Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

বিশেষ নিবন্ধ ।। স-সে-মি-রা ।। কাশীনাথ হালদার


স-সে-মি-রা

কাশীনাথ হালদার



'সসেমিরা' কথাটি একটা সংস্কৃত প্রবাদ। সাধারণত খুব খারাপ অবস্থা বা মন্দ অবস্থা বােঝাতে কথাটি ব্যবহৃত হয়। আসলে একটা সংস্কৃত শ্লোকের প্রথম চরণের প্রথম অক্ষর 'স', দ্বিতীয় চরণের প্রথম অক্ষর 'সে', তৃতীয় চরণের প্রথম অক্ষর 'মি' এবং চতুর্থ চরণের প্রথম অক্ষর রা'―এগুলাে পরপর সাজিয়ে স-সে-মি-রা। এ নিয়ে একটা শিক্ষামূলক
সুন্দর গল্প আছে। গল্পটা এইরকম :

কোনাে এক দেশে এক রাজকুমার ছিল। একদিন মৃগয়ার জন্য সে একটা বনের মধ্যে প্রবেশ করলাে। শিকারের সন্ধান করতে করতে সে গভীর বনের মধ্যে চলে গেল এবং পথ হারিয়ে ফেললাে। এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে এলাে। কিছুদুরে বাঘের গর্জনও শােনা গেল। রাত কাটানাের জন্য রাজকুমার একটা বড় গাছে উঠে বসলাে। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেলাে, একটা প্রকাণ্ড ভালুকও সেই গাছে উঠছে। রাজকুমার ভয়ে আড়ষ্ট। তা দেখে ভালুকটা বলল : "ভয় পেয়াে না রাজকুমার। আমি তােমার কোনো ক্ষতি করবো না। তুমি এখন থেকে আমার বন্ধু হলে। দুজনে মিলে এই গাছে আমরা রাত কাটাবাে।"

একটু রাত বাড়তেই একটা বিরাট বাঘ সেই গাছের নীচে এলাে। দুটো শিকার তখন নাগালের বাইরে। বাঘটা তর্জন-গর্জন করতে করতে গাছের নীচে বসে পড়লাে। আস্তে আস্তে রাত গভীর হয়ে এলাে। দুই বন্ধু মিলে ঠিক করলাে, তারা দুজনে পালা করে রাত জাগবে। প্রথমে জাগবে ভালুক, তারপর রাজকুমার। ভালুক রাত জাগতে শুরু করলো। বন্ধু ভালুকের কোলে মাথা রেখে রাজকুমার ঘুমিয়ে পড়লো। বাঘটা ভালুককে ভয় দেখাতে লাগলো। ইঙ্গিত করলো রাজকুমার‌কে নীচে ফেলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে ভালুক কিছুতেই রাজি নয়। বাঘও হতাশ হয়ে নীচে বসে রইলাে।

শেষ রাতের দিকে রাজকুমারের ঘুম ভেঙে গেল। এবার রাজকুমারের জাগার পালা। ভালুক ঘুমিয়ে পড়লাে আর রাজকুমার পাহারা দিতে লাগলাে। আবারও বাঘটা ইনিয়ে বিনিয়ে রাজকুমারকে ভয় দেখালাে, ইঙ্গিত করলাে ভালুককে ফেলে দেওয়ার জন্য। রাজকুমার তাতে সায় দিলো না। বাঘটা রাজকুমারকে বারবার ভয় দেখাতে লাগলাে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে একসময় রাজকুমার ভালুককে ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে দিলাে এবং চোখ বন্ধ করে গাছের মাথায় বসে থাকলাে। আচমকা ভালুককে ঠেলে দেওয়া হলেও ভালুক নীচে পড়লাে না। গাছের মাঝখানের একটা ডাল ধরে ঝুলে রইলাে। আস্ত আস্তে রাতের আঁধার শেষ হলাে, ফুটে উঠলাে দিনের আলাে। ততক্ষণে বাঘটা সেখান থেকে চলে গেছে। রাজকুমার গাছ থেকে নীচে নামলাে। সঙ্গে সঙ্গে ভালুকও লাফ দিয়ে নীচে নামলাে। এরপর 'স-সে-মি-রা' বলতে বলতে রাজকুমারের গালে সজোরে চারটে চড়
মেরে, সেখান থেকে চলে গেল।

এরপর রাজকুমার প্রাসাদে ফিরে এলাে। ভালুকের হাতে চড় খাওয়ার পর থেকে রাজকুমারের মাথার গণ্ডগােল দেখা দিলাে। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে সবসময় তার মুখে শুধু একটাই কথা ― 'স-সে-মি-রা'। রাজার আদেশে কত না রাজবৈদ‍্য, কবিরাজ রাজকুমারের চিকিৎসা করতে এলেন, কিন্তু রাজকুমারের রােগ কেউই সারাতে পারলেন না। সবাই হতাশ। রাজা প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এমন সময় রাজার এক সভাপণ্ডিত রাজাকে এসে বললেন : "মহারাজ রাজকুমারকে অনেকে চিকিৎসা করেছে, কিন্তু কেউ সারিয়ে তুলতে পারে নি। আপনি যদি অনুমতি করেন, আমি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি।" রাজা বললেন : "বেশ তাে, আপনি চেষ্টা করে দেখুন।" এবার রাজকুমারকে রাজসভায় আনা হলাে। পণ্ডিত রাজকুমারকে বললেন : "তােমার কি হয়েছে কুমার?" রাজকুমার বললাে : "স-সে-মি-রা।" সব শুনে পণ্ডিত বললেন :

"সদ্ভাবপ্রতিপন্নানং বঞ্চনে কা বিদগ্ধতা।
অঙ্কে কুমারমারােপ্য হত্বা কিন্নাম পৌরুষম্॥"
― অর্থাৎ বন্ধুত্বের জন্য যে তােমাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেছে, সেই বন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার ফল কী? শিশুকে কোলে রেখে হত্যা করার পৌরুষ আছে কী?

পণ্ডিতের এই কথা শুনে রাজকুমার 'স' অক্ষর বাদ দিয়ে বলতে থাকল : "সে-মি-রা",
"সে-মি-রা"। এরপর সভাপণ্ডিত বললেন :

"সেতুবন্ধে সমুদ্রে চ গঙ্গাসাগরসঙ্গমে।
ব্রহ্মহা মুচ্যতে পাপৈর্মিত্রদ্রোহী ন মুঞ্চতি॥"
― অর্থাৎ সেতুবন্ধ, সমুদ্র, গঙ্গাসাগরসঙ্গম প্রভৃতি তীর্থে স্নান করলে ব্রহ্মহত্যাকারী
পাপমুক্ত হয়, কিন্তু মিত্রদ্রোহীর মুক্তি হয় না।

রাজকুমার এবার দ্বিতীয় অক্ষর 'সে' ছেড়ে
দিয়ে "মি-রা", "মি-রা" বলে চললো। আবার সভাপণ্ডিত বললেন :

"মিত্রদ্রোহী কৃতঘ্নশ্চ যে চ বিশ্বাসঘাতকাঃ।
তিষ্ঠন্তি নরকে ঘােরে যাবচ্চন্দ্রদিবাকরৌ॥"
― অর্থাৎ মিত্রদ্রোহী, কৃতঘ্ন ও বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তিরা, যতদিন চন্দ্র সূর্য থাকবে
ততদিন, ভীষণ নরকযন্ত্রণা ভােগ করে। 

এটা শুনে রাজকুমার তৃতীয় অক্ষর 'মি' বাদ দিয়ে শুধু 'রা'-'রা' বলতে থাকলাে। সবশেষে সভাপণ্ডিত বললেন:

"রাজাহসি রাজপুত্রোহসি যদি কল্যাণমিচ্ছসি।
দেহি দানং দ্বিজাভিভ্যো দেবতারাধনং কুরু॥"
― অর্থাৎ হে মহারাজ! আপনি এবং রাজকুমার তুমিও যদি মঙ্গল চাও, তাহলে দ্বিজ বা ব্রাহ্মণকে দান এবং দেবতাদের আরাধনা বা পূজা করাে। 
সভাপণ্ডিতের এই কথা শােনার পর রাজকুমারের চিত্তবৈকল্য দূর হলাে এবং সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলাে।
― এটাই হলাে "সসেমিরা"-র কাহিনি।

                            ●●●●●●●●


কাশীনাথ হালদার   
জেলেরহাট • পোঃ - দোলতলা ঘোলা 
থানা - বারুইপুর • জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা 
পশ্চিমবঙ্গ • ভারত • ডাকসূচক - ৭৪৩৩৭৬।

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩