শিক্ষক দিবস ও শিক্ষক
আদর্শ শিক্ষক ডঃ সরবপল্লী রাধাষ্ণণের ১৩০তম জন্মদিন উপলক্ষে সকল শিক্ষক
কে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। ভারতে ৫ই সেপ্টেম্বর কে শিক্ষক দিবস হিসেবে
পালন করা হয়ে থাকে ১৯৬২ থেকে। সরবপল্লী রাধাকৃষ্ণণ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর
তাঁর গুণগ্রাহীচাত্র ও বন্ধুরা তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাইলে তিনি বলেন
"জন্মদিনের পরিবরতে৫ই সেপ্টেনবর যদিশিক্ষক দিবিস হিসাবে উদযাপিত হয় তবে
আমি বিশষ রুপে অনুগ্রহ লাভ করবো"।
ইউনেসকোর মতেবিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের
অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ পালন করা হয়১৯৬৩ সালের ৫ই অক্টোবর
বিশ্বের ১০০ টি দেশে শিক্ষক দিবিস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। এই দিবস টি
পালনে educational international (EI)ও তার সহযোগী ৪০১ টি সদস্য সংগঠন
মূল ভূমিকা রাখে। শিক্ষা যদি জাতীর মেরুদন্ড হয় তবে শিক্ষক্ সে
মেরুদন্ডের স্রষ্টা। পৃথিবীতে যতগুলো সম্মান জনকপেশা আছে তার মধ্যে
শিক্ষকতা সর্বচ্চ সম্মানিত পেশা।আমরা জানি একজন মানুষের সফলতার পিছনে
শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন আদর্শ শিক্ষক কেবল মাত্র
পড়াশুনার ক্কেত্রে নয়, তিনি ছাত্র ছাত্রিকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ
দেবেন। ব্যর্থতার পাশে দাড়িয়ে উতসাহ দেবেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য
স্থির করে দেবেন,তিনি তাকে শুধুমাত্র জীবনে সফল হওয়া নয়, কি ভাবে ভালো
মানুষ হতে হয় শেখাবেন। তাই তো শিক্ষক সম্পরকে এ পি যে আব্দুল কালাম
বলেছিলেন" যদি দেশকে দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে এবং সুন্দর মনের হতে হয়
তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করিএ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য
এনে দিতে পারে, তাঁরা বাবা মা এবং শিক্ষক"। এরিস্টটল বলেন"যারা শুশদের
শিক্ষাদানে ব্রতী তাঁরা অভিভাবকদের থেকেও বেশি সম্মান্নিত, পিতা মাতা
আমাদের জীবন দান করেন ঠিকই শিক্ষক রা সেই জীবন কে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে
সাহায্য করেন"
সমাজের সর্বত্র শিক্ষকদের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূরণ। প্রাথমিক বিদ্যালয়
থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষালয়েযে মানব সম্পদ তৈরি করা হয়
সেখানে শিক্ষক সমাজের ভুমিকা অতুলনীয়। এই জন্য শিক্ষক কে মানুষ গড়ার
কারিগড় বলা হয়। একজন আদর্শ শিক্ষক পারেন ছাত্র ছাত্রিদের মনুষ্যত্বের
বিকাশ ঘটিয়ে তাদের কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছে দিতে। একজন আদর্শয় শিক্ষক তিনিই
যার শিক্ষা ও স্মৃতি দীর্ঘকাল শিক্ষার্থীর মনে গেঁথে থাকে, তাই শিক্ষক
কে দেশ ও সমাজের সবচেয়ে দায়িত্ববান ও মূল্যবান সম্পদ গণ্য করা হয়, কারণ
শিক্ষকদের প্রচেষ্টা পৃথিবীর ভাগ্যকে প্রভাবিত করে।
য়ামাদের সমাজে বাবা মা র পর শিক্ষকদের গুরুজন হিসাবে মান্য করা হয়, তাই
প্রত্যেক শিক্কক কে তার নিজ পেশাকে চাকরী নয় ব্রত হিসাবে গ্রহণ কোরতে
হবে, হতে হবে শিক্ষারথিদের সঙ্গে আন্তরিক, তাদের সাথে গড়ে তুলতে হবে
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, পেশায় ও কর্তব্য পালনে প্রত্যেক শিক্ষক কে হতে
হবে আদর্শবান, সত্যবান, অনুকরণীয় ও অনুসররণীয়। শিক্ষক হবেন তাঁর অড়ুয়াদের
কাছে রল মডেল্বা আদরশ, জ্ঞানের উতস, আনন্দের ভান্ডার।
ইউনেস্কো বলে যে দেশের শিক্ষক যতটা গুণী স্ব দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা
ততটাই ভালো, ইউনেস্কো আরো বলে 'Trained teachers to enshior every child
right to primary education" ওই প্রদিবেদনে বলা হয়েছে যা বিশ্বের ৯৩ টি
দেশে শিক্ষক ঘাটতি চরমীবং বিশ্বে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে
হলে শেণীকক্ষে আরো ৪০ লাখ শিক্ষক প্রয়োজন। তবে আর বপ্লেছে ছে যে ইএ বিপুল
সংখ্যক শিক্ষক ঘাটতির পাশাপাশি আর একটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার গুণগত
মান। প্রায় শিক্ষকের কোনো উপকরণ এবং প্রশিক্কজণ ছাড়াই কাজ করছেন, অথচ
বিশ্বে বর্তমানে ২৫ কোটি শিশু পরা বা লেখার মৌলিক দক্ষতা অর্জনে বারথ।
তাই দেশের উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয়তার
বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
শিক্ষকরা কেনো দেশের জন্য একটি বিনিয়োগ? ইউনেসকোর যুক্তি হচ্ছে আজকের
শিশু প্রাপ্ত বয়সে কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে তা যেমন কারো পক্ষে আগাম
বলে দেওয়া সম্ভব নয়, সেহেতু আজ এবং আগামীকালের শিক্ষকদের এমন জ্ঞান ও
দক্ষতা প্রয়োজন যা তাদের শিক্ষার বহুমুখী চাহিদা মাটানোর যোগ্য করে
তুলবে।শিক্ষক্রা সমাজ, রাষ্ট্রের আলোকবরতিতার মতো কাজ করে, তাই শিক্ষকদের
পেশাগত স্বীকৃতি , সম্মানজনক বেতন, পেনশন, সামাজিক প্রাপ্তি ও চমৎকার
কর্ম পরিবেশ নিহচিত করতে হবে। শিক্ষক শিক্ষারথীর অনুপাত গ্রহনযোগ্য
পর্যায়ে আনতে হবে, অভীষ্ট সফলতার জন্য সকল স্তরে শিক্ষক সংকট দূর করতে
হবে। ডিজিটাল দেশ গড়তে হলে শিক্ষকদের মূল্যায়ন দক্ষতা বৃদ্ধি, আধুনিক
প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতি, মান সম্মত আধুনিক শিক্ষা উপকরণ এবং
মান সম্মত শিখন- শেখানো পরিবেশ ইত্যাদি বিষোয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
একজন শিক্ষককে সমাজের প্রত্যাশাপূরণে সচেষ্ট থাকতে হবে, তাকে হতে হবে
জ্ঞান তাপস, মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত, ব্যক্তিত্ববান, চৌকস, শ্রেণীকক্ষে
আগ্রহী পাঠদানকারী ও জ্ঞানবিতরণে আন্তরিক, তিনি সুবিচারক সুপরীক্ষক,
শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রক, যুক্তিবাদী গবেষক এবং অকুতোভয়, সত্যবাদি। শিক্ষক
হবেন চারত্রিক দ্রিঢ়তাসম্পন্ন, পরিশ্রমী, নিরপেক্ষ, প্রাণবন্ত।
আমার জীবনে যে দুজন ব্যক্তির চারিত্রিক দৃঢ়টা, তেজ, বুদ্ধিও সততার ছাপ
ফেলেছে তাঁরা হলেন স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস। এই দুজন
ছাড়া জীবনে এ পর্যন্ত যারা আমার উপর ছাপ ফেলেছেন বা আমাকে সরবতোভাবে
এগিয়ে চলতে উদ্বুদ্ধ করেছেন বা করছেন তাঁদের মধ্যে সর্ব প্রথম আমার বাবা
মা যাদের সন্তান হও্যায় নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি, এবার বলি আমার
শিক্ষকদের কথা, প্রথমেই চিন্ময় স্যার যার কাছে ক্লাশ ফোর পর্যন্ত
পড়েছিলাম, কিন্তু অনেক কিছু শিখেছি উপরে যত কঠোর ছিলেন ভিতরে ততই নরম,
ওনাদের বাড়িতে সব অনুষ্ঠানেই আমার নেমন্তন্ন থাকতো, তাও মাঝে মাঝে কাগজে
করে স্কুলে আমার জন্য "সিরের নাড়ু", "নার কেল নাড়ু" নিয়ে আসতেন আবার
তিনিই পড়া না পারলে বেতের বাড়ি মারতেও দ্বিধা বোধ করতেন না। ক্লাস ফাইভ
থেকে তেন পর্যন্ত আমি গার্ল'স স্কুলে পড়েছি, ওয়ি স্কুলে সর্ব প্রথম যিনি
আমাকে নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি ইংরাজী পড়াতেন বাণী দিদিমণি, তিনি সর্ব
ক্ষেত্রে আমাকে গাইড করতেন, অংকের দিদিমনি উমা দিদিমনি খুব সুন্দর করে
অংক বোঝাতেন একদম বন্ধুবৎসল ছিলেন, আর একজন দিদিমনি যার প্রতি পুরো
ক্লাশের মেয়েরা এডমায়ার ছিল তিনি হলেন প্রিতীকণা দিদিমনি, আমাদের রোল
মডেল, ফিজিক্যাল সায়েন্স পড়াতেন, তাঁর হাঁটার ভঙ্গিমা, তাঁর শাড়ি পরা,
কথা বলা ব্যক্তিত্ব সব যেনো আমরা নকল করা শুরু করেছিলাম, এতো সুন্দর
বোঝাতেন যে আমরা সবাই ভালো নাম্বার পেতাম, আমাদের দুষ্টুমি দেখে উনি
গম্ভির হওয়ার চেষ্ট করতেন কিতু ওনার ঠোঁটের কোনের হাসি, চোখের হাসি
আমাদেরকে মুগ্ধ করে দিতো। আর একজন শিক্ষিকা এসেছিলেন কিছুদিনের জন্য অন্য
এক শিক্কিকার অনুপস্থিতিতে, তিনি আমাদের ভূগোল পড়াতেন ক্লাস এইটে ছিলাম
তখন স্কুলে অতো প্রোজেক্ট ওয়ার্ক হোত না , তিনি আমাদের মাটি দিয়ে ভারতের
মান চিত্র, বড় নদী গংগার উতসস্থল থেকে সাগরে মিলে যাওয়া, আগ্নেয়গিরি, কল
কারখানা সব বানানো শিখিয়েছিলেন, ক্লাস ইলেভেন টুয়েলভে পড়া কালীন ইংরাজি
পড়াতেন মোল্লার স্যার, প্রতিটি চ্যাপটার শুরুর আগে সেই সম্বন্ধে গল্প
শোনাতেন, একদম আমাদের সাথে একাত্ম হয়ে যেতেন, আর বায়োলজি পড়াতেন হক
স্যার, খুব আল্প বয়স একদম আমাদের সাথে বন্ধুর মতো ব্যাবহার করতেন, হেড
স্যার জীবন গাংগুলি বাংলার ব্রজবুলী ভাষার কবিতা এতোসুন্দর বোঝাতেন আর
ছিলেন বাংলার গদ্যের স্যার নিরাপদ স্যার যার কাছে আমার বাংলা লেখা সমৃদ্ধ
হয়। এই সব শিক্ষক খিক্ষিকারা আমার জীবন কে অনুপ্রাণীত করেছে আর যার কথা
না বললে আমার সংগীত জীবন অসমাপ্ত থেকে যাবে তেনে হলেন আমার গানের গুরু
বিকাশ দা ওনার আগেও আমি আর তিনজন শিক্ষিকার কাছে গান শিখেছি কিন্তু উনি
আমার গান গাও্যার স্টাইল পুরো বদলে দিয়েছেন, আমার সংগীত জীবনের রোল মডেল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন