Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

রূপকথার গল্প ।। আজব নগরের কথা ।। মিঠুন মুখার্জী


।। আজব নগরের কথা ।।

মিঠুন মুখার্জী


আজ থেকে কয়েক শ' বছর আগে আজব নগর নামক একটা জায়গা ছিল। সেখানে সব আজব আজব ঘটনা ঘটত। এই দেশের সকল মানুষ চাইলেই সব চাওয়া পুরন করতে পারতেন। তার জন্য রাজ্যের রাজার কাছে দরবার করতে হতো। রাজা প্রজাদের সমস্ত মনোবাসনা পূরণ করতেন। রাজা অজয় বর্মা খুব দান-ধ্যান করতেন। তাঁর তিন রানী ছিল। তিনজনই খুব সুন্দরী, ফর্সা এবং জ্ঞানী ছিলেন। প্রত্যেক পত্নীর সঙ্গে রাজা আলাদা আলাদা ভাবে সময় দিতেন। তাঁদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা ঘর ছিল। 
 
    বড় রানীর নাম রজনী। ফুলের মতো সুন্দর ইনি। স্বভাবেও খুব কোমল প্রকৃতির। এই রানীর এক পুত্র সন্তান ছিল। নাম রবি বর্মা। মেজো রানীর নাম সুদর্শনা। যেমন দেখতে, তেমন গুন ছিল এই রানির। এই রানির একটি মেয়ে ছিল--- নাম রুপা বর্মা। আর ছোট রানীর নাম ছিল গান্ধারী। এই রানীকে  দেখতে সুন্দর হলেও মন তেমন সুন্দর ছিল না। তাছাড়া এর কোন সন্তান হয়নি। রাজা অজয় বর্মা এই রানীকে বিবাহ করেছেন মাত্র দুই বছর। এই রানী কালাবিদ্যা জানতেন। তাছাড়া তাঁর বাবা একজন মুনি ছিলেন এবং মা একজন রাক্ষসী। এই খবর কেউ জানত না। গান্ধারীর মা মানুষের রূপ ধরে থাকতেন। একমাত্র গান্ধারী ও ওর বাবা বিষয়টা জানতেন। গান্ধারীর মধ্যে দুটি সত্তা লুকিয়ে ছিল। সে যেমন মানুষ, তেমনি রাক্ষসীও ছিল বটে। বড় রানী ও মেজোরানীর প্রতি অন্তরে তার বড়ই ঈর্ষা ছিল। তাদের সামনে ভালো ভাব বজায় রেখে চলতেন। অথচ ভিতরে ভিতরে ক্ষতি চাইতেন।
 
             ছোটরাণীর জন্মানোর পর বড় হওয়ার কাহিনী সবার অজানা ছিল। ছোট বেলায় একবার বাড়িতে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। মাথায় চোট পেয়ে রক্ত বেরিয়েছিল। তাঁর মা সুহাসি রাক্ষসী রেগে গিয়ে নিজের শরীর থেকে ছুরি দিয়ে কেটে, রক্ত বের করে, সেই রক্ত গান্ধারীর বুকে ও কপালে ধরে মন্ত্র পড়েছিল। মিনিটখানেকের মধ্যে গান্ধারী বড় হয়ে শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করেছিলেন। তাঁর রাক্ষসীর মতো দাঁত ও হাতে-পায়ে নখ আছে। কিন্তু কালা শক্তির বলে সে সেগুলিকে বস করে রেখেছেন।
 
          রাজা অজয় বর্মা কোনদিন গান্ধারীর আসল রূপ দেখেন নি। একবার একটা ছাগল এক নিশ্বাসে মুখের মধ্যে টেনে নেওয়ার সময় হঠাৎ পিছন থেকে রাজা তাঁকে ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি সে ছাগলটাকে উদরস্ত করে নেয় এবং তারপর মানুষের রূপে ফিরে আসেন। রাজা ঠোঁটের উপরে একটু রক্ত দেখেছিলেন। কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন হয়তো কেঁটে গেছে। তিনি বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দেননি।
 
         প্রত্যেক বছর ছেলে রবি বর্মা  ও মেয়ে রুপা বর্মার জন্মদিন রাজা অজয় বর্মা খুব আড়ম্বরের সঙ্গে পালন করেন। রাজ্যের সমস্ত প্রজাদের ঐদিন দুপুরবেলা পেট ভরে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করেন তিনি। তাছাড়া তাঁর রাজ্যের সমস্ত প্রজাদের চাহিদা ও অভাব তিনি ওই দিন মেটান। কারোর মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, কারোর চাষের জন্য বলদ প্রয়োজন, কারো শরীর খারাপের পথ্য কেনার প্রয়োজন, কারো খাজনা দিতে পারছে না তা মুকুবের আবেদন, কারো সাংসারিক ঝামেলা মেটানোর আর্জি। সব সমস্যা নির্দ্বিধায় মেটাতেন তিনি। সকল প্রজারা রাজা অজয় বর্মার ধন্য ধন্য করত। বড় ও মেজোরানী মনে মনে খুব খুশি হলেও ছোটরানী তা কোন মতে মেনে নিতে পারতেন না। তিনি চাইতেন, সুযোগ বুঝে দুই রাণী ও তাঁদের সন্তানদের হত্যা করে অজয় বর্মার একমাত্র রানী হয়ে থাকবেন। তিনি তাঁর জন্য যা করার প্রয়োজন তাই করবেন বলে  মনে মনে সংকল্প করেন। রাজবাড়ীতে ছোট রানীর বাবা-মা তেমন আসেন না। যদি রাজার কাছে ধরা পড়ে যান।
 
              জন্মদিনের অনুষ্ঠানে রাজা অজয় বর্মা প্রজাদের বস্ত্র-চালও বিতরণ করতেন। তাছাড়া ছাগল ও গরু দান করতেন। সেই সব নিয়ে প্রজারা মহানন্দে বাড়ি ফেরার সময় কারও কারও আর কোনো খোঁজ পাওয়া যেত না। প্রজাদের প্রাপ্ত গরু ও ছাগল তো ছোটরাণী খেতই, সাথে সাথে প্রজাদেরও ভক্ষণ করতেন---যাতে তার বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্য দিতে না পারে।
 
            একদিন রাজা অজয় বর্মা পার্শ্ববর্তী বিদিশার রাজার আমন্ত্রণ রক্ষার্থে সৈন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে মন্ত্রীর হাতে সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। ছোট রানী সেই সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময় বড় রানী তাঁর ঘরে পূজো করছিলেন ও রবি বর্মা ঘরের মধ্যে খেলছিলেন। তখন ছোট রানী গান্ধারী একজন সন্ন্যাসীর রূপ ধারণ করে বড় রাণীর ঘরের সামনে এসে ভিক্ষা চাইলেন। বড় রানী পুজো করতে করতে হঠাৎই বাইরে এসে সন্ন্যাসীকে দেখে দান স্বরূপ কিছু ফল দিতে গেলেন। হঠাৎ সন্ন্যাসী তাঁর হাত ধরে মহাশূন্যে উড়ে গেলেন। এই দৃশ্য দেখে বড় রানী জ্ঞান হারালেন। এদিকে রবি বর্মা মাকে না দেখে মেজ মাকে গিয়ে জানান। তার মাকে সে কোথাও দেখতে পারছে না। তখন মেজোরানী মন্ত্রীকে খবর দেন। সমস্ত প্রাসাদময় বড় রানীর খোঁজ চলে। কিন্তু তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় না। রবি বর্মা  মাকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই খবর পাশের দেশে দূত মারফত পেয়ে রাজা অজয় বর্মা সেইদিনই নিজ রাজ্যে ফিরে আসেন। রাজপ্রাসাদে এসে বড়রাণীর জন্য খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। কে এই কাজ করল, কোথায় গেল সে--- নানান প্রশ্ন তাঁর মনে উঁকি দিতে লাগল। তিনি রাজসেনাপতিকে ডেকে বললেন---"আশেপাশের রাজ্যে এবং নিজেদের রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সৈন্য পাঠিয়ে রানীর খোঁজ করুন। যেখান থেকে হোক বড় রানীকে খুঁজে আনতে হবে।" রাজার আদেশ মতো সেনাপতি কিছু সৈন্যদেরকে রাজ্যের পূর্বে ও দক্ষিণে বিদিশা ও কৃষ্ণনগরে পাঠিয়ে দিলেন এবং তিনি নিজে কিছু সৈন্য নিয়ে আজব নগরের আনাচে-কানাচে রানীর খোঁজ করতে চলে গেলেন।
 
                 এদিকে বড় রানীকে এক গুহার মধ্যে এনে একটা বোতলের মধ্যে বন্দি করে রাখেন ছোট রানী গান্ধারী। তাঁর আসল রূপ বড় রানীকে সে দেখায় না। তাঁর মা ও কিছু সাধারন রাক্ষসের উপর বড় রানীর দায়িত্ব দিয়ে ছোট রানী রাজ্যের ফিরে আসেন। বড় রানী বুঝতে পারেন, তিনি রাক্ষসদের খপ্পরে পড়েছেন। তবে এই সন্ন্যাসী আসলে যে কে এবং তাকে এখানে কোন স্বার্থে তুলে নিয়ে এসেছেন---তা তিনি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ছোটরাণীর মার কাছে বারবার তাঁকে তুলে আনার কারণ বিভিন্ন কৌশলে বড় রানী জানার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি।
 
              এদিকে সেনাপতিরা বড় রানীর খোঁজে গেলে রাজা মেজোরানী ও ছোটরাণীকে রাজপ্রাসাদে ডেকে আনার জন্য দাসীদের আদেশ দিলেন। ছোটরাণীর ঘরে তাঁর প্রিয় দাসি তাকে ডাকতে গিয়ে  আসল রূপ দেখে ফেলে। তখন সে চিৎকার করে পালাতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। ছোট রানীর চোখের আকর্ষণে দাসি নিজের থেকেই ছোটরাণীর কাছে ধরা দেয় এবং সে তাকে হত্যা করে পুড়িয়ে দেয়। ছোট রানী বুঝতে পারেন, রাজা তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন নিশ্চয়ই। তারপর তিনি রাজপ্রাসাদে রাজার সঙ্গে দেখা করেন। এদিকে মেজোরানীও অনেক আগেই রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হন। রাজা তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসা করেন---তাদের দিদিকে দেখেছেন কিনা। তাঁরা জানান--- "তাঁরা তখন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁরা কারকে প্রাসাদে আসতেও দেখেন নি।" ছোট বউ রাজার অবস্থা দেখে মনে মনে হাসছিলেন। এরপর রাজা খোদাবক্স নামের একজন  আল্লার বান্দাকে ডেকে আনার জন্য মন্ত্রীকে বলেন। মন্ত্রী লোক পাঠিয়ে খোদাবক্সকে ডাকতে পাঠান। এই খোদাবক্সের ছিল আশ্চর্য অলৌকিক ক্ষমতা। এক গামলা জলে মন্ত্র পড়ে যা চাইতেন তাই দেখতে পারতেন। তার একটি জাদুর চাটাই ছিল। সে সেই চাটাই করে যেখানে খুশি যেতে পারতেন। এমনকি শত্রুকে আঘাত না করে মন্ত্রের দ্বারা অকেজো বানিয়ে দিতে পারতেন।
 
                 খোদা বক্সের কথা শুনে রাক্ষসী গান্ধারী ভয় পেয়ে যান। তিনি ভাবলেন--- 'ও আসলে তাঁর সমস্ত রহস্য উন্মোচন হয়ে যাবে।' তখন তিনি রাজাকে বললেন--- "খোদা বক্সের কি দরকার? দিদি হয়তো আশেপাশের কোথাও গেছেন। সমস্যায় পড়েছেন বলে আসতে পারছেন না। এসে পড়বেন। চিন্তা করবেন না। খোদা বক্সের কোন দরকার নেই।" রাজা অজয় বর্মার ছোটরাণীর কথায় সন্দেহ লাগে। মনে মনে ভাবেন--- "ছোটরাণী এভাবে বাঁধা দিচ্ছেন কেন? তাহলে ও কিছু করেনি তো!" পরক্ষণেই আবার মনে হয়--- "না, না। আমার ভুল হচ্ছে। ও কি করবে? ওদের বড় রানী এত ভালবাসেন।"
 
               ঘন্টা দুয়েক পরে খোদাবক্স রাজপ্রাসাদে এসে উপস্থিত হন। সমস্ত ঘটনাটা রাজার মুখে শুনে তিনি এক গামলা জল আনতে বললেন। একদাসি তাড়াতাড়ি গিয়ে এক গামলা জল এনে খোদাবক্সের কাছে দিলেন। খোদাবক্স সেই জল মন্ত্রপূতঃ করে দেখলেন এক সন্ন্যাসীকে, যে বড় রানীকে তুলে নিয়ে গিয়েছেন। কিছুতেই সে সন্ন্যাসীর মুখ দেখতে পেলেন না। তারপর দেখলেন, এক গুহার মধ্যে বড় রানী একটি বোতলের মধ্যে বন্দি রয়েছেন। আশেপাশে রাক্ষস-রাক্ষসীর দল। তিনি রাজা অজয় বর্মাকে জানান --- "রানীকে রাক্ষসেরা ধরে নিয়ে গেছে। তাকে এক গুহায় বোতলের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে।" কিন্তু তিনি যে সন্ন্যাসীর মুখ দেখতে পারছেন না সেকথাও জানান রাজাকে। এরপর ছোট রানী ভয় পেয়ে যান। এদিকে রবি বর্মা মাকে না পেয়ে খাওয়া-ঘুম বন্ধ করে দেন। শুধু কান্না করেন। তার মুখের দিকে তাকানো যায়না। নিষ্ঠুর ছোটরাণীর তাঁদের কষ্ট পেতে দেখে আনন্দ হয়। কিন্তু তিনি ভুলে যান, ধরা তাকে একদিন পড়তেই হবে। সেটি সময়ের অপেক্ষা। খোদাবক্স জায়গাটার নাম বলতে পারেন না। কিন্তু দিক নির্দেশ করে বলে দেন---এই প্রাসাদের উত্তর দিকে সমুদ্রের মাঝে একটা পাহাড়বেষ্টিত দ্বীপ আছে, সেখানে গুহার মধ্যে রাণীমাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। রাজার একান্ত অনুরোধে খোদাবক্স তার জাদুর চাটাইতে করে রাজা, সেনাপতি, মন্ত্রী ও দশ জন সৈন্য নিয়ে সেই দ্বীপের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন।
 
             এদিকে রাজারা রওনা হওয়ার পর বালক রবি বর্মাকে ছোট রানী গান্ধারী তুলে নিয়ে যান। রানীর আসল রূপ দেখে বালক রবি বর্মা চৈতন্য হারান। খোদাবক্স তার চাটাইয়ের সাহায্যে সমুদ্র পার হয়ে, গাছপালা পার হয়ে অবশেষে সেই গুহার কিছুটা দূরে এসে নামেন। সৈন্যরা দেখেন--- গুহার প্রবেশ পথে একজন রাক্ষস সৈন্য হাতে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। রাজা তাঁর মন্ত্রীকে ও সৈন্যদের নিয়ে গুহায় প্রবেশ করেন। গুহায় প্রবেশ করার সময় তাদের যে সমস্ত রাক্ষস-রাক্ষসীরা বাঁধা দেন, তাদের হত্যা করেন। অবশেষে দেখেন চুল ঝাঁকড়া এক রাক্ষসীর হাতে একটা বোতল। তার মধ্যে বড় রানী বন্দি। রাজা ওই রাক্ষসীর কাছে এগোতেই সে মুখ দিয়ে আগুন ছুড়ে দেয়। খোদাবক্স রাক্ষসীকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্র পড়ে। ফলে রাক্ষসীর মুখ দিয়ে আগুন বের করার শক্তি চলে যায়। এরপর রাক্ষসী বড়রাণীকে নিয়ে সেখান থেকে উড়ে যায়। জাদুর চাটাইতে করে খোদাবক্স সবাইকে নিয়ে পিছু নেয়। উড়তে উড়তে রাক্ষসী আজব নগরে এসে উপস্থিত হয়। রাক্ষসী মাটিতে দাঁড়িয়ে বিশাল আকার ধারণ করে এবং উপর থেকে বড় রানীকে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখায়। সে বলে--- "কেউ যদি আমার দিকে আর এক পাও এগোয়, তাহলে রানীকে মেরে ফেলবো।" রাজার নির্দেশে আর কেউ এগোয় না। খোদাবক্স জাদু শক্তির দ্বারা ছোটরাণীর মাকে বন্দি করে ফেলেন। সে শত চেষ্টায় এ বাঁধন ছিড়তে পারে না। চাঁটাইতে উড়ে গিয়ে রাক্ষসীর হাত থেকে বোতলটি উদ্ধার করেন। তারপর মন্ত্রের দ্বারা বোতল ভেঙে বড় রানীকে বের  করেন এবং রানীকে আগের মতো অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। এমন সময় গান্ধারী রাক্ষসী তাঁর আসল রূপ নিয়ে সকলের সামনে আসেন ও সঙ্গে অসাঢ় রবি বর্মাকে নিয়ে আসেন। রাজাকে বলেন--- "আমার মাকে ছেড়ে দিতে বল রাজা। নতুবা তোর ছেলেকে হত্যা করব।" 
 
    রাজা খোদাবক্সকে সুহাসি রাক্ষসীর বাঁধন খুলে দিতে বলেন। খোদাবক্স গান্ধারীর ডান হাতে ছয়টা আঙ্গুল দেখে চিন্তা করেন এবং বুঝতে পারেন। তিনি রাজাকে বলেন--- "এই রাক্ষসী সেই সন্ন্যাসি, যে বড়রাণীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। ওকে ওর ছয়টা আঙ্গুল দেখে চিনতে পেরেছি।" খোদাবক্সের কথা শুনে রাজাও মনে মনে চিন্তা করলেন---তাঁর ছোট রানীরও ডান হাতে ছটি আঙ্গুল। তাহলে ছোট রানীই কি!! এরপর রাজা গান্ধারীকে জিজ্ঞাসা করলেন---"কে তুই? কি চাস?" তখন গান্ধারী বিকট হাসি হেসে ছোটরাণীর রূপে ফিরে আসেন। রাজা তাকে দেখে বিস্মিত হন। তিনি ছোটরাণীকে বলেন---"তুমি একজন রাক্ষসী! আমার সাথে এতদিন ছলনা করছিলে!! কেন তুমি বড় রানীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলে?" এরপর ছোট রানী তাঁর উদ্দেশ্যের কথা সকলের সামনে বলে ফেললেন। রাজা ছোট রানী গান্ধারী রাক্ষসীর উপর প্রচন্ড রেগে গেলেন।
 
              এরপর মুহূর্তের মধ্যে খোদাবক্স গান্ধারীকেও বন্দি করে ফেললেন। তারপর গান্ধারীর হাত থেকে রবি বর্মাকে উদ্ধার করলেন। রাজ সৈন্যরা সুহাসি ও গান্ধারী কে তলোয়ার দিয়ে রাজার আদেশে মারার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তাদের দুজনের কেউই মরলো না। তাঁরা বিকট হাসতে লাগলো। বলল--- "আমাদের মারার ক্ষমতা তোদের নেই। আমরা অমর।" এমন সময় খোদাবক্স চোখ বন্ধ করে মন্ত্র পড়ে জানতে পারলেন আজব নগরের পশ্চিমে একটি বট গাছের কোটরে দুটি পায়রা আছে। সেই পায়রার মধ্যে সুহাসি ও গান্ধারীর প্রাণ লুকানো আছে। সেই পায়রা দুটোকে মারতে পারলে তবেই এরা মারা যাবে।
 
            খোদাবক্স রাজাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে এসে সমস্ত বিষয়টি জানালেন। তারপর জাদু চাটাইতে খোদাবক্স রাজাকে নিয়ে সেই বটগাছের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। এদিকে সেনাপতি, মন্ত্রী ও সৈন্যরা রাক্ষসী দুজনের সাথে লড়াই করতে থাকে। বট গাছের সামনে এসে রাজা ও খোদাবক্স দেখেন, সেই পায়রা দুটোকে পাহারা দিচ্ছে দুটি বিষধর সাপ। খোদাবক্স তার জাদু শক্তির দ্বারা সাপ দুটিকে পরাস্ত করে পায়রা দুটিকে ধরে। রাজা ও  খোদাবক্স এক একটি পায়রার ধর থেকে গলা আলাদা করে দেন। সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যরা দেখেন রাক্ষসী দুজন চিৎকার করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং মারা যান। তারপর আগুন ধরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যান।
 
               এরপর খোদাবক্স ও রাজা অজয় বর্মা আজব নগরে ফিরে আসেন। রাজা খোদাবক্সের উপর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে মুক্তোর মালা, স্বর্ণমুদ্রা ও পাঁচ বিঘা জমি দান করেন। খোদাবক্স মহানন্দে বাড়ি ফিরে যান। রাজা তাঁর দুই রাণী ও ছেলে মেয়েকে নিয়ে সুখে বসবাস করেন। কোন অশুভ শক্তি তাদের জীবনে আর প্রবেশ করে না।

          ==========================

                  MITHUN MUKHERJEE
                  Vill-Nabajiban pally
                  P.o+P.s- GOBARDANGA
                  Dist - 24 Pgs (N)
                  Pin- 743252


মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩