Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

বিশেষ নিবন্ধ ।। স-সে-মি-রা ।। কাশীনাথ হালদার


স-সে-মি-রা

কাশীনাথ হালদার



'সসেমিরা' কথাটি একটা সংস্কৃত প্রবাদ। সাধারণত খুব খারাপ অবস্থা বা মন্দ অবস্থা বােঝাতে কথাটি ব্যবহৃত হয়। আসলে একটা সংস্কৃত শ্লোকের প্রথম চরণের প্রথম অক্ষর 'স', দ্বিতীয় চরণের প্রথম অক্ষর 'সে', তৃতীয় চরণের প্রথম অক্ষর 'মি' এবং চতুর্থ চরণের প্রথম অক্ষর রা'―এগুলাে পরপর সাজিয়ে স-সে-মি-রা। এ নিয়ে একটা শিক্ষামূলক
সুন্দর গল্প আছে। গল্পটা এইরকম :

কোনাে এক দেশে এক রাজকুমার ছিল। একদিন মৃগয়ার জন্য সে একটা বনের মধ্যে প্রবেশ করলাে। শিকারের সন্ধান করতে করতে সে গভীর বনের মধ্যে চলে গেল এবং পথ হারিয়ে ফেললাে। এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে এলাে। কিছুদুরে বাঘের গর্জনও শােনা গেল। রাত কাটানাের জন্য রাজকুমার একটা বড় গাছে উঠে বসলাে। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেলাে, একটা প্রকাণ্ড ভালুকও সেই গাছে উঠছে। রাজকুমার ভয়ে আড়ষ্ট। তা দেখে ভালুকটা বলল : "ভয় পেয়াে না রাজকুমার। আমি তােমার কোনো ক্ষতি করবো না। তুমি এখন থেকে আমার বন্ধু হলে। দুজনে মিলে এই গাছে আমরা রাত কাটাবাে।"

একটু রাত বাড়তেই একটা বিরাট বাঘ সেই গাছের নীচে এলাে। দুটো শিকার তখন নাগালের বাইরে। বাঘটা তর্জন-গর্জন করতে করতে গাছের নীচে বসে পড়লাে। আস্তে আস্তে রাত গভীর হয়ে এলাে। দুই বন্ধু মিলে ঠিক করলাে, তারা দুজনে পালা করে রাত জাগবে। প্রথমে জাগবে ভালুক, তারপর রাজকুমার। ভালুক রাত জাগতে শুরু করলো। বন্ধু ভালুকের কোলে মাথা রেখে রাজকুমার ঘুমিয়ে পড়লো। বাঘটা ভালুককে ভয় দেখাতে লাগলো। ইঙ্গিত করলো রাজকুমার‌কে নীচে ফেলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে ভালুক কিছুতেই রাজি নয়। বাঘও হতাশ হয়ে নীচে বসে রইলাে।

শেষ রাতের দিকে রাজকুমারের ঘুম ভেঙে গেল। এবার রাজকুমারের জাগার পালা। ভালুক ঘুমিয়ে পড়লাে আর রাজকুমার পাহারা দিতে লাগলাে। আবারও বাঘটা ইনিয়ে বিনিয়ে রাজকুমারকে ভয় দেখালাে, ইঙ্গিত করলাে ভালুককে ফেলে দেওয়ার জন্য। রাজকুমার তাতে সায় দিলো না। বাঘটা রাজকুমারকে বারবার ভয় দেখাতে লাগলাে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে একসময় রাজকুমার ভালুককে ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে দিলাে এবং চোখ বন্ধ করে গাছের মাথায় বসে থাকলাে। আচমকা ভালুককে ঠেলে দেওয়া হলেও ভালুক নীচে পড়লাে না। গাছের মাঝখানের একটা ডাল ধরে ঝুলে রইলাে। আস্ত আস্তে রাতের আঁধার শেষ হলাে, ফুটে উঠলাে দিনের আলাে। ততক্ষণে বাঘটা সেখান থেকে চলে গেছে। রাজকুমার গাছ থেকে নীচে নামলাে। সঙ্গে সঙ্গে ভালুকও লাফ দিয়ে নীচে নামলাে। এরপর 'স-সে-মি-রা' বলতে বলতে রাজকুমারের গালে সজোরে চারটে চড়
মেরে, সেখান থেকে চলে গেল।

এরপর রাজকুমার প্রাসাদে ফিরে এলাে। ভালুকের হাতে চড় খাওয়ার পর থেকে রাজকুমারের মাথার গণ্ডগােল দেখা দিলাে। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে সবসময় তার মুখে শুধু একটাই কথা ― 'স-সে-মি-রা'। রাজার আদেশে কত না রাজবৈদ‍্য, কবিরাজ রাজকুমারের চিকিৎসা করতে এলেন, কিন্তু রাজকুমারের রােগ কেউই সারাতে পারলেন না। সবাই হতাশ। রাজা প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এমন সময় রাজার এক সভাপণ্ডিত রাজাকে এসে বললেন : "মহারাজ রাজকুমারকে অনেকে চিকিৎসা করেছে, কিন্তু কেউ সারিয়ে তুলতে পারে নি। আপনি যদি অনুমতি করেন, আমি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি।" রাজা বললেন : "বেশ তাে, আপনি চেষ্টা করে দেখুন।" এবার রাজকুমারকে রাজসভায় আনা হলাে। পণ্ডিত রাজকুমারকে বললেন : "তােমার কি হয়েছে কুমার?" রাজকুমার বললাে : "স-সে-মি-রা।" সব শুনে পণ্ডিত বললেন :

"সদ্ভাবপ্রতিপন্নানং বঞ্চনে কা বিদগ্ধতা।
অঙ্কে কুমারমারােপ্য হত্বা কিন্নাম পৌরুষম্॥"
― অর্থাৎ বন্ধুত্বের জন্য যে তােমাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেছে, সেই বন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার ফল কী? শিশুকে কোলে রেখে হত্যা করার পৌরুষ আছে কী?

পণ্ডিতের এই কথা শুনে রাজকুমার 'স' অক্ষর বাদ দিয়ে বলতে থাকল : "সে-মি-রা",
"সে-মি-রা"। এরপর সভাপণ্ডিত বললেন :

"সেতুবন্ধে সমুদ্রে চ গঙ্গাসাগরসঙ্গমে।
ব্রহ্মহা মুচ্যতে পাপৈর্মিত্রদ্রোহী ন মুঞ্চতি॥"
― অর্থাৎ সেতুবন্ধ, সমুদ্র, গঙ্গাসাগরসঙ্গম প্রভৃতি তীর্থে স্নান করলে ব্রহ্মহত্যাকারী
পাপমুক্ত হয়, কিন্তু মিত্রদ্রোহীর মুক্তি হয় না।

রাজকুমার এবার দ্বিতীয় অক্ষর 'সে' ছেড়ে
দিয়ে "মি-রা", "মি-রা" বলে চললো। আবার সভাপণ্ডিত বললেন :

"মিত্রদ্রোহী কৃতঘ্নশ্চ যে চ বিশ্বাসঘাতকাঃ।
তিষ্ঠন্তি নরকে ঘােরে যাবচ্চন্দ্রদিবাকরৌ॥"
― অর্থাৎ মিত্রদ্রোহী, কৃতঘ্ন ও বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তিরা, যতদিন চন্দ্র সূর্য থাকবে
ততদিন, ভীষণ নরকযন্ত্রণা ভােগ করে। 

এটা শুনে রাজকুমার তৃতীয় অক্ষর 'মি' বাদ দিয়ে শুধু 'রা'-'রা' বলতে থাকলাে। সবশেষে সভাপণ্ডিত বললেন:

"রাজাহসি রাজপুত্রোহসি যদি কল্যাণমিচ্ছসি।
দেহি দানং দ্বিজাভিভ্যো দেবতারাধনং কুরু॥"
― অর্থাৎ হে মহারাজ! আপনি এবং রাজকুমার তুমিও যদি মঙ্গল চাও, তাহলে দ্বিজ বা ব্রাহ্মণকে দান এবং দেবতাদের আরাধনা বা পূজা করাে। 
সভাপণ্ডিতের এই কথা শােনার পর রাজকুমারের চিত্তবৈকল্য দূর হলাে এবং সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলাে।
― এটাই হলাে "সসেমিরা"-র কাহিনি।

                            ●●●●●●●●


কাশীনাথ হালদার   
জেলেরহাট • পোঃ - দোলতলা ঘোলা 
থানা - বারুইপুর • জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা 
পশ্চিমবঙ্গ • ভারত • ডাকসূচক - ৭৪৩৩৭৬।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক