে দিয়েছি। শুনে আচমকাই সুকল্যাণ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় এবং তার হাত থেকে কাপ প্লেট পড়ে ভেঙে যায়। খানিকক্ষণ স্থব্দ থাকার পর সে ক্ষীণ কন্ঠে বলে - মানে? আচ্ছা আপনি আমাকে কি ভাবেন বলুনতো। জয়ার মা নীরব থাকেন তার চোখে কেবলই জল গড়িয়ে পড়ে। তিনি আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলেন - তখন তোমরা বড়ই ছোট আঠারো বছর বয়স হয়নি। হ্যাঁ এ কথা ঠিক যে তুমি তাকে পছন্দ করতে সেও করতো। আমার বাবা তোমার পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দিলেন। তোমাদের অনেক টাকা-পয়সা বাবা কিন্তু আমরা মধ্যবিত্ত। জয়ার বাবা সামান্য প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন, তাই জয়া কে সামান্য সরকারি কলেজে বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছে। গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর জয়া র বাবা তোমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান - জানিনা তাদের কি কথোপকথন হয়েছিলো, ফেরার পথে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যান। বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। সুকল্যাণ আর কিছু না বলে জয়া দের বাড়ি থেকে দ্রুত বেরিয়ে পড়ে।
সে যখন বাড়ি ফিরে আসে তার বাবা প্রচন্ড রেগে যান এবং বলেন - কোথায় গিয়েছিলে তুমি ওই গরীব ভিখারি দের বাড়িতে। লজ্জা করে না তোমার তারা আমাদের কাছে হাত পাততে আসে। সুকল্যাণ র বাবা নাক সিঁটকিয়ে ব্যঙ্গ করে বলেন - ঐতো বামন স্কুল মাস্টারের মেয়ে, কাল বেটে দেখলে গা জ্বলে যায়।
সুকল্যাণ এসব কথা সহ্য করতে না পেরে খুব রেগে যায় এবং বাবার ওপরে চিৎকার করে বলে - এ দুনিয়ায় গরীব বড়লোক বলে কিছু হয় না বাবা ভালোবাসাই আসল। সুকল্যাণ এর মা দু'জনকেই থামানোর চেষ্টা করেন এবং ছেলেকে বলেন - আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম। কেন গেছিলে তুমি ওদের বাড়িতে?
আজ থেকে তিন বছর আগে তারা আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল তাতে আমাদের কোনো সম্মতি ছিল না । তোমার বাবা তাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন।
পরবর্তীকালে শুনেছি জয়ার বিয়ে হয়ে যায়। সুকল্যানের মা গম্ভীর কণ্ঠে আবার ছেলেকে বোঝাতে থাকেন - তুমি ভুলে যাও। জয় কে জীবনের মতন ভুলে যাও, নতুন করে জীবন শুরু করো।
তারপর সুকল্যানের অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকে বাবা ও মায়ের কথায় বিয়ে করতে হয়।কিছু বছর অতিবাহিত হয় সুকল্যাণ একটি কন্যা সন্তান হয়। দেখতে দেখতে এখন তার তিন বছর বয়স এবং তার স্কুলে ভর্তির সময় হয়ে যায়.........
সুকল্যাণ ও তার স্ত্রী মৌমিতা তাদের একমাত্র মেয়ে সন্নিতা কে নিয়ে কলকাতার সবচেয়ে বড় স্কুলে ভর্তির জন্য নিয়ে যায়, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জয়া ব্যানার্জি। দীর্ঘ আট বছর পর সুকল্যাণ ও জয়ার আবার দেখা হয়। সুকল্যাণ উপলব্ধি করতে পারে, এত বছর পরেও জয়ার মনে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি রয়েছে।
==============
অঙ্কিতা পাল
ভাঙ্গড় দক্ষিণ ২৪ পরগনা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন