শিক্ষা ও শিক্ষক
শিক্ষা হল--মানুষের মধ্যে যে পূর্ণতা আছে জীবনের প্রথম থেকেই তার ই
প্রকাশ ঘটানো।অন্য ভাবে বলা যেতে পারে শিক্ষা হল জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা।
মানুষ বহুবছর ধরে পৃথিবীর নানান চড়াই উৎরাই পথে হাঁটতে হাঁটতে কখনো কখনো
হোঁচট খেয়েছে কখনো বা সোজা হয়ে চলতে পেরেছে। যতবার চলতে গিয়ে বাধা
পেয়েছে ততবারই চলার পদ্ধতি সে নতুন নতুন করে শিখেছে অর্থাৎ ততবারই সে
জ্ঞান আহরণ করেছে--একেই বলে শিক্ষা।
তাহলে শিক্ষক এখানে কে? এই প্রশ্নের জবাবে বলা যায়-এখানে পথ ই
শিক্ষক। আমরা কত কিছু যে শিখি এই বিশ্ব প্রকৃতির কাছে ! আকাশ,
বাতাস,জল,মাটি, বৃক্ষ, চন্দ্র, সূর্য গ্রহ তারা-এরাই আমাদের আসল শিক্ষক।
একজন শিক্ষক তাঁর জ্ঞান রূপ শলাকা দিয়ে শতশত অজ্ঞান মানুষের
চোখ খুলে দিতে সমর্থ হন। একারণে শিক্ষা-শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক
অত্যন্ত গভীর। প্রাচীন ভারতে আর্য যুগে ঋষিগণ অনেক কষ্ট সাধনের মাধ্যমে
শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করতেন। তখন আচার্য ও শিষ্যের মধ্যে একটি
সুমধুর সম্পর্ক বজায় ছিল। আজকের ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে সেই সম্পর্কের
ছিটে ফোঁটা ও নেই। উভয়ের কাছে আতঙ্ক স্বরূপ। আজকের শিক্ষক নিজেরাই
নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করতে অক্ষম। যখন ছাত্র অশ্রদ্ধা করছে শিক্ষককে তখন
এটাই প্রমাণিত হয় যে , শিক্ষক ছাত্র কে প্রকৃত শিক্ষা দান করতে ব্যর্থ
হয়েছেন। শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব ও বিপ্লব আনে মুক্তি। মুক্ত
শিক্ষা দানের জন্য শিক্ষককে ই হতে হবে আদর্শ পথ প্রদর্শক।কারণ-শিক্ষা ও
শিক্ষক ই হল জাতির মেরুদণ্ড।
প্রাচীন কালে আর্য যুগে শিক্ষার পদ্ধতি ছিল আজকের শিক্ষা
পদ্ধতির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তখন ব্রহ্মচর্য আশ্রম এর মাধ্যমে পাঠদান।
ব্রহ্মচর্য অর্থাৎ ইন্দ্রিয় সংযম। গুরুর পবিত্র জীবন আদর্শে গুরু গৃহেই
ছাত্রের জীবন গঠিত হতো।আর আজকাল বিদ্যালয়ে অপরিচিত অজ্ঞাত কুলশীল ছাত্র
ছাত্রীদের কে পাঠদান করেন শিক্ষকগণ কেবল মাত্র অর্থের বিনিময়ে।তাও আবার
পাঠ ও পাঠ্যপুস্তক করতে করতে ই সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।
প্রতি বছর তবুও বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষক দিবস
ঘটা করে পালিত হয়।এত কিছু না হ ওয়ার মধ্যে ও কিছু শিক্ষক অবশ্যই আছেন
যাঁরা প্রাণপাত করে ভালো ছাত্র গড়ার চেষ্টা করেন, শিক্ষার মান কে উন্নত
করার চেষ্টা করেন। অন্তত তাদের জন্য শিক্ষক দিবস পালনের যথেষ্ট
প্রয়োজনীয়তা আছে। একজন প্রকৃত শিক্ষক যিনি অন্ধকারের মধ্য থেকে আলোকে
নিয়ে যান একজন মানবাত্মাকে সেই শিক্ষকের কাছে আমরা প্রতিটি মানুষ ঋণী।
শিক্ষক দিবস পালনের মধ্য দিয়ে শিক্ষক তথা শিক্ষক সম্প্রদায়ের প্রতি
শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আমাদের মহান কর্তব্য।এর দ্বারা শিক্ষা ও শিক্ষকের
মূল্যায়ন করা হয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে শিক্ষার মান কত গভীর কত
পবিত্র তা বোঝানোর জন্য শিক্ষক দিবস অবশ্য পালনীয়। তাছাড়া একজন প্রকৃত
শিক্ষককে সম্মানিত করে তাঁকে উৎসাহিত করার জন্য ও শিক্ষক দিবস পালনের
যথার্থতা আছে।
এখনকার শিক্ষা হ'ল গাদা গাদা ব ই এর পাতায় চোখ
বুলানো আর শিক্ষকদের দেওয়া উত্তর পত্রে র নোট মুখস্ত করে পরীক্ষায় ভালো
নম্বর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন-এতে কী চরিত্র গঠন হয়!
চরিত্রবান মেধাবী ও বলিষ্ঠ পূর্নাঙ্গ মানুষ তৈরি ই শিক্ষার লক্ষ্য হ
ওয়া উচিত। আগের দিনের শিক্ষক ছিলেন সৎ চরিত্রবান।আর তাদের আদর্শে ই
তাঁরা শিক্ষার্থী গড়ছেন। বর্তমান দিনের শিক্ষক শুধু প্রচুর অর্থের
বিনিময়ে ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদান করেন,যারজন্য শিক্ষক ছাত্রের মধ্যে
কোনো আত্মিক সম্পর্ক নেই।যা হবার তাই হয়েছে।এতে শিব গড়া তো হ'ল ই না
বরং একটি স্বার্থপর বাঁদর তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে একজন আদর্শ শিক্ষক বলতে আমার দৃষ্টি তে শ্রী শ্রী
রামকৃষ্ণ পরমহংসের জীবন চরিত বা কথামৃত কেই নির্দিষ্ট করি।কারণ , তাঁর
কোনো ডিগ্রি ছিল না অথচ তাঁর যে বিশাল জ্ঞান ভাণ্ডার তিনি আমাদের কাছে
রেখে গেছেন। তাঁর সেই কথামৃত থেকে যে জ্ঞান আমরা আহরণ করি, তার কাছে এ
যুগের বিদ্যা শিক্ষা অতি তুচ্ছ। আমার মতে বর্তমান যুগে তিনি ই একমাত্র
শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
=================================================
শেফালি সর জনাদাড়ি, গোপীনাথপুর, পূর্ব মেদিনীপুর।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন