Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

তপন কুমার মাজির গল্প

"শিক্ষাগুরু"



সেপ্টেম্বরের তিন তারিখ। সোমবার। ঘড়িতে তখন সকাল ১০:৫৫। মৃণালবাবু মানে
মৃণালকান্তি চৌধুরী মহাশয় দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা ক্লাসে ঢুকেছেন সবেমাত্র। চলছে
রোলকল। এমন সময় একাদশ শ্রেণীর কিছু ছাত্র-ছাত্রী দরজার সামনে এসে ভিড় করে
দাঁড়ালো।

--তোমরা কিছু বলবে ?

--স্যার, নাটকের সংলাপগুলো একটু দেখে নিলে ভালো হতো। আর অভিনয়টাও কেমন হচ্ছে...

একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রণিকের কথাটা শেষ হতে না হতেই মৃণালবাবু বললেন,

--দেখছো না, এখন ক্লাস নিচ্ছি। তোমরা এখন ক্লাসে যাও। সেকেন্ড ক্লাসটা আমার
অফ্ আছে। তখন না হয় দেখে নেব।

রণিকরা মাস্টার মশায়ের কথার মান্যতা দিয়ে চলে গেল ক্লাসে। ঠিক
একইরকমভাবে প্রতিটি ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা পরপর কেউ গান, কেউ বা আবৃত্তির
জন্য মৃণালবাবুর কাছে এসে অনুরোধ করতে শুরু করলো। আর তাদের একই কথা বলে
প্রত্যেককেই একের পর এক ক্লাসে ফিরে যেতে বললেন।

ঘটনা হোল সামনেই শিক্ষক দিবস। প্রতি বছরের মতো এই বছরও বিদ্যালয়ে
অনুষ্ঠিত হবে নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে নাচ বাদে
সবগুলোরই হত্তা কত্তা বিধাতা--"সবে ধন নীলমণি" মৃণালবাবু। নাচটা শেখান অবশ্য
এই বিদ্যালয়েরই ম্যাডাম পৌলমী দাস মহাশয়া।

মৃণালবাবু যতই বিচিত্র গুণের অধিকারী হোন না কেন তিনি কখনোই নিজের
ক্লাস ক্ষতি করে এসব শেখাতে চান না। যথার্থ অর্থেই এলাকায় একজন আদর্শ শিক্ষক
হিসেবে তাঁর একটা সুনাম আছে। এমনও খবর আছে যে তিনি নাকি তাঁর প্রতি মাসের
মাইনের কিছুটা অংশ দুঃস্থ ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার জন্য দান করেন।

"হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয়"এ মৃণালবাবু যে বছর শিক্ষকতার কাজে যোগদান করেছিলেন
সেই বছর থেকে তাঁরই অনুপ্রেরণায় আজও একইরকমভাবে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে
শিক্ষক দিবস। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও আছে কুইজ ও "যেমন খুশি সাজো"। তার উপর
প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের পূর্ব ঘোষিত "শিক্ষাগুরু" নামক পুরষ্কার প্রদান এই
বছরের আরও একটি অন্যতম আকর্ষণ।

অবশেষে এল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। ৫ ই সেপ্টেম্বর। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সকলের শিক্ষাগুরু সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের প্রতিকৃতিতে
মাল্যদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হোল। উদ্বোধনী সঙ্গীত রূপে
গাওয়া হোল "আগুনের পরশমণি..." গানটি। রাঘববাবু বাদে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন
প্রতিটি শিক্ষকই। উপস্থিত ছিলেন পরিচালন কমিটির সমস্ত সদস্য-- অশিক্ষক
কর্মচারীবৃন্দও। আসলে রাঘব বাবু শুধু আজ নয়, স্কুলের যতবড়ই কাজ থাকুক না কেন--
হয় তিনি উপস্থিত থাকতে পারেন না, নাহয় সবার শেষে এসে উপস্থিত হন। মিটিং মিছিলে
যত্রতত্র তাঁকে ঘুরতে হয় প্রায় প্রতিদিনই। সেই সুবাদে প্রচুর আর্থিক অনুদানও
পাইয়ে দিয়েছেন তিনি এই বিদ্যালয়কে। অবশ্য সরকারি অনুদানের টাকায় স্কুলের
উন্নয়ন কতটা হয়েছে সে প্রশ্ন এখানে অপ্রাসঙ্গিক । যাইহোক প্রধান শিক্ষক
মহাশয়ের এমনই এক ব্যাক্তি রাঘববাবুর মতো কেউকেটা শিক্ষককে আজ খুবই প্রয়োজন।
সুতরাং প্রধানশিক্ষক মহাশয় ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন উনার অনুপস্থিতিতে।

অনুষ্ঠান যখন শেষের মুখে, ঠিক সেইসময় জেলাস্তরের একটা গুরুত্বপূর্ণ
মিটিং সেরে উপস্থিত হলেন রাঘববাবু। তাঁকে দেখা মাত্রই প্রধানশিক্ষক মহাশয়
অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার আদেশ দিলেন। নিজের চেয়ারটা ছেড়ে বসতে অনুরোধ করলেন
তাঁকে। যেন রাঘববাবুই এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অবশ্য কার্যক্ষেত্রে সেটাই
ধ্রুবসত্য। প্রধানশিক্ষকের ব-কলমে রাঘববাবুই এই বিদ্যালয়ের সুপ্রিমো। যাইহোক
প্রধানশিক্ষক মহাশয় ইশারা করলেন সঞ্চালক মহাশয়কে। অতপর সঞ্চালক মহাশয়ের ঘোষণা
মাইকে--

---আকাশের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। যে কোনো সময়েই বর্ষারাণী অঝোর ধারায়
কান্না জুড়ে দিতে পারে। তাই হাসিমুখে অন্যান্য ক্ষুদ্র অনুষ্ঠানগুলো বাদ দিয়ে
আজকের বিশেষ আকর্ষণের অংশটুকু আমরা এখন উপভোগ করে নিতে চাই। আমি কী বলতে চাইছি
এতক্ষণে আশাকরি আপনারা বুঝে ফেলেছেন। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। "শিক্ষাগুরু" উপাধি
প্রদান পর্ব। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আপনারা হয়তো শুনেছেন, সারাবছর কর্মের নিরীখে
শিক্ষক দিবসের এই বিশেষ দিনটিতে সমস্ত শিক্ষকের মধ্য থেকে একজন শিক্ষককে এই
পুরষ্কার প্রদানের কথা পূর্বেই ঘোষণা করেছেন প্রধানশিক্ষক মহাশয়। আর বিচারকদের
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বছর সেই পুরষ্কার পাচ্ছেন আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয়--
বিদ্যালয়ের শুভাকাঙ্খী--ছাত্র দরদী সর্বজনবিদিত আমাদেরই বিদ্যালয়ের শিক্ষক
মাননীয় রাঘব চন্দ্র মহাশয়। আর এই পুরষ্কার সসম্মানে উনার হাতে তুলে দেবেন
আমাদেরই বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মৃণালকান্তি বাবু। মাফ করবেন, মাননীয়
মৃণালকান্তি চৌধুরী মহাশয়। একদিকে হাসির ফোয়ারা আর অন্যদিকে কান্নার কোলাহলে
সমাপ্ত হোল এই বছরের মতো শিক্ষক দিবস উদযাপন।

অনুষ্ঠানের শেষে রাঘববাবু মৃণালবাবুকে বাড়ির সামনে ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার
নিয়ে নিজের চারচাকা গাড়িতে চাপিয়ে রওনা দিলেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু দেড় দুই
কিমি রাস্তা অতিক্রম করার পরই যত রাজ্যের মেঘ এসে জুড়ে বসল ছাইরঙা চারচাকাটির
উপর। ক্ষণিকের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল বাঁধভাঙা বন্যা। চারদিক অন্ধকার। জলে কাদায়
মাখামাখি গাঁয়ের সরু রাস্তা। সামনে অন্ধকার। এমনই পরিস্থিতিতে ঘটল এক
দুর্ঘটনা। নরম মাটিতে চাকা গেল বসে। কিছুক্ষণ পরেই গাড়ির একদিকটা গেল গর্তে
ঢুকে। রাঘববাবু গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে পড়লেন চাপা। নিজেরা নিজেদের উদ্ধার করতে না
পারলেও পিছনে আসা তাঁদেরই কিছু ছাত্র দেখলো, যে গাড়িটা দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে
সেই গাড়ির পিছনের সীটে আহত অবস্থায় পড়ে আছেন তাদেরই প্রিয় মাস্টারমশাই--যাকে
তারা নিজেদের একমাত্র শিক্ষাগুরু বলেই জানে--সেই মৃণালকান্তিবাবু। চালকের আসনে
যে আরও এক মাস্টারমশাই অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছেন তাঁর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই
করলো ছাত্ররা। অন্ধ ভক্তদের মতো তারা তাদের শিক্ষাগুরু মৃণালকান্তিবাবুকে গাড়ি
থেকে কোনও রকমে টেনে হিচড়ে বার করে তুলে নিল আড়কোলে। মাস্টারমশাইকে নিয়ে জোরে
জোরে হাঁটতে শুরু করলো তারা। শিক্ষাগুরুর আরোগ্য কামনায় প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে
চললো পুবদিকে--যেদিকে সদর হাসপাতাল...!

--------------------------------------------------------------------
Tapan Kumar Maji,
Courtmore, Hindusthanpark, st no-- 1,
Burdwan(W), Chelidanga, Asansol- 713304,
Mob no-- 9609529355,
07/09/18,
--------------------------------------------------------------------

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক