google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re আবদুস সালমের স্মৃতিকথা - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আবদুস সালমের স্মৃতিকথা

প্রথম শিক্ষাগুরু তামিজুদ্দিন স‍্যার এর প্রতি।।


আমার শিক্ষা জীবন শুরু হয় এমন এক মহান ব‍্যক্তির নিকট যিনি পেশায়
ছিলেন দরজী(যাদের আমরা বলি খলিফা )।তার ই দোকান -ঘরের এক কোনে চলতো আমাদের
অবৈতনিক পাঠশালা । খুব মনে পড়ে এই ঘরেই হয়েছিলো আমার হাতে খড়ি । প‍্যান্ট
কেনার সামর্থ্য আমাদের ছিলো না । পরনে ছিলো একটা লাল গামছা আর আধময়লা ছেঁড়া
গেঞ্জি ।তিনি নিজ কর্মের সাথে পাঠদান কে যুক্ত করে নিয়ে ছিলেন।
আর শিক্ষক তা করতে গিয়ে অনেক টা সময় ই আমাদের দিতেন । যেন এই কাজটিই তার
মুখ‍্য।কাপড় সেলাইয়ের কাজ টি তার গৌণ ।এর জন্য সংসারে কম অশান্তির আগুন তাঁকে
পোহাতে হয়নি ।অভাবের সংসার ।নুন আনতে পানতা ফুরোই।খিটিমিটি লেগে ই থাকতো বেশির
ভাগ দিন।তবুও হাসি মুখে মহান দ্বায়িত্ব পালন করতে পিছপা হন নি কোনো দিন ।
দিনে দুবেলা চলতো আমাদের পড়ার আসর । সকালে আর সন্ধ্যায় ।আমরা
লম্ফু নিয়ে আসতাম পড়তে ।লকলকিয়ে শিষ ঢুকতো নাকে ।যখন কফ্ ফেলতাম তখন দেখতাম
কালী বেরুচ্ছে । কুছ পরোয়া নেই।আমাদের অধ‍্যাবশায় চলতো পুরো দমে । খেজুর পাতার
পাটি ও তালপাতার চাটাই য়ে বসে ।
শিক্ষক- তার পারি শ্রমিক ছিল কারো বাড়ি তে ভালো তরকারি রান্না হলে
এক বাটি তরকারি ।মাঝে মধ্যে দু একটা হাঁসের ডিম । পড়তে বসার আগে হাত পা টিপে
দেওয়া আর পাকা চুল তুলে দেওয়া ছিলো আমাদের কাজ ।বাবা মায়ের এমন সামর্থ্য ছিল
না যে টিউশনির পয়সা খরচ করেন পড়ার পেছনে ।তখন ভারত চিনের যুদ্ধের বছর ।কি
টানা টানি চলেছে লোকের। তিন চার দিন পর এক বেলা ভাত পেতাম। তাও আবার
আধপেটা।ছোটো বলেই আমরা ভাত পেতাম ।বড়ো দের অবস্থা আরও করুণ ।অন্য দিন আমাদের
পাতে জুটতো দলিয়া,(যা আধভাঙা গম ,হলুদ লবন দিয়ে সিদ্দ)খিঁচুড়ী, যাও (আতব চাল
সিদ্দ লবন দেওয়া ),কচুর ডাঁটা,এঁঠ‍্যা,হ‍্যালার(শাপলা)ডাঁটা,শালুক আর পেঁহুট(
শাপলার ফল),তালের আঁটি ।যা চুষে মানুষ পার করেছে দিন ।এছাড়া থাকতো আঁংঠি(মাছ
ধরা র এক ধরণের পদ্ধতি)র চুনো মাছ।
তাঁর কাজের যতই ক্ষতি হোক না কেন প্রতিটি বিষয়ে র পড়া তৈরী না হওয়া
পর্যন্ত কারো ছুটি নেই।আমারা ও ভয়ে তটস্থ থাকতাম। হাতে থাকতো বড়ো বেড়া কলমির
ডাল ।দূর থেকে মানে তাঁর বসার টুল থেকে নাড়িয়ে ছাড়তেন হুংকার।
এবার আমরা ভাববো তিনি সত‍্যিই কি নি:স্বার্থ সেবা দিচ্ছেন ? না ,
তিনি নিজেই বলতেন তোরা মানুষ হওয়ার সাথে সাথে আমার গর্ধব ছেলে দুটো যদি
লেখাপড়া শিখতে পাারে । কিন্তু না কিছু তেই তাঁর ছেলে দুটি প্রতি দিন পড়া
তৈরী করতে পারতোনা ।তা বলে আমাদের পড়াশোনা তৈরীর ব‍্যাপারে ত্রুটি রাখতেন
না কোনো দিন।
তার ই অনুপ্রেরণা য় আমরা আজ মানুষ হয়েছি কি না জানি না । তবে আমাদের
দুটো মোটা ভাত কাপড়ের সংস্থান হয়েছিল।
আজ আমার বৃদ্ধ বয়সে বার বার মনে হচ্ছে ঐ মহান নি:স্বার্থ মানুষটি
র কথা ।তিনি যদি আমাদের গরুছাগল চরানোর মতো করে ঘেরে ঘেরে পড়াশোনা না ক‍রাতেন
তবে আমরাও হারিয়ে যেতাম কোন্ বিস্মৃতির অতল তলে ।
আজকের শিক্ষক দিবসের মহান দিনে ঐ মহান মানুষটির প্রতি আমার হাজার
হাজার সালাম ,নমস্কার আর শতকোটি প্রণাম ।


08 09 2018

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন