Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী বাসুদেব বলয়ান্ত ফাদকে ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী

 

ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী

প্রণব কুমার চক্রবর্তী


          ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম কোনটা এবং কে সেই স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রামী নেতৃত্ব , এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের একটু বিতর্কের মধ্যে ঢুকতে হবে । আমাদের আগে ঠিক করে নিতে হবে আমরা কোনটাকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতার সংগ্রাম বলে আক্ষায়িত করবো - ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যারাকপুরে সেনা ছাউনির কিছু সেনা মঙ্গল পাণ্ডের নেতৃত্বে সিপাহী বিদ্রোহ এবং পরে সেই বিদ্রোহে কিছু রাজা , জমিদার আর রাজনৈতিক চরিত্রের যোগদান করা , না মহারাষ্ট্রের বাসুদেব ফারকের নেতৃত্বে ভিনদেশী ইংরেজ শাসন এবং শোষণ মুক্ত স্বাধীন দেশ গড়ার সংগ্রাম ? 
          
যদিও ইংরেজ সাহেব এবং সাদা চামড়ার ঐতিহাসিকরা সিপাই বিদ্রোহের ব্যাপারটাকে ভারতের জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম বলে মানতে চাননি । তাদের মতে - ওটা ( ১৮৫৭ সালের সেনা ছাউনির ঘটনাটা ) ছিল একটা নিছক সিপাইদের বিদ্রোহ । কিন্তু , অন্য আরেক দল ঐতিহাসিক এবং ইতিহাস সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞের মতে - ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ছিলো আসলে একটা ইংরেজ বিরোধী ভারতীয়দের প্রথম জাতীয়তাবাদী বা স্বাধীনতা অর্জনের সংক্ষিপ্ত আন্দোলন । কারণ , ১৭৫৭ সাল থেকে ইংরেজ বণিকরা এই দেশের মাটিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে  থেকে যেভাবে এদেশীয় রাজা , উজির , জমিদার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের উপরে যেভাবে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অত্যাচার , নিপীড়ন চালাচ্ছিল , ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ সেই অত্যাচারী ইংরেজ বণিক শাসনের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার একটা বহিঃপ্রকাশ মাত্র । প্রথম ঝটকা ! সেই কারণেই বেশিরভাগ ঐতিহাসিক এবং বিশেষজ্ঞের মত - ওটাই ( ১৮৫৭ সালের সিপাই বিদ্রোহের ঘটনাটাই ) হলো পরাধীন ভারতের প্রথম স্বাধীনতার মহাবিদ্রহ । কিন্তু , কার্যত সিপাহি বিদ্রহ ছিল ইংরেজ ভারতীয় সেনাদের একটা এনফিল্ড রাইফেলের গ্রিজ বা চর্বি লাগানো বল - কার্তুজ সক্রান্ত প্রতিবাদের প্রথম পদক্ষেপ । ওটা মূলত ছিল কিছুদিনের ব্যক্তিগত ধর্ম সংক্রান্ত ব্যাপার । ওই বিদ্রোহের পেছনে ছিল না কোনও সংগঠিত বিপ্লবী কিংবা জাতীয়তাবাদী ভারতীয় সংগঠন । 
         
     বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং বিশারদদের কথা মতো ওই বিদ্রোহকে যদি আমরা ভারতের প্রথম স্বাধীনতার মহাবিদ্রহ বলে স্বীকার করে নিই , তাহলে বলতে দ্বিধা নেই যে , ব্যারাকপুরে সেনা ছাউনির সিপাই মঙ্গল পান্ডেই ইংরেজ শাসনাধীন পরাধীন ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং শহীদও বটে ।
         
     মঙ্গল পান্ডে বর্তমান উত্তরপ্রদেশের ( পূর্বতন ইউনাইটেড প্রভিনসের ) নাগোয়াতে মতান্তরে বর্তমান উত্তর প্রদেশের দক্ষিণ পূর্বের ফইজাবাদ জেলার লালিৎপুরের একটা ছোট্ট গ্রামের এক গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মেছিলেন ১৯শে জুলাই ১৮২৭ সালে । ১৮৪৯ সালে মঙ্গল পান্ডে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনী - বেঙ্গল নেটিভ ইনফ্রান্টির ৩৪ নম্বর সেনা ব্যাটালিয়নের ব্যারাকপুরে কর্মরত ছিলেন ।  সেইসময় সেনাদের হাতে যে রাইফেল তুলে দেয়া হতো , তার বল কার্তুজে এক ধরনের তৈলাক্ত জিনিস ( মূলত গরু এবং শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরি করা হতো ) দেয়া থাকতো । গুলি চালানোর সময় সেনাদের সেই কর্তুজ দাঁত দিয়ে কেটে নিয়ে রাইফেল ভরতে হতো । সেইসময় ওই ব্যাপারটা হিন্দু এবং মুসলিম উভয় ধর্মের সেনাদের  কাছে ধর্ম বিরুদ্ধ কাজের সামিল ছিল । সিপাই মঙ্গল পান্ডে তার কিছু সহকর্মীদের নিয়ে প্রথম ওর ( ওই কার্তুজ দাঁতে কেটে রাইফেল ঢুকাবার ) বিরুদ্ধচারণ ও প্রতিবাদ করেন । বলেন - একজন গোঁড়া ব্রাহ্মণ হিসেবে তিনি ওই কাজ ( গরুর চর্বি লাগানো বল কার্তুজ দাঁত দিয়ে কেটে রাইফেলে ভরতে বা লোড করতে পারবেন না । ওই কাজ করতে অস্বীকার করেন এবং অন্যান্য সহকর্মীদের ও করতে নিষেধ করেন । ফলত , ওই প্রতিবাদের কারণে মঙ্গল পান্ডে এবং ওর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সেনাদের উত্তেজিত করবার চক্রান্তের অভিযোগ রুজু করা হয় । বলতে দ্বিধা নেই যে ওই ব্যাপারে মঙ্গল পান্ডে এবং ওর কিছু সহকর্মী ইংরেজ সাহেবদের কুনজরে পড়েন । ওদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে ,  ওকে ( মঙ্গল পান্ডেকে ) বিচার করে ১৮৫৭ সালের ৮ই এপ্রিল ব্যারাকপুরেই প্রকাশ্যে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছিল । পড়ে ঈশ্বরী পান্ডে নামে আরোও একজন সেনাকেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছিল ।
 
          স্বাভাবিক ভাবেই মঙ্গল পাণ্ডের হত্যা সারা ভারতে আগুনের স্ফুলিঙ্গের মত ছড়িয়ে পড়েছিল । এবং বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত ভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটা শুরু হয়েছিল ।  বলাবাহুল্য , ওইসব বিক্ষিপ্ত ঘটনায় ভারতের বিভিন্ন স্থানের ইংরেজ বিরোধী রাজা , উজির , জমিদাস এবং সামন্ত শ্রেণীর লোকজন আর কিছু উগ্র ইংরেজ বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা যোগদান করেছিলেন ।  সেই কারণেই ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহকে কিছু ঐতিহাসিক এমন কী কার্ল মার্কস পর্যন্ত ভারতের প্রথম স্বাধীনতার মহাবিদ্রহ বলে আখ্যায়িত করেছেন । 
 
          ঐতিহাসিকদের মতে " মঙ্গল পাণ্ডের হাত ধরে  ভারতে যে প্রথম ইংরেজ বিরোধী সংগ্রাম শুরু হয়েছিল , তাতে হাত মিলিয়ে তাঁতিয়া তোপি, নানা ফরনবিশ সাহেব , রাণী লক্ষ্মীবাই , প্রমুখের মতো ইংরেজ বিরোধী সংগ্রামীরা একযোগে ওই বিদ্রোহের আন্দোলনকে সমর্থন করে শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহকে সামনে রেখে একটা প্রবল ইংরেজ বিরোধী সংগ্রাম পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন " । কিন্তু , কার্যত সেটা সার্থকতা লাভ করেনি । বলা হয়ে থাকে , ওই কর্তুজের ঘটনাটা ছিলো কিছু ইংরেজ ভারতীয় সেনাদের একটা নিজস্ব সমস্যার ঘটনা মাত্র । ইংরেজ বণিক শাসনের একশ বছর অত্যাচারিত ভারতীয়রা নিজের দেশে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের ব্যবহার এবং অধিকার পেতে পেতে একরকম অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন । তার উপরে ছিলো হিন্দু , মুসলিম এবং আদিবাসী সমাজের লোকদের জোর করে খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণে বাধ্য হওয়াটা মানুষকে সার্বিক না হলেও , খানিকটা ইংরেজ বিদ্বেষী করে তুলেছিল । বলা বাহুল্য , সেইসব ধর্মান্ধ ক্রুদ্ধ মানুষ তাদের গোষ্ঠী এবং সামাজিক মাথারা ওই সিপাইদের বিদ্রোহটাকে স্বাধীনতার সংগ্রামে পরিণত করবার চেষ্টা করেছিল । কিন্তু , প্রকৃতপক্ষে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহটা কোনও মতই ভারতের আম - আদমির গণ বিদ্রোহ বা আন্দোলন ছিল না ।
 
          যারা ১৮৫৭ সালের সিপাই বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতার সংগ্রাম বলতে নারাজ  তাদের মতে - ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত - এক সশস্ত্র এবং দুই হলো অন্যান্য আন্দোলন । অর্থাৎ শান্তিপূর্ন আন্দোলন ।
 
" শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ধারাকেও বেশ কয়েক ভাবে ভাগ করা হয় থাকে। যেমন চরমপন্থী , নরম পন্থী এবং মধ্যপন্থী । এই আন্দোলনগুলো কোনও একটা নিদৃষ্ট মানুষের নেতৃত্বে সৃষ্ট বা তৈরি করা নয় । বিভিন্ন মানুষ , বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন সংগঠনযৌথভাবে এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংঘটিত করতে সচেষ্ট হয়েছিল । বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছিল । পার্টিকুলার এই ব্যাপারে কাউকে নিদৃষ্ট করে কোনও কৃতিত্ব দেওয়া যায় না । " তবে এই প্রসঙ্গে নিদৃষ্ট করে একজনের কথা বলা যায় , তিনিই প্রথম ইংরেজদের এই দেশ ছাড়া করবার লক্ষে নিজের হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন । তিনিই হলেন মহারাষ্ট্রের বাসুদেব ফাড়কে- ভারতের প্রথম সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী ।
 
          বাসুদেব ফাড়কেকে ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবের জনক বলে আক্ষায়িত করা হয়ে থাকে । তিনিই ছিলেন একজন সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি সর্বদাই চাইতেন ভারতকে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্ত করতে । মহারাষ্ট্র জুড়ে যখন চরম খাদ্যাভাব , ইংরেজ সরকারের সহায়তায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যখন ইচ্ছেকৃত ভাবে খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য জিনিস পত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে চলেছিল , তখন বাসুদেব অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন এবং বাসুদেব তার অসংগঠিত ছোট দলবল নিয়ে ওইসব দোকানে গিয়ে হাজির হয়ে , দোকানদারকে হয় দোকান খুলতে বাধ্য করিয়ে , কিংবা বলপূর্বক বন্ধ দোকানের তালা ভেঙে সমস্ত খাদ্য সামগ্রী লুট করে শহর এবং গ্রামের বুভুক্ষু জনতার মাঝে বিলিয়ে দিতেন । মাঝে মধ্যেই অর্থবান ইংরেজ এবং তাদের অর্থবান ভারতীয় দোসরদের বাড়িতে ডাকাতি করে যে সমস্ত অর্থকড়ি পেতেন , সেই সবটাই তিনি গরীব জনতার মধ্যে বিলিয়ে দিতেন । ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে র শেষদিকে তিনিই প্রথম মহারাষ্ট্রের গরীব জনতাকে নিয়ে একটা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তৈরি করেছিলেন । বলাবাহুল্য , সেটাই ছিল ইংরেজ বিরোধী প্রথম জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী সংগঠন । তিনিই বিশ্বাস করতেন - ইংরেজ মুক্ত স্বাধীন ভারতবর্ষই একমাত্র ভারতের জনগণের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তির উপায় । 
 
          বাসুদেব নিজেও যেমন লাঠি খেলা , তরোয়াল চালানো এবং মল্লযুদ্ধ করা জানতেন , তেমনি ওর দলের সব্বাইকে তিনি ওইভাবেই দীক্ষিত করে তুলেছিলেন । কারণ , তিনি জানতেন - ওইগুলো জন মানেই নিজের ভেতরে একটা অদম্য সাহস এবং আত্মশক্তি জাগিয়ে তোলা সম্ভব । এবং সেই কারণেই পরবর্তীকালে আমাদের দেশের বিপ্লবী এবং সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলো তাদের সভ্য এবং সদস্যদের ওইসব খেলা শেখাতেন এবং পারদর্শী করে গড়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যেতেন।
 
          তিনিই ( বাসুদেব ফারকে) ভালো ভাবেই জানতেন যে , অর্থ ছাড়া কোনোভাবেই কোনও সংগঠন গড়ে তোলা সম্ভব নয় । এবং সেই কারনেই তিনি মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন ইংরেজ আর্থবানদের এবং তাদের ভারতীয় তাবেদারদের বাড়িতে ডাকাতি করতেও যেমন পিছু পা হতেন না , তেমনি সরকারি ( সরকারের খাজনা আদায় এবং সঞ্চয় কেন্দ্রগুলোতে ) এবং বেসরকারি অর্থকড়ি প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি করতেও পিছু পা হতেন না । সেই ডাকাতির লুট করা অর্থ তিনি মহারাষ্ট্রের গরীব এবং নিরন্ন - নাখেতে পাওয়া মানুষের মধ্যে যেমন বিলিয়ে দিতেন , তেমনি ব্রিটিশ বিরোধী নিজেদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কাজের জন্য ব্যয় করতেন । 
 
          ইংরেজ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাসুদেব ফারকে তার দলবলকে নিয়ে মহারাষ্ট্রের পুনে শহরটাতে কিছুদিনের জন্য ইংরেজ শাসন মুক্ত এক স্বাধীন সরকার তৈরি করেছিলেন । নীলকর চাষীদের আন্দোলনের সময়ে আমাদের এই বাংলার অন্যতম আন্দোলনকারী নেতা বিশ্বনাথ সরদারকে ইংরেজ শাসকরা যেমন "বিশে ডাকাত" বলে আখ্যায়িত  করেছিল, তেমনি বাসুদেব ফারকেও ইংরেজ শাসকরা মহারাষ্ট্রের "বাসুদেব ডাকাত" বলে আখ্যায়িত করেছিল । ইংরেজ প্রদত্ত ওই সম্মধনকে সে বেশ গর্বের সাথেই গ্রহণ করেছিল । ওকে গ্রেফতার করার জন্য সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছিল । কিন্তু, কিছুতেই ধরতে পারেনি। 
          
    একদিকে ডাকাতি আর অন্য দিকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দিয়ে পুনে শহরটাকে কিছু দিনের জন্য ইংরেজ শাসন মুক্ত করার কারণে  ইংরেজ সরকার ওকে ধরবার জন্য একদম মরিয়া হয়ে উঠেছিল । 
 
         বাসুদেব ফাডকে শুধুমাত্র লুটপাট করেই খান্ত থাকেননি , তিনি পুনে শহরের সাধারণ মানুষের জন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান " পুনা নেটিভ ইনস্টিটিউশন " স্থাপন করেন যেটা পরবর্তী কালে মহারাষ্ট্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত হয়েছে । দেশের ইয়াং ছেলেদের মধ্যে ঐক্য এবং সম্প্রীতি গড়ে তোলার জন্য তিনি মহারাষ্ট্রে ঐক্যবাধিনী সভা নামের একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন।
 
          গ্রেফতারি এড়াবার জন্য বাসুদেব গ্রাম থেকে গ্রামে এবং জঙ্গলে লুকিয়ে বেড়াতেন । ধরা ইংরেজ শাসকদের পুলিশের পক্ষে অসাধ্য হয়ে উঠেছিল । শেষপর্যন্ত ওকে গ্রেফতার করবার জন্য ইংরেজ সরকার দু জন অফিসারকে - একজন সেনা বিভাগের এবং অন্যজন পুলিশ বিভাগের নিয়োগ করেছিলেন । কিন্তু , তবুও ওরা ওকে ধরতে পারেনি । শেষপর্যন্ত ওকে ধরবার জন্য ওই দুজন অফিসার - মেজর স্যার হেনরি ড্যানিয়েল এবং পুলিশ সুপার আব্দুল হোক সরকারের অনুমতিক্রমে - ওর মাথার দাম এক লক্ষ টাকা ঘোষণা করেছিল । যে ওকে ধরিয়ে দিতে পারবে , তাকে ওই এক লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে । ওই ঘোষণার পাল্টা হিসাবে বাসুদেবও মহারাষ্ট্রের গভর্নরের মাথার দাম এক লক্ষ টাকা ধার্য্য করেছিলেন । যে মহারাষ্ট্রের গভর্নরের মাথা কেটে নিয়ে এসে ওর কাছে দিতে পারে , তাকে সে তৎক্ষণাৎই এক লক্ষ টাকা পুয়স্কার দেবে ।
 
          আমাদের দেশে বিশ্বাস ঘাতকের অভাব কোনও দিনই হয়নি । বাসুদেব ফাডকের বিরুদ্ধেও ব্যতিক্রম হয়নি । যাকে এতদিন ভালোবেসে গ্রামবাসীরাই বনে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করতো , টাকার লোভে সেই গ্রামবাসীদের একজন ওকে ইংরেজ পুলিশকে গোপনে সংবাদ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছিল ( ১৮৭৯ সালের ২০সে জুলাই ) । বিচারে তাকে ইয়েমেনের কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল । বলা হয়ে থাকে ১৮৮৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি তিনি খালিহাতে ইয়েমেনের ওই কারাগার কক্ষের দরজা ভেঙে পালিয়ে গিয়েছিলেন । কিন্তু , সেই পালানো বেশিদিন স্থায়ী হয়নি । ইংরেজ পুলিশ আর সেনাবাহিনীর তৎপরতায় খুব তাড়াতাড়িই ফের ধরা পড়ে যান । তাকে পুনরায় জেলে নিয়ে গিয়ে কথা আদায় করার জন্য ইংরেজ পুলিশ ওর উপরে অকথ্য শারীরিক অত্যাচার শুরু করেছিল । বাধ্য হয়ে বিপ্লবী বাসুদেব ফারকে জেলে অনশন শুরু করেন , এবং ১৮৮৩ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি মারা যান ।
 
          এই বিপ্লবী বীর একদমই ব্যক্তিগত স্বার্থ ব্যতিরেকে নিজের দেশের আপামর জনসাধারণের স্বার্থে ভিনদেশী ইংরেজ শাসন মুক্ত করার জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে কসুর করেননি । সেই কারণেই অনেক ঐতিহাসিক এবং ইতিহাস সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞের মতে - ওটাই ছিল পরাধীন ভারতের প্রথম স্বাধীনতার সংগ্রাম , এবং বাসুদেব ফারকেই হলেন ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতৃত্ব ।
 
          এখন কাকে বা কোন আন্দোলনকে আপনি ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলবেন সেটা আপনার নিজস্ব ঐতিহাসিক চিন্তাধারার ব্যাপার । যদি মনে করেন ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ই ভারতের প্রথম ইংরেজ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন , তাহলে শহীদ সেনা মঙ্গল পান্ডে ই প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং শহীদ । আর যদি আপনি অন্যদের মতো মনে করেন দেশের সামগ্রিক স্বার্থে একটি ইংরেজ বিরোধী সংগঠনের মাধ্যমে ইংরেজ মুক্ত ভারত গড়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া, তাহলে আপনাকে নিঃসন্দেহে মহারাষ্ট্রের বাসুদেব বলয়ান্ত ফাদকের নাম করতে হবে ।


=====================================


ঠিকানা 
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
৩৭/১ , স্বামী শিবানন্দ রোড
চৌধুরীপাড়া
বারাসাত
কলকাতা ৭০০১২৪

তথ্যঋণ স্বীকার :
           বিভিন্ন ঐতিহাসিকের লেখা গ্রন্থ এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমে প্রকাশিত লেখা এবং বিবরণী ।


মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩